Monday, February 17, 2025

সন্দেহ বড় রোগ (৭ ম ও শেষ পর্ব)

  বিদিশার এই অস্থিরতার অবসান হয় একটি ফোন কলে। একটা টিস্যু পেপার নিয়ে এসিতে বসে থাকা কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে ফোনটা ধরে ' হ্যালো ' বলতেই অপরপ্রান্ত থেকে আওয়াজ শুনেই বুঝে যায় কে?
-- আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই 
-- কে বলছেন আপনি?
-- তুমি আমার গলা শুনে চিনতে পারছো না?
-- না চিনতে পারছি না
-- এই ক'টা বছরে গলাটাও ভুলে গেছো?
-- আপনি আপনার পরিচয় দিন আর কী দরকারে ফোন করেছেন সেটা বলুন। এটা আমার অফিস টাইম। ফালতু কথা বলে সময় নষ্ট করবেন না।
-- আমি জানি তুমি আমায় চিনতে পেরেছো। তবুও বলছি আমি সুনীল বলছি।
-- আপনার সাহস হয় কীকরে একজন অফিসারকে তুমি বলে কথা বলার? প্রয়োজনীয় কথা থাকলে বলতে পারেন তানাহলে আমি রাখছি।
অপর প্রান্তে সুনীল নিজেকে সামলে নেয়। বুঝতে পারে এত বছর পরেও বিদিশা তাকে ক্ষমা করতে পারেনি। সুতরাং পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে কোন কিছুই আশা করা যাবে না তার কাছে। এবার সে গলার স্বরের পরিবর্তন এনে বলে,
-- আপনাদের অফিস থেকে আমি একটি লোন নিয়েছিলাম। আপনাদের দেয় সময়মত তা পরিশোধ করতে পারিনি। আগামী পরশু লাস্ট ডেট। বাড়ির দলিল বন্ধক দেওয়া অফিসে। যদি আমাকে আর ক'টা 
মাস সময় দেওয়া যেত তাহলে --
-- দেখুন এভাবে তো এসব কাজ হয় না তবুও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দেখবো যদি কিছু করতে পারি। তবে আপনাকে একটা এপ্লিকেশন করতে হবে অফিসের জিএম এর কাছে। আগামীকাল এপ্লিকেশন করে নিয়ে অফিসে আসবেন।
 কথাগুলো বলেই বিদিশা ফোন কেটে দেয়। সেই মুহূর্ত থেকে সে নানান জায়গায় ফোন করে আপ্রাণ চেষ্টা করে যদি কিছুটা সময় লোন শোধ করার জন্য বাড়তি দেওয়া যায় সুনীলকে। 
 পরদিন সুনীল অফিসে আসে। বিদিশার রুমে ঢোকার জন্য তাকে আলাদা করে অ্যাপয়েনমেন্ট নিতে হয়। ত্রিশ মিনিট পর তার ডাক আসে। সুনীল গেটের বাইরের থেকে জানতে চায়
-- ভিতরে আসতে পারি ?
বিদিশা এই কয়েক ঘন্টায় নিজের মনকে অনেকটা শক্ত করে নিয়েছে।
-- হু আসুন। 
 সেই সুনীল যাকে ভালোবেসে সে ঘর ছেড়েছিল। সুনীল যেন যুবক হয়ে আরও সুন্দর দেখতে হয়েছে। বিদিশা সুনীলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
-- বলুন কী করতে পারি আপনার জন্য? 
সুনীল এপ্লিকেশনটি সামনে এগিয়ে দেয়।
-- ও আচ্ছা আচ্ছা কালকে আপনি ফোন করেছিলেন। 
 অ্যাপ্লিকেশনটি সুনীলের হাত থেকে নিয়ে ওটা পড়ে ইচ্ছাকৃত সুনীলের সামনেই সই আর সিলটা দিয়ে পেপার ওয়েট দিয়ে চাপা দিয়ে রেখে বলে,
-- এবার আপনি আসুন। দেখি আপনার জন্য কী করতে পারি
আচমকা সুনীল ডেকে বসে
-- বিদিশা
-- সাট আপ! একজন অফিসারকে নাম ধরে ডাকার সাহস কোথা থেকে পান? বেরিয়ে যান এখান থেকে। চিৎকার করে ওঠে বিদিশা।
 সুনীল এতটা আশা করেনি। সে মুখ নিচু করে বিদিশার চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসে।
 সুনীল বেরিয়ে যাওয়ার পর পিওনকে ডেকে বলে,
-- মিনিট দশেক পরে পুণরায় লোক পাঠাবেন। 
 ওয়াশরুমে গিয়ে কিছুক্ষণ কেঁদে কেটে চোখে মুখে জল দিয়ে বেরিয়ে আসে সে। অনেক চেষ্টা করে একমাস সময় দিতে পারে সুনীলের বাড়ি বাঁচানোর।
 সুনীল কী কারণে লোন নিয়েছিলো? এখন সে কী করে? বিয়ে করেছে কিনা অনেককিছুই জানার ইচ্ছা থাকলেও নিজের ইছাগুলিকে বহু কষ্টে সে দমন করেছে। এরপর সুনীল যতবার অফিসে এসেছে কোনদিনও বিদিশার চেম্বারে ঢুকতে পারেনি কারণ অফিসে বলাই ছিল "ওই লোকটি যেন আমার চেম্বারে আর না ঢোকে।"

শেষ ২৬- ১২-২৪

সন্দেহ বড় রোগ ( ষষ্ঠ পর্ব)

 কেটে গেছে জীবন থেকে অনেকটা সময়। বিদিশা
সেদিন বাড়িতে এসে বাবার পায়ের উপর আছড়ে পড়ে কাঁদতে থাকে। উভয়ের চোখে জল। বিপিনবাবু তাকে জোর করে পায়ের উপর থেকে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরেন। বলতে থাকেন,
-- ভুলে যা মা সবকিছু। নতুন করে আবার পড়াশুনা শুরু কর। আমি জানতাম তুই ফিরে আসবি। ছেলেমেয়েরা তো ভুল করবেই। তাদের সঠিক পথ দেখানোর দায়িত্ব তো মা বাবার। কিন্তু আমায় তো কোন সুযোগই তুই দিসনি। সাঁতার না জেনে জলে নামলে তো এরূপ হবেই। যাক গে - ওসব নিয়ে একদম ভাবিস না। আমি বাড়িতে বলে দেবো কেউ যেন তোকে এসব নিয়ে কোন কথা কখনোই কিছু না বলে।
    বাপ মেয়ের কথার মাঝখানে বোনেরা আর মা চলে আসেন। শেষ কথাটা সকলেরই কানে যায়। বিদিশা গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। বিদিশার ধাতস্ত হতে দিন সাতেক সময় লাগে। বাবার সাথে কলেজে গিয়ে টিসি নিয়ে অন্য কলেজে ভর্তি হয়। 
  বিপিনবাবু বিদিশাকে না জানিয়ে সুনীলের বিরুদ্ধে থানায় মেয়ের নিরাপত্তার কারণে দেখিয়ে একটি ডাইরি করেন। সেই ডায়রির একটি জেরক্স নিয়ে সুনীলের কলেজের প্রিন্সিপালের সাথে দেখা করেন এবং প্রিন্সিপ্যালকে অনুরোধ করেন সুনীলকে ডেকে তাকে একটু ধমকে দিতে যাতে সে আর কোনদিন বিদিশাকে বিরক্ত না করে। তাহলে পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে এফ আই আর করতে বাধ্য হবেন। হাত জোড় করে বৃদ্ধর মেয়েকে বাঁচাতে এই করুন আকুতি প্রিন্সিপ্যাল ফেলতে পারেননি। তিনিও যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেন।
   বিদিশা মাত্র ছ'মাসেই বুঝে গেছে জীবনে স্বপ্ন দেখা যায় কিন্তু সেই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে হলে কঠোর পরিশ্রম প্রয়োজন। তার জীবনে এখন একটাই লক্ষ্য একটা ভালো চাকরি পাওয়া। পড়াশুনার সাথে সাথে সে নানান জব এক্সাম দিতে শুরু করে। কলেজ,বাড়ি আর পড়াশুনা এটাই বিদিশার নিত্য রুটিন হয়ে দাঁড়ায়। সবকিছু সত্ত্বেও আগের সেই উচ্ছলতা, বোনদের সাথে বসে আগের মত গল্পগুজব করতে সে আর পারে না। কোথায় যেন একটা কাঁটা খসখস করতে থাকে। সব সময় বিদিশা একটা অপরাধ বোধে ভোগে। 

চলবে -

সন্দেহ বড় রোগ (৫ ম পর্ব)

  বিদিশার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। কোথায় যাবে কী করবে ভাবতে ভাবতে বড় রাস্তায় এসে দাঁড়ালো। পাড়ার শম্ভুকাকু ওকে দেখে জানতে চাইলো,
-- মা আমি জানি তুই তোর বাবার কাছে এসেছিলি। কিন্তু তাঁরা তো এখান থেকে বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। তুই কি সেখানে যেতে চাস?
-- তুমি জানো কাকু ওই বাড়ির ঠিকানা?
-- হ্যাঁ একমাত্র আমিই জানি। কারণ তোর বাবা আমাকে একটা দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। তুই চলে যাওয়ার পর বুঝতেই পারছিস তাদের মনের অবস্থা। থানা পুলিশ করেননি। কেউ একজন তোদের দেখেছিল মন্দিরে একটি ছেলে তোকে সিঁদুর পরিয়ে দিয়েছে। তোর বাবা তারপর খবর নিয়ে জেনেছিলেন ছেলেটি বেকার এমন কী তার পড়াশুনাও শেষ হয়নি। তিনি আমায় বলেছিলেন,
-- শম্ভু, মেয়েটা খুব ভুল করলো। ও ওখানে টিকতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। ফিরে ও আসবেই। থানা পুলিশ করে জোর করে ওকে ফিরিয়ে আনার থেকে নিজের ভুলটা ধরে ফিরে আসুক। তারপর না'হয় অন্যকিছু ভাবা যাবে কী বলো? আমি তোমাকে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি ও এখানেই আসবে। আর এটাও জানি ও তোমার কাছেই আমাদের খবর জানতে যাবে। ওতো জানে তোমার সাথে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্কটা। তাই ঠিকানাটা তোমায় দিয়ে গেলাম। আমার বোকা মেয়েটা ফিরে আসলে ওকে ঠিকানাটা দিও।
 উনি বিদিশার কাছে কোন কথা জানতেও চাইলেন না। মানিব্যাগ বের করে ঠিকানাটা ওর দিকে এগিয়ে দিতে গিয়ে দেখেন বিদিশা তখন হাউকাউ করে কাদঁছে। কিন্তু সে কান্নায় নেই কোন শব্দ। উনি বুঝতে পারলেন বিদিশার বুক বিদীর্ণ করে চোখের থেকে অবিরল ধারায় জল পড়ছে।
-- তোর কাছে কি কোন টাকাপয়সা আছে?
 বিদিশা মাথা নাড়িয়ে না বলে।
শম্ভুকাকু পুণরায় মানিব্যাগ খুলে কয়েকটি টাকা ওর হাতে দিয়ে বললেন,
-- এইটা রাখ। ভালো থাকিস মা। নিজের ভুল যখন বুঝতে পেরেছিস এবার জীবনটাকে নিজের মত করে গড়ে না। একটা কথা মনে রাখিস মা কোন মা কিংবা বাবা তার সন্তানের খারাপ চান না। তাঁরা অন্তত চেষ্টা করেন সন্তানের কিসে ভালো হবে সেটা বুঝতে। কিন্তু ভাগ্য বলেও একটা কথা আছে। তাকেও মানতেই হয়। এবার তুই এগো মা। রাত হয়ে যাচ্ছে।

চলবে -

সন্দেহ বড় রোগ (৪ র্থ পর্ব)

 স্বপ্ন দেখা আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার মধ্যে আকাশপাতাল প্রভেদ। জীবনের শুরুতেই হঠাৎ করেই কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া যা জীবনের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। সিদ্ধান্ত কখনো মানুষের সঠিক হয় আবার কখনো বা সেই সিদ্ধান্তের ফলে জীবনের সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায়।
 বিদিশার জীবনে চরম ভুল ছিল সুনীলের কথাই সায় দিয়ে একটা বেকার মধ্যবিত্ত ছেলেকে পালিয়ে এসে বিয়ে করা। অল্প বয়সের ভালোবাসায় দু'জনেই ছিল অন্ধ। একটা বালখিল্য সিদ্ধান্তে দু'জনের জীবনই যে তছনছ হয়ে যেতে পারে তারা তা স্বপ্নেও কল্পনা করেনি।
ভালোবাসা একটা মোহ ঠিকই অনেক সময় শারীরিক সম্পর্কে অনেকেরই সেই মোহ কেটে যায়। বিদিশার জীবনেও ঠিক তাই হল। বিদিশার কলেজ তো সুনীল বন্ধ করলোই উপরন্তু কারণে অকারণে তাকে খারাপ কথা বলতেও ছাড়ে না।
 বিদিশার কলেজ বন্ধ হল, বাইরে বেরোনো বন্ধ হল এমনকী রাস্তার পাশে বাড়ি হওয়ার ফলে বারান্দায় আসাও বন্ধ হল। খাঁচায় বন্দী পাখির মত সারাটা সময় দু'চোখের জলে দিনাতিপাত। আর রাত হলেই সুনীলের ঘনঘন শারীরিক খিদে মেটাতে নাজেহাল। বিদিশা খুঁজে পায় না সেখানে বিন্দুমাত্র ভালোবাসা। অতিষ্ট হয়ে ছ'মাসের মধ্যেই বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কোথায় যাবে সে? বাবা মায়ের মুখে তো চুনকালি দিয়ে এসেছে। ভাবতে থাকে তাঁদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে তাঁরা কি তাকে ফিরিয়ে দেবেন? একবার শেষ চেষ্টা করে সে দেখবে। যদি জীবনটাকে আবার গুছিয়ে নিতে পারে।
 বেরিয়ে পড়ে একদিন সন্ধ্যায় সুনীলের বাড়ি থেকে। অবশ্য বেরোবার আগে সে শ্বাশুড়িকে জানিয়েই আসে সে বাপের বাড়িতে চলে যাচ্ছে। যে সুনীলকে সে ভালবেসেছিল আর যার সাথে এই ছ'মাস সে কাটালো দু'টো  সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ। এভাবে বেঁচে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়। শাশুড়ি যেদিন বিদিশা এ বাড়িতে এসেছিল সেদিনও যেমন চুপ ছিলেন আজও তিনি চুপই থাকলেন। শুধু বললেন,
-- আমি আমার ছেলেকে খুব ভালোভাবে চিনি মা। তুমি যে এখানে থাকতে পারবে না এটা আমি জানতাম। ও একদম ওর বাপের ধারা পেয়েছে। ওর বাবাও ঠিক একইভাবে আমায় সন্দেহ করতো। আমার জীবনটাও ঝাড়াঝাড়া হয়ে গেছে ওর বাবার কারণে। তবুও তিনি একটা ভালো চাকরি করতেন। আর আমার যাওয়ারও কোন জায়গা ছিল না। তাই মুখ বুঝে সব সহ্য করেছি। তোমার যখন যাওয়ার জায়গা আছে তখন চলে যাও। বাবা মাকে সন্তান আঘাত দিলেও বাবা মা কখনোই সন্তানের খারাপ চান না। তারা তোমায় ঠিক আশ্রয় দেবেন। পড়াশুনাটা চালিয়ে যাও, নিজের পায়ে দাঁড়াও জীবনের এই অধ্যায়টা ভুলে যেও।
 বিদিশা এসে বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ে। একজন মহিলা এসে দরজা খুলে বলেন,
-- কাকে চাই?
-- আমি বিদিশা। মা বাবা কেউ বাড়িতে নেই? 
-- তুমি কাকে চাইছো বলো তো?
-- বিপিন পাল। উনি বাড়িতে নেই?
-- এই নামে এখানে কেউ থাকে না। তবে শুনেছি উনি এখানে থাকতেন। মাসখানেক হল উনি এখান থেকে অন্যত্র চলে গেছেন। উনার বড় মেয়ে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে চলে যাওয়াতে পাড়ার লোকে কারণে অকারণে উনাকে কুকথা শোনাতে ছাড়েনি। তাই উনি পরিবার নিয়ে এখান থেকে চলে গেছেন।
 কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন,
-- আচ্ছা তুমি কি উনার সেই বড় মেয়ে?
 বিদিশা কোন উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে আসলো।

চলবে -

সন্দেহ বড় রোগ (৩ য় পর্ব)

 ক্লাসে সেদিন দু'জন ঢুকেছিল ঠিকই কিন্তু স্যারের পড়ানো কারো কানে ঢোকেনি। দু'জনেই ছিল ভাবের জগতে। এভাবেই কেটে গেছে দু'বছর। তখন দু'জনেরই সেকেন্ড ইয়ার। বিদিশার বাবা মেয়ের জন্য ছেলে দেখতে শুরু করেন। বিদিশা বেঁকে বসে। বলে,
-- পড়াশুনা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াবো। তারপর বিয়ে বসবো।
 কিন্তু কে শোনে কার কথা। তিনবোনের মধ্যে বিদিশাই বড়। সুতরাং বিয়েতে মত দিতেই হবে। একদিকে সুনীলের ভালোবাসা,নিজের জীবনের স্বপ্ন অন্যদিকে বাবার জেদ। সুনীলকে সব জানায়। সুনীলও তখন পাগলের মত ভালবাসে তাকে।
-- তুমি বাড়ি থেকে চলে এসো। আমরা মন্দিরে বিয়ে করে নেবো। তারপর দু'জনে পড়াশুনা শেষ করে চাকরি খুঁজে নেবো। কোন অসুবিধা হবে না। আর কোন অসুবিধা হলেও দু'জনে ঠিক একটা উপায় বের করে নেবো।
 পালিয়ে যায় বিদিশা তার ভালোবাসার টানে। অল্প বয়সের কারণে তখন সে বুঝতে পারেনি টাকা না থাকলে গভীর ভালোবাসাও এক সময়ে অসহ্য হয়ে ওঠে। অভাব এমনই সে ভালোবাসা,খিদে,শারীরিক সম্পর্কের উপর এমনভাবে অক্টোপাসের মত জাকিয়ে বসে তাকে উপেক্ষা করা কিছুতেই যায় না।
 মন্দিরে বিয়ে করে সুনীল সোজা তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ওঠে। একমাত্র ছেলে। বিধবা বয়স্কা মা। স্বামীর সামান্য পেনশনে সংসার চলে। ছেলের এই অবিবেচকের মত কাজকে সমর্থন করতে না পারলেও মন থেকে মানতে না পারলেও অন্ধের যষ্টিকে হারানোর ভয়ে বিদিশাকে কাছে টেনে নিয়েছিলেন।

চলবে -

সন্দেহ বড় রোগ (২ য় পর্ব)

সন্দেহ বড় রোগ (২ য় পর্ব )

  নিজের অফিস রুমে ঢুকে দ্রুত হাতে ড্রয়ার খুলে নিজের কার্ডটি বের করে পিছনে ঘুরতেই দেখে রমেশ এসে দাঁড়িয়েছে। কার্ডটা রমেশের হাতে দিয়ে নিজের চেয়ারে এসে বসেই ঢকঢক করে গ্লাসের পুরো জলটা শেষ করে দেয়। এসির পাওয়ারটাকে ১০ ডিগ্রীতে দিয়ে দেয়। অস্থির লাগছে বিদিশার তখন। মাঝে মাঝেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াচ্ছে, এদিকওদিক তাকিয়ে আবার বসে পড়ছে। কিছুতেই কাজে আর মন বসাতে পারছে না।
 বিদিশা নিজের শরীরটাকে চেয়ারে এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে থাকে। ফিরে যায় পাঁচ বছর আগের দিনগুলিতে। কলেজে পড়াকালীন সময়ে সুদর্শন যুবক ক্লাসমেট সুনীলকে মন দিয়ে ফেলে। অফ পিরিয়ডে ক্যাম্পাসের ভিতর সবাই মিলে বড় ছাতিম গাছটার নিচে বসে সব গল্প করছিল। সেখানে সুনীলও ছিল। হাসি, ঠাট্টা, হৈ হট্টগোলের মধ্যেও মাঝে মাঝেই সুনীলের দিকে চোখ চলে যাচ্ছিল তার। এটা সুনীলেরও নজর এড়ায় না। আড্ডা শেষে সবাই যখন উঠে ক্লাস রুমের দিকে এগোচ্ছে ঠিক তখনই সুনীল বিদিশার গা ঘেষে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
-- একটু কথা আছে দাঁড়িয়ে যা
 বুকের ভিতর বিদ্যুৎ খেলে যায় বিদিশার। সে দাঁড়িয়ে পড়ে। দু'জনে খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে। বিদিশা খুব আস্তে করে বলে,
-- আমার ক্লাস আছে। কী বলবে একটু তাড়াতাড়ি বলো।
-- এ ক্লাসটা আজ আর করা হবে না তোমার। কারণ কথা আমার একটা কিন্তু পরিকল্পনা বিশাল।
-- বুঝলাম না। একটু বুঝিয়ে বলো।
-- আমি যদি খুব ভুল করে না থাকি আমার মনেহচ্ছে তুমি বোধহয় আমাকে --
 বিদিশা চোখ নামিয়ে নেয়
-- আরে চোখ তুলে মুখের দিকে তাকিয়ে বলো, বারবার আড়চোখে এভাবে মুখের দিকে তাকালে অন্যরা কী বলবে?
 সুনীল হাসতে থাকে। বিদিশা উঠে চলে যেতে রেডি হয় কারণ সে বুঝতে পারে সুনীলের কাছে সে ধরা পড়ে গেছে।
-- তুমি যে কথাটা আমায় বলতে পারছো না আমি সেটা বলে দিচ্ছি। আরে এতে লজ্জা পাওয়ার কী আছে? ভালোবাসার কথা বলতে এত লজ্জা পেলে আজীবন দু'জনকেই পস্তাতে হবে।
 হাসতে থাকে সুনীল।
ছাতিম গাছতলায় সুনীল এবার আরও কাছে এগিয়ে আসে বিদিশার। তার ডানহাতটা ধরে বলে,
-- আমিও অনেকদিন ধরে তোমায় কথাটা বলবো ভাবছি। কিন্তু কী জানো? ভয় পাচ্ছিলাম যদি তুমি রাজি না হও? কিন্তু আজ আমি নিশ্চিত হয়েছি তুমিও আমায় ভালোবাসো।
 বিদিশা ফিক করে হেসে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যেতে যেতে বলে,
-- বাকি কথা কাল হবে। তুমিও চলে এসো ক্লাসে --

চলবে ,-

সন্দেহ বড় রোগ (১ ম পর্ব)

সন্দেহ বড় রোগ (১ম পর্ব)

  পাঁচ বছর পর অফিসের ভিতর একটা পরিচিত গলার আওয়াজ শুনে কিছুটা চমকে যায় বিদিশা। ব্যাংকের রিজিওনাল ম্যানেজার পোষ্টে লোন ডিপার্টমেন্টের চাকুরীরতা বিদিশা পাবলিক লোনের ফাইলটা চেক করছিল। ঠিক তখনই বাইরের চিৎকার, চেঁচামেচি শুনে নিজেই বেরিয়ে আসে। সিকিউরিটি তখন চিৎকার রত ভদ্রলোকের বাহু ধরে বাইরে বের করে দেওয়ার জন্য টানাটানি করছেন। বিদিশা সেখানে পৌঁছেই জানতে চায়,
-- কী হয়েছে রমেশদা? এত চিৎকার কিসের জন্য?
 রমেশ উত্তর দেওয়ার আগেই রমেশের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বিদিশার মুখের দিকে তাকিয়ে হাত জোর করে ভদ্রলোকটি বলতে শুরু করে,
-- দেখুন না ম্যাম -- আ--মি ব -ল-ছি 
ভদ্রলোক চুপ করে যান। জোর হাত দু'টো নিচুতে নেমে আছে। এক দৃষ্টে বিদিশার দিকে তাকিয়ে থাকেন।
  বিদিশা নিজেও থতমত খেয়ে যায়। কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেনি এভাবে আবার তার সাথে সুনীলের দেখা হবে। তাও এমন পরিস্থিতিতে। মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
-- হ্যাঁ বলুন আপনি কী বলতে চাইছেন?
সুনীল কোন কথা না বলে চুপ করে থাকে। মাথাটা তার নিচুর দিকে। বিদিশা আগেই নিজেকে সামলে নিয়েছে। এবার সে সুনীলের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,
-- দেখুন এটা একটা অফিস। আপনিও নিশ্চয়ই কোথাও  চাকরি করেন। সেই হিসাবে আপনি অবশ্যই জানেন অফিসের চার দেওয়ালের মধ্যে আপনি এসে চিৎকার,চেঁচামেচি করলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারি। কোন বিষয়ে সমস্যা আপনার হতেই পারে। আমার সহকর্মীরা আপনার সেই সমস্যা সমাধানের নিশ্চয় উপায় বলেছেন। তার পরেও আপনার এই আচরণ তারা মানতে পারেননি বলেই আপনাকে বের করে দিতে উদ্যোগী হয়েছেন। আমি আশা করবো আপনি আপনার ব্যবহারে ভদ্রতা বজায় রাখবেন।
 সুনীল সে কথার উত্তর না দিয়ে বলে,
-- যদি ফোন নম্বরটা?
 বিদিশা রমেশের দিকে তাকিয়ে বলে,
-- রমেশদা তুমি আমার সাথে এসো। একটা কার্ড এনে উনাকে দিয়ে দাও।
 বিদিশা নিজের রুমের দিকে একটু দ্রুতপায়েই এগিয়ে যায়।

চলবে -
--