Saturday, June 5, 2021

সুখের ঘরে আগুন (৩৮)

সুখের ঘরে আগুন (৩৮)

     কিছুটা চক্ষুলজ্জা আর কিছুটা নিয়ম রক্ষা এই দুটো মিলিয়ে নিখিলেশ তাঁর দূর সম্পর্কের আত্মীয় বাড়িতে ঘণ্টা দুয়েক ছিল।তারপর আবার সে ফিরে আসে নিলয়দের বাড়িতে।রাতের দিকে দুজনেই বেরিয়ে যায়।কাছেপিঠে একটা কফিশপে বসে অম্বিকার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
তিনজনে বসে গল্প করতে করতে কফি খেয়ে ঘন্টাখানেকের মধ্যে বেরিয়ে পরে।সেখানেও অচলাকে নিয়ে ওদের মধ্যে আলোচনা হয়।সেক্ষেত্রে নিখিলেশ চুপ করে নিলয় আর অম্বিকার কথা শুনে যায়।
  পরদিন ওদের ভুবনেশ্বর চলে যাওয়ার কথা।সারাটাদিন দুই বন্ধু আজ ঘরে বসেই বাকিদের সাথে আড্ডা দেয়।অচলা বেশ কয়েকবার নানান কাজে সেখানে আসে।নিখিলেশ লক্ষ্য করে অচলার চেহারার বেশ পরিবর্তন হয়েছে।গায়ের রংও ফর্সা হয়েছে।চেহারার মধ্যে বেশ একটা লাবণ্য দেখতে পায়।যাওয়ার সময় নিখিলেশ অচলাকে বলে যায় 
--- মন দিয়ে লেখাপড়া করো।দাদার মুখের দিকে তাকিয়ে তোমাকে অনেক দূর যেতে হবে।
  অচলা নীচু হয়ে নিলয় ও নিখিলেশকে প্রণাম করে।
   অম্বিকা অনেক ভেবেচিন্তে মনস্থির করে যে বাবাকে আজ রাতে নিলয়ের কথা সবকিছু জানাবে।সে  এটাও জানে তার বাবা এতে আপত্তি করবেন না।আপত্তি করলে করতে পারেন মা।
--- বাবা তোমার সাথে আমার কিছু দরকারী কথা আছে,তুমি আমার ঘরে একটু আসবে?
---এমন কি কথা তর বাবার সাথে যে আমার সামনে কইতে পারবিনা?
--- বাপ মেয়ের আলাদা কথা থাকতেই পারে;সব কথার মধ্যে কথা বলতে আসা ঠিক নয়।তোমার সাথে তোমার মেয়ে যখন ফিসফিস করে কথা বলে সে কথা শোনার জন্য কি আমি কখনও আড়ি পাতি?
--- আজ পর্যন্ত আমার সাথে আমার মাইয়াটা একটা দিনের তরেও ফিসফিস কইরা কোন কথা কয় নাই।ও তো সারা জীবনই বাপ ভক্ত। আমি তো বাপ মেয়ের ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারি না,তাইতো সব সময় ঘরের কোণে পইরা আছি।
 --- হ্যাঁ মা তোমাকেও কথাটা বলবো। তবে সেটা আমি না, তোমাকে বাবা সব কিছু বলবেন।আগে আমি বাবার কাছে সবটা বলে বাবার মতামতটা নিই। তারপর তোমাকে জানাবো। এই কথাটা তোমাদের দুজনেরই জানা দরকার। 
 অমলবাবু হাসতে হাসতে বললেন,
--- খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা মনে হচ্ছে।ঠিক আছে আমি এখনই এখান থেকেই তোর ঘরে চলে যাচ্ছি তুই চলে আয় তোর  খাওয়া-দাওয়া শেষ করে।
  অম্বিকার খাওয়া হয়ে গেলে সে তার ঘরে গিয়ে দেখে তার বাবা তার খাটের উপরে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন।কিছুক্ষণ খাটের পাশে দাঁড়িয়ে নিজে মনে মনে একটু হেসে নেয়।সে খুব আস্তে আস্তে খাটের উপর বাবার পাশে বসে।সঙ্গে সঙ্গে নরেশবাবুর ঘুমটা ভেঙ্গে যায়।তিনি লাফ দিয়ে খাটের উপর উঠে বসে চোখ ডলতে ডলতে বলেন,
--- চোখটা একটু লেগে এসেছিল।আমি কিন্তু ঘুমাইনি।
 অম্বিকা হাসতে হাসতে বলে,
--- আমি কি বলেছি তুমি ঘুমিয়ে পড়েছিলে?বাবা, তুমি এখনো কিন্তু সেই বাচ্চাই আছো, বড় হওনি।
---  আসলে মেয়ের কাছে বাবারা একটু বাচ্চাই থাকে।কেন জানিস তো? মেয়েরা যে বাবার ভক্ত হয় তাই মেয়ে রুপী মায়ের কাছে তার বাপটা সারা জীবনই বাচ্চা। যাক গে আসল কথায় আসি তোর কি কথা আছে আমার সাথে বলে ফেল।এর পরে তোর মা আবার চেঁচামেচি শুরু করবেন আমার শুতে রাত হয়ে যাচ্ছে বলে।
 অম্বিকা কথাটা যে কিভাবে শুরু করবে সেটাই বুঝতে পারছে না।নিজের বিয়ের কথা আবার নিজেই পছন্দ করেছে হ্যাংলার মত কিভাবে যে বলবে ভেবে না পেয়ে চুপ করেই থাকলো। অম্বিকা কে চুপ করে থাকতে দেখে নরেশবাবু বললেন, 
---কি এত ভাবছিস কিভাবে কথাটা আমায় বলবি? আমি তোকে সাহায্য করছি। সেদিন আমি যখন সন্ধ্যার সময় পাড়ার চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম তখন আমার একটু দূরে পাড়ার দুই ভদ্রলোক খুব নিচু স্বরে  তোর আর নিলয়ের কথা বলাবলি করছিলেন। কথাটা আমার কানে এসেছিলো।কিন্তু আমি তোকে কিছু বলিনি।তার একটাই কারণ ছেলেটিকে আমাদের দুজনেই খুব পছন্দ।আমরা প্রথম থেকে চেয়েও ছিলাম ও আমাদের জামাই হোক।কিন্তু তুই নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে বিয়ে করতে চাসনি।একটা প্রবাদ বাক্য আছে জানিস? " জন্ম,মৃত্যু,বিয়ে - তিন বিধাতা নিয়ে।" ছেলেটার জীবনে একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে হ্যাঁ আমি এটাকে অ্যাক্সিডেন্টই বলবো। তবে কারণ কিছু জানিনা আর জানার কোন  উপায়ও আমাদের হাতে নেই।একমাত্র তার কাছে তুই জানতে চাইতে পারিস। আর আমি এটা জানি তুই আজ আমাকে যে কথাটা বলতে চাইছিস সেটা নিলয় সম্পর্কিত।তোর মায়ের সাথে আমার এ ব্যাপারে কথা হয়েছে, তারও মত আছে।এখন তোদের সুবিধামতো একটা ডেট নিজেরাই ঠিক করিস।আমাদের কোন আপত্তি নেই।তুই আমাদের একমাত্র সন্তান আর তাছাড়া নিজে চাকরি করিস। তোর সুখের জন্য তোর জীবনের এই সিদ্ধান্তকে আমরা মেনে নেবো সেটা দুজনে আগেই আলোচনা করে রেখেছি।
--- তাহলে তো মা ও সবকিছু জানেন।মাকে ডেকে না এনে খুব অন্যায় করলাম।
--- সেটা ঠিক।তোর মা একটু কষ্ট পেয়েছেন বৈকি!তবে চোখের ইশারায় আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন তুই আমাকে আজ কি বলতে ডেকেছিস।
 কথাটা বলেই তিনি হাসতে লাগলেন।আর অম্বিকা লজ্জায় তখন মাটিতে মিশে যাচ্ছে।
--- বাবা,তুমি একটু বসো আমি মাকে ডেকে নিয়ে আসি।
--- হ্যাঁ সেটাই ভালো।কারণ তিনি তো বসে আছেন না ঘুমিয়ে আমার কাছে সব শুনে ঘুমাবেন বলে।
 আবারও তিনি হাসতে থাকেন।অম্বিকা বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে মাকে এ ঘরে ডেকে আনার জন্য।
  তিনজন বিষয়টা নিয়ে কথাবার্তা বলার সময় অম্বিকা তার বাবা,মাকে জানালো নিলয়ের ডিভোর্সের কারণটা।তারা চুপচাপ শুধু শুনেই গেলেন।ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় নরেশবাবু বলতে বলতে বেরোলেন," কপালে যা আছে তাতো ঘটবেই।বিধাতার লিখন কে খন্ডাবে ?"
সেদিন রাতেই অম্বিকা নিলয়কে ফোন করে সবকিছু জানায়।অম্বিকার ফোন আসার সাথে সাথেই নিখিলেশ তাকে বলে,
--- ওই তোর শ্যামের বাঁশি বাজছে।তুই কথা বল আমি ওদিকের সিটটা ফাঁকা আছে ওখানে গিয়ে বসছি।
দুজনে তখন ট্রেনে।বন্ধুর কথা শুনে নিলয় বললো,
--- আরে না,এখানেই বোস।ফোন তো আমার কানে থাকবে।
 অম্বিকা ফোনেই তার বাবা,মায়ের মত আছে এ বিয়েতে সে কথা জানিয়ে দিলো।নিলয়ও সে কথা শুনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বললো,
--- বুকের উপর থেকে একটা পাথর নেমে গেলো যেন।দমকা হওয়ার মত জীবন থেকে হঠাৎ করেই যেন খুশিটা হারিয়ে গেছিলো।আমার জীবনের অনেক কথায় তোর অজানা ;সবকিছু বলে উঠার সময় পাইনি।একদিন সময় করে সবই বলবো।তাই অম্বিকার সাথে আমার সম্পর্কটা নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলাম।এত সহজে যে ওর বাবা,মা সব মেনে নেবেন ভাবতেই পারিনি।
--- কেন কিসের জন্য মানবেন না বলে তোর মনে হয়েছিল?ভালো চাকরি করিস,দেখতে মন্দ নয়,পরিবারের একমাত্র ছেলে ।না মেনে নেওয়ার কারণটাই তো বুঝতে পারছি না।
--- আমার একটা অতীত আছে যা তোর অজানা।অম্বিকার বাড়ি শুধু নয় পুরো পাড়ার লোক সবটাই জানে।সেটা নিয়েই একটু ভয় ছিল।
--- কি সেই অতীত?
--- বলবো বন্ধু এবার সব বলবো।তবে এখন এই ট্রেনের মধ্যে নয়।

ক্রমশঃ 

No comments:

Post a Comment