Friday, February 18, 2022

মুখোশের আড়ালে

মুখোশের আড়ালে
 অগাধ জলের মাছ,সব বুঝছি আজ।তখন তো ওর ভালোবাসায় আমি ছিলাম অন্ধ।ওর মিষ্টি মিষ্টি কথা আর সুন্দর ব্যবহার দিয়ে ও আমায় মোহিত করে রেখেছিল।তাই আমি ওর কোন দোষত্রুটি দেখতেই পেতাম না।
   বন্ধু আবিরার মাধ্যমে শমিতের সাথে হিয়ার পরিচয়। আবিরার দূরসম্পর্কের লতায়-পাতায় জড়ানো দাদা শমিত।নায়কোচিত চেহারা আর এতটাই স্মার্ট যে যেকোন মেয়েই ওর প্রেমে পড়তে বাধ্য।কি সুন্দর ভাবে কথা বলে।মানুষের মন জয় করতে যা যা করণীয় কিছুই শমিতের অজানা নয়।
যতদিন শমিতের সাথে হিয়া বাইরে বেরিয়েছে ও খেয়াল করেছে শুধুমাত্র হিয়ার ক্ষেত্রেই নয় রাস্তাঘাটে যেকোন মানুষ বিপদে পড়লেই শমিত নিজের জীবন বিপন্ন করে সেই ব্যক্তিকে বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে।এইসব দেখেই হিয়া শমিতের প্রতি মুগ্ধ হয়ে গেছিলো।তার দুচোখ ভরে শমিতকে নিয়ে স্বপের জাল বুনতে শুরু করে।
   কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ার সময় আবিরার সাথে হিয়ার পরিচয়। আবিরার দিদির বিয়েতে গিয়ে শমিতের সাথে হিয়ার পরিচয়।বাসররাতে সারারাত জাগা আর মান্না দে'র দুখানা প্রেমের গান শুনিয়ে শমিত শুধু হিয়ার মনই নয় সে জয় করে নেয় সেদিন ঐরাতে যারা যারা বাসরঘরে ছিলো সকলের মন।হিয়ার গল্প আগেই জানা ছিল শমিতের।সে তার বোন আবিরার কাছেই শুনেছিল -বড়লোকের একমাত্র মেয়ে , বাবার বিশাল বিজনেস।হায়ার এডুকেশন নিয়ে হিয়া তার বাবার ব্যপসা দেখাশুনা করবে।
 আস্তে আস্তে শমিতের সাথে হিয়ার খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে।শমিত আগেই প্রপোজ করে হিয়াকে।যেদিন শমিত হিয়াকে তার ভালোবাসার কথা জানিয়েছিল সেদিন হিয়া দুইহাতে শমিতকে জড়িয়ে ধরে তার মনের কথা বুঝিয়েছিল।
  মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে শমিত।মায়ের সাথে গড়িয়ায় নিজেদের বাড়িতেই থাকে।এমবিএ করেছে।খুব ভালো না হলেও মোটামুটি একটা চাকরি সে করে।হিয়ার বাবার ভীষণ আপত্তি ছিল এই সম্পর্কটাকে পূর্ণতা দিতে।কিন্তু হিয়া ও তার মায়ের জোরাজুরিতে তিনি এই সম্পর্ক মেনে নিতে বাধ্য হন।তবুও তিনি মেয়েকে ডেকে তার মায়ের অনুপস্থিতিতে বলেছিলেন,
--- আমি যে কথাটা বলবো তোমার ভালো নাই লাগতে পারে ,আজ হয়ত তুমি একথাটা শোনার পরে পাঁচটা যুক্তি খাঁড়া করতে পারো।কিন্তু একদিন এই কথাটা হয়ত তোমার কাজে আসবে 
 হিয়া চুপ করেই তার বাবার কথাগুলি শুনছিল।হিয়ার বাবা আবার বলতে শুরু করলেন,
--- শমিতকে তুমি ভালোবাসো বিয়ে করতে চলেছ ;তোমার এবং তোমার মায়ের কথামত আমি বিয়েটা মেনেও নিয়েছি।কিন্তু কোনদিনও যদি বুঝতে পারো তোমার প্রতি ভালবাসায় নয় উত্তরাধিকার সূত্রে পিতৃ সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকার তুমিই বলে এই বিপুল অর্থের মালিক হওয়ার কারণেই একটা ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে তোমার সাথে অভিনয় করেছে শমিত সেদিন কিন্তু কষ্ট না পেয়ে নিজেকে শক্ত রেখো।আমি মানিয়ে নিতে বলবো না মানসিক শান্তি নষ্ট করে।ভালোভাবে বাঁচার অনেক পথ আছে।তার যেকোন একটা পথকে খুঁজে নিও।
 সেদিন বাবার কথাগুলো হিয়ার পছন্দ না হলেও সে কোন তর্কে বাবার সাথে যায়নি।
 বিয়ের এক বছরের মধ্যেই মায়ের মৃত্যুর পরই নিজের চাকরি ছেড়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়ি এসে উঠে বসে এই অজুহাতে হিয়ার বাবার বয়স হয়েছে একা তিনি ব্যবসার সমস্ত কাজ দেখাশুনা করতে পারছেন না।তারপর আস্তে আস্তে ব্যবসার সমস্ত ব্যাপারে নাক গলানো।হিয়া এবং তার বাবার সাথে ব্যবসা সংক্রান্ত ব্যাপারে মনোমালিন্য। আস্তে আস্তে শমিতের
মুখোশ খুলতে শুরু করে।
  হিয়া আজ বুঝতে পারে বাবা শমিতকে ঠিকই চিনেছিলেন।শমিত এতটাই অগাধ জলের মানুষ তার চালাকি হিয়া ধরতে পেরেছিল না।সে সিদ্ধান্ত নেয় " দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো "-।


No comments:

Post a Comment