ভালোবাসার আঘাত
"আমি অনেক কিছু করলে, অনেকেরই পসার থাকতো না তাই আমি কিছুই করিনি ---"ছমাসের দাম্পত্য জীবনে শ্রেষ্ঠা আজ অফিস থেকে বেরিয়ে ঠিকই করে এসেছিল বাড়িতে এসে সুদীপের সাথে একটা হেস্তনেস্ত সে করবে।বিয়ের দুমাসের মধ্যেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে "ভালো চাকরি খুঁজে নেবো" এ কথা গত চারমাস ধরে শুনতে শুনতে শ্রেষ্ঠা আজ সত্যিই ক্লান্ত। অফিস আর বাড়িতে উদয়াস্ত পরিশ্রম,ঘরে বেকার স্বামীর সব সময় মোবাইল নিয়ে খাটের উপর শুয়ে খুট খুট করা সে আর মেনে নিতে পারছিল না।বাড়িতে ফিরে দুকাপ চা করে স্বামীর পাশে গিয়ে বসে।
--- কি গো কাল তোমাকে যে অফিসটায় দেখা করতে বলেছিলাম সেখানে কি বললো?
অলসতা কাটিয়ে উঠে বসে মাথার বালিশটা দুপায়ের উপর রেখে চা খেতে খেতে সুদীপ বলে,
--- ও তোমার সুখেন্দুদা যে খবরটা দিয়েছিলো?না,আমি সেখানে যাইনি।আমি আমার এক বন্ধুর কাছে খবর নিয়ে জানলাম কোম্পানির মালিক কর্মচারীদের মাইনেটাই ঠিকভাবে দেয় না।
--- তা কার কাছে এত বিশাল খবরটা পেলে?
আড় চোখে শ্রেষ্ঠাকে একবার দেখে নিয়ে চায়ে চুমুক দিতে দিতে সুদীপ বলে,
--- ও তুমি চিনবে না আমার এক বন্ধু।ওই কোম্পানিতেই চাকরি করে।সেই বলছিলো।
--- তোমার বন্ধুর নাম কি?
--- তারমানে?তুমি কি আমায় জেরা করছ নাকি? তুমি আমার সব বন্ধুদের চেনো নাকি?
--- জেরা করবো কেন? আমি তো জানতে চাইছি আর আজকেই সেই বন্ধু ফোন করেছিল?বন্ধুর নামটা একটু বল।
--- তোমার কি মনে হচ্ছে আমি মিথ্যা বলছি?
---আরে তুমি এত রেগে যাচ্ছ কেন?রেগে যাওয়ার পিছনে নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে।আসলে তুমি কাজ করে খেতে চাও না।আমার চাকরি দেখে আমার সাথে প্রেম করে নিজের দুঃখের কথা জানিয়ে আমাকে কনভিন্সড করে বিয়ে করেছিলে।আর আমিও সরল মনে তোমার কথা আর তোমার ভালোবাসাকে বিশ্বাস করে বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। বাবা মার অমতে গিয়ে তোমায় বিশ্বাস করে তাদের ছেড়ে চলে এসেছিলাম। আর তার ফল আমি প্রতিটা মুহূর্তেই পাচ্ছি।তুমি আমায় বলেছিলে যেমন তেমন একটা কাজ খুঁজে নেবে।কিন্তু আজ ছ'মাস হয়ে গেলো আমাদের বিয়ে হয়েছে।বিয়ের পর দুমাস চাকরি করেছো।তারপর তোমাকে আজ পর্যন্ত আমি বাড়ির বাইরে কাজ খোঁজার জন্য বেরোতে দেখলাম না।অথচ তোমার তিন বেলা খাবার গুছিয়ে তোমার সামনে আমাকে দিতে হয়।ঘরের কাজকর্ম করি আমি,অফিস করি।অফিসে বেরোনোর আগে যেখানে যেমন জিনিস পরে থাকে বাড়িতে ফিরে দেখি ঠিক সেই রকমই পরে আছে।অফিস থেকে ফিরে আমাকে সেই সব কাজ করতে হয। অথচ ঘরে থেকেও তুমি কোন কাজ করো না।পুরুষেরা বাইরে কাজ করে, যেসব মেয়েরা চাকরি বাকরি করে না তারা সংসারের কাজ করে।আমি চাকরি করছি, বাইরে বের হচ্ছি অথচ তুমি ঘরে থেকেও ঘরের কোন কাজ করছ না;কেন করবে না?সংসার তা তো দুজনের। একজন ইনকাম করলে আরেকজনকে ঘরের কাজ করতেই হয়।তুমি তাও করবে না। চাকরির চেষ্টাও করবে না।তুমি আমার ঘাড়ের উপর বসে খাবে।কিন্তু আমিতো তা হতে দেবো না। ঠিক যেভাবে বাবা মার অমতে বিয়ে পিতৃমাতৃহীন একটা ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করে সবকিছু ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলাম,এখানেও আমি কিন্তু যে কোন সময় সবকিছু ছেড়ে বেরিয়ে যেতে দুবার ভাববো না।আমার পায়ের তলায় মাটি শক্ত।আমি রোজগার করি। তুমি বেকার বসে খাও। সুতরাং চিন্তা করে দেখো হয় সংসারের কাজ নয়তো টাকা ইনকাম।যেকোন একটাকে তোমার বেছে নিতেই হবে।ওই সার্টিফিকেট বিক্রি করে কিন্তু সংসার বা পেট চলবে না। গাদা গুচ্ছের সার্টিফিকেট দেখিয়ে আর আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে আমার চাকরি দেখে বিয়ে করেছিলে আমায় এটা আমি এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
প্রথম প্রথম সুদীপ তর্ক করে গেলেও একসময় সে এতটাই রেগে যায় শ্রেষ্ঠার গায়ে হাত তুলতে উদ্যত হলে খপ করে সে হাতটা ধরে ফেলে বলে,
--- অনেক পৌরুষত্ব দেখিয়েছো।বাকি ছিল এটাই।আমারই খাবে আর আমার উপর ছড়ি ঘুরাবে আমি তো এটা বরদাস্ত করবো না।
সুদীপ তেজ দেখিয়ে খাট থেকে উঠে একটা জমা গায়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।রাতে আর ফেরে না।সারাটা রাত উৎকণ্ঠা নিয়ে কাটে শ্রেষ্টার।বারবার তাকে ফোন করলে সে ফোন কেটে দিয়েছে।কিন্তু আঘাত না দিলে সুদীপের মধ্যে যে কোন পরিবর্তন আসবে না এটা সে ভালোভাবেই বুঝেছিল।এই ছাড়া তার কাছে কোন উপায়ও ছিলনা।অফিসের কাজে ভালোভাবে মন বসাতে পারছিল না।হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলে দেখে সুখেন্দুদা ফোন করেছে।
--- তোর বরের কাজটা হয়ে গেছে রে।আমি সাথে করেই ওকে আমাদের বসের ঘরে নিয়ে গেছিলাম।ওর একটা চাকরির যে কত প্রয়োজন সেকথা বলতে বলতে কেঁদেই দিয়েছিলো।প্রথম প্রথম খুব একটা মাইনে না দিলেও আস্তে অস্তে মাইনেটা বাড়বে রে।
শ্রেষ্ঠা ফোনটা নিজের ড্রয়ারে রেখে বাথরুমে ঢুকে জোরে কলটা চালিয়ে দিয়ে কেঁদে কেটে একটু হালকা হয়ে তাড়াতাড়িই অফিস থেকে বেরিয়ে পরে।বাড়িতে ফিরে দেখে সুদীপ বাড়ির গেটের কাছে বসে আছে।ঘরে ছিল তালা দেওয়া কারণ রাগের মাথায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সুদীপ ডুপ্লিকেট চাবিটা নিয়ে বেরিয়েছিল না।তার হাতে ধরা একটি মিষ্টির প্যাকেট।