কত ধানে কত চাল,বুঝবে সে হাল - বড় জায়ের কথা শুনে মেঝোজা হেসে লুটিয়ে পড়লো।তাদের ছোট দেওরের বিয়ে ঠিক হয়েছে।আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি।সব সময় বাড়িতে এখন এই বিয়ে নিয়েই আলোচনা।দুপুরের শ্বাশুড়ী মা খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ার পর রান্নাঘরের সব কাজ সেরে দুজনে মিলে তাদের উঠবি ছোট জা কে নিয়ে আলোচনা শুরু করলো। মেঝোজন বড় জায়ের গা ঘেঁষে বসে জানতে চাইলো,
--- হ্যাগো দিদি আমাদের ছোট নাকি অনেক লেখাপড়া জানে?আবার চাকরিও করে শুনছি।এত লেখাপড়া শিখেছে তাহলে তো নিশ্চয়ই কাজকাম কিছু জানে না।তার উপর আবার ছোটবেলায় বাপ মাকে হারিয়ে নিঃসন্তান পিসির কাছে মানুষ। তা সে যখন এতই লেখাপড়া জানে এই গন্ডগ্রামে বিয়ে দিচ্ছে কেন তার পিসি,পিসেমশাই?
--- জানি না বাবু।তবে যতই লেখাপড়া জানুক আর চাকরি করুক না কেন তমালিকা এ বাড়িতে বউ হয়ে আসার পর সংসারের কাজ কিন্তু তিনভাগ করে দিতে হবে ;আমি একথা পরিস্কার মাকে বলে দেবো।নূতন বউ হয়ে এ বাড়িতে আসার পর আমাদের তো কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি?
--- ঠিক বলেছো দিদি।কথায় কথায় শুনতে হয়েছে বাপের বাড়ি থেকে কিছুই শিখে আসিনি।অত লেখাপড়া জানা মেয়ে সে কি মায়ের ওই ব্যবহার মেনে নেবে?আমাদের দুজনের তো কোন উপায় নেই।লেখাপড়া তেমন করিনি আর চাকরি তো দূরহস্ত!বাপ,মা কারো বেঁচে নেই। এ কি মানিয়ে নিতে পারবে?
-- অতশত জানিনা মেঝো, বউ হয়ে তো আগে আসুক তারপর নাহয় সে নিজেই বুঝবে কত ধানে কত চাল!
বাড়ির ছোটছেলের বিয়ে বেশ ধুমধাম সহকারেই হয়ে গেলো।বাড়ির নিয়ম অনুযায়ী নূতন বউ বৌভাতের দিন সকালে মাছের ঝোল রান্না করবে সকলের জন্য।সকালে শ্বাশুড়ী মার নির্দেশ অনুযায়ী নূতন বউ রান্নাঘরে ঢুকলো।বড়,মেঝো দুজনেই রান্নাঘরে ছিল।তমালিকাকে ঢুকতে দেখে দুজনে দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।তমালিকা এগিয়ে গিয়ে তাদের দুজনের উদ্দেশ্যে বললো,
--- মা আমাকে আজ মাছের ঝোল করতে বলেছেন।এই বাড়ির নিয়ম অনুযায়ী এই মাছের ঝোলটাই নাকি ঘি ভাতের সাথে জ্ঞাতিদের দিতে হবে।তোমরা আমাকে একটু দেখিয়ে দাও কোথায় কি আছে আমি মাছটা রান্না করি।
বড়জা তখন তমালিকা কাছে এগিয়ে এসে খুব আস্তে আস্তে বললো,
--- আমি মাছ ভেজে রেডি করে দিচ্ছি।তুই শুধু ঝোলটা চাপিয়ে দে।মাকে কিছু বলতে হবে না।তুই চুপচাপ গ্যাসের কাছে দাঁড়িয়ে থাক।মাকে ঢুকতে দেখলেই খুন্তি নিয়ে কড়ায়ের ভিতর নাড়াচাড়া করবি।
--- দিদিভাই আমি পারবো।তুমি শুধু তেল,নুন,মশলা কোথায় আছে বলে দাও।মাছটা তো ধোওয়া হয়ে গেছে দেখছি।
দুই জা রান্নাঘরে কাজ করছে আর ছোট জায়ের নিখুঁত কাজকর্ম দেখছে।মাঝে মধ্যে দুই জা চোখে চোখে অনেক কথা বলে চলেছে।কিছুক্ষণ পরে শ্বাশুড়ী মা এসে ঢুকলেন রান্নাঘরে।
--- কই তোমার মাছের ঝোল রান্না হল?
--- হ্যাঁ মা হয়ে গেছে।এবার বড় পাত্রে ঢেলে দেবো।
দুপুরে জ্ঞাতি সকলে একসাথে খেতে বসে নূতন বউয়ের রান্নার খুব সুখ্যাতি করে।
তমালিকার শ্বাশুড়ী আত্মীয় পরিবেষ্ঠিত আসরে ছোট বউয়ের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন
--- মেয়েদের জীবনে লেখাপড়া শিখে সাবলম্বী হওয়ার সাথে সাথে ঘরকন্নার কাজটাও শিখে রাখতে হয়।কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাতে অন্যের মুখটা সহজেই বন্ধ করা যায়।কথাটা তিনি তার অন্য দুই পুত্রবধূর উদ্দেশ্যেই বলেন।কারণ সেদিনের আলোচনাটা তার কানে এসেছিল।ওই সময় তিনি বড় বউয়ের ঘরের সামনে থেকে বাথরুমে যাচ্ছিলেন।