পক্ষপাতিত্ব
৩ পর্ব
জ্যোতিষী সেদিন নন্দিনীকে যা বলেন তার সারমর্ম করলে এটাই দাঁড়ায় অনুপের বৌ হবে সুন্দরী,শিক্ষিত, বুদ্ধিমতী।নন্দিনী শ্বাশুড়ী হয়েও অনুপের বউকে মারাত্মকভাবেই হিংসা করতে থাকবে।প্রতি পদে পদে তাকে হেয় করার চেষ্টা করতে থাকবে যা অনুপের চোখ এড়াবে না।সে তার প্রতিবাদ করবে আর তাতেই ঝামেলা চরম আকার নেবে।জ্যোতিষীর কথা অনুযায়ী মানুষ অনেক সময় অনেক কাজ হয়ত করতে চাইছে না কিন্তু তার ভবিতব্য তাকে সেই পথেই চালিত করছে।এটাই ভাগ্যের ফের।
নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে নন্দিনী | একভাই আর একবোন তারা | নন্দিনী ছোট আর সুমিত বড় | সুমিতের একটা মুদিখানার দোকান আছে | দুই ভাইবোনই উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ে আর পড়েনি | ছেলেমেয়ে দুটির ইচ্ছা থাকলে তাদের বাবা সুশোভন চক্রবর্তী কষ্ট করে হলেও তাদের পড়াতে পারতেন কিন্তু দুজনের কেউই আর পড়তে রাজি হলোনা | একটা প্রাইভেট ফার্মে সামান্য মাইনের চাকরি করতেন সুশোভনবাবু | সামান্য কিছু রিটায়ারমেন্টের সময়ে টাকাকড়ি পেয়েছিলেন নন্দিনীর বিয়ের জন্য কিছু রেখে বাকি টাকা দিয়ে তিনি ছেলেকে বাড়ির মধ্যেই একটি মুদিখানার দোকান দিয়ে দেন | বাড়িটা রাস্তার উপরে হওয়ায় এই সুবিধাটুকু পেয়েছিলেন | সুশোভনবাবু পাড়ার লোক মারফৎ জানতে পারেন তার মেয়ে নন্দিনী একটি ছেলের সাথে মেলামেশা করছে | ছেলেটি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে তিনি আরও জানতে পারেন তার স্বভাবচরিত্র ভালো নয় | পারিবারিক সচ্ছলতাও নিম্নমানের | এমতাবস্থায় তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরে | তিনি উঠে পরে লাগেন মেয়ের জন্য ছেলে দেখতে | আর ঠিক তখনই সঞ্জয়বাবু তার বড় ছেলের জন্য হন্যে হয়ে একটি মেয়ে খুঁজছেন | নন্দিনীকে দেখে পছন্দ করে অর্ধেক কথা পাকা করে তিনি নিশ্চিন্তমনে বসে ছিলেন | সুশোভনবাবু তার মেয়েকে ছেলেটির সাথে মেলামেশা করতে নিষেধও করেন | এখনকার দিনে মুঠোফোনের এই রমরমার ফলে উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েগুলো অনেকসময়ই ফোনের মাধ্যমে কথা আদানপ্রদানের ফলে ভুলপথে পা বাড়ায় | নন্দিনীও ঠিক তাই করলো | পরিণামে তার জীবনে যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে গেলো | বুঝতে পেরে সে তার প্রেমিক রজতের কাছে ছুঁটে গেছিলো | সে তাকে জানিয়েও ছিলো বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থার কথা | কিন্তু রজত তাকে প্রত্যাখ্যান করে | বাড়িতে ফিরে এসে নন্দিনী কাঁদতে কাঁদতে তার মায়ের কাছে এসে যখন সবকিছু বলছিলো দরজার অপরপ্রান্ত থেকে তার বাবা সবকিছু জানতে পেরে দুদিন থম মেরে বসে থেকে নিজেকে শক্ত করে একবার শেষ চেষ্টা করার জন্য সঞ্জয়বাবুর কথা অগ্রাহ্য করে তার বাড়িতে উপস্থিত হলেন।
নন্দিনীর পরের সন্তানটিও ছেলে হয়।কিন্তু চেহারা,স্বভাব আচার আচরণে সে অনুপের থেকে সম্পূর্ন আলাদা।তাকে নিয়ে স্কুল এবং খেলার মাঠ অভিযোগের অন্ত নেই।সমবয়সীদের সাথে প্রতিদিনই তার মারপিট লেগেই থাকে।নন্দিনী ছোট ছেলেকে নিয়ে সর্বদা ব্যস্ত থাকলেও অর্ণব কিন্তু নন্দিনীর এই পক্ষপাতিত্বটাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারে না।অনুপ তার নিজের সন্তান না হলেও তার প্রতি অর্ণবের একটা আলাদা অনুভুতি কাজ করে।শত হোক তার মুখ থেকেই তো সে প্রথম বাবা ডাকটা শুনেছে।আর অদ্ভুতভাবে অনুপের কিছু স্বভাবের সাথে অর্ণবের স্বভাবের কিছু মিল ও অর্ণব খুঁজে পায়।মাঝে মাঝে বদ্ধ দরজার ভিতরে স্বামী,স্ত্রীর চাপা বচসাও হয়।
কন্যাসম রুচিরা ছেলেবেলা থেকেই সঞ্জয়বাবুদের বাড়িতেই মানুষ।সঞ্জয়বাবু যখন পূর্ববাংলা থেকে এদেশে আসেন তখন তাদের সাথেই তার বাল্যবন্ধু অখিলবাবুও তার পিতৃপুরুষের ভিটে মাটি ছেড়ে সঞ্জয়বাবুর মতই একটি আস্তানা পেয়ে যান।খুব পাশাপাশি না হলেও একই পাড়ার মধ্যে দুই বন্ধু তাদের নিজেদের মত করেই আবার সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন।কিন্তু হঠাৎ করেই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত রুচিরাকে ছেড়ে তার বাবা,মা দুজনেই ট্রেন অ্যাকসিডেন্ট এ মারা যান।মৃত্যুকালে হাসপাতালের বেডে শুয়ে বন্ধুর হাতদুটি ধরে অখিলবাবু তার চৌদ্দ বছরের মেয়েটির সমস্ত দায়িত্ব সঞ্জয়বাবুকে দিয়ে যান।বাল্যবন্ধুর কথা রাখতেই তিনি রুচিরাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে রেলে চাকুরীরত ছেলের সাথে বিয়ে দেন।রুচিরার বাবার সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে তিনি রুচিরার নামেই ফিক্সড করে রাখেন। সঞ্জয়বাবু রূচিরার লালনপালন ও শিক্ষার জন্য রুচীরার বাবার কোন টাকায় ব্যয় করেন না। সম্পূর্ণ নিজের খরচে তিনি মেয়েটিকে বড় করে তোলেন।
ওই সংসারে তখনো অদিতি আসেনি। দাদারা তাকে ছোট বোন হিসেবে খুবই ভালোবাসে।আর সঞ্জয়বাবু এবং অন্নদাদেবী তাকে কন্যাসম দেখেন।খুব একটা কাজও সংসারে কখনোই করতে হয়নি কারণ কাজের লোক ছাড়াও অন্নদাদেবী নিজের হাতেই সবকিছু সামলাতেন।তাই বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ির সংসারে কাজ করা নিয়েই প্রথম সমস্যার সৃষ্টি হয়।আর সেখান থেকেই অশান্তির সূত্রপাত।
বিয়ের পরে রুচিরা তার স্বামীর সংসারে মানিয়ে নিতে কিছুতেই পারছিল না।নিত্য অশান্তি হওয়ায় সে তার স্বামীকে আলাদা ঘর নিতে অনুরোধ করে।কিন্তু স্বামী তাকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয় 'বাবা,মা বহু কষ্ট করে তাকে মানুষ করেছেন।স্ত্রীকে ভালো রাখা তার দায়িত্ব ঠিকই কিন্তু সেটা কখনোই বাবা,মাকে কষ্ট দিয়ে নয়।তোমায় বিয়ে করেছি তোমার প্রতিও আমার দায়িত্ব আছে।কিন্তু সে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি আমার বাবা,মাকে অবহেলা করা হয় তাহলে দায়িত্ব পালনের ধরনটা আমাকে একটু পাল্টাতে হবে।তুমি যদি একেবারেই আমার মা,বাবার সাথে অ্যাডজাস্ট করতে না পারো সে ক্ষেত্রে তুমি তোমার বাপের বাড়িতে চলে যেতে পারো অবশ্য যদি সেটা তোমার কাছে সন্মানের হয়।আমি মাসের প্রথমেই তোমার খাওয়া পরার টাকা তোমার অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেবো।রুচিরা তার বড়দাকে সব জানায়।অর্ণব এসে রুচিরাকে কিছুদিনের জন্য বাড়িতে নিয়ে যায় ও পড়ে সবাই মিলে তাকে বুঝিয়েসুঝিয়ে আবার তাকে তার নিজ সংসারে ফেরত দিয়ে যায়। আস্তে আস্তে রুচিরা মানিয়ে নিতে সমর্থ হয় তার নিজ সংসারে।
।। রুচিরার খুব ইচ্ছা তার মাসতুত ননদের সাথে অনুপের বিয়েটা দেবে।কিন্তু সুমনা অনুপের থেকে বয়সে অনেকটাই ছোট।আর তাছাড়া অনুপ সুমনাকে বেশ কয়েকবার দুর্গাপূজার সময় অনুপদের বাড়িতে দেখলেও কোনদিন অনুপের সাথে কোন কথা হয়নি।অনুপ এতটাই লাজুক প্রকৃতির ছেলে পুজোর সময় বিশাল বাড়ির যেখানে মহিলা মহল সেখান থেকে সে বিশ হাত দূরে।রুচিরা পুজোর সময় এসে আভাসে ইঙ্গিতে এমন কি সরাসরিও অনেকবার মেয়েটাকে দেখতে তার সাথে কথা বলতে অনুপকে বলেছে।কিন্তু মুখচোরা অনুপ তার এই পিসির কথায় কোনদিন কোন পাত্তাই দেয় না।অদিতি ফি বছর শুধুমাত্র দুর্গাপুজোর সময়ই বাপের বাড়িতে আসার ছাড়পত্র পায় পনেরদিনের জন্য।রুচিরা এবং বয়সে অনেক ছোট অদিতি দুজনে মিলে ঠিক করে এবার সুমনার সাথে অনুপের বিয়ের কথাবার্তা বলেই তারা যে যার সংসারে ফিরবে।
বাড়ির কর্তা, কর্ত্রীর ইচ্ছানুযায়ী অনুপের এবার বিয়ে দেওয়ার জন্য মেয়ে দেখতে হবে।সঞ্জয়বাবু দু একটি মেয়ে দেখলেও মনের মত পাত্রীর সন্ধান তিনি পান না।আর ঠিক তখনই দুই বোন মিলে সুমনার সাথে অনুপের বিয়ের কথাটা পারে।অন্নদাদেবী রাজি হলেও সঞ্জয়বাবু বেঁকে বসেন। কারণ সুমনার বাপের বাড়ি এ দেশীয়।আর তিনি এ দেশীয়দের মোটেই পছন্দ করেন না।কর্তা,গিন্নী দুজনেই এই নিয়ে ঝামেলা শুরু করেন।
--- শোনো গিন্নী আমি কিছুতেই ওই ঘটি বাড়ির মেয়েকে আমার নাতবৌ করবো না।
--- কেন ঘটিরা কি তোমার পাকা ধানে মই দিয়েছে?মেয়েটা দেখতে সুন্দর,লেখাপড়া জানে।সেই ছেলেবেলার থেকে রুচিরা ওকে চেনে।সংসারের কাজকর্মও সব জানে।আমার বড় নাতির বিয়ে আমি যেখানে ঠিক করবো সেখানেই হবে।
--- আর আমি ঠুঠো জগন্নাথ হয়ে বসে থাকবো ?
এ ঝগড়া চলতেই থাকে অনুপের বিয়ের কথা উঠলেই।এরই মাঝে অনুপ এক বিশেষ প্রয়োজনে এসপ্লানেড থেকে ফেরার পথে রাস্তায় জটলা দেখে তার বাইকটা থামিয়ে ভির ঠেলে সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখে সুমনা এক বয়স্ক ভদ্রলোকের মাথাটা কোলে নিয়ে রাস্তার উপরে বসে সকলের কাছে কাকুতি মিনতি করছে তাকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য একটু সাহায্য করতে।অনুপকে দেখে পরিচিত লোক হওয়ায় সে কিছুটা আশ্বস্ত হয়।তাকে অনুরোধ করে ভদ্রলোকটি হাসপাতাল নিয়ে যেতে তাকে সাহায্য করতে।অনুপ জানতে চায় কে হন উনি তার?
--- পথচারী।আমার চোখের সামনেই একটা বাইক ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে যায়।কিন্তু কেউই উনার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে না।
দুজনে মিলে একটা উবের ধরে তাকে হাসপাতাল নিয়ে যায়।অনুপের বাইকটা সেখানেই তালাবন্ধ অবস্থায় থাকে।ভদ্রলোক জ্ঞান হারিয়েছিলেন।তার পকেট হাতড়ে একটি মোবাইল পাওয়ায় ডায়াল লিষ্ট দেখে সর্বাপেক্ষা বেশি ফোন করা দু একটি নম্বরে ফোন করে তার বাড়ির সাথে কন্টাক্ট করতে পারে।
সেদিন অনুপই সুমনাকে বাড়িতে বাইকে করে পৌঁছে দেয়।কিছুটা হলেও অনুপের সুমনাকে ভালো লেগে যায়।রুচিরা সুমনার কাছে সব জানতে পেরে এই সুযোগটাকেই কাজে লাগায়।
দুই বাড়িতেই বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয় | বিধানবাবু কোন কার্পণ্য করেননা তার সুমির বিয়েতে | ছন্দাদেবী ও বিধানবাবুর আতিথেয়তায় সঞ্জয়বাবুর বাড়ির সকলেই খুব খুশি | পাড়াপ্রতিবেশী , আত্মীয়স্বজন মিলে পুরো বাড়িটা বিয়ের আগে পরে মিলে দিনসাতেক গমগম করার পর এখন বাড়িটা পুরো শান্ত | ছন্দাদেবী খুবই ভেঙ্গে পড়েন | বিতান দিদি চলে যাওয়ার পর পুরো নিশ্চুপ হয়ে যায় | সবসময় দিদির সাথে মারপিট , ঝামেলা লেগেই থাকতো | আজ দিদি নিজের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়াতে নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে একাকী কেঁদে চলেছে | বিধানবাবু তাকে ডেকে এনে ছন্দাদেবীর কাছে বসতে বলেন | মেয়ে অন্তঃপ্রাণ মানুষটি নিজের বুকে পাথর বেঁধে ছেলে আর স্ত্রীর দিকে নজর রেখে চলেছেন | মাঝে মাঝে সকলের অলক্ষ্যে অবাধ্য চোখদুটি মুছে চলেছেন |
অষ্টমঙ্গলের পরেরদিন থেকেই সুমনাকে ডেকে নন্দিনী রান্নাঘরের দায়িত্ব সব বুঝিয়ে দেয় | নিজে রান্নাঘরে আর কাজের জন্য ঢোকেননা |অন্নদাদেবী এখন আর আগের মত হাঁটাচলা করতে পারেন না।তাই রান্নাঘরের দায়িত্ব নন্দিনীকেই পুরোটা দেখতে হত।কিন্তু সুমনা এ বাড়িতে আসার পরে তার হাতেই দায়িত্ব সোপ অধিকাংশ সময় সেখানে থেকে সর্বদা সুমনার কাজের খুঁদ ধরে চলেন | সুমনা মুখ বন্ধ করে সব কাজ করে চলে | কিন্তু কখনোর জন্যই নন্দিনী সুমনার কাজে সন্তুষ্ট হননা | সুমনা রান্নাঘরের সব দায়িত্ব নিষ্ঠা ভরে করলেও কাউকে খাবার দেওয়ার অধিকার তার ছিলোনা | এমনকি নিজের স্বামীকেও নয় | খাবার দেওয়ার সময় নন্দিনী ঠিক এসে উপস্থিত হতেন | সুমনা খেয়াল করে দেখেছে সবসময় ছোট মাছের পিসটাই অনুপকে দেওয়া হয় | তরকারির পরিমাণ ও তাই | মাথা ঘামিয়েও এর কারণ সে বুঝতে পারেনা | অনুপকে বললে সে বলে ," আরে তাতে কি হবে ? আমার তাতে কোন অসুবিধা হয়না | এসব নিয়ে তুমি একদম ভাববেনা আর মোটেই মন খারাপ করবেনা |" এভাবেই সুমনা মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে যায় | কিন্তু সবকিছু করেও নন্দিনীর মন সে পায়না | স্বামীর কাছে বলতে গেলে সেও তাকে মানিয়ে নিতেই বলে |
বাড়ির সকলের সাথে বিশেষ করে মায়ের সাথে তার রোজই কথা হয় | কদিন ধরেই মায়ের কাছ থেকে জানতে পারে বাবার শরীরটা খুব একটা ভাল যাচ্ছেনা | হঠাৎ সেদিন দুপুরের দিকে ফোন পায় বাবার বুকে ব্যথা হওয়ায় সরকারি হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে | সঙ্গে সঙ্গেই অনুপ আর সুমনা চলে আসে | আত্মীয়স্বজনেরাও কেউ কেউ হাসপাতাল এসে উপস্থিত হয় | কিন্তু ডাক্তারের সব প্রচেষ্টা আর বাড়ির ও শুভার্থীদের প্রার্থণা কোনোই কাজে আসেনা | চলে যান বিধানবাবু তার সোনার সংসার ফেলে | সুমনা মা আর ভায়ের কাছে মাসখানেক থেকে তারপর শ্বশুরবাড়ি ফেরে | অনুপ অবশ্য কাজ মিটে গেলেই চলে যায় | অনুপের কাছে তার মা সুমনার বাপের বাড়িতে থাকা নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করলেও চুপচাপ স্বভাবের অনুপ তার কোন উত্তর দিতো না | সুমনা ফেরার পরেই নন্দিনী যেন আরও তার অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় | উঠতে বসতে তাকে কথা শুনাতে লাগে এতদিন কোন আক্কেলে সে বাপেরবাড়ি বসে ছিল | এখন মাঝে মধ্যেই সুমনা শ্বাশুড়ির কথার প্রতিবাদ করে | আর যখনই সে তার শ্বাশুড়ির কথার পরে কথা বলে তখনই তার শ্বশুরমশাই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন | একদিন সামান্য এক বিষয় নিয়ে নন্দিনী ও সুমনার মধ্যে বাকবিতণ্ডার মধ্যে হঠাৎ অর্ণববাবু এসে সুমনার উপর চড়াও হন | হুট্ করে তিনি বলে বসেন ,
--- তোমার বাবা মা কি তোমায় কোন শিক্ষায় দেননি | বড়দের সম্মান টুকু করার শিক্ষাও কি পাওনি?এর থেকে মনামীর সাথে বিয়ে হলেই ভালো হত।
সদ্য পিতা হারা সুমনা এ কথা শুনে কেঁদে দিয়ে বলে ,
--- তোমরা আমাকে যা খুশি তাই বলো আমি মেনে নিই কিন্তু আমার বাবা , মাকে তুলে কোন কথা বলবেনা | আজ আমার বাবা বেঁচে নেই তবুও তোমাদের কথার ঝাঁঝ তাকে নিয়েও চলছে | আর এই যে বললে বড়দের শিক্ষা সম্পর্কে --- আমার বাবা মা তোমাদের গুরুজন নয় ? তাদের অসম্মান করছো কোন শিক্ষায় ?
নিচুতে চেঁচামেচি শুনে ঠিক সেই মুহূর্তেই অনুপ নিচে নেমে এসেছিলো | সুমনার কথা শুনে তার শ্বশুর তার দিকে তেড়ে যান আর ঠিক সেই মুহূর্তেই অনুপ এসে সুমনার সামনে দাঁড়ায় | সুমনা হাউ হাউ করে কেঁদেই চলেছে তখনও |
--- তুমি উপরে যাও সুমি | এখানে আর একটুও দাঁড়াবেনা | আমি একটু পরে আসছি |
সুমনা কাঁদতে কাঁদতে উপরে চলে গেলো |
খুব শান্তভাবে অনুপ বাবার দিকে তাকিয়ে বললো ,
--- কিসব কথা বলছো তুমি ? আমি তো ভাবতেই পারছিনা তুমি এইসব কথা বলতে পারো | এই কথাগুলো যদি আমি নিজের কানে না শুনতাম কোনদিনও বিশ্বাস করতে পারতামনা তুমি এ ধরণের কথা বলতে পারো | সুমনার শিক্ষা নিয়ে কথা বলছো ? ওতো ঠিক কথাই বলেছে --- তুমি শিক্ষার বড়াই করছো অথচ তোমার শিক্ষা নিয়ে ওর বাবা মাকে অপমান করছো ?সবেমাত্র ও ওর বাবাকে হারিয়েছে | আর তাকে নিয়ে ওকে কথা শুনাচ্ছ ?এখন দেখছি আমাকে এতদিন ও যা বলেছে তোমাদের সম্পর্কে তা সবই সত্যি | অথচ আমি বিশ্বাস করিনি | আজ যদি সুমি ওর মা ভাইকে তোমাদের বলা এই ভাষাগুলো জানায় তাহলে কি তোমাদের আত্মসম্মানে লাগবে না ? কি চোখে তার মা ভাই দেখবে তোমাদের ? মেয়ে তো তোমরা পছন্দ করেছো আমি তো তোমাদের জোর করিনি ওখানে বিয়ে দেওয়ার জন্য ?আর বিয়ে যখন করেছি ওর সম্মান রক্ষা করা আমার কর্তব্য | তুমি মনামীর কথা বলছো ? ভেবোনা ও এ বাড়িতে বৌ হয়েই ঢুকবে একদিন | বাইরের খবর তো তোমরা রাখোনা - একসময় সে ভাইকে রাখি পরিয়ে আমায় বিয়ে করতে চেয়েছিলো কিন্তু পারেনি কারণ আমি তাকে পছন্দ করিনা | একমাত্র দাদুই তাকে ঠিক চিনেছিলেন | আর এখন সে ভাইকে বিয়ে করে এ বাড়িতে ছোট বৌ হিসাবে ঢুকতে চায় | ভায়ের থেকে চার বছরের বড় সে | আমি অনেক বুঝিয়েছি তাকে | ভাই আগে যাকে ভালোবাসতো সে মেয়েটির সাথে ওর ব্রেকআপ হয়ে গেছে | বলতে পারো মনামীই ঘটনাটা ঘটিয়েছে |
--- তুই এতো কথা জানলি কি করে ?
ক্রমশঃ
No comments:
Post a Comment