স্বপ্ন দেখা আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার মধ্যে আকাশপাতাল প্রভেদ। জীবনের শুরুতেই হঠাৎ করেই কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া যা জীবনের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। সিদ্ধান্ত কখনো মানুষের সঠিক হয় আবার কখনো বা সেই সিদ্ধান্তের ফলে জীবনের সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায়।
বিদিশার জীবনে চরম ভুল ছিল সুনীলের কথাই সায় দিয়ে একটা বেকার মধ্যবিত্ত ছেলেকে পালিয়ে এসে বিয়ে করা। অল্প বয়সের ভালোবাসায় দু'জনেই ছিল অন্ধ। একটা বালখিল্য সিদ্ধান্তে দু'জনের জীবনই যে তছনছ হয়ে যেতে পারে তারা তা স্বপ্নেও কল্পনা করেনি।
ভালোবাসা একটা মোহ ঠিকই অনেক সময় শারীরিক সম্পর্কে অনেকেরই সেই মোহ কেটে যায়। বিদিশার জীবনেও ঠিক তাই হল। বিদিশার কলেজ তো সুনীল বন্ধ করলোই উপরন্তু কারণে অকারণে তাকে খারাপ কথা বলতেও ছাড়ে না।
বিদিশার কলেজ বন্ধ হল, বাইরে বেরোনো বন্ধ হল এমনকী রাস্তার পাশে বাড়ি হওয়ার ফলে বারান্দায় আসাও বন্ধ হল। খাঁচায় বন্দী পাখির মত সারাটা সময় দু'চোখের জলে দিনাতিপাত। আর রাত হলেই সুনীলের ঘনঘন শারীরিক খিদে মেটাতে নাজেহাল। বিদিশা খুঁজে পায় না সেখানে বিন্দুমাত্র ভালোবাসা। অতিষ্ট হয়ে ছ'মাসের মধ্যেই বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কোথায় যাবে সে? বাবা মায়ের মুখে তো চুনকালি দিয়ে এসেছে। ভাবতে থাকে তাঁদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে তাঁরা কি তাকে ফিরিয়ে দেবেন? একবার শেষ চেষ্টা করে সে দেখবে। যদি জীবনটাকে আবার গুছিয়ে নিতে পারে।
বেরিয়ে পড়ে একদিন সন্ধ্যায় সুনীলের বাড়ি থেকে। অবশ্য বেরোবার আগে সে শ্বাশুড়িকে জানিয়েই আসে সে বাপের বাড়িতে চলে যাচ্ছে। যে সুনীলকে সে ভালবেসেছিল আর যার সাথে এই ছ'মাস সে কাটালো দু'টো সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ। এভাবে বেঁচে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়। শাশুড়ি যেদিন বিদিশা এ বাড়িতে এসেছিল সেদিনও যেমন চুপ ছিলেন আজও তিনি চুপই থাকলেন। শুধু বললেন,
-- আমি আমার ছেলেকে খুব ভালোভাবে চিনি মা। তুমি যে এখানে থাকতে পারবে না এটা আমি জানতাম। ও একদম ওর বাপের ধারা পেয়েছে। ওর বাবাও ঠিক একইভাবে আমায় সন্দেহ করতো। আমার জীবনটাও ঝাড়াঝাড়া হয়ে গেছে ওর বাবার কারণে। তবুও তিনি একটা ভালো চাকরি করতেন। আর আমার যাওয়ারও কোন জায়গা ছিল না। তাই মুখ বুঝে সব সহ্য করেছি। তোমার যখন যাওয়ার জায়গা আছে তখন চলে যাও। বাবা মাকে সন্তান আঘাত দিলেও বাবা মা কখনোই সন্তানের খারাপ চান না। তারা তোমায় ঠিক আশ্রয় দেবেন। পড়াশুনাটা চালিয়ে যাও, নিজের পায়ে দাঁড়াও জীবনের এই অধ্যায়টা ভুলে যেও।
বিদিশা এসে বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ে। একজন মহিলা এসে দরজা খুলে বলেন,
-- কাকে চাই?
-- আমি বিদিশা। মা বাবা কেউ বাড়িতে নেই?
-- তুমি কাকে চাইছো বলো তো?
-- বিপিন পাল। উনি বাড়িতে নেই?
-- এই নামে এখানে কেউ থাকে না। তবে শুনেছি উনি এখানে থাকতেন। মাসখানেক হল উনি এখান থেকে অন্যত্র চলে গেছেন। উনার বড় মেয়ে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে চলে যাওয়াতে পাড়ার লোকে কারণে অকারণে উনাকে কুকথা শোনাতে ছাড়েনি। তাই উনি পরিবার নিয়ে এখান থেকে চলে গেছেন।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন,
-- আচ্ছা তুমি কি উনার সেই বড় মেয়ে?
বিদিশা কোন উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে আসলো।
চলবে -
No comments:
Post a Comment