Monday, February 28, 2022

সব কাজই জানতে হয়

সব কাজই জানতে হয়

 কত ধানে কত চাল,বুঝবে সে হাল - বড় জায়ের কথা শুনে মেঝোজা হেসে লুটিয়ে পড়লো।তাদের ছোট দেওরের বিয়ে ঠিক হয়েছে।আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি।সব সময় বাড়িতে এখন এই বিয়ে নিয়েই আলোচনা।দুপুরের শ্বাশুড়ী মা খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ার পর রান্নাঘরের সব কাজ সেরে দুজনে মিলে তাদের উঠবি ছোট জা কে নিয়ে আলোচনা শুরু করলো। মেঝোজন বড় জায়ের গা ঘেঁষে বসে জানতে চাইলো,
--- হ্যাগো দিদি আমাদের ছোট নাকি অনেক লেখাপড়া জানে?আবার চাকরিও করে শুনছি।এত লেখাপড়া শিখেছে তাহলে তো নিশ্চয়ই কাজকাম কিছু জানে না।তার উপর আবার ছোটবেলায় বাপ মাকে হারিয়ে নিঃসন্তান পিসির কাছে মানুষ। তা সে যখন এতই লেখাপড়া জানে এই গন্ডগ্রামে বিয়ে দিচ্ছে কেন তার পিসি,পিসেমশাই?
--- জানি না বাবু।তবে যতই লেখাপড়া জানুক আর চাকরি করুক না কেন তমালিকা এ বাড়িতে বউ হয়ে আসার পর সংসারের কাজ কিন্তু তিনভাগ করে দিতে হবে ;আমি একথা পরিস্কার মাকে বলে দেবো।নূতন বউ হয়ে এ বাড়িতে আসার পর আমাদের তো কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি?
--- ঠিক বলেছো দিদি।কথায় কথায় শুনতে হয়েছে বাপের বাড়ি থেকে কিছুই শিখে আসিনি।অত লেখাপড়া জানা মেয়ে সে কি মায়ের ওই ব্যবহার মেনে নেবে?আমাদের দুজনের তো কোন উপায় নেই।লেখাপড়া তেমন করিনি আর চাকরি তো দূরহস্ত!বাপ,মা কারো বেঁচে নেই। এ কি মানিয়ে নিতে পারবে?
-- অতশত জানিনা মেঝো, বউ হয়ে তো আগে আসুক তারপর নাহয় সে নিজেই বুঝবে কত ধানে কত চাল!
  বাড়ির ছোটছেলের বিয়ে বেশ ধুমধাম সহকারেই হয়ে গেলো।বাড়ির নিয়ম অনুযায়ী নূতন বউ বৌভাতের দিন সকালে মাছের ঝোল রান্না করবে সকলের জন্য।সকালে শ্বাশুড়ী মার নির্দেশ অনুযায়ী নূতন বউ রান্নাঘরে ঢুকলো।বড়,মেঝো দুজনেই রান্নাঘরে ছিল।তমালিকাকে ঢুকতে দেখে দুজনে দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।তমালিকা এগিয়ে গিয়ে তাদের দুজনের উদ্দেশ্যে বললো,
--- মা আমাকে আজ মাছের ঝোল করতে বলেছেন।এই বাড়ির নিয়ম অনুযায়ী এই মাছের ঝোলটাই নাকি ঘি ভাতের সাথে জ্ঞাতিদের দিতে হবে।তোমরা আমাকে একটু দেখিয়ে দাও কোথায় কি আছে আমি মাছটা রান্না করি।
 বড়জা তখন তমালিকা কাছে এগিয়ে এসে খুব আস্তে আস্তে বললো,
--- আমি মাছ ভেজে রেডি করে দিচ্ছি।তুই শুধু ঝোলটা চাপিয়ে দে।মাকে কিছু বলতে হবে না।তুই চুপচাপ গ্যাসের কাছে দাঁড়িয়ে থাক।মাকে ঢুকতে দেখলেই খুন্তি নিয়ে কড়ায়ের ভিতর নাড়াচাড়া করবি।
--- দিদিভাই আমি পারবো।তুমি শুধু তেল,নুন,মশলা কোথায় আছে বলে দাও।মাছটা তো ধোওয়া হয়ে গেছে দেখছি।
 দুই জা রান্নাঘরে কাজ করছে আর ছোট জায়ের নিখুঁত কাজকর্ম দেখছে।মাঝে মধ্যে দুই জা চোখে চোখে অনেক কথা বলে চলেছে।কিছুক্ষণ পরে শ্বাশুড়ী মা এসে ঢুকলেন রান্নাঘরে।
--- কই তোমার মাছের ঝোল রান্না হল?
--- হ্যাঁ মা হয়ে গেছে।এবার বড় পাত্রে ঢেলে দেবো।
 দুপুরে জ্ঞাতি সকলে একসাথে খেতে বসে নূতন বউয়ের রান্নার খুব সুখ্যাতি করে।
  তমালিকার শ্বাশুড়ী আত্মীয় পরিবেষ্ঠিত আসরে ছোট বউয়ের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন
--- মেয়েদের জীবনে লেখাপড়া শিখে সাবলম্বী হওয়ার সাথে সাথে ঘরকন্নার কাজটাও শিখে রাখতে হয়।কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাতে অন্যের মুখটা সহজেই বন্ধ করা যায়।কথাটা তিনি তার অন্য দুই পুত্রবধূর উদ্দেশ্যেই বলেন।কারণ সেদিনের আলোচনাটা তার কানে এসেছিল।ওই সময় তিনি বড় বউয়ের ঘরের সামনে থেকে বাথরুমে যাচ্ছিলেন।


Sunday, February 27, 2022

শুভ জন্মদিন

শুভ জন্মদিন
ঢাক ঢাক, গুড় গুড় বড় গন্ডগোলের বস্তু!বলি করছিস কি তোরা দুটিতে ঘরে দরজা বন্ধ করে?সকাল থেকেই দেখছি আজ দুজনের সাথে বেশ ভাব হয়েছে!সব সময় তো ঝগড়া আর মারপিট করিস দুজনে মিলে;আজ তোদের ব্যাপারটা কি বলবি?
 দুই ভাইবোনের উদ্দেশ্যে জয়িতা বন্ধ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে চলেছেন।বহুক্ষণ পরে ছেলে বিতান দরজাটা খুলে সামান্য ফাঁক করে মাকে বললো,
--- কি চাই তোমার এখানে?
 জয়িতা সেই একই সুরে বললেন,
--- তোমাদের কাছে আমি আর কি চাইবো?সকাল থেকে দেখছি দিদির সাথে ফুসুরফুসুর করেই চলেছ;আমার একটাই চাওয়া তোমাদের কাছে দয়া করে দুজনে ঝগড়া,মারপিটটা কোরোনা।
 ঘরের ভিতর থেকে দিদি মৌয়ের গলার আওয়াজ শোনা গেলো,
--- ভাই এদিকে আয়।মাকে বল শুয়ে পড়তে।
 জয়িতা মেয়ের কথা শুনতে পেয়ে চিৎকার করে বললো,
--- এর পরে যদি দুজনে ঝামেলা বাঁধাস আমায় কিন্তু নালিশ করতে ডাকবি না।
 কথাটা বলে গজ গজ করতে করতে চলে গেলন জয়ীতা।
  তিনবছর হল জয়িতা তার স্বামীকে হারিয়েছে।রাতে ঘুমের মধ্যেই সে চলে গেছে।কিছু করার সুযোগই দেয়নি বিমলেন্দু।ছেলেমেয়ে দুটোর পড়াশুনা এখনো শেষ হয়নি।সরকারি চাকরী ছিল বলেই ছেলেমেয়ের পড়াশুনা আর সংসার চালনায় কোন বেগ পেতে হচ্ছে না জয়িতার। বিমলেন্দুর মৃত্যুর পরের মাস থেকেই পেনশন চালু হয়ে গেছে।
 ছেলে বিটেক করছে আর মেয়ে এমটেক।খরচ প্রচুর।তবে সামলে নিতে পারছে জমানো কিছু পুঁজি থাকায়।ছেলেমেয়ে দুটির মধ্যে যেমন ভাব ঠিক তেমনই ঝগড়া লেগেই আছে।ওদের ঝামেলা ঝগড়া এই বয়সেও সারাক্ষণ চলছে।মেয়ের থেকে ছেলে দুবছরের ছোট।এদের ঝামেলা দেখলে মনেহয়এরা দেখতেই বড় হয়েছে আসলে রয়ে গেছে সেই ছোট্টটি।আবার যখন এদের দুটোর ভাব হয় সেখানে জয়িতা কথা বলতে গেলে সে হয়ে যায় ওদের কাছে থার্ড পার্সন।তাই আজ সকাল থেকে ওদের গুজুর-গুজুর,ফুসুরফাসুর দেখে সারাটা দিন চুপচাপ থাকলেও রাতে খেয়েদেয়ে যখন দুজনে বিতানের ঘরে দরজা দিলো তখন জয়িতা মনেমনে ভাবলো নিশ্চয়ই কেউ এমন একটা কিছু করেছে যা তাকে বলতে ভয় পাচ্ছে ;দুজনে সেই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মৌ জয়ীতার কাছেই ঘুমায়।জয়ীতা অনেকক্ষণ জেগে ছিল।কখন মৌ ঘুমাতে আসে।মোবাইলটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে রেখে দেয়।চোখদুটো সবে ঘুমে জড়িয়ে এসেছে ; এরই মধ্যে দুই মূর্তিমান এসে ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে দুপাশ থেকে দুজনে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে "Happy birthday মা "।জয়ীতা দুই হাতে দুজনকে জড়িয়ে ধরে বলে,
--- হ্যাঁরে আজ ২৬শে জুন।তোদের মনে আছে?আমি নিজেই তো ভুলে গেছি।
 দুজনেই ননস্টপ বলতে থাকে,"মা ওই ঘরে চলো"।জয়ীতা দুজনকে ধরে তাদের আবদারে চোখ বন্ধ করে বিতানের অন্ধকার ঘরে গিয়ে ঢোকে।বিতান দৌড়ে গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে দেয়।দুই ভাইবোন মাকে জড়িয়ে ধরে।জয়ীতা দেখে সমস্ত ঘর নানান রঙের বেলুনে সাজানো।টেবিলের উপর ছোট্ট একটা কেকের উপর একটা রঙিন মোমবাতি।ছেলেমেয়ের হাত ধরে ঠিক রাত বারোটায় জয়িতা তার ৫৬ বছরের জন্মদিন পালন করতে গিয়ে বারবার চোখদুটি আঁচল দিয়ে মুছতে থাকে।
 বিমলেন্দু চলে যাওয়ার পর তিন বছর পর তার আদরের মৌ আর বিতান তাদের বাবার মত করেই আবার তার জন্মদিন পালন করলো।
 কিছু খুশি আছে যার প্রকাশ একমাত্র বারবার চোখের জল মুছেই করতে হয়।


Friday, February 25, 2022

ঝরাপাতা (চৌদ্দ পর্ব)

ঝরাপাতা (চৌদ্দ পর্ব)

   এবার দোদুল উঠে দাঁড়িয়ে তার চেয়ারটা নিয়ে এগিয়ে গিয়ে ওদের কাছাকাছি বসে।সুচন্দার দিকে তাকিয়ে বলে,
--- আমার দুবছরের ছোট একটা বোন ছিল।তার নাম ছিল সুনন্দা।তাই প্রথম যখন অস্মিতার মুখে তোমার নামটা শুনেছিলাম আমার বুকটার ভিতর ধড়াস করে উঠেছিল।বোনের মুখটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল।সেদিনই আমি ঠিক করেছিলাম তোমার সাথে যেদিন আমার দেখা হবে আমার বোনের জায়গাটা তোমায় দেবো ; তুমি আমার হারিয়ে যাওয়া বোনের শুন্য জায়গাটা ভরিয়ে দেবে?
 এতক্ষণ ঠাট্টাবাজ যে দোদুলকে ওরা দেখছিল হঠাৎ করে দোদুলের গলার স্বরে এই পরিবর্তনে দুজনেই অবাক হয়ে যায়।দুজনেই খেয়াল করে দোদুল তার চোখের জল আড়াল করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।সুচন্দা উঠে দাঁড়িয়ে দোদুলের আরও কাছে এগিয়ে যায় ,
--- জন্মের থেকে আমারও দাদার জায়গাটা শুন্য পরেই আছে।আমাদের দুজনের জীবনের এই শূন্যস্থান আমরা দুজনেই পূরণ করে নিই ; কি বলো দাদা?
--- ঠিক বলেছিস!আমি কিন্তু তোকে তুই করেই কথা বলবো।
--- সেতো বলতেই হবে।পৃথিবীর কোথাও শুনেছ ভাইবোনেরা তুমি করে কথা বলে?
 অস্মিতা চুপচাপ ওদের কথা শুনছিল।নিজেও কিছুটা আবেগপ্রবন হয়ে পড়েছিল।কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য একটু কেশে গলা ঝেড়ে বলে উঠলো,
-- কিন্তু আমার ক্ষেত্রে একটু সমস্যা দেখা দিলো ---
 সুচন্দা ও দোদুল দুজনেই একসাথে বলে উঠলো
-- এখানে আবার কি সমস্যা দেখা দিলো?
-- আমি ভাবছি আমার বিয়ের পর সুচন্দা আমাকে নাম ধরে ডাকবে নাকি বৌদি বলে ডাকবে?
 তিনজনেই হো হো করে হাসতে লাগলো।
  সুচন্দার জীবনে অনেককিছু হারানোর পরে অস্মিতা ও দোদুলের মত মানুষের সাথে পরিচয় হয়ে নিজের জীবনের অনেক কষ্টই সে ভুলেছিল।সময় নামক ওষুধটা তো ছিলই।এরপর থেকে দোদুল যতবার বাড়িতে এসেছে সুচন্দার সাথে দেখা করেই গেছে।কখনো সুচন্দার দিদির বাড়িতে আবার কখনো বা অস্মিতাদের বাড়িতে।
  গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট হওয়ার আগেই সুচন্দার জন্য একটা সম্মন্ধ আসে ছেলে সরকারী চাকুরীজীবী।দিদি,ভগ্নিপতি প্রাথমিক কথাবার্তার পর মাকে নিয়ে গিয়ে ছেলে এবং তাদের বাড়ির সবকিছু দেখিয়ে আনে।সুচন্দার মায়েরও খুব পছন্দ হয়।কিন্তু সুচন্দা নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে বিয়ে বসতে চায় না।এবারেও সে সকলকে বুঝাতে ব্যর্থ হল।হেরে গেলো সে বাড়ির সকলের কাছে।তার অনুনয়-বিনয়,কান্নাকাটি কোনকিছুই ধোপে টিকলো না।তার ভাঙ্গা মনটাকে যখন একটু একটু করে নিজের মত করে তৈরি করে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে ঠিক সেই মুহূর্তেই বাড়ির থেকে বিয়ে ঠিক করে আবার সুচন্দার মনটাকে ভেঙ্গে তছনচ করে দিলো।
 সৃষ্টিকর্তা সুচন্দার জীবনটাকে নিয়ে বারবার কেন যে এমন নিঠুর খেলা খেলছেন তা তিনি ছাড়া বোধকরি আর কেউই জানেন না।মাঝে মাঝে সুচন্দার মনেহয় তার এই ব্যর্থ জীবনটাকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার কোন মানেই হয়না।নিজেকে শেষ করে দিতে মন চায়।কিন্তু পারে না।সকলের অলক্ষ্যে রাতের আঁধারে চোখের জল ঝরিয়ে শান্ত হতে চেষ্টা করে।সুমিতের কথা মনে পড়ে।কলকাতা গেলেই অন্যান্য বন্ধুদের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করে বন্ধু বিশাখার খোঁজ নিতে।কিন্তু কেউই তার খোঁজ জানে না।আসলে স্কুল জীবনের বন্ধুরা মাধ্যমিকের পরেই একটু একটু করে হারিয়ে যেতে থাকে অধিকাংশ মানুষের জীবনে।নূতন নূতন বন্ধু আজীবন ধরে আসে আর যায়।কিন্তু সেই সুন্দর,পবিত্র মন একমাত্র থাকে স্কুল জীবনেই।এই বয়সের বন্ধুরা হারিয়ে গেলেও তাদের কথা কখনোই ভোলা যায় না।আর বিশাখা এখানে সুমিতের বোন বিশাখার খোঁজ পাওয়া গেলেই পাওয়া যেত সুমিতকে নিজ জীবনে।
  সুচন্দা তার জীবনের এই টানাপোড়েনের প্রতিবাদ করলেও কোথাও যেন তার প্রতিবাদের একটা ফাঁক থেকে যায় প্রতিবারই।অসীম এক অভিমানে নিজের মধ্যেই সে সেই পরিস্থিতিতে গুটিয়ে যেতে থাকে।প্রতিবাদ,রাগ,কান্না সবই থাকে কিন্তু সেভাবে জোরালো গলায় নিজের চাহিদাগুলো না পাওয়ায় চরম প্রতিবাদ না করেই সবকিছু মেনে নেয় বা নিতে বাধ্য হয়।এখানে কাজ করে তার জীবনের চরম অভিমান। এও এক ধরনের আত্মহত্যার নামান্তর।
  হবু শ্বশুরবাড়িতে প্রচুর আত্মীয়স্বজন।সকলেই বিয়ের আগে সুচন্দাকে দেখতে চায়।কিন্তু বিয়ের আগে বারবার এত লোকের সমাগম ভাগ্নে সঞ্জয়ের শ্বশুরবাড়িতে ঠিক মেনে নিতে পারলেন না সঞ্জয়ের মামা গোবিন্দবাবু।ভগ্নিপতির মৃত্যুর পর এই মামাই তার বোনের সংসার দেখভালের দায়িত্ব সামলেছেন এবং আজও সামলে যাচ্ছেন।সঞ্জয়েরা চার ভাই।সঞ্জয়ই বড়।বাকি সকলেই এখনো পড়াশুনা করছে।
  গোবিন্দবাবু সুচন্দার ভগ্নিপতিকে জানান তারা সুচন্দাকে একদিন তাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে চান।কিন্তু ভগ্নিপতি আপত্তি জানান তার শ্যালিকার বিয়ের আগে উঠবি শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার।গোবিন্দবাবু তখন বলেন,
--- আমাদের আত্মীয়স্বজন একটু বেশি।রোজ রোজ উঠবি আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়াটা আমার ঠিক ভালো লাগছে না।তাই যদি আপনারা অনুমতি দেন তবে সুচন্দাকে একবেলার জন্য আমরা নিয়ে আসতে চাই।আপনারা চাইলে সঞ্জয়ও আপনাদের বাড়িতে যাবে।কিন্তু আপনারা মেয়েটিকে দয়া করে একবার পাঠালে আমাদের একটু সুবিধা হত।আমি তাহলে ওই একটা দিনে আমার সব আত্মীয়স্বজনকে আমার বাড়িতে ডেকে নিতাম।
 সুচন্দা যেমন বিয়ের আগে তার মামাশ্বশুর বাড়িতে যায় ঠিক তেমনই সঞ্জয়কেউ একবার ডেকে নেওয়া হয় সুচন্দার দিদির বাড়িতে।সঞ্জয়ের সাথে সুচন্দার মামুলী কথাবার্তা হয়।কিন্তু বুদ্ধিমতী সুচন্দা বুঝতে পারে সঞ্জয় খুব সরল প্রকৃতির মানুষ।অতি সাধারণ পরিবার তাদের।তারা চার ভাই এবং তাদের মা সকলেই খুব সহজ সরল প্রকৃতির।সহজেই মানুষকে আপন করে নিতে পারেন।অর্থ,বৈভব তাদের নেই ঠিকই কিন্তু তাদের প্রত্যেকের একটা সুন্দর মন আছে।একদিনের কিছুটা সময় তাদের সাথে কাটিয়ে তার অভিশপ্ত জীবনটার একটা ভালো দিক সে দেখতে পায়।বিয়েতে মত ছিলো না তার প্রথম থেকেই। অনিচ্ছা সত্বেও সে এই বিয়েতে মত দিতে বাধ্য হয়েছিল বাড়ির লোক আর নিজের প্রতি নিজের অভিমানবশত।কিন্তু এই বাড়িতে এসে উঠবি শ্বশুরবাড়ির সকলের সাথে কয়েক ঘন্টা কাটিয়ে সে বুঝে গেছিল অর্থ তাদের কম আছে ঠিকই কিন্তু তাদের সকলের মনে আছে উজাড় করা ভালোবাসা।যে ভালোবাসায় জড়িয়ে থেকে নিজের জীবনের না পাওয়াগুলিকে পুর্ণ করতে না পারলেও অন্তত ভুলে থাকতে পারবে।
 সব থেকে তার ভালো লেগেছিলো সঞ্জয়ের একটা কথা।সঞ্জয় বহুক্ষণ ধরেই চেষ্টা করছিল সুচন্দাকে একাকী কিছুক্ষণ পেতে।কিন্তু এত লোকের মাঝে তা ছিল একেবারেই অসম্ভব।কিন্তু মামা ভাগ্নের মনের কথা বুঝতে পেরে সেই সুযোগটা তাকে করে দিয়েছিলেন।তিনি সকলের মধ্যে এসে বলেছিলেন,
--- বাড়ির সকলের সাথে আমি একটা জরুরী কথা বলতে চাই।তোমরা একটু পাশের ঘরে এসো।
 সুচন্দার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন,
--- মা,মিনিট পাঁচেক তুমি একটু একা থাকো।

ক্রমশঃ 
  

Friday, February 18, 2022

মুখোশের আড়ালে

মুখোশের আড়ালে
 অগাধ জলের মাছ,সব বুঝছি আজ।তখন তো ওর ভালোবাসায় আমি ছিলাম অন্ধ।ওর মিষ্টি মিষ্টি কথা আর সুন্দর ব্যবহার দিয়ে ও আমায় মোহিত করে রেখেছিল।তাই আমি ওর কোন দোষত্রুটি দেখতেই পেতাম না।
   বন্ধু আবিরার মাধ্যমে শমিতের সাথে হিয়ার পরিচয়। আবিরার দূরসম্পর্কের লতায়-পাতায় জড়ানো দাদা শমিত।নায়কোচিত চেহারা আর এতটাই স্মার্ট যে যেকোন মেয়েই ওর প্রেমে পড়তে বাধ্য।কি সুন্দর ভাবে কথা বলে।মানুষের মন জয় করতে যা যা করণীয় কিছুই শমিতের অজানা নয়।
যতদিন শমিতের সাথে হিয়া বাইরে বেরিয়েছে ও খেয়াল করেছে শুধুমাত্র হিয়ার ক্ষেত্রেই নয় রাস্তাঘাটে যেকোন মানুষ বিপদে পড়লেই শমিত নিজের জীবন বিপন্ন করে সেই ব্যক্তিকে বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে।এইসব দেখেই হিয়া শমিতের প্রতি মুগ্ধ হয়ে গেছিলো।তার দুচোখ ভরে শমিতকে নিয়ে স্বপের জাল বুনতে শুরু করে।
   কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ার সময় আবিরার সাথে হিয়ার পরিচয়। আবিরার দিদির বিয়েতে গিয়ে শমিতের সাথে হিয়ার পরিচয়।বাসররাতে সারারাত জাগা আর মান্না দে'র দুখানা প্রেমের গান শুনিয়ে শমিত শুধু হিয়ার মনই নয় সে জয় করে নেয় সেদিন ঐরাতে যারা যারা বাসরঘরে ছিলো সকলের মন।হিয়ার গল্প আগেই জানা ছিল শমিতের।সে তার বোন আবিরার কাছেই শুনেছিল -বড়লোকের একমাত্র মেয়ে , বাবার বিশাল বিজনেস।হায়ার এডুকেশন নিয়ে হিয়া তার বাবার ব্যপসা দেখাশুনা করবে।
 আস্তে আস্তে শমিতের সাথে হিয়ার খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে।শমিত আগেই প্রপোজ করে হিয়াকে।যেদিন শমিত হিয়াকে তার ভালোবাসার কথা জানিয়েছিল সেদিন হিয়া দুইহাতে শমিতকে জড়িয়ে ধরে তার মনের কথা বুঝিয়েছিল।
  মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে শমিত।মায়ের সাথে গড়িয়ায় নিজেদের বাড়িতেই থাকে।এমবিএ করেছে।খুব ভালো না হলেও মোটামুটি একটা চাকরি সে করে।হিয়ার বাবার ভীষণ আপত্তি ছিল এই সম্পর্কটাকে পূর্ণতা দিতে।কিন্তু হিয়া ও তার মায়ের জোরাজুরিতে তিনি এই সম্পর্ক মেনে নিতে বাধ্য হন।তবুও তিনি মেয়েকে ডেকে তার মায়ের অনুপস্থিতিতে বলেছিলেন,
--- আমি যে কথাটা বলবো তোমার ভালো নাই লাগতে পারে ,আজ হয়ত তুমি একথাটা শোনার পরে পাঁচটা যুক্তি খাঁড়া করতে পারো।কিন্তু একদিন এই কথাটা হয়ত তোমার কাজে আসবে 
 হিয়া চুপ করেই তার বাবার কথাগুলি শুনছিল।হিয়ার বাবা আবার বলতে শুরু করলেন,
--- শমিতকে তুমি ভালোবাসো বিয়ে করতে চলেছ ;তোমার এবং তোমার মায়ের কথামত আমি বিয়েটা মেনেও নিয়েছি।কিন্তু কোনদিনও যদি বুঝতে পারো তোমার প্রতি ভালবাসায় নয় উত্তরাধিকার সূত্রে পিতৃ সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকার তুমিই বলে এই বিপুল অর্থের মালিক হওয়ার কারণেই একটা ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে তোমার সাথে অভিনয় করেছে শমিত সেদিন কিন্তু কষ্ট না পেয়ে নিজেকে শক্ত রেখো।আমি মানিয়ে নিতে বলবো না মানসিক শান্তি নষ্ট করে।ভালোভাবে বাঁচার অনেক পথ আছে।তার যেকোন একটা পথকে খুঁজে নিও।
 সেদিন বাবার কথাগুলো হিয়ার পছন্দ না হলেও সে কোন তর্কে বাবার সাথে যায়নি।
 বিয়ের এক বছরের মধ্যেই মায়ের মৃত্যুর পরই নিজের চাকরি ছেড়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়ি এসে উঠে বসে এই অজুহাতে হিয়ার বাবার বয়স হয়েছে একা তিনি ব্যবসার সমস্ত কাজ দেখাশুনা করতে পারছেন না।তারপর আস্তে আস্তে ব্যবসার সমস্ত ব্যাপারে নাক গলানো।হিয়া এবং তার বাবার সাথে ব্যবসা সংক্রান্ত ব্যাপারে মনোমালিন্য। আস্তে আস্তে শমিতের
মুখোশ খুলতে শুরু করে।
  হিয়া আজ বুঝতে পারে বাবা শমিতকে ঠিকই চিনেছিলেন।শমিত এতটাই অগাধ জলের মানুষ তার চালাকি হিয়া ধরতে পেরেছিল না।সে সিদ্ধান্ত নেয় " দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো "-।


Tuesday, February 15, 2022

ঝরাপাতা (তেরো পর্ব)

ঝরাপাতা (তেরো পর্ব)
  জীবনের বাঁক যেকোন সময় হঠাৎ করেই পরিবর্তন হয়ে যায়।কেউ বুঝতেও পারে না কোথা থেকে কি হয়ে গেলো।শিলিগুড়িতে পড়ার সময় অস্মিতা নামে একটি মেয়ের সাথে সুচন্দার খুব বন্ধুত্ব হয়। অস্মিতা পড়াশুনায় ছিলো মধ্যম মানের। সে ছিলো ধনীর দুলালী। কিন্তু এরজন্য তার মধ্যে কোন অহংকার ছিলো না।সুচন্দার দিদির বাড়িতে তার ছিল অবারিত দ্বার।ঠিক তদ্রুপ অস্মিতার বাবা,মা ও সুচন্দাকে খুবই ভালোবাসতেন। অস্মিতা পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে ছিলো বড়।
 কলকাতার বাড়ি ছেড়ে আসার পর নিজের জীবনের অনেক আশা,আকাঙ্খা,সুখ,আনন্দ এমনকি জীবনের প্রথম ভালোবাসা যা পাঁপড়ি মেলার আগেই ঝরে গেলো এইরূপ অনেককিছুই বিসর্জন দিতে হয়েছিলো সুচন্দাকে।এই সবকিছু হারানোর মধ্যেও অস্মিতার মত একজন মনের মত বন্ধু পেয়ে কিছুটা সময় অন্তত সুচন্দার ভালো কাটতো।
  অস্মিতার বাবা ছিলেন একজন নামকরা ডাক্তার।সুচন্দা ও অস্মিতা দুজনেই তাদের ভালোবাসা আর সুন্দর ব্যবহার গুনে দুটো অপরিচিত পরিবারকে আত্মার বন্ধনে আবদ্ধ করে নিলো।
 তারা যে কলেজে পড়তো সেই কলেজের ঠিক কাছেই ছিলো অস্মিতাদের বাড়ি।যেদিন প্রাইভেট টিউশন থাকতো সুচন্দা স্কুল শেষে আর দিদির বাড়ি ফিরে আসতো না সোজা চলে যেত প্রিয় বন্ধুর সাথে তাদের বাড়িতে।ওখানে খেয়েদেয়ে দুজনে একসাথে স্যারের কাছে পড়তে যেত।একটু বেশি দেরি হয়ে গেলে সুচন্দার ভগ্নিপতি এসে অস্মিতাদের বাড়ি থেকেই তাকে নিয়ে যেতেন।
প্রাথমিক মন খারাপের শোক কাটিয়ে উঠতে সুচন্দার জীবনে অস্মিতা এক বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে শুধুমাত্র তার সঙ্গ দানের মাধ্যমে।পৃথিবীর একমাত্র প্রিয় বন্ধু অস্মিতার কাছেই সুচন্দা স্বীকার করেছিল সুমিতের কথা।এক বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যাবেলা বৃষ্টির কারণে পড়তে যাওয়া আর হয়ে ওঠে না দুই সখীর স্কুল থেকে ফেরার পর।অগত্যা দুজনে শুয়ে শুয়ে নিজেদের মনের কথা একে অপরকে শেয়ার করেছিলো। অস্মিতা তার মনের কথা অর্থাৎ তার ভালোবাসার কথা শেয়ার করতেই সুচন্দাও সেদিন অকপটভাবে  নিজের দুখের কাহিনী স্বীকার করেছিল।
 ওরা যখন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী তখন অস্মিতার প্রেমিক দোদুল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষ।বাবা,মায়ের একমাত্র সন্তান।মধ্যবিত্ত পরিবার।দোদুলের বাবা,মা অস্মিতাকে তাদের ছেলের বউ হিসাবে মেনেই নিয়েছেন।তবে চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত তারা ছেলের বিয়ে তো দেবেনই না উপরন্তু দেখা সাক্ষাৎ করা,ঘুরে বেড়ানো এসব তারা মোটেই পছন্দ করেন না।কিন্তু দোদুল যখন বাড়িতে আসে বাড়িতে অস্মিতাকে তারা অ্যালাউ করেন এবং সেটা রোজ হলেও তারা আপত্তি করেন না।শুধুমাত্র বাইরে ঘুরে বেড়ানোই তাদের আপত্তি।
  অনেক ছেলেমেয়েই আছে যারা বাবা মায়ের চোখের আড়ালে তাদের আপত্তিতে অনেক কাজই করে থাকে।কিন্তু অস্মিতা বা দোদুল কেউই সে ধরনের নয়।দুই পরিবার তাদের সম্পর্কটা মেনে নিয়েছেন তাতেই তারা ভীষণ খুশি।তাই তাদের দুজনেরই এই সামান্য আপত্তিটা মেনে নিতে বিন্দুমাত্র ভাবতে হয়নি।
 সুচন্দার সাথে দোদুলের কথা শেয়ার করার পর দোদুল বাড়ি ফেরার পর সুচন্দাকে একদিন নিয়ে গিয়ে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।ভীষণ মিশুকে এবং খোলামেলা মনের মানুষ দোদুল।সুচন্দার সাথে তার খুব সুন্দর একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে।প্রথম দিনেই দোদুল আচমকা তাকে বলে বসে,
--- সম্পর্কে ভবিষ্যতে তুমি আমার শ্যালিকা হবে কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা 
 দোদুলের কথা শুনে দুই সখী তার মুখের দিকে তাকিয়ে একইসাথে বলে ওঠে,
--- দাবিটা কি ?
--- দাবি একটা আছে বৈকি!
 দোদুলের কথা শেষ হওয়া মাত্র সুচন্দা অস্মিতার দিকে ফিরে বলে,
--- দেখ অস্মি,আমি কিন্তু কোন দাবিটাবি মেটাতে পারবো না 
--- আরে দাঁড়া কি বলতে চায় আমি একটু পরিস্কার করে বুঝে নিই
 দুই বন্ধুর কথাবার্তায় দোদুল খুব মজা পাচ্ছিলো।দোদুল খুব গম্ভীর হয়ে অস্মিতার দিকে ফিরে বলে,
--- এই ব্যাপারে তুমি কোন কথা বলবে না।এটা সম্পূর্ণ আমার আর সুচন্দার ব্যাপার
 আরও অবাক হওয়ার পালা দুই সখীর। অস্মিতা একটু জোরেই বলে ওঠে,
--- একটু ঝেড়ে কাশো তো ;কি বলতে চাইছো পরিস্কার করে বলো।
 দোদুল বেশ মজা পাচ্ছে।একদিকে সুচন্দা কিছুটা ভয় পেয়ে পালিয়ে যেতে চাইছে আর অন্যদিকে অস্মিতা একটু একটু করে রেগে যাচ্ছে।
-- আরে ঝেড়ে কাশির কি আছে?আমার সুচন্দার কাছে কিছু চাওয়ার আছে।ও যদি আমাকে সেটা দেয় আমার খুব ভালো লাগবে 
অস্মিতা একথাটা শুনে প্রথমে একটু রেগে গেলেও হঠাৎ দোদুলের মুখের দিকে চোখ পড়াতে দেখতে পায় মুখে একটা দুষ্টু হাসি লেগে আছে।আর তাতেই ও বুঝতে পারে দোদুল ইচ্ছাকৃত ওকে রাগানোর জন্যই এইসব কথা বলে চলেছে।দোদুলের মাথায় অন্য কোন ভাবনা রয়েছে।তাই সে এ ব্যাপারটাই খুব একটা পাত্তা না দিয়ে বললো,
--- তুমি আমার বন্ধুর কাছে কি চাইবে সেটা তোমার ব্যাপার।সবকিছু শুনেমিলে আমার বন্ধু তোমায় সেটা দেবে কিনা সেটা তার ব্যাপার;এখানে আমি থার্ড পার্সন। এখান থেকে আমার চলে যাওয়ায় ভালো অস্মিতা উঠে দাঁড়ায় সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য।বন্ধুর সাথে সুচন্দাও দাঁড়িয়ে পড়ে।এমনিতেই দোদুলের কথাবার্তায় সুচন্দা বেশ অবাক হয়ে যাচ্ছিল তারউপর অস্মিতা এ ঘর ছেড়ে চলে যাবে বলাতে সে খুবই ভয় পেয়ে যায়।অপরিচিত একটা মানুষ প্রথম দিনের পরিচয়ে কি যে চাইতে পারে তার কাছে এটাই বোধগম্য হচ্ছে না।
   অস্মিতার সাথে চার বছরের সম্পর্ক দোদুলের।দুই বাড়ি থেকে সম্পর্ক মেনে নেওয়ায় পড়াশুনা শেষে চাকরি পেলেই দোদুল আর অস্মিতার বিয়ে হবে ঠিক হয়েই রয়েছে।অবশ্য অস্মিতার ইচ্ছা সেও তার পড়াশুনা শেষ করে চাকরি করবে।নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে সে কিছুতেই বিয়ের পিড়িতে বসবে না।একথা সে তার বাবা,মাকে ছাড়া দোদুলকেও বলে দিয়েছে। দোদুলেরও ইচ্ছা অস্মিতা নিজের পায়ে দাঁড়ায়।দোদুল কিছুতেই নারী স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার পক্ষপাতী নয়।সে তার এই মনোভাবের কথা বারবার নানান প্রসঙ্গে তার অস্মিকে জানিয়ে দিয়েছে।এই সব কথা অস্মিতা তার বান্ধবী সুচন্দার সাথে কখনও না কখনও শেয়ার করেছে। সুচন্দাও দোদুলের সম্পর্কে অনেককিছু জানার পর  মনেমনে তার সম্পর্কে একটা অন্যরকম উচ্চ ধারণা গড়ে তুলেছিল।কিন্তু আজকের পরিস্থিতি তার সেসব ধারণার উপর একেবারে জল ঢেলে দিলো।
 অস্মিতাকে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে দোদুল তার দিকে এগিয়ে এসে বলে,
-- আরে তুমি কোথায় যাচ্ছ?তুমি চলে গেলে তো কোন সাক্ষী থাকবে না আমার কথার।এরপর যদি তোমার বন্ধু অস্বীকার করে?
--- এই তুমি এত ভনিতা করছো কেন বলো তো? যা বলবে তাড়াতাড়ি বলে ফেলো।
 অস্মিতার কথার মাঝখানেই সুচন্দা বলে ওঠে,
--- আমারও অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে চল আমরা বাড়ি যাই।
--- কিন্তু আমি তোমার কাছে কি চাই সেটা না শুনেই চলে যাবে?
 কথাটা বলেই দোদুল হো হো করে হাসতে থাকে --।

ক্রমশঃ
 

Monday, February 7, 2022

ঝরাপাতা (বারো পর্ব)

ঝরাপাতা ( বারো পর্ব)
  সবার আনন্দে যদি সবাই খুশি হত তাহলে তো মানুষের অনেক দুঃখ কষ্টই লাঘব হয়ে যেত।নাতি যত বড় হতে থাকলো সে মায়ের পাশে থেকে তার মায়ের প্রতি ঠাকুমার অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদে সরব হতে থাকলো;প্রতিটা মুহূর্তে যা তার বাবা সুধীরও পারেনি সব সময়। সুধীরও প্রতিবাদ করতো ঠিকই কিন্তু শত হোক মা তো!
 তাই বলে সুবীর যে তার ঠাকুমাকে ভালোবাসে না তা কিন্তু নয়।সে তার ঠাকুমা এবং মা দুজনকেই প্রচণ্ড ভালোবাসে।কিন্তু জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই তার মধ্যে ন্যায়-অন্যায় বোধটা বড্ড বেশি কাজ করতে থাকে।
 প্রায় প্রতিটা পদক্ষেপেই ঠাকুমার প্রতি সুবীরের এই সরব হওয়াটা বিশাখার অনেক সময় ভালো লাগতো না।তাই মাঝে মাঝে সে তার ছেলেকে বলে,
--- ঠাকুমার বয়স হয়েছে কি বলতে কি বলেন সব সময় হয়তো মনেও রাখতে পারেন না।একটু চুপচাপ থাকলেই তো হয় বাবা।
--- তুমি কি ধাতুতে গড়া আমি জানিনা মা।সেই জ্ঞানের থেকে দেখে আসছি তোমার প্রতি ঠাকুমার এই ব্যবহার।নিজের তো প্রতিবাদ করার কোন ক্ষমতা নেই ;আমাকেও নিষেধ করছো?দিনরাত পরিশ্রম করো।স্কুল থেকে এসে ঘরের যাবতীয় কাজ করো।কিন্তু কখনোই দেখিনি ঠাকুমা তোমার সাথে একটু ভালো ব্যবহার করছে।তারমানে সেই প্রথম থেকেই ঠাকুমা তোমার প্রতি এই আচরণই করে যাচ্ছে।তোমরা দুজন ছাড়া আমার আর কে আছে?তোমাদের দুজনকেই আমি খুব ভালোবাসি।তোমরা কেউ কষ্ট পেলে আমার তো ভালো লাগে না।তাই আমি এর প্রতিবাদ করবোই।ঠাকুমার মধ্যে আগের থেকে অনেক পরিবর্তন এসেছে দেখবে আস্তে আস্তে ঠাকুমাও একদিন ঠিক বুঝতে পারবেন তিনি এতদিন ধরে তোমার প্রতি যে আচরণ করেছেন তা ঠিক করেননি।
 হ্যাঁ বিশাখার শ্বাশুড়ী ঠিকই বুঝেছিলেন কিন্তু সেটা একেবারে শয্যাশায়ী অবস্থায়।যখন তিনি সম্পূর্ণভাবে তার বৌমার প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন।হাঁটাচলা পুরোপুরি বন্ধ তখন।প্রাকৃতিক কর্ম সব বিছানাতেই।বিশাখা যখন স্কুলে থাকে সেই কয়েক ঘণ্টা সে একজন আয়ার ব্যবস্থা করেছিলো।নার্সিং ট্রেনিংটা যেহেতু নেওয়া ছিল তাই সেক্ষেত্রে অনেকটাই উপকারে এসেছিল।সেই আয়ার কাছেই উগড়ে দিয়েছিলেন মৃতুপথ যাত্রী মানুষ তার একমাত্র ছেলের বউয়ের প্রতি করা অন্যায় অত্যাচারের কাহিনী।তিনি বলতেন,
--- আমি কেন যে ওর প্রতি এমন অন্যায় করতাম নিজেও বুঝতে পারতাম না।যখন সুধীর বেঁচে ছিলো তখন সে যখন আমাকে বোঝাতো মনেমনে ভাবতাম আর আমি বৌমার সাথে খারাপ ব্যবহার করবো না কিন্তু ও যখনই আমার সামনে এসে দাঁড়াত আমায় মাথায় আগুন চরে যেত।নিজেকে সামলে নেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি পারিনি।পরবর্তীতে দাদুভাইও আমায় অনেক বুঝিয়েছে।আমি তারপর অনেক ভেবেছি আর ভেবে ভেবে এর কারণও বের করতে পেরেছি যখন ঠিক তখন আমার আর তারজন্য কিছু করার ক্ষমতা নেই।
 অল্পবয়সী আয়া বৃদ্ধার মুখে তার বোধোদয়ের সমাধান সূত্রটি জানতে চেয়ে বললো,
--- বলো তো ঠাকুমা এর কারণটা কি?
--- আসলে কি জানিস?অধিকাংশ বউয়েরা শ্বশুরবাড়ি এসে শ্বাশুড়ী দ্বারা অত্যাচারিত হয়।প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় তারা প্রতিবাদ করতে পারে না বা করলেও কোন লাভ হয়না।আবার সেই সব বউয়েরা যখন শ্বাশুড়ী হয় তখন নিজের প্রতি অত্যাচারের কথা মনেকরে নিরীহ বউটির প্রতি অত্যাচার করে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে।অন্তত আমার ক্ষেত্রে তো এইরূপই হয়েছিল।
--- সেটা কিছুটা হলেও হয়ত ঠিক ঠাকুমা।কিন্তু সর্বক্ষেত্রে নয়।কিছু শ্বাশুড়ী বৌমার মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্কও আছে।আবার কিছু মানুষ জানো তো জন্মগতই খারাপ হয়।তারা কারো সাথেই ভালো ব্যবহার করতে পারে না। প্রতিটা পাড়াতেই খুঁজলে দেখবে এরূপ বেশ কয়েকটা মানুষ পেয়ে যাবে। এরাই তাদের বউদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে থাকে।আসলে এরা কারো সাথেই ভালো ব্যবহার করতে জানে না।
--- অতশত জানিনা বাপু,আমার শ্বাশুড়ি আমার সাথে মারত্মক দুর্ব্যবহার করতো।আমার স্বামী,শ্বশুর তার ভয়ে জড়সড় থাকতো।কেউ কোনদিনও আমার হয়ে টু শব্দটি করতে পারেনি।কতদিন কোন কোন বেলা আমার অন্যায়ের শাস্তিস্বরূপ আমায় খেতে দেয়নি।অথচ জানিস আমিই কিন্তু রান্নাবান্না করতাম।কিন্তু কাউকেই খেতে দেওয়ার অধিকার আমার ছিল না।এমন কি তারা যখন খেতে বসতো রান্নাঘরে তাদের আসন পাতিয়ে,জলের গ্লাস গুছিয়ে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হত।
--- কেন তা কেন?দাদু কিছু বলতো না?
--- কেন যে তিনি এটা করতেন সেটা বলতে পারবো না।তবে ওই যে বললুম আমার শ্বাশুড়ি মায়ের ভয়ে ছেলে আর তার বাপ ভয়ে জবুথবু হয়ে থাকতো।এখন বুঝি তখন তো কিছু করতে পারিনি তাই বৌমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে মনের জ্বালা মেটাতাম।
 মৃত্যুর প্রায় মাসখানেক আগে বিশাখাকে ডেকে তার শ্বাশুড়ী বলেন,
--- মরার আগে বোধোদয় হল বৌমা।তোমার উপর যে অন্যায় অত্যাচার করেছি তারজন্য আমায় ক্ষমা কোরো।তুমি ক্ষমা না করলে নরকেও আমার ঠাঁই হবে না।
 বিশাখা তার শ্বাশুড়ী মায়ের হাত দুটি ধরে সেদিন বলেছিলো,
--- আপনি যখন আমায় বকাবকি করতেন তখন সত্যিই খুব কষ্ট পেতাম মা।বুঝতে পারতাম না কি কারণে আপনি আমার সাথে ওই রকম ব্যবহার করতেন।কিন্তু মুখ বুঝে সব সহ্য করতাম মনেমনে ভাবতাম একদিন না একদিন আপনি আপনার ভুল বুঝতে পারবেন।আগে আপনার ছেলে আমায় শান্তনা দিত।তারপর আপনার নাতি বড় হওয়ার পর থেকে সেও তার বাবার মত আমায় আগলে রাখতে শুরু করে।আমার কষ্ট কমতে থেকে।আর আজ প্রায় বছর খানেক আপনার মধ্যে আমি পরিবর্তন দেখছি।এখন আমার আর কোন কষ্ট নেই।আমি সেসব ভুলে গেছি মা।ওইসব মনে করে আপনি কষ্ট পাবেন না।
তারপর বিশাখার শ্বাশুড়ী তার বালিশের তলা থেকে তার নিজের আলমারির চাবি বের করে বিশাখার হাতে দিয়ে বলেন আলমারি খুলে তার ভিতর থেকে গয়নার বাক্সটা নিয়ে আসতে।বিশাখা তার কথামত বাক্সটা নিয়ে এলে তিনি বলেন,
--- ওই বাক্সের ভিতরই তিনটি ছোট কানের দুলের বাক্স আছে যা তার বিয়ের সময় নিকট আত্মীয়রা দিয়েছিলেন তার হাতে।অথচ আমি সেগুলি কোনদিনও তোমার হাতে তুলে দিতে পারিনি।আমার অপরাধের শেষ নেই মা -- ।
--- পুরনো কোন কথা ভেবে কষ্ট পাবেন না মা। যা হয়ে গেছে তা আর কোনদিন ফিরে আসবে না।
 বিশাখার শ্বাশুড়ী সেই তিনটি কানের দুল ছাড়াও তার নিজের সব গয়না বৌমার হাতে দিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কাঁদতে থাকেন।নাতি সুবীর কান্নার আওয়াজ পেয়ে দৌড়ে ঠাকুমার ঘরে এসে দেখে তার মা আর ঠাকুমা দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে চলেছে।এই দৃশ্য দেখে  তার চোখ দুটিও ঝাপসা হয়ে আসে।নিজেকে লুকোতে সে অন্য ঘরে চলে যায়।
 এই ঘটনার মাস খানেক পরে রাতে ঘুমের মধ্যেই তিনি আমৃতলোকে যাত্রা করেন।বিশাখার যেহেতু নার্সিং ট্রেনিংটা নেওয়া ছিল সে তার সর্ব শক্তি দিয়ে ,অর্থের দিকে না তাকিয়ে শ্বাশুড়ির সেবা-যত্নই শুধু নয় ডাক্তার ওষুধ ইনজেকশন করেও রোগ নিরাময় করতে পারেনি।এখন শুধু মা আর ছেলের সংসার।

ক্রমশঃ

Tuesday, February 1, 2022

পূর্ব বাংলার সদের বটতলার পুজো

পূর্ব বাংলার সদের বটতলার পুজো।
 বহু বহু বছর আগের কথা।তখনো দেশভাগ হয়নি।আমি যেমন আমার ছেলেবেলা থেকে এ গল্প শুনতে শুনতে বড় হয়েছি ঠিক সেইরূপ বেশ কয়েকটি প্রজন্ম তাদের ছেলেবেলা থেকেই এ গল্প শুনে এসেছে।
 জমিদার পরিবারের কোন এক সদস্য-ধরা যাক তার নাম যজ্ঞেশ্বর রায় চৌধুরী।একদিন দুপুরের দিকে গ্রামের মাটির পথ ধরে বাড়ি ফিরছিলেন।রাস্তাটি ছিল খুবই ছোট এবং ধুলোবালিতে ভর্তি।যজ্ঞেশ্বরবাবু দেখতে পান একজন সধবা বৃদ্ধা অতীব মলিন লাল পেড়ে সাদা শাড়ি পরে রাস্তার মাঝখানে শুয়ে আছেন।যজ্ঞেশ্বরবাবু ভদ্রমহিলার কাছে এসে বলেন,
--- মা যাতায়াতের পথের মাঝখানে এভাবে শুয়ে থাকলে লোক চলাচল তো করতে পারবে না।
 বৃদ্ধা অতি ক্ষীণস্বরে বললেন,
--- কি করবো বাবা!ছেলেমেয়েরা যে আমায় দেখে না।ঠিকভাবে দুটো খেতেও পারিনা।স্বামীটা গাজা, ভাং খেয়ে ঘুরে বেড়ায়।
 যজ্ঞেশ্বরবাবু নীচু হয়ে বৃদ্ধাকে বলেন,
--- মা তুমি আমাকে জানাও কোথায় থাকে তোমার ছেলেমেয়েরা আমি তাদেরকে তোমার কথা বলবো।আর নিতান্ত যদি তারা তোমায় না দেখে আমি আশ্রয় দেবো তোমায়।ঈশ্বরের আশীর্বাদে সে ক্ষমতাটুকু আমার আছে।
--- আচ্ছা পরে তোকে আমি সব জানাবো।
 সারা রাস্তা জমিদার যজ্ঞেশ্বরবাবু ভাবতে ভাবতে আসেন নিজের মাকে এভাবে বাড়িতে আশ্রয় না দিয়ে ছেলেরা খুব অন্যায় করেছে।যেভাবেই হোক কাল পুনরায় বৃদ্ধার কাছে এসে তার ছেলেদের আবাসস্থল জেনে তাকে সেখানে পৌঁছে দিতে হবে।
রাতে খেয়েদেয়ে শোয়ার পর মধ্য রাতে জমিদার স্বপ্ন দেখেন স্বয়ং মাকালি তাকে বলছেন যেখানে তিনি রাস্তার উপরে শুয়ে ছিলেন তার পাশেই যে ফাঁকা জমিটা আছে সেখানে একটি মন্দির স্থাপন করে তার থাকার ব্যবস্থা করতে।এবং কিভাবে তার পুজো করা হবে তাও তিনি বলে দেন।
 পরদিন থেকেই শুরু হয় মন্দির স্থাপনের কাজ।মন্দির বলতে সেই নীচু জমির একপ্রান্তে একটা পুকুর কেটে সেই মাটি দিয়ে উচুঁ করে একটি ভীত স্থাপন করা হয়।বাঁশের তৈরি বেড়া দিয়ে চারিদিক ঢাকা হয়।কাছেপিঠেই তৈরি হতে থাকে মূর্তি গড়ার কাজ।
 গ্রামটিতে হিন্দু,মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের বাস।সকলে মিলেমিশেই গ্রামের যেকোন পার্বণে অংশগ্রহণ করে থাকে।মূর্তি গড়ার কাজ যখন প্রায় শেষের পথে ঠিক তখনই পাশের পাড়া থেকে একই পরিবারের বেশ কয়েকজন কালি মায়ের মূর্তি দেখতে আসেন।তারা মায়ের মূর্তি দেখে খুব হাসিঠাট্টা করতে করতে বলেন যে হিন্দুদের ঠাকুরের মুখে পক্সসের মত এসব কি উঠেছে?তখনো মূর্তি গড়া ও মন্দিরের কাজ সম্পন্ন হয়নি।কাজ চলছে।ওইদিন রাতে জমিদার যে স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন সেখানে মায়ের নির্দেশ ছিল একমাসব্যাপি রায় চৌধুরী পরিবার থেকে একটি কুলোতে চাল নিয়ে ওই কুলো নিয়ে গ্রামের প্রতিটা পরিবারের থেকে যার যেমন ক্ষমতা সে ঠিক সেইরূপ চাল দেবে মায়ের কুলোয়।তারপর সমস্ত চাল একত্রিত করে পুজোর সময় খিচুড়ি ভোগ রান্না হবে।কিন্তু ঘটনার মাঝপথে ঘটলো অন্যরকম কিছু।
 মুসলিম পরিবারটি ওই কথা বলে বাড়ি ফিরে গিয়ে দেখে পরিবারের বাকি যে সদস্যরা বাড়িতে ছিল তাদের সকলের গায়েই পক্স উঠেছে।দেখতে দেখতে পরিবারের সকলেই মারত্মক অসুস্থ্য হয়ে পড়ে।কান্নাকাটি হুলুস্থুল পরিস্থিতি।
 তখন তারা পুনরায় ওই মূর্তির কাছে আসে এবং হাত জোড় করে তাদের কথার জন্য ক্ষমা চাইতে থাকে।রাতে পরিবারের প্রধান সদস্য স্বপ্নাদেশ পায় এই পুজোতে একমাস ব্যাপী যে ভিক্ষা চালু হয়েছে তার ঠিক শেষ দিনের মাথায় ওই মুসলিম পরিবার থেকে কুলোতে ক্ষমতা অনুযায়ী চাল ও সবজি দেবে এবং ওই চাল ও সবজি দিয়ে মায়ের ভোগ হবে।
 আজও সেই রীতি চলে আসছে।জৈষ্ঠ্য মাসে কোন এক শনিবার এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়।আজ রায় চৌধুরী পরিবারের কেউ আর ওদেশে থাকেন না ঠিকই কিন্তু তারা দায়িত্ব অর্পণ করে এসেছেন অন্য একটি পরিবারের উপর।গত বছর এই করোনা পরিস্থিতিতেও সামান্য আয়োজন হলেও নিয়মের কোন পরিবর্তন হয়নি।
 গ্রামটি বাংলাদেশের খুলনা জেলার ফকিরহাট থানার( বর্তমানে নামগুলোর পরিবর্তন হলেও হতে পারে) পিলজঙ্গ গ্রাম।
 যুক্তিতর্ক,বিশ্বাস-অবিশ্বাস যার যার মনের ব্যাপার।ওই জমিদার পরিবারের সন্তান আমি।মন্দিরের সংস্কার হয়েছে ঠিকই কিন্তু রীতির কোন পরিবর্তন হয়নি।