বিদিশার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। কোথায় যাবে কী করবে ভাবতে ভাবতে বড় রাস্তায় এসে দাঁড়ালো। পাড়ার শম্ভুকাকু ওকে দেখে জানতে চাইলো,
-- মা আমি জানি তুই তোর বাবার কাছে এসেছিলি। কিন্তু তাঁরা তো এখান থেকে বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। তুই কি সেখানে যেতে চাস?
-- তুমি জানো কাকু ওই বাড়ির ঠিকানা?
-- হ্যাঁ একমাত্র আমিই জানি। কারণ তোর বাবা আমাকে একটা দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। তুই চলে যাওয়ার পর বুঝতেই পারছিস তাদের মনের অবস্থা। থানা পুলিশ করেননি। কেউ একজন তোদের দেখেছিল মন্দিরে একটি ছেলে তোকে সিঁদুর পরিয়ে দিয়েছে। তোর বাবা তারপর খবর নিয়ে জেনেছিলেন ছেলেটি বেকার এমন কী তার পড়াশুনাও শেষ হয়নি। তিনি আমায় বলেছিলেন,
-- শম্ভু, মেয়েটা খুব ভুল করলো। ও ওখানে টিকতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। ফিরে ও আসবেই। থানা পুলিশ করে জোর করে ওকে ফিরিয়ে আনার থেকে নিজের ভুলটা ধরে ফিরে আসুক। তারপর না'হয় অন্যকিছু ভাবা যাবে কী বলো? আমি তোমাকে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি ও এখানেই আসবে। আর এটাও জানি ও তোমার কাছেই আমাদের খবর জানতে যাবে। ওতো জানে তোমার সাথে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্কটা। তাই ঠিকানাটা তোমায় দিয়ে গেলাম। আমার বোকা মেয়েটা ফিরে আসলে ওকে ঠিকানাটা দিও।
উনি বিদিশার কাছে কোন কথা জানতেও চাইলেন না। মানিব্যাগ বের করে ঠিকানাটা ওর দিকে এগিয়ে দিতে গিয়ে দেখেন বিদিশা তখন হাউকাউ করে কাদঁছে। কিন্তু সে কান্নায় নেই কোন শব্দ। উনি বুঝতে পারলেন বিদিশার বুক বিদীর্ণ করে চোখের থেকে অবিরল ধারায় জল পড়ছে।
-- তোর কাছে কি কোন টাকাপয়সা আছে?
বিদিশা মাথা নাড়িয়ে না বলে।
শম্ভুকাকু পুণরায় মানিব্যাগ খুলে কয়েকটি টাকা ওর হাতে দিয়ে বললেন,
-- এইটা রাখ। ভালো থাকিস মা। নিজের ভুল যখন বুঝতে পেরেছিস এবার জীবনটাকে নিজের মত করে গড়ে না। একটা কথা মনে রাখিস মা কোন মা কিংবা বাবা তার সন্তানের খারাপ চান না। তাঁরা অন্তত চেষ্টা করেন সন্তানের কিসে ভালো হবে সেটা বুঝতে। কিন্তু ভাগ্য বলেও একটা কথা আছে। তাকেও মানতেই হয়। এবার তুই এগো মা। রাত হয়ে যাচ্ছে।
চলবে -
No comments:
Post a Comment