Sunday, February 27, 2022

শুভ জন্মদিন

শুভ জন্মদিন
ঢাক ঢাক, গুড় গুড় বড় গন্ডগোলের বস্তু!বলি করছিস কি তোরা দুটিতে ঘরে দরজা বন্ধ করে?সকাল থেকেই দেখছি আজ দুজনের সাথে বেশ ভাব হয়েছে!সব সময় তো ঝগড়া আর মারপিট করিস দুজনে মিলে;আজ তোদের ব্যাপারটা কি বলবি?
 দুই ভাইবোনের উদ্দেশ্যে জয়িতা বন্ধ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে চলেছেন।বহুক্ষণ পরে ছেলে বিতান দরজাটা খুলে সামান্য ফাঁক করে মাকে বললো,
--- কি চাই তোমার এখানে?
 জয়িতা সেই একই সুরে বললেন,
--- তোমাদের কাছে আমি আর কি চাইবো?সকাল থেকে দেখছি দিদির সাথে ফুসুরফুসুর করেই চলেছ;আমার একটাই চাওয়া তোমাদের কাছে দয়া করে দুজনে ঝগড়া,মারপিটটা কোরোনা।
 ঘরের ভিতর থেকে দিদি মৌয়ের গলার আওয়াজ শোনা গেলো,
--- ভাই এদিকে আয়।মাকে বল শুয়ে পড়তে।
 জয়িতা মেয়ের কথা শুনতে পেয়ে চিৎকার করে বললো,
--- এর পরে যদি দুজনে ঝামেলা বাঁধাস আমায় কিন্তু নালিশ করতে ডাকবি না।
 কথাটা বলে গজ গজ করতে করতে চলে গেলন জয়ীতা।
  তিনবছর হল জয়িতা তার স্বামীকে হারিয়েছে।রাতে ঘুমের মধ্যেই সে চলে গেছে।কিছু করার সুযোগই দেয়নি বিমলেন্দু।ছেলেমেয়ে দুটোর পড়াশুনা এখনো শেষ হয়নি।সরকারি চাকরী ছিল বলেই ছেলেমেয়ের পড়াশুনা আর সংসার চালনায় কোন বেগ পেতে হচ্ছে না জয়িতার। বিমলেন্দুর মৃত্যুর পরের মাস থেকেই পেনশন চালু হয়ে গেছে।
 ছেলে বিটেক করছে আর মেয়ে এমটেক।খরচ প্রচুর।তবে সামলে নিতে পারছে জমানো কিছু পুঁজি থাকায়।ছেলেমেয়ে দুটির মধ্যে যেমন ভাব ঠিক তেমনই ঝগড়া লেগেই আছে।ওদের ঝামেলা ঝগড়া এই বয়সেও সারাক্ষণ চলছে।মেয়ের থেকে ছেলে দুবছরের ছোট।এদের ঝামেলা দেখলে মনেহয়এরা দেখতেই বড় হয়েছে আসলে রয়ে গেছে সেই ছোট্টটি।আবার যখন এদের দুটোর ভাব হয় সেখানে জয়িতা কথা বলতে গেলে সে হয়ে যায় ওদের কাছে থার্ড পার্সন।তাই আজ সকাল থেকে ওদের গুজুর-গুজুর,ফুসুরফাসুর দেখে সারাটা দিন চুপচাপ থাকলেও রাতে খেয়েদেয়ে যখন দুজনে বিতানের ঘরে দরজা দিলো তখন জয়িতা মনেমনে ভাবলো নিশ্চয়ই কেউ এমন একটা কিছু করেছে যা তাকে বলতে ভয় পাচ্ছে ;দুজনে সেই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মৌ জয়ীতার কাছেই ঘুমায়।জয়ীতা অনেকক্ষণ জেগে ছিল।কখন মৌ ঘুমাতে আসে।মোবাইলটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে রেখে দেয়।চোখদুটো সবে ঘুমে জড়িয়ে এসেছে ; এরই মধ্যে দুই মূর্তিমান এসে ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে দুপাশ থেকে দুজনে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে "Happy birthday মা "।জয়ীতা দুই হাতে দুজনকে জড়িয়ে ধরে বলে,
--- হ্যাঁরে আজ ২৬শে জুন।তোদের মনে আছে?আমি নিজেই তো ভুলে গেছি।
 দুজনেই ননস্টপ বলতে থাকে,"মা ওই ঘরে চলো"।জয়ীতা দুজনকে ধরে তাদের আবদারে চোখ বন্ধ করে বিতানের অন্ধকার ঘরে গিয়ে ঢোকে।বিতান দৌড়ে গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে দেয়।দুই ভাইবোন মাকে জড়িয়ে ধরে।জয়ীতা দেখে সমস্ত ঘর নানান রঙের বেলুনে সাজানো।টেবিলের উপর ছোট্ট একটা কেকের উপর একটা রঙিন মোমবাতি।ছেলেমেয়ের হাত ধরে ঠিক রাত বারোটায় জয়িতা তার ৫৬ বছরের জন্মদিন পালন করতে গিয়ে বারবার চোখদুটি আঁচল দিয়ে মুছতে থাকে।
 বিমলেন্দু চলে যাওয়ার পর তিন বছর পর তার আদরের মৌ আর বিতান তাদের বাবার মত করেই আবার তার জন্মদিন পালন করলো।
 কিছু খুশি আছে যার প্রকাশ একমাত্র বারবার চোখের জল মুছেই করতে হয়।


No comments:

Post a Comment