বন্ধুত্বের মর্যাদা
" কতবার চেষ্টা করেছি সব কিছু জানাতে, কিন্তু ---
--- কিন্তু কি?
--- একদিন যে ব্যবহার আমি তোর সাথে করেছিলাম তারপরে তুই যে আমার পাশে দাঁড়াবি এটা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।আর তাছাড়া সাহসও পাইনি বলতে পারিস।।যদি জানতে চাস কিসের সাহস?আমি বলব আমার লজ্জা আর লোক জানাজানির ভয়।
--- পমের বাবা এখন কোথায় থাকেন?
---আমি জানিনা সে আমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর আমি আর তার সাথে কোন যোগাযোগ রাখিনি।
--- কিন্তু তুই তো আমাকে বলেছিলি সুদীপ্ত তোকে ভালোবাসে।তোদের দু'বাড়ির থেকেও মেনে নিয়েছে সম্পর্কটা।তোদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছিল তখন।
--- হ্যাঁ আমি সেটাই জানতাম সুদীপ আমায় ভালোবাসে।আর যেহেতু বিয়েটা ঠিক হয়ে গেছিল তাই আমার জীবনের চরম সম্পদ অবলীলায় তার কাছে সমর্পণ করেছিলাম।কিন্তু আমি কখনোই ভাবতে পারিনি আমার প্রেগনেন্সির খবর পেয়ে সে বাচ্চাটিকে পৃথিবীর আলো দেখাতে অস্বীকার করবে।সে আমায় স্বত্ব দিয়েছিল বাচ্চাটিকে যদি আমি নষ্ট করে ফেলি তাহলে সে আমাকে বিয়ে করতে রাজি আছে।তা না হলে নাকি বাড়ি এবং আত্মীয়স্বজনের কাছে তার সন্মান নষ্ট হবে। সুদীপ্তকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম আমাদের ভালোবাসার প্রথম সন্তান এর মধ্যে কোন পাপ নেই।কিন্তু ও ওর কথা থেকে বিন্দুমাত্র সরেনি।তাই আমাকে ওর কাছ থেকে সরে আসতে হয়েছিল। পরে শুনেছি সুদীপ্ত বিয়ে করেছে।আজ পাঁচ বছর তাদের কোনো সন্তান হয়নি।আমি ওর সব খবরই জান। কিন্তু আমার খবর সুদীপ্ত কিছুই জানেনা।তার কারণ হচ্ছে বাচ্চাটিকে নষ্ট করবো না বলে আমি যখন নাছোড়বান্দা তখন মা আমাকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাট বিক্রি করে অন্য ফ্ল্যাটে গিয়ে ওঠেন।মানুষের কথার ঝাল থেকে বাঁচতে আর চোখ এড়াতে ঠাকুরের আসন থেকে সিঁদুর নিয়ে আমাকে নিজেই পরে নিতে বলেন মা।এই যে সিঁদুর আমার কপালে দেখছিস এ কিন্তু সুদীপ্তর দেওয়া সিঁদুর নয়।তার মুখ স্মরণ করে লোকলজ্জার ভয়ে এক কুমারী মায়ের নিজের হতে পরা সিঁদুর।সবাই জানে আমার স্বামী বিদেশে থাকে। ভাগ্যিস আমার স্কুলের চাকরিটা ছিল।তাই মা,আমার আর পমের কোন অসুবিধা হয়নি।
কলেজের তিন বন্ধু। নৈরিতা,সুদীপ্ত আর রনিত।দুটি ছেলে আর একটি মেয়ে যখন বন্ধুত্ব হয় অধিকাংশ সময়ই দেখা যায় ছেলে দুটিই মেয়েটির প্রেমে হাবুডুবু খায়। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।সুদীপ্ত এবং রনিত দুজনই ভালোবাসে নৈরিতাকে। রনিত যখন নৈরিতাকে তার ভালোবাসার কথা জানায় তার অনেক আগে থাকতেই ওদের দু'বাড়ির মধ্যে কথা হয়ে গেছে সুদীপ্ত চাকরি পেলেই তারা চারহাত এক করে দেবেন।তাই রনিত নৈরিতার কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়।রনিত জানায় ," তাহলে অন্তত বন্ধুত্বটা বজায় রাখিস।"
তারপর এই সাত বছর পর আবার রনিতের সাথে নৈরিতার হঠাৎ করেই দেখা একটা শপিং মলে।সেদিন মামুলি কথাবার্তা হয়।ফোন নম্বরটাও আদানপ্রদান হয়।তারপর নৈরিতার ডাকে আজ সাতদিন পরে রনিত হাজির হয় তার ফ্ল্যাটে।সুদীপ্ত কোথায় জানতে চাওয়ায় ভেঙ্গে পড়ে নৈরিতা।সুপম ওরফে পম জানে তার বাবা বিদেশে থাকেন। ও যখন বড় হবে তখন ওর বাবা ফিরে আসবেন।অনেকক্ষণ চুপ থেকে রনিত বলে,
--- আজ যদি আমি পুনরায় তোর কাছে কিছু চাই তুই কি সেদিনের মতই আমায় ফিরিয়ে দিবি?
--- আজ তোর চাওয়ার মত আমার কাছে কিছুই নেই।
--- আছে রে আছে --- বল দিবি তো?
--- কি চায় তোর বল।আমার ক্ষমতার মধ্যে থাকলে নিশ্চয়ই দেবো।
--- তোর সন্তানের পিতৃপরিচয়টা দিতে চাই।দিবি এ অধিকারটা আমায়?
--- কি বলছিস কি তুই?তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে নাকি?
--- আমি শুধু এইটুকুই অধিকার চাই,কথা দিচ্ছি এর জন্য তোর কাছে অন্য কোন দাবি নিয়ে কখনোই দাঁড়াবো না।আজীবন তোর পাশে থেকে বন্ধুত্বের মর্যাদা রেখেই চলবো।
নৈরিতা হাউ হাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
No comments:
Post a Comment