"আমার জীবনের প্রথম ভুল সিদ্ধান্ত ছিল সেটা ---যেদিন তোর ভালোবাসাকে অগ্রাহ্য করে আমি সন্দীপকে বিয়ে করেছিলাম।তুই আমাকে ভালোবাসতিস আর আমি ভালবাসতাম সন্দীপকে।তাই আমি ভেবেছিলাম সন্দীপকে বিয়ে করে আমি সুখী হব।কিন্তু আমার জীবনের বেস্ট ফ্রেন্ড যার সাথে সব কথা আমি শেয়ার করি তিনি ছিলেন আমার বাবা।বাবা সেদিন সবকিছু শুনে আমাকে বলেছিলেন, 'জীবনে সুখী হতে গেলে সেই মানুষটাকে বিয়ে করা উচিত যে তোকে ভালবাসে, তুই যাকে ভালোবাসিস তাকে নয়।বাবার কথার অর্থ সেদিন আমি বুঝেছিলাম না।কিন্তু আজ আমি বুঝতে পারি সত্যিই জীবনে সুখী হতে গেলে দরকার প্রকৃত ভালোবাসার। সন্দীপের সাথে আমার বিয়ে হওয়ায় বাড়ির সকলের অমত থাকলেও কেউ বাধা দিয়েছিল না।তারা আশায় বুক বেঁধে ছিলেন হয়তো তাদের আদরের কন্যা তার ভালবাসার পাত্রকে বিয়ে করলে সুখী হতে পারে।তাই তারা নিমরাজি হলেও সন্দীপেরর সাথে বিয়েটা মেনে নিয়েছিলেন।
সন্দীপেরর আরো একটি ভাই ছিল।সে কলেজে পড়ত। সন্দীপের থেকে তার চেহারা স্বাস্থ্য খুবই ভালো।বিয়ের সময় সন্দীপ দিন দশেক ছুটি নিয়েছিল। ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ার পর সন্দীপ অফিসে জয়েন করে। আর ঠিক তার দিন সাতেক পরেই সমীর ফাইনাল পরীক্ষার কারণে কলেজ যাওয়া বন্ধ করে। সন্দীপের মায়ের বয়স হয়েছে।তিনি অধিকাংশ সময় তার নিজের ঘরেই শুয়ে থাকেন।সমীরের সাথে বিয়ের কয়েক দিনের মধ্যেই আমার একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হাসি-ঠাট্টা, গল্পগুজব, হাহা -হিহি সবকিছুই চলতো।সমীর আমাকে খুব ভালবাসতো,আর আমিও তাকে ছোট ভাইয়ের মতন স্নেহ করতাম।
সন্দীপ বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে ছয়টার মধ্যে বাড়িতে ফিরে আসতো আর ঠিক এই সময়ে অধিকাংশ দিনই বাড়িতে ফিরে সে দেখতো আমি আর সমীর বসে হয় চা খাচ্ছি না হলে চা খাওয়া হয়ে গেছে দুজনে বসে গল্প করছি। প্রথম প্রথম সন্দীপ এটা নিয়ে মাথা ঘামাতো না
।কিন্তু তারপরেই শুরু হল তার ভাই এবং আমাকে নিয়ে তার নানান ধরনের কুৎসিত ইঙ্গিত। মাঝেমধ্যে এসব কথাগুলো সমীরও শুনেছে।তাই সে আমাকে অ্যাভয়েড করতে লাগলো। আমিও ঠিক তেমনই তাকে অভয়েড করতে থাকলাম। সন্দীপ বাড়িতে থাকাকালীন সময়ে আমি ও সমীর কেউই কারও সাথে কথা বলতাম না।এমন ভাবেই দুজনে থাকতাম যেন কেউ কাউকে চিনি না।খুব খারাপ লাগত, যাকে নিজের ছোট ভাইয়ের মতন দেখি তাকে নিয়ে এই ধরনের কুৎসিত ভাষা।মন থেকে মেনে নিতে পারতাম না। তখন বারবার করে বাবার কথা গুলো মনে পড়তো।সন্দীপ যদি আমার ভালোবাসাটা সত্যিই বুঝতে পারত,সে যদি সত্যিই আমায় প্রকৃত ভালোবাসতো তাহলে অন্তত নিজের ভাইকে নিয়ে এই ধরনের কথা সে আমায় বলতো না।
একই পাড়ায় থাকার সুবাদে তোর সাথে আমার বন্ধুত্বটা অনেক পুরনো। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি কিন্তু তোকে কোনদিন ভালোবাসতাম না।এমনকি তুই যে আমায় ভালোবাসিস এটাও আমি বুঝতাম না।কিন্তু তুই যখন আমাকে প্রপোজ করলি সেদিনই প্রথম বুঝলাম তুই আমায় ভালবাসিস।কিন্তু আমিতো ভালবাসতাম সন্দীপকে। আমার বিয়ের আগে তুই চাকরি নিয়ে ব্যাঙ্গালোর চলে গেলি। আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলি। আসলে এক্ষেত্রে তোকে কিছু বলারও নেই।কারণ জীবনের ছেলেবেলার বন্ধু, প্রথম ভালোবাসার কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে তার কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু আমি তো জীবনে তখন চরম ভুল করে বসে আছি।সন্দীপকে ভালবেসে তোর প্রকৃত ভালোবাসাকে অগ্রাহ্য করে তার সাথে সুখী হওয়ার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।সন্দীপের অহেতুক সন্দেহ যখন আমার মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন চোখ বুজলেই যেন আমি তোকে দেখতে পেতাম।তোর কথা তখন আমার ভীষণভাবে মনে পরতো।কিন্তু আমি তখন খাঁচায় বন্দি পাখি।ইচ্ছেমতন ওড়ার ক্ষমতাটা হারিয়ে ফেলেছি। জীবনের এত বড় ভুলটা শুধরানো তখন আর কোন উপায়ই ছিল না। এরইমধ্যে আমি টের পেলাম আমার ভিতরে আরেকটি প্রাণীর অস্তিত্ব। আমি ভেবেছিলাম সন্দীপ এই খবরে খুশি হবে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সন্দীপ এ সন্তানের দায় চাপিয়ে দিল তার ভাইয়ের ঘাড়ে।সমীর এ কথা শুনে নিজেকে শেষ করে দেওয়ারও চেষ্টা করেছিল।তখন সন্দীপ অফিসে ছিল।অনেক কষ্টে সেদিন আমি সেযাত্রা থেকে তাকে রক্ষা করেছিলাম।কিন্তু তারপরেই সমীর বাড়ি ছেড়ে একটা মেসে গিয়ে ওঠে।আমার সাথে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।আর তখন সন্দীপ আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে যায় আমার উপর। শেষ পর্যন্ত আর সহ্য করতে না পেরে সন্দীপকে ছেড়ে মাথা নিচু করে আবার বাবার কাছে ফিরে আসি।
আজ দুবছর হতে চললো সন্দীপের খবর কিছু আমি জানিনা।তবে পাড়ার লোকের কাছে শুনে সমীর এসেছিল।এখনো মাঝে মধ্যে আসে। বুবাইকে ভীষণ ভালোবাসে।তোদের বাড়িতে গেছিলাম বুবাই হওয়ার পর।কাকিমা বললেন,তুই প্রায় তিনবছর কলকাতা আসিস না।"
--- বাড়িতে ফিরে তোর কথা জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গেই ছুটে এসছি।যদি কোনদিন নূতন করে নিজের জীবনটাকে সাজিয়ে নিতে চাস আমায় জানাস।আমি আছি তোর পাশে।আমি আজও তোকে সেই আগের মতই ভালোবাসি।
No comments:
Post a Comment