সেদিন বাড়িতে এসে বাবার পায়ের উপর আছড়ে পড়ে কাঁদতে থাকে। উভয়ের চোখে জল। বিপিনবাবু তাকে জোর করে পায়ের উপর থেকে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরেন। বলতে থাকেন,
-- ভুলে যা মা সবকিছু। নতুন করে আবার পড়াশুনা শুরু কর। আমি জানতাম তুই ফিরে আসবি। ছেলেমেয়েরা তো ভুল করবেই। তাদের সঠিক পথ দেখানোর দায়িত্ব তো মা বাবার। কিন্তু আমায় তো কোন সুযোগই তুই দিসনি। সাঁতার না জেনে জলে নামলে তো এরূপ হবেই। যাক গে - ওসব নিয়ে একদম ভাবিস না। আমি বাড়িতে বলে দেবো কেউ যেন তোকে এসব নিয়ে কোন কথা কখনোই কিছু না বলে।
বাপ মেয়ের কথার মাঝখানে বোনেরা আর মা চলে আসেন। শেষ কথাটা সকলেরই কানে যায়। বিদিশা গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। বিদিশার ধাতস্ত হতে দিন সাতেক সময় লাগে। বাবার সাথে কলেজে গিয়ে টিসি নিয়ে অন্য কলেজে ভর্তি হয়।
বিপিনবাবু বিদিশাকে না জানিয়ে সুনীলের বিরুদ্ধে থানায় মেয়ের নিরাপত্তার কারণে দেখিয়ে একটি ডাইরি করেন। সেই ডায়রির একটি জেরক্স নিয়ে সুনীলের কলেজের প্রিন্সিপালের সাথে দেখা করেন এবং প্রিন্সিপ্যালকে অনুরোধ করেন সুনীলকে ডেকে তাকে একটু ধমকে দিতে যাতে সে আর কোনদিন বিদিশাকে বিরক্ত না করে। তাহলে পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে এফ আই আর করতে বাধ্য হবেন। হাত জোড় করে বৃদ্ধর মেয়েকে বাঁচাতে এই করুন আকুতি প্রিন্সিপ্যাল ফেলতে পারেননি। তিনিও যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেন।
বিদিশা মাত্র ছ'মাসেই বুঝে গেছে জীবনে স্বপ্ন দেখা যায় কিন্তু সেই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে হলে কঠোর পরিশ্রম প্রয়োজন। তার জীবনে এখন একটাই লক্ষ্য একটা ভালো চাকরি পাওয়া। পড়াশুনার সাথে সাথে সে নানান জব এক্সাম দিতে শুরু করে। কলেজ,বাড়ি আর পড়াশুনা এটাই বিদিশার নিত্য রুটিন হয়ে দাঁড়ায়। সবকিছু সত্ত্বেও আগের সেই উচ্ছলতা, বোনদের সাথে বসে আগের মত গল্পগুজব করতে সে আর পারে না। কোথায় যেন একটা কাঁটা খসখস করতে থাকে। সব সময় বিদিশা একটা অপরাধ বোধে ভোগে।
চলবে -
No comments:
Post a Comment