শেষ পর্ব
সঞ্জয়বাবু এখন এতটাই অসুস্থ্য যে তিনি আর কোন ব্যাপারে নাক গলাননা | কখনো কিছু বললেও নন্দিনী তার কোন কথা শোনেও না | তাই আস্তে আস্তে তিনি নিজেকে সংসার থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন | তবুও তিনি চেষ্টা করেন এ বিয়ে আটকাতে | ছেলে আর ছেলের বৌকে অনেক বুঝান | কিন্তু তারা বোঝেনা বা বলা ভালো নন্দিনী অর্ণববাবুকে বুঝতে দেয়না |
অরূপ ও মনামীর বিয়েটা বেশ ধুমধাম করেই হল | কয়েকটা দিন যেতে না যেতেই মনামী তার খোলস ছেড়ে নিজ মূর্তি ধারণ করলো | সে সংসারে কোন কাজ করবেনা অথচ সব ব্যাপারে তার মতামতকে গুরুত্ব না দিলে সে তুলকালাম শুরু করে | এবং তাকে সমর্থন করে তার সাথে যোগ দেয় অরূপ | এ যেন আগুনের সাথে ঘিয়ের সংমিশ্রণ |সে তার এক অদ্ভুত জাদুবলে শ্বশুর শ্বাশুড়িকেও হাতের মুঠোই নিয়ে নেয়| একদিন সুমনা রান্নাবান্না করে উপরে তার ঘরে এসে টুকটাক কাজ সেরে অনুপকে সাথে নিয়ে যখন নিচুতে রান্নাঘরে খাবারের জন্য ঢোকে তখন দুজনেই শুনতে পায় অনুপের বাবা মা চাপা স্বরে কিছু কথা বলছেন তাদের ঘরে | রান্নাঘর ও তাদের ঘরটা এতটাই কাছাকাছি রান্নাঘরের দরজার কাছে দাঁড়ালেই তাদের গলার আওয়াজ পাওয়া যায় | অর্ণববাবু বলছেন ,
--- ওকে যখন আমি নিজ সন্তান স্নেহে মানুষ করেছি তখন আমি মনেকরি ও আমারই সন্তান | তাই তোমার কথা শুনতে আমি পারবোনা | এতদিন তো তোমার কথা শুনে চললাম | কি লাভ হল তাতে ?তুমি তোমার নিজের সন্তানের সাথে ভালো ব্যবহার তো করোইনা পরের মেয়েটার সাথেও দুর্ব্যবহার করো | সে সবকাজ সংসারে করেও তোমার মন পায়না | আর তোমাকে খুশি করতে তোমার অন্যায়টাকে আমি প্রশ্রয় দিয়েই চলেছি |কিন্তু আর নয়।বিবেক দংশনে শেষ হয়ে যাচ্ছি।অন্যদিকে মনামী সংসারে কোন কাজ না করে , সকলের উপরে ছড়ি ঘুরিয়েও তোমার প্রিয় পাত্রী | তার কারণ তুমি ভালোভাবেই জানো তোমার ছোটছেলে এতটাই বদমেজাজি তার বৌকে কিছু বললে তোমাকে সে ছেড়ে কথা বলবেনা | আমি অনুপের জন্মদাতা পিতা না হলেও এ কথা আমাকে স্বীকার করতেই হবে অনুর মত সহজ সরল বাধ্য ছেলে আজকের দিনে পাওয়া দুর্লভ | তাই আমি বেঁচে থাকতে থাকতে আমি আমার সমস্ত বিষয় সম্পত্তি আমার দুই ছেলের মধ্যেই ভাগ করে দেবো |
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে একথা শোনার পর স্বামী স্ত্রীর সেদিন আর খাওয়ার ইচ্ছা ছিলোনা | অনুপ তো সেই মুহূর্তেই সেখান থেকে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে পালিয়ে আসে | আর সুমনা খাবারগুলোকে ফ্রিজে ঢুকিয়ে ঘরে ঢুকে দেখে অনুপ প্রচন্ডভাবে কান্নাকাটি করছে | হতভম্ব সুমনা কি বলে তার স্বামীকে শান্তনা দেবে তা সে নিজেই বুঝতে না পেরে অনুপের পাশে এসে বসে | অনুপ কোন কথা না বলে কেঁদেই চলে | সুমনাও চুপচাপ বসে থাকে | সারাটা রাত তাদের এক ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কাটে |
একটা একটা বছর করে বেশ কয়েক বছর কেটে যায় | মনামী এবং অরূপ ছলে বলে কৌশলে বাবার গচ্ছিত টাকা আর নন্দিনীর গয়নার অধিকাংশই নিজ হেফাজতে নিয়ে নেয় | বাবাকে দিয়েই মনামীর নামে একটা ফ্লাট কিনেও নেয় | পরে থাকে শুধু বসতভিটে | বছর দুয়েক আগে সঞ্জয়বাবুও সকলকে ছেড়ে চিরতরে চলে যান | দাদু অবশ্য জেনেই যান তার প্রিয় নাতবৌ মা হতে চলেছে | অনুপ ও সুমনার সুন্দর ফুটফুটে একটি মেয়ে হয় | নন্দিনীর এখন যথেষ্ট বয়স হয়েছে | একা রান্নাঘরের দায়িত্ব সামলাতে হিমশিম খায় | কিন্তু তা সর্ত্বেও ছোট ছেলের ভয়ে সে কখনোই মনামীকে কোন সাহায্য করার কথা বলতে পারেনা | একদিন রাতে এইসব নিয়ে নন্দিনী তার স্বামীর সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ চিৎকার করে তার ছোটছেলেকে ডাকে অর্ণববাবুর শরীর খারাপ হয়েছে বলে | উপর থেকে অরূপ ও মনামী নেমে আসে আর তাদের পিছন পিছন অনুপ ও সুমনা | শহরের নামকরা নার্সিংহোম 'মানবী'- তে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নন্দিনী | মনামী আপত্তি জানায় | সে যুক্তি দেখায় এতো বড় নার্সিংহোমে নিয়ে গেলে প্রচুর খরচ | হয়তো গ্যাসের ব্যথা | তার থেকে বরং একটা সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হোক | অরূপ তাকে সমর্থন করে | নন্দিনী হা করে ছোটছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে | অনুপ এতক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছিলো | হঠাৎ সে সেখান থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়িটা বের করে ঘরে এসে বাবাকে তুলে বলে ,
--- আমি তোমাকে নিয়ে যাবো 'মানবী'- নার্সিংহোমে | মা তুমি সাথে চলো |
নন্দিনী চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে অনুপ চিৎকার করে বলে ওঠে ,
--- আগে বাবা সুস্থ্য হয়ে বাড়ি আসুক তারপর নাহয় তোমার কিছু বলার থাকলে বোলো | আমাকে নিজ সন্তান স্নেহে উনি মানুষ করেছেন , বাবা হিসাবে আমি উনাকেই জানি | উনার প্রতি আমারও কিছুটা দায়িত্ব আছে | আমিই বাবাকে নিয়ে যাবো | ভায়ের ইচ্ছা হলে আমাদের সাথে যেতে পারে | কথাগুলি অর্ণববাবুর কানে গেলেও উত্তর দেওয়ার মত পরিস্থিতি তার ছিলোনা | আর নন্দিনীও অনুপের মুখে একথা শুনে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরে | অরূপ মনামী কিছুই বুঝতে না পেরে নিজেরা নিজেদের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে | এমন একটা পরিস্থিতিতে অনুপ কথাটা বলে -- কথাটা সবাইকে ভাবালেও গভীরভাবে ভাবার সেই মুহূর্তে কারও সময় ছিলোনা |
মনামীর আপত্তি সর্ত্বেও অরূপ দাদার সাথে বাবাকে নিয়ে নার্সিংহোম যায় | হার্টের মারাত্মক সমস্যা কিছু না হলেও ডক্টরবাবু বলে দেন কোন অবস্থাতেই উনি যেন উত্তেজিত না হন | দিন সাতেক অর্ণববাবুকে নার্সিংহোম থাকতে হয় | অনুপ নিজেই হাসপাতালের বিল প্রেমেন্ট করে |
বাড়িতে বাবাকে নিয়ে ফিরে আসার পর প্রতিদিন দুবেলা করে অর্ণববাবুর কাছে গিয়ে অনুপ তার শরীরের খোঁজ খবর নেয় এবং কিছুক্ষণ সময় বসে থেকে তার সাথে গল্পগুজব করে | নন্দিনী এসে মাঝেমধ্যেই তাদের আলোচনায় অংশগ্রহণও করে | আজও রান্নাঘরের সব দায়িত্বই নন্দিনীকেই পালন করতে হয় | মনামী কোন কাজই করেনা |কিন্তু ফেলে আসা অতীত সম্পর্কে অনুপ কি করে জানলো সে কথা উত্থাপন করতে স্বামী স্ত্রী কখনোই সাহস পান না।
একদিন সকালের দিকে হঠাৎ করেই নন্দিনীর কাঁপুনি দিয়ে প্রচন্ড জ্বর হয় | স্বাভাবিক ভাবেই নন্দিনী বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেনা | মনামী নিচুতে চা খেতে এসে দেখে শ্বাশুড়ি বিছানা ছেড়ে ওঠেননি | ঘরে ঢুকে জানতে পারে তার জ্বর | সে নিজের ও তার স্বামীর জন্য দুকাপ চা করে নিয়ে উপরে চলে যায় | নিচু থেকে অর্ণববাবু ফোন করে অনুপকে তার মায়ের শরীর খারাপের কথা জানালে সে তৎক্ষণাৎ নিচুতে এসে মাকে কোনরকমে মুখ ধুইয়ে দুটো বিস্কুট খাইয়ে দিয়ে জ্বরের ওষুধ দিয়ে যায় | সুমনা এসে তাদের চা করে দেয় | আর দুপুরে তাদের দুজনের খাবার দিয়ে যাবে বলে যায় |
এদিকে মনামী তো কিছুই পারেনা বা করতে চায়না | অরূপ না খেয়েই অফিস চলে যায় | আর মনামী অর্ডার করে খাবার আনে | অরূপ বাইকে করেই অফিস যাতায়াত করে | সন্ধ্যার দিকে অনুপের কাছে একটা ফোন আসে যে অরূপ বাইকে মারাত্মক একসিডেন্ট করেছে | সঙ্গে সঙ্গেই অনুপ কাউকে কিছুই না বলে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যায় | সুমনা বারবার জানতে চায় কি হয়েছে " এসে বলছি "- বলেই ছুঁটে বেরিয়ে যায় | অনেক রাত দুছেলের কেউই বাড়ি ফেরেনা | অরূপের সুইচ অফ আর অনুপের ফোন বেজে যাচ্ছে সে ধরছেনা | বাড়ির সবাই অস্থির হয়ে পড়ছে | সুমনা শ্বশুর , শ্বাশুড়ির খাবার এনে নিচুতে দিয়ে যায় | কিন্তু কেউই খায়না সে খাবার | রাত একটা নাগাদ অনুপ বাড়িতে ফিরে আসে | উস্কোখুস্কো চুল , চোখদুটি লাল জবাফুলের মত | মাথা নিচু করে গিয়ে বাবা , মায়ের সামনে দাঁড়ায় |
--- খুব খারাপ একটা খবর আছে মা |
--- অরূপ কোথায় ? ওর সুইচ অফ কেন ?
এগিয়ে গিয়ে মাকে ধরে অরূপ খাটের উপর বসিয়ে দেয় | অনুপ চুপ করে আছে দেখে ওর বাবা বলে ওঠেন ,
--- চুপ করে থাকিসনা অনু কি হয়েছে খুলে বল | আর ধর্য্য ধরতে পারছিনা | সত্যিটা কতক্ষণ লুকিয়ে রাখবি ?
--- বাবা , রূপের একটা মারাত্মক একসিডেন্ট হয়েছে ---|
--- বেঁচে আছে তো ?
নন্দিনী চিৎকার করে কেঁদে ওঠে | অনুপ ওর বাবার দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে 'না' বলে | নন্দিনীর চোখে পরে যায় অনুপের মাথা নাড়ানো | সে সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারায় | এই চিৎকার চেঁচামেচি শুনে সুমনা ও মনামী দুজনেই নিচুতে নেমে এসেছিলো | সকলে তখন নন্দিনীর জ্ঞান ফেরাতে ব্যস্ত | অর্ণববাবু একদৃষ্টে তখন তার ছেলের মুখেভাতের বাঁধানো একটা ছবির দিকে তাকিয়ে | অন্যমনস্কভাবে অর্ণববাবু বললেন ,
--- অনু , তোর কাকাকে একটা খবর দে |
অনুপ বললো ,
--- কাকা ই আমায় ফোন করে ডেকেছিলেন | রূপ যেখানে একসিডেন্ট করেছে ওখানে কাকার পরিচিত একজন ছিলেন যিনি কাকাকে ফোনে সব জানিয়েছিলেন | আমি পৌঁছানোর আগেই কাকা পৌঁছে গেছিলেন | কিন্তু ভাই আমাদের কোন সুযোগই দেয়নি | হাসপাতালে নিয়ে গেছি ঠিকই কিন্তু তার আগেই সব শেষ |
বাড়িটা পুরো নিস্তব্ধ হয়ে থাকলো |নন্দিনীর বারবার মনে পড়তে লাগলো জ্যোতিষীর সেই ভবিৎসৎবাণী।"শেষ বয়সে এসে মারত্মক এক আঘাত পাবি।"বাড়িতে কেউ আর কারো সাথে কথা বলে না।সবাই যেন কথা বলতেই ভুলে গেছে | সামান্য যা নিয়ম রক্ষার্তে শ্রাদ্ধ করা হল তা অনুপই করলো | কাজের পরেই মনামী তার বাপের বাড়িতে চলে গেলো বড় বড় দুটি ব্যাগ নিয়ে | তার ভাই এসে তাকে নিয়ে গেলো |
মাস ছয়েক পরে অর্ণববাবু একবার ব্যাঙ্কে গেলেন কিছু ফিক্সড ডিপোজিট রিনিউ করতে | গিয়ে দেখেন তার সেভিংসে কোন টাকা নেই | অথচ মোবাইলেও কোন মেসেজ নেই | মোবাইল থেকেই ট্রানজেকশন করা হয়েছে | খোঁজ খবর করে জানতে পারলেন সমস্ত টাকা যখন তিনি হাসপাতাল ভর্তি ছিলেন তখন অরূপ বা মনামী তাদের একাউন্টে ট্রান্সফার করে নিয়েছে এবং মোবাইল মেসেজ সব ডিলিট করে দিয়েছে। বাড়িতে এসে নন্দিনীকে সবকিছু জানালে সে মনামীকে ফোন করলে সে জানায় সে এই ব্যাপারে কিছু জানেনা | স্বামী স্ত্রী দুজনেই বুঝতে পারেন হাসপাতালে অর্ণববাবু যখন ভর্তি ছিলেন ফোনটা ছিল তাদের ঘরেই | আর আলমারির চাবি থাকতো ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে | আলমারির ভিতর একটি ডাইরি থাকে তাতে এটিএম থেকে শুরু করে মোবাইলের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর কোড নম্বর সব লেখা থাকে | তারা আলমারির ভিতর সেই ডাইরি খুঁজে পাননা | সাথে নন্দিনীর গয়নার বাক্স | বেশ কয়েক ভরি সোনা আর কিছু ফিক্সডিপোজিটের কাগজপত্র যার নমিনী অরূপ |
সন্তান হারানোর শোকের কাছে এ শোক তাদের সেভাবে নাড়া দিতে পারলোনা | যা গেছে তাকে ভবিতব্য বলেই মেনে নিলেন | অরূপ চলে যাওয়ার পর থেকেই সুমনা উপর থেকে রোজ রান্না করে শ্বশুর শ্বাশুড়ীকে খাবার দিয়ে যাচ্ছে |
এই সবকিছু ঘটে যাওয়ার পর অর্ণববাবু একদিন নন্দিনীকে ডেকে বললেন ,
--- এবার তো তুমি তোমার বড় ছেলে আর তার বৌকে মেনে নাও | এতদিন তো তুমি মনামীকে সমর্থন করেই গেছো | মন তোমার স্বীকার করলেও মুখে কোনদিনও স্বীকার করলেনা সুমনা ভালো মেয়ে | কবে কি জোতিষী বলে গেছে সেই শুনে এতগুলি বছর ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে সব কাজ করে গেলে | অনুপকে দূরে সরিয়ে দিয়ে সুমনার মত মেয়ের সাথে দুর্ব্যবহার করে সারাটাজীবন ধরে ওই রান্নাঘর নিয়েই পরে থাকলে | সেই প্রথম থেকেই মনামীকে সমর্থন করে গেছো | বাবা কিন্তু ঠিক বুঝেছিলেন মেয়েটি ভালো নয় | ওর লোভ ছিল সম্পত্তি আর টাকার | গয়নাগাঁটিগুলো আত্মসাৎ করেছে | কাশটাকা , রূপের নামে যে ফিক্সড ডিপোজিটগুলো ছিল সেগুলোও নিয়েছে | অনুপকে না জানিয়ে তোমার কথায় রূপকে যে ফ্ল্যাটটা কিনে দিয়েছিলাম সেটা মনামী নিজের নামে রূপকে জোর করে রাজি করিয়ে করে নিলো | তারমানে বাবা যা যা বলেছিলেন ওর সম্পর্কে সব খেটে গেলো | টাকাপয়সা , গয়নাগাঁটিগুলো ফেরৎ পাওয়া যেত পুলিশে গেলে | কিন্তু আমার মন সায় দিলোনা | এতবড় শোকটা মেনে নিতে পারলাম আর এই সামান্য টাকার শোক ঠিক সামলে যাবো | কাল থেকেই অনুপকে তার জায়গা ফিরিয়ে দাও | সুমনা আর তাদের মেয়েকে বুকে টেনে নাও | যে কটাদিন বাঁচবো ওদের নিয়েই ভালোভাবে বাঁচি | যে চলে গেছে সে তো আর ফিরে আসবেনা | যদি একটা বাচ্চাও থাকতো ওদের তবুও একটা কথা ছিল | কিন্তু ভগবান সেদিক থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিলেন | এটা ঈশ্বর মনেহয় ঠিকই করেছেন |
নন্দিনী এতক্ষণ চুপ করে কথা শুনছিলো আর চোখ থেকে তার টপটপ করে জল পড়ছিলো |
--- একটা কথা বলবো তোমায় ?
--- হ্যাঁ বলো --- আমি তো তোমার মতামতটা শুনতে চাই |
--- তুমি কয়েকদিনের মধ্যেই সব সম্পত্তি অনুপ আর সুমনার নামে করে দাও | তানাহলে মনামী আবার কোন ঝামেলা করবে |
--- যাক তুমি যে আঘাত পেয়ে এই সহজ সত্যটা বুঝতে পেরেছো তারজন্য আমি খুশি | আমিও কথাটা ভেবেছি | কয়েকদিনের মধ্যেই আমি এ ব্যবস্থা করবো | আর অনুপ আমাদের যে ধরনের ছেলে ও কোনদিনও আমাদের কোন অবহেলা, অযত্ন করবেনা |
অনুপ আর সুমনার বিয়ের দশ বছর পর অর্ণব ব্যানার্জীর সংসারটা সত্যিই সুখের সংসার হয়ে উঠলো ।জীবনে ভালো কিছু পেতে গেলে অনেক সময় কষ্ট আর আঘাতের মধ্য দিয়েই আলোর রশ্মি দেখা যায়।
শেষ
No comments:
Post a Comment