-- আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই
-- কে বলছেন আপনি?
-- তুমি আমার গলা শুনে চিনতে পারছো না?
-- না চিনতে পারছি না
-- এই ক'টা বছরে গলাটাও ভুলে গেছো?
-- আপনি আপনার পরিচয় দিন আর কী দরকারে ফোন করেছেন সেটা বলুন। এটা আমার অফিস টাইম। ফালতু কথা বলে সময় নষ্ট করবেন না।
-- আমি জানি তুমি আমায় চিনতে পেরেছো। তবুও বলছি আমি সুনীল বলছি।
-- আপনার সাহস হয় কীকরে একজন অফিসারকে তুমি বলে কথা বলার? প্রয়োজনীয় কথা থাকলে বলতে পারেন তানাহলে আমি রাখছি।
অপর প্রান্তে সুনীল নিজেকে সামলে নেয়। বুঝতে পারে এত বছর পরেও বিদিশা তাকে ক্ষমা করতে পারেনি। সুতরাং পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে কোন কিছুই আশা করা যাবে না তার কাছে। এবার সে গলার স্বরের পরিবর্তন এনে বলে,
-- আপনাদের অফিস থেকে আমি একটি লোন নিয়েছিলাম। আপনাদের দেয় সময়মত তা পরিশোধ করতে পারিনি। আগামী পরশু লাস্ট ডেট। বাড়ির দলিল বন্ধক দেওয়া অফিসে। যদি আমাকে আর ক'টা
মাস সময় দেওয়া যেত তাহলে --
-- দেখুন এভাবে তো এসব কাজ হয় না তবুও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দেখবো যদি কিছু করতে পারি। তবে আপনাকে একটা এপ্লিকেশন করতে হবে অফিসের জিএম এর কাছে। আগামীকাল এপ্লিকেশন করে নিয়ে অফিসে আসবেন।
কথাগুলো বলেই বিদিশা ফোন কেটে দেয়। সেই মুহূর্ত থেকে সে নানান জায়গায় ফোন করে আপ্রাণ চেষ্টা করে যদি কিছুটা সময় লোন শোধ করার জন্য বাড়তি দেওয়া যায় সুনীলকে।
পরদিন সুনীল অফিসে আসে। বিদিশার রুমে ঢোকার জন্য তাকে আলাদা করে অ্যাপয়েনমেন্ট নিতে হয়। ত্রিশ মিনিট পর তার ডাক আসে। সুনীল গেটের বাইরের থেকে জানতে চায়
-- ভিতরে আসতে পারি ?
বিদিশা এই কয়েক ঘন্টায় নিজের মনকে অনেকটা শক্ত করে নিয়েছে।
-- হু আসুন।
সেই সুনীল যাকে ভালোবেসে সে ঘর ছেড়েছিল। সুনীল যেন যুবক হয়ে আরও সুন্দর দেখতে হয়েছে। বিদিশা সুনীলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
-- বলুন কী করতে পারি আপনার জন্য?
সুনীল এপ্লিকেশনটি সামনে এগিয়ে দেয়।
-- ও আচ্ছা আচ্ছা কালকে আপনি ফোন করেছিলেন।
অ্যাপ্লিকেশনটি সুনীলের হাত থেকে নিয়ে ওটা পড়ে ইচ্ছাকৃত সুনীলের সামনেই সই আর সিলটা দিয়ে পেপার ওয়েট দিয়ে চাপা দিয়ে রেখে বলে,
-- এবার আপনি আসুন। দেখি আপনার জন্য কী করতে পারি
আচমকা সুনীল ডেকে বসে
-- বিদিশা
-- সাট আপ! একজন অফিসারকে নাম ধরে ডাকার সাহস কোথা থেকে পান? বেরিয়ে যান এখান থেকে। চিৎকার করে ওঠে বিদিশা।
সুনীল এতটা আশা করেনি। সে মুখ নিচু করে বিদিশার চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসে।
সুনীল বেরিয়ে যাওয়ার পর পিওনকে ডেকে বলে,
-- মিনিট দশেক পরে পুণরায় লোক পাঠাবেন।
ওয়াশরুমে গিয়ে কিছুক্ষণ কেঁদে কেটে চোখে মুখে জল দিয়ে বেরিয়ে আসে সে। অনেক চেষ্টা করে একমাস সময় দিতে পারে সুনীলের বাড়ি বাঁচানোর।
সুনীল কী কারণে লোন নিয়েছিলো? এখন সে কী করে? বিয়ে করেছে কিনা অনেককিছুই জানার ইচ্ছা থাকলেও নিজের ইছাগুলিকে বহু কষ্টে সে দমন করেছে। এরপর সুনীল যতবার অফিসে এসেছে কোনদিনও বিদিশার চেম্বারে ঢুকতে পারেনি কারণ অফিসে বলাই ছিল "ওই লোকটি যেন আমার চেম্বারে আর না ঢোকে।"
শেষ ২৬- ১২-২৪