Wednesday, November 28, 2018

জীবনের হিসাব
      নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

ফুলের মাঝে কাঁটা থাকে,
তবুও ভালোবাসি।
জম্ম নিলেই মরতে হবে,
জেনেই ধরায় আসি।
বাসলে ভালো আসবে আঘাত,
তবুও বাসি ভালো
সত্য-মিথ্যার দোলাচলে,
জীবন কাটে ভালো।
দুঃখ-সুখের মাঝ বরাবর,
চলছে জীবনতরী,
পাপ-পূর্ণ্যের করিনা হিসাব,
টাকার জোরে চলি। 

Saturday, November 24, 2018

পথ চেয়ে থাকি
        নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

চারিপাশে শুধু হারানোর স্মৃতি,
ভুলে গেছি করতে যোগ,
গুণ ভাগ হিসাবের বাইরে,
করি শুধু আজ বিয়োগ।
ছেলেবেলা সেতো হারিয়েছি কবে, হারিয়েছি বাবা মাকে ,
গড়েছি নূতন সম্পর্ক যত,
হারিয়ে ফেলেছি তাদেরকে।
আপন হয়ে যে এসেছিলো কাছে, 
বেসেছিলাম তাকে ভালো,
বিধাতার লিখনে হারালো সে,
আমায় একা ফেলে পালালো।
আমি একা বসে,
স্মৃতির মালা পরে,
সাগরের পাড়ে ঢেউ গুনি,
নক্সীকাঁথা গায়ে জড়িয়ে,
বৃথা পথ চেয়ে থাকি।

#নন্দা

Wednesday, November 21, 2018

পথে হোল দেরি
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

      ক'দিন ধরেই অতসীর মনটা তোলপাড় করছে।বারবার মনেহচ্ছে এ বুঝি সেই রবীন।যাকে ছাড়া কয়েক যুগ আগেও বেঁচে থাকাটা অর্থহীন মনেহত।অথচ সেই মানুষটাকেই একদিন সে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলো পরিস্থিতির চাপে পড়ে।সেদিন অবশ্য এই ছাড়া কোন উপায়ও ছিলোনা।অর্থ সমস্যা পরিবারে কোনদিনও ছিলোনা।ছিলো বাহুবলের অভাব।বাবা ছিলেন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মচারী।তখনও বাবা চাকরী  করছেন।অতসী এবং তার দাদাও ভালো মাইনের চাকুরীরত।দাদা বিয়ের পরেই বাইরে সেই যে চলে গেলো আর কোন যোগাযোগই রাখলোনা।পরিস্থিতি আজ এমন দাঁড়িয়েছে দাদা বেঁচে আছে কিনা তাপসী তাও জানে না।
    দাদা চলে যাওয়ার দু'বছরের মধ্যে বাবার কিডনীর সমস্যা ধরা পরে।লাষ্ট স্টেজ।তড়িঘড়ি মা একটা কিডনী দান করেন।রবীন তখন বাইরে অফিসের কাজে।অতসী তাকে এই ব্যপারে কিছুই জানায়না।কারন তাকে সেই সময় এই কথাগুলো বললে সে অফিসের কাজ ফেলে আসতে পারবেনা বরং টেনশান করবে।দাদাকে সেই সময় ফোনে বাবার শারীরিক অবস্থার কথা জানালে সে জানায় টাকার দরকার হলে সে পাঠাতে পারবে কিন্তু অফিসের কাজ ফেলে দেশে ফিরতে পারবেনা।অতসী তারপর আর কখনোই দাদার সাথে যোগাযোগ করেনি।
      রবীন দেশে ফিরে অতসীর সাথে দেখা করে সব জানতে পেরে অতসীর উপর বড্ড অভিমান করে।বাবা,মায়ের জন্য সর্বক্ষনের এক আয়ার ব্যবস্থা করে অফিস যাওয়া শুরু করে অতসী।কিন্তু অফিসে যেয়ে কিছুতেই কাজে মন বসাতে পারেনা।সবসময় মা বাবার জন্য একটা দুশ্চিন্তা তার থেকেই যায়।কাজে ভুলভাল করতে শুরু করে।এরই মাঝে হঠাৎ করে একদিন বাবার শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় আয়ার ফোন পেয়ে পড়িমরি অফিস থেকে বাড়িতে চলে এসে বাবাকে নিয়ে নার্সিংহোম যেতে হয়।সেদিনই মায়ের ব্লাডপ্রেসার মারত্মকভাবে বেড়ে যায়।রবীন এসে তার পাশে দাঁড়ায়।বিধস্ত অতসী চাকরী ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।রবীনের নিষেধ সে কানে নেয়না।বিনা অপরাধে সে রবীনের সাথে দুর্ব্যবহার করতে থাকে।রবীনকে সে সত্যিই খুব ভালাবাসতো।কিন্তু তার এই পরিস্থিতিতে সে তার বাবা-মাকে ছেড়ে কোনদিনও রবীনকে বিয়ে করে তাদের ছেড়ে যেতে পারবেনা বুঝতে পেরেই সে রবীনের সাথে খারাপ আচরণ করতে থাকে।আর রবীন সবসময়ই তার এই ব্যবহারের কারন বুঝতে পেরে সবকিছু হেসেই উড়িয়ে দেয়।শেষে একদিন সরাসরি অতসী রবীনকে বলে যে তার পক্ষে রবীনকে বিয়ে করা কিছুতেই সম্ভব নয়।রবীন তাকে জানায় প্রয়োজনে সে সারাজীবন তার জন্য অপেক্ষা করবে কিন্তু দেখা সাক্ষাৎটা বন্ধ যেন না করে অতসী। কিন্তু অতসী অনড়।সে কোন সম্পর্কই রাখতে চায়না তার সাথে।অতসী মনেমনে ভাবে তার জন্য কেন সারাটা জীবন রবীন নষ্ট করবে।সে নাছোড়বান্দা হয়ে রবীনকে ফিরিয়ে দেয়।
     অতসী চাকরী ছেড়ে দিয়ে বাবা-মায়ের সেবায় নিজেকে সর্বক্ষণ ব্যস্ত রাখে।মনটা মাঝে মাঝে হু হু করে উঠলেও নিজের বুকে নিজেই পাথর চাপা দেয়।কেটে গেছে বহু বছর।প্রথমে মা পরে বাবাও অতসীকে ছেড়ে চলে যান।তখন তার বয়স আটচল্লিশ বৎসর।ঘরে বসে বসে অতসীর আর সময় কাটেনা।সে একটা এন.জি.ও.গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত হয়।
    এখন এই চুয়ান্ন বছর বয়সে এসে তার বারবার মনেহচ্ছে ফেলে আসা অতীত আবার তার সামনে আসতে চলেছে।যে এন.জি.ও.সংস্থার সাথে সে যুক্ত পনেরই আগষ্টের দিন প্রতিবার বেশ কিছু গন্যমান্য ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হন মূলত তাদের ডোনেশনের ভিত্তিতেই সংস্থাটি চলে।এবার একজন নূতন অতিথি যুক্ত হয়েছেন রবীন মুখার্জী।একই নামের তো অনেক মানুষই পৃথিবীতে থাকে।কিন্তু অতসীর যে ওই নামটার প্রতিই দুর্বলতা।তার মন বলছে এ
 তার সেই রবীন।এতদিন পরে দেখা হলে রবীনের সুখি দাম্পত্য জীবনে কোন ঝড় উঠবে নাতো।পরক্ষণেই ভাবছে ছি ছি সে এ কি ভাবছে একজন পরপুরুষ সম্পর্কে।
    পনেরই আগষ্টের সকালে অতসী যেন নিজের অজান্তেই একটু বেশি সাজলো।সাদা-কালোতে একটা জামদানী শাড়ি তার সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ।হালকা করে একটা হাত খোঁপা করে একটা সাদা গোলাপ।আহামরি সুন্দরী কোনদিনও অতসী নয়।কিন্তু একটা আলগা শ্রী আছে।সাজলে তাকে খুব সুন্দরই লাগে।
     অতসীর অনুমান ভুল নয়।এ রবীন মুখার্জী তার সেই ভালোবাসার মানুষটিই।আজও যাকে সে ভুলতে পারেনি। দু'জন দু'জনকে দেখলো।কিন্তু কথা হলনা।কিছুক্ষন স্থির দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকলো।দু' জনেই হয়তো তখন ফিরে গেছিলো কয়েক যুগ আগে।অনুষ্টান শেষে যে যার বাড়ির পথে।অব্যক্ত কথাগুলি বলার জন্য দু'জনেই মুখিয়ে ছিলো কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি তাদের সে সুযোগ দিলোনা।
     রাত তখন আটটা হবে।অতসী এককাপ চা করে নিয়ে বারান্দায় বসে।ফেলে আসা দিনগুলি আবার তোলপাড় করছে তার মনের আঙ্গিনায়।হঠাৎ একটা গাড়ির শব্দ।তাকিয়ে দেখে রবীন ঢুকছে গেট দিয়ে।দ্রুত ঘরে ঢুকে চাবি এনে বারান্দার গ্রীল খুলে বলে,
---এসো।কেমন আছো তুমি?
---আমি ভালো আছি।তুমি?
---আমিও ভালো আছি।বেশ কেটে যাচ্ছে এন.জি.ও. সংস্থার সাথে দিনগুলি।এভাবেই বাকি জীবনটাও কেটে যাবে।তোমার বাড়ির সবাই কেমন আছে?
---আমার বাড়িতে আমি একা।আর তো কেউ নেই।বাবা মা দু' জনেই গত হয়েছেন।
---বিয়ে করনি ?
---আনুষ্ঠানিক বিয়ে আমার হয়নি।যাকে বিয়ে করবো ভেবেছিলাম সে আমায় ফিরিয়ে দিয়েছে।তার কর্তব্যের কাছে আমার ভালাবাসা হেরে গেছে।পরিনামে আমার তার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালাবাসা দুই ই বেড়েছে।আজও তার জন্যই অপেক্ষা করে আছি যদি এবার সে আমার ডাকে সারা দেয়।
     হঠাৎ করেই অতসী উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
---একটু বোস।আমি দু'কাপ কফি করে নিয়ে আসি।অনেক কথা বলার আছে।শোনারও আছে অনেককিছু।সারারাত বসে আজ দু'জনে দু'জনার কথা শুনবো।
   রবীন উঠে যেয়ে অতসীর হাতদুটো ধরে বলে, "এখন তোমার একটাই কর্তব্য আমার সাথে থাকা।"
   অতসী মুচকি হেসে বলে,"হু কফিটা করে নিয়ে এক্ষুণি আসছি।"

#নন্দা

Tuesday, November 20, 2018

প্রথম প্রেম
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

অনেকদিন পর তোমায় দেখলাম,
কেমন আছো বল।
ও!আমায় চিনতে পারোনি বুঝি?
আমি হলাম সেই মেয়ে
যাকে তুমি প্রথম প্রেমপত্র লিখেছিলে ।
খুব মার খেয়েছিলে ধরা পড়ে যাওয়ায়।
আমাদের কোএড স্কুল ছিলো,
হেডস্যার সেদিন খুব মেরেছিলেন তোমায়
আমার কিছু করার ছিলোনা
শুধু দূরে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া!
তারপর থেকে স্কুলে আসা বন্ধ করলে,
ভর্তি হলে অন্য স্কুলে।
কয়েক যুগ কেটে গেছে,
আমি কিন্তু আজও ভুলিনি তোমায়।
আমার জীবনের প্রথম প্রেমপত্র-
আজও মনে শিহরণ জাগায়।

#নন্দা 

Monday, November 19, 2018

 হারাধন
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

      বিদিতা আজও এই সংসারটাতে মুখ বুজে সকল দুঃখ-যন্ত্রণা সহ্য করে পরে আছে শুধুমাত্র কৌশিকের জন্য।কৌশিক তাকে নিজের প্রাণের থেকেও বেশি ভালোবাসে।ভালোবেসে কৌশিককে বিয়ে করেছিলো। মা,বাবারও এই বিয়েতে কোন আপত্তি ছিলোনা।কৌশিক ভালো চাকরী করে নিজেদের বাড়ি মেয়ে নিজে পছন্দ করেছে তাই তারা বেশ ধুমধাম করেই একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন।

    একবুক স্বপ্ন নিয়ে বিদিতা কৌশিকের হাত ধরে শ্বশুরবাড়িতে পা রেখেই বুঝতে পারে এ সংসারে শ্বাশুড়ী মায়ের কথায় শেষ কথা।শ্বশুরমশাই খুবই নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় মানুষ।কোন ঝুটঝামেলা তিনি পছন্দ করেননা।তাই পারতপক্ষে তিনি তার স্ত্রীকে এড়িয়েই চলেন শান্তি রক্ষার্থে।
        বিয়ের পরপরই বিদিতার শ্বাশুড়ী বিদিতার  সবকিছুতেই দোষ ধরতে শুরু করেন।প্রথম প্রথম বিদিতা কথার কোন উত্তর করতোনা শুধু চোখের জল ফেলতো।কৌশিককে বললে সে বলেছিলো,
---আমাদের সংসারে মায়ের কথায় শেষ কথা।এইসব কথা নিয়ে আমি মায়ের সাথে ঝামেলা করতে পারবোনা।তবে হ্যাঁ তোমার যদি এখানে থাকতে খুব অসুবিধা হয় আমি তোমায় নিয়ে অন্যত্র ঘরভাড়া করে থাকতে রাজি আছি।তবে সেটাও তোমার কথা ভেবে।মা বাবার একমাত্র সন্তান আমি।আমার মা যেমনই হোননা কেন সন্তান হিসাবে আমার কিছু দায়িত্ব থেকেই যায় যেমন স্বামী হিসাবে তোমায় ভালো রাখা আমার দায়িত্ব।"
       না,এ কথার পরে আর কোনদিন বিদিতা কৌশিককে তার মায়ের কথা নিয়ে কিছুই বলেনি।দু'বছর পরে বিদিতার কোল আলো করে এক পুত্র সন্তান আসে।এই দু'বছরে এমন কোন দিন যায়নি বিদিতা চোখের জল ফেলেনি।এটাকেই সে তার ভাগ্য বলে মেনে নিয়েছে।শ্বশুরমশাই এর সাথে তার খুবই ভালো সম্পর্ক।কৌশিক বাড়িতে না থাকলে বিদিতা সংসারের কাজ সেরে তার সাথেই সময় কাটাতো।
        দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস কোনদিন তার ছিলোনা।গল্পের বই ছিলো তার দুপুরের সঙ্গী।শ্বশুরবাড়িতে এসে শ্বশুরমশাই এর আলমারি ঠাসা গল্পের বই দেখে সে খুব খুশি হয়েছিলো।সম্পূর্ণ একটি আলাদা ঘর ঠিক যেন একটা ছোটখাটো লাইব্রেরী।একমাত্র রাতে শুতে যাওয়ার সময়টুকু ছাড়া তিনি এখানেই থাকতেন।বই পড়তে পড়তে কতদিন তিনি তার প্রিয় ইজিচেয়ারটাতেই ঘুমিয়ে পড়েছেন।বিদিতা তার শ্বশুরের সাথে নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা করতো।তারমধ্যে বড় বড় লেখক লেখিকাদের লেখা গল্পগুলির চারিত্রিক বিশ্লেষণই ছিলো প্রধান।একদম ছিলো বাবা আর মেয়ের সম্পর্ক।কতদিন এমন হয়েছে গল্প করতে করতে দু'জনের কেউই খেয়াল করেনি যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।শ্বাশুড়ী মায়ের মুখ ঝামটা খেয়ে তবে চা করতে ছুটেছে বিদিতা।কষ্টগুলোকে বুকে ভারি পাথর চাপা দিয়ে এইভাবেই দু'বছর কেটে যায়।
       পুত্রসন্তানের মা হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি আসার পর সে তার শ্বাশুড়ীর মধ্যে এক আমূল পরিবর্তন দেখতে পায়।সর্বদা তিনি তার নাতী নিয়েই ব্যস্ত থাকেন সংসারের খুঁটিনাটি বিষয়ে আর মাথা ঘামাননা।একমাত্র ছেলেকে খাওয়ানো ছাড়া ছেলের কিছুই তার করতে হয়না।সে সংসারটাকে তখন আঁকড়ে ধরে।এতদিন সংসারের কাজকর্মে তার কোন স্বাধীনতা ছিলোনা-ছিলো কিছু করতে গেলে সবকিছুতেই একটা ভয়।এখন এতদিন পরে সে যেন বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পারছে।রাতে শুধুমাত্র শোয়ার সময়টুকু ছাড়া তিনি তার নাতিকে কাছছাড়া করতেননা।
        কৌশিককে একদিন রাতে বিদিতা বলে,
---আচ্ছা একটা জিনিস খেয়াল করেছো মা এখন আমাদের ছেলেকে ছাড়া অন্য কোনদিকেই মন দেননা।সবসময় ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে বসে থাকেন।মা আগের মত আর চেঁচামেচিও করেননা।
---হু দেখেছি।আসলে মা ভাবেন আমার ভাই আমার ছেলে হয়ে আবার মায়ের কাছে ফিরে এসেছে।
---মানে?তোমার আর একটা ভাই ছিলো নাকি?বলোনি তো আমায় কোনদিন।কি হয়েছিলো তার?
---ভাই আমার থেকে বছর তিনেকের ছোট ছিলো।হঠাৎ একদিন অজ্ঞান হয়ে যায়।হাসপাতাল নিয়ে গেলে বলে ব্লাড ক্যান্সার লাষ্ট স্টেজ।কিন্তু আমরা আগে কিছুই জানতে পারিনি।দিব্যি সুস্থ্য ও সবল ছিলো।খুব ভালো ফুটবল খেলতো। খেলতে খেলতেই মাঠের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল।ওর বন্ধুরাই আমাদের খবর দেয়।তারপর দু'মাস বেঁচে ছিলো।আর ওই ঘটনার পর মা প্রায় উন্মাদ হয়ে পড়েছিলেন।অনেক চিকিৎসা করিয়ে মাকে এই পর্যন্ত আনতে পেরেছি।মা আগে খুব শান্ত প্রকৃতির মানুষ ছিলেন।কিন্তু ভাই চলে যাওয়ার পর মা কেমন খিটখিটে হয়ে পড়েন।সবকিছুই যেন তার মনের মত হয়না।তাই আমি ও বাবা মায়ের এই আচরণ মুখ বুজে মেনে নিই কারন আমরা জানি মায়ের এই আচরণ তার মানষিক রোগের ফল।কোনকিছু তার মনমতো না হলে তিনি চিৎকার করে বাড়ি মাথায় করেন এই ঘটনার পর থেকে।তাই আমি ও বাবা সবসময় চুপ থাকতাম।আমার মা খুব ভালো মানুষ।কিন্তু ওই আঘাতে মানুষটা কেমন যেন হয়ে গেছিলেন।
       বিদিতা পাথর।মনেমনে তখন সে খুব কষ্ট পাচ্ছে।পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে শ্বাশুড়ী মায়ের দরজার কাছে যেয়ে 'মা' 'মা' করে ডেকে তুলে ছেলেকে তার কোলে দিয়ে বলে,
---মা আজ থেকে ও তোমার ঘরেই থাকবে।শুধু খাওয়ানোর সময় হলে আমি ওকে খাইয়ে দিয়ে যাবো।আপনাকে যেয়ে আমার ঘরে ওকে নিয়ে থাকতে হবেনা।ছেলেকে আপনি সামলান আর আপনার সংসার আমি সামলাবো।বলেই ঢিপ করে এক প্রণাম করে।বিদিতার শ্বাশুড়ী চোখ ভর্তি জল নিয়ে ছেলের বৌকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন,
---তুই তো আমার ঘরের লক্ষ্মী মা,আমার হারানো মানিক আমার বুকে তুলে দিয়েছিস।খুব সুখি হ মা।খুব ভালো থাক।
       স্নান করে চা নিয়ে শ্বশুরকে দিতে গিয়ে দেখে তিনি তার লাইব্রেরীতে নেই।কাপ দুটো হাতে করে তাদের শোয়ার ঘরে ঢুকে দেখে দু'জনেই ওই অবোধ শিশুটার সাথে অনর্গল বকে চলেছেন হাসি মুখে।

                     শেষ
   

Sunday, November 18, 2018

 
বাঁধন
          নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

    আজ অরূপের কথা খুব মনে পড়ছে মহুয়ার।কিন্তু একদিন তো এই অরূপকেই মহুয়া প্রত্যাখান করেছিলো।দেয়নি তার ভালোবাসার মর্যাদা।তখন মহুয়া প্রেমে পাগল রাহুলের।ভালোবাসার আকাশে মুক্ত বিহঙ্গের মত তখন মহুয়া ও রাহুল উড়ছে।বড়লোকের একমাত্র ছেলে,বাবার অঢেল টাকা।মহুয়া সারাজীবনই উচ্চাকাঙ্খী।গরীবের ছেলে অরূপের  ভালোবাসাকে সে কোনদিনও পাত্তা দেয়নি।
    রাহুলের বাড়িতে মহুয়াকে মেনে না নেওয়ায় মহুয়া ঘর ছাড়ে রাহুলের সাথে।ভেবেছিল পরবর্তীতে সবকিছু বুঝি ঠিক হয়ে যাবে।রাহুল তখন বেকার।একাউন্টে যা টাকা ছিলো কোনরকমে ছ'মাস চলে।তারপরই শুরু হয় চরম দারিদ্র যা রাহুলের কাছে অসহ্য হয়ে ওঠে।চরম বিলাসিতার মধ্যে অতিবাহিত জীবনে হঠাৎ এ ছন্দপতনের জন্য সে মহুয়াকেই দায়ী করতে থাকে।অবশেষে সে মহুয়াকে ছেড়ে নিজের বাড়িতে বিলাসিতার মধ্যেই ফিরে যায়।
    মহুয়া অথই সমুদ্রে পড়ে।বাবার বাড়িতে ফিরে যাওয়ার মুখ তার নেই।সে ভালোভাবেই জানতো তারা তাকে আর গ্রহণ করবেননা।একমাত্র যদি অরূপের কাছে গেলে  কিছু সুরাহা সে করতে পারে।
    রাহুলের চলে যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে সে অরূপদের বাড়িতে এসে জানতে পারে অরূপ চাকরী পেয়ে চেন্নাই চলে গেছে।মাথায় তখন তার আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।কি করবে এখন সে কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা।কয়েকদিনের মধ্যেই সে টের পায় এখন সে আর একা নয়।নূতন একটা প্রাণের সঞ্চার তার মধ্যে জানান দিচ্ছে।দিশেহারা মহুয়া বাবার বাড়িতেই ফিরে যাওয়া মনস্থির করে।
      মহুয়ার যখন জ্ঞান ফিরে তখন দেখে সে একটি অজানা বাড়িতে শুয়ে।অনেক কষ্টে মনে পড়ে তার বাবা,মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য সে একটি বাসে উঠে বসেছিলো।হঠাৎ করেই শরীরটা খুব খারাপ লাগছিলো তার।তারপর আর কিছু তার মনে নেই।
     আস্তে আস্তে মহুয়া উঠে বসলো।ঘরের চারিদিকে তাকিয়ে দেখে বুঝতে পারলো যে বাড়িতে সে এখন আছে তারা খুবই ধনী।চুপচাপ বসে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে।আর ঠিক তখনই মাঝবয়সী এক ভদ্রমহিলা এসে ঘরে ঢোকেন।মহুয়া খাট থেকে নামতে যায়।ভদ্রমহিলা তাকে বাঁধা দেন।তিনি একটি চেয়ার টেনে নিয়ে মহুয়ার কাছাকাছি বসে সরাসরি জানতে চান,
----কোথায় যাচ্ছিলে এই অবস্থায়?
----আপনি আমায় চেনেন?
----হ্যাঁ চিনি আর তোমার সব কথাও আমি জানি।
    মহুয়া অবাক হয়।সে জানতে চায়,
----কে আপনি?
----আমি কে সে পরিচয় তো আমি নিশ্চয় দেবো।কিন্তু তুমি কোথায় যাচ্ছিলে বললে না তো?
----ভালোবেসে বিয়ে করে ঘর ছেড়েছিলাম।দুই বাড়ির কেউই মেনে নেয়নি।এখন আমি প্রেগন্যান্ট।আমার স্বামী আমায় ছেড়ে তার মা,বাবার কাছে চলে গেছে।শুনেছি তারা খুব বড়লোক।আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।একা হলে নিজেকে শেষ করে দিতাম।কিন্তু আমার ভিতরে যে আর একটা প্রাণের সঞ্চার হয়েছে তাকে কি করে মেরে ফেলি?তাই একবার শেষ চেষ্টা করতে সেই বাবা,মায়ের কাছেই যাচ্ছিলাম যদিও জানি তারা আমাকে হয়তো বাড়িতেই ঢুকতে দেবেননা। কিন্তু এই ছাড়া আমার কাছে অন্যকোন  পথও খোলা ছিলোনা । কিন্তু আপনি কে বললেন নাতো?
---আমি কে শুনলে তুমি অবাক হবে আরও অবাক হবে এখানে কিভাবে এসেছো শুনলে।
---আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।আপনি পরিষ্কার করে বলুন কে আপনি আর কি করেই বা আমি এখানে এলাম?
---আমি রাহুলের মা।
---সেকি?আপনি আমাকে কি করে চিনলেন?
---তোমাদের বিয়েতে রাহুলের বাবার কোন মত ছিলোনা।আমি অনেক করে ওর বাবাকে বুঝিয়েছিলাম।কিন্তু তিনি কিছুতেই রাজি হননি।ছেলেও হটকারীতা বশত বাড়ির থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করলো।ফোন করলেও ধরতো না।সম্পূর্ণ যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো।অনেক কষ্টে যখন তোমাদের ঠিকানা জোগাড় করি সেই লোক আমায় জানান কয়েকদিন আগেই রাহুল ওই বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছে।কিন্তু সে প্রথমে বাড়িতে আসেনি।কয়েকদিন বন্ধুর বাড়িতে ছিলো।আমি একজন নারী হয়ে আর একজন নারীর কষ্ট-দুঃখ মর্মে মর্মে অনুভব করেছিলাম।তাই লোক মারফৎ তোমার উপর নজর রাখতাম।তুমি যখন বাসে যাচ্ছিলে সেখানেও আমার লোক ছিলো।তুমি অজ্ঞান হয়ে পড়লে তারাই তোমাকে আমার বাড়ি পৌঁছে দেয়।কটাদিন বন্ধুর বাড়িতে কাটিয়ে রাহুল বাড়ি ফিরে আসলেই ওর বাবা ওকে নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যান।এখন তারা কেউই বাড়িতে নেই।হয়তো তিনি ফিরে এসে আমার সাথে এমনকি তোমার সাথেও চরম ঝামেলা করবেন।কিন্তু মনে রেখো এ বাড়ির ছেলে তোমায় বিয়ে করেছে তাই এই বাড়িতে আছে তোমার ন্যায্য অধিকার।কোন পরিস্থিতিতেই তোমার অধিকার তুমি ছাড়বেনা।বাকিটা আমি দেখবো।
    মহুয়া অঝোর ধারায় কেঁদে চলেছে।তার মুখে কোন কথা নেই।মনেমনে ভাবছে এ কোন দেবীর দর্শন সে পেলো।এ তো সে স্বপ্নেও কোনদিন কল্পনা করেনি।

অপবাদ
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

শীতকালের সকাল।কুয়াশায় চারিপাশ ঢাকা।এতোটাই কুয়াশা যে সামনের মানুষ টাকেও ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না।  অনিলবাবু চললেন ব্যাগ হাতে বাজার কোরতে।সংসার বলে কথা !এই কুয়াশার মধ্যে ও তাঁকে বেড়োতে হোলো।হঠাৎ  পাড়ার একটি ছেলে তাঁকে ডেকে বললো ,"মেশোমশাই ,খবরটা শুনেছেন "?অনিলবাবু জানতে চাইলেন ,"কি খবর "? "নীরাদি কাল সুইসাইড করেছে।" অনিলবাবু হতভম্বের মত বললেন ," নীরা "?অনিলবাবু আর কিছু জিজ্ঞাসা না করেই আনমনাভাবেই বাজারের উদেশ্যে রওনা দিলেন।বাড়িতে এসে স্ত্রী কে সব বললেন।ভাবতে লাগলেন ,নীরা তো খুব ভালো মেয়ে।বয়স ও এখন অনেক।  বিয়ে-  থা করেনি।সমাজ সেবা করেই তার দিন চলে।বাড়িতে কোনো অভাব নেই।কিছু বাচ্চাকে বিনা পয়সায় পড়ায় ; ঠিক স্কুল এর মত নিয়ম করে।যে যখন বিপদে পড়ে তার বিপদেই সে ছুটে যায়।  কি এমন হলো ? হাসি ,খুশি ,প্রানবন্ত মেয়েটার ; যার জন্য তাকে জীবনের এই চরম পথ বেছে নিতে হলো ? সন্ধ্যার দিকে অনিলবাবুর স্ত্রী পাড়ার থেকে শুনে এসে তাঁকে আসল ঘটনাটা জানালেন।
কয়েকদিন ধরেই একটি অল্প বয়সী ছেলে তাকে নানান ভাবে উত্যক্ত করছিল।সহ্যের সীমা পেরিয়ে যাওয়াতে একদিন রাস্তার মাঝ খানে দাঁড়িয়ে তাকে একটা চড় ও মেরেছিলো।তাতে ছেলেটা আরও বেশী করে ক্ষেপে যায়।দলবল নিয়ে একদিন বাড়িতেও চড়াও হয়।  অকথ্য - কুকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ।নীরা তার শিক্ষা এবং রুচির অবমাননা করে না। সে প্রতিবাদ করে ঠিক ই কিন্তু কু- কথায় নয়।তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করে।পরে না পেরে পুলিশ ডেকে তাদেরকে ধরিয়েও দেয়।
   কিন্তু নেতা - নেত্রীর ছত্র ছায়ায় থাকার ফলে রাতেই তারা ছাড়া পেয়ে যায়। এ অপমান ,এ লজ্জা সে কিছুতেই মানতে পারে না।ভিতরে ভিতরে ক্ষয় হয়ে যেতে থাকে।সারাজীবন মানুষের জন্য সে করেই এসছে ।বিনিময়ে সম্মান টুকু ছাড়া কারও কাছে তার কিছু প্রত্যাশা ছিলো না ।ঘর বন্ধী অবস্থায় দিন কাটাতে কাটাতে হঠাৎ ই তার এই চরম সিদ্ধান্ত।অনিলবাবু সব শুনে  শুধু বললেন ," যে মেয়েটা সারা জীবন শুধু অন্যের কথা ভেবে গেলো ,অন্যের সমস্যার সমাধান কোরে গেলো - আর আমরা তার এই বিপদের দিনে কিছুই কোরতে পারলাম না।বড্ড অভিমান নিয়ে চলে গেলো মেয়েটা।ছি !!আমরা কি মানুষ!নিজেদের আমরা মানুষ বলে জাহির করি !নিজের প্রতি নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছা কোরছে "! 
যে ছবি এঁকেছি মনেমনে,
এতদিন পরে দিলে দেখা,
লুকিয়ে ছিলে সঙ্গোপনে।
সারাটা জীবন পাশেই থেকো,
আমার যন্ত্রণা ধুয়েমুছে দিও,
অকারণ ব্যথা দিওনা আমায়,
ভালোবাসায় আমায় বেঁধে রেখো। 

Thursday, November 15, 2018

একা আমি
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

যদি মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়
আমায় মনে কোর,
আঁধারের মাঝে তাকিয়ে তুমি
আমার পরশ নিও।
চোখ বুজে চুপিচুপি বোলো
তোমার মনের কথা,
নীরবে শুনবো সকলকিছু
দেবোনা আর ব্যথা।
সুখ-দুঃখের স্মৃতিরা সব
রয়েছে ঘরে ছড়িয়ে, 
তাদের সাথেই কাটিও সময়
আমি থাকবো বুকে জড়িয়ে।
তোমার কাছে অনেকেই আছে
আমি যে বড্ড একা।
পরজনমের আশায় থাকবো
হয় যদি আবার দেখা।

#নন্দা 

Wednesday, November 14, 2018

বহুরুপী
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

রং বদলের চলছে পালা
সবাই রং বদলায়।
দিচ্ছে একে অপরকে ধোঁকা
ভাবছে মনে বোকা।
হাসাতে কেউ পারুক বা না পারুক
কাঁদাতে পায় মজা।
হারিয়ে যাবে কাছের মানুষ সব
চলবে ভালোবাসা খোঁজা।
আজকে যাকে ভালোবেসে
নিচ্ছ কাছে টেনে,
স্বার্থের কারনে ঠেলছো তাকেই
নর্দমা বা ড্রেনে।
মানুষ তুমি বহুরুপী
গিরগিটিও মানে হার,
মুখোশ তোমার খুললে পরে
থাকবেনা কেউ কাছে তোমার।

#নন্দা  ১৫-১১-১৮

Monday, November 12, 2018

#চিরকুট

সময়ের সাথে বাড়ছে বয়স
সঞ্চয় অভিজ্ঞতা। 
ভালোবেসে নিলে কাছে
দেয় ব্যথা।
চতুরতার হচ্ছে জয়
ভাঙ্গছে সম্পর্ক। 
সরল জীবনকে করছে সবাই
জটিল অঙ্ক।

#নন্দা 

Sunday, November 4, 2018

#চিঠি
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

   নীল,
      হয়তো অবাক হচ্ছিস এতদিন পর কেন তোকে চিঠি লিখছি।কেন লিখছি এটা হয়তো আমি নিজেও জানিনা।তবে জীবনের এই শেষবেলায় এসে আমার না বলা কিছু কথা তোকে জানাতে ইচ্ছা করলো বলতে পারিস।
        তোকে আমি খুব ভালবাসতাম এটা তুই ভালোভাবেই জানিস।আর তুই ও আমকে....... ভাবছিস হয়তো কেন তোকে বিয়ে করতে রাজি হলামনা তখন।আমার কোন উপায় ছিলোনা রে....।আমি ছিলাম প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।কার কাছে,কেন সেটাই তোকে আজ বলবো।
        আমরা দু'জনে যখন মুক্ত বিহঙ্গের মত ডানা মেলে ভালোবাসার আকাশে উড়ছি ঠিক তখনই একদিন মাসিমা,মেশোমশাই অথাৎ তোর বাবা, মা আমাদের বাড়িতে এসে আমার বাবা, মা কে চরম অপমান করেন।নানান ধরনের কটুক্তি করেন।সে ভাষাগুলো না হয় নাই বললাম কারন সেগুলি শুনতে তোর ভালো লাগবেনা জানি।সেদিন তারা বেরিয়ে যাওয়ার পর বাবা , মা আমার সাথে আর কথা বলেননি।বলাবাহুল্য সেদিন রাতে কারও খাওয়াও হয়েছিলো না।অদ্ভুত এক অস্থিরতায় অন্ধকার বারান্দার এক কোণে বসে ছিলাম।হঠাৎ দেখলাম বাবা বারান্দার গ্রীল খুলে বাইরে বেরিয়ে গেলেন হাতে কিছু একটা নিয়ে।অন্ধকারের ভিতর ঠিক বুঝতে পারলামনা হাতে কি রয়েছে।আমিও বাবার পিছু নিলাম।
       কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম।দেখলাম বাবা উঠানের বড় আম গাছটায়.......দৌড়ে যেয়ে বাবার পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম।ততক্ষণে মা সেখানে এসে গেছেন।বাবা আমায় শুধু একটা কথায় বললেন "সারাজীবন মাথা উঁচু করে বেঁচেছি আজ এই অপমানের পর আর এ মুখ আমি কাউকে দেখাতে পারবোনা।তোমাকে আমি বাঁধা দেবোনা।আমার মৃত্যুর পর তোমার যা মন চায় কোর।"সেদিন বাবাকে কথা দিয়েছিলাম তোকে আমি ফিরিয়ে দেবো।তুই আমাকে ভুল বুঝেছিলি আমি জানি।কিন্তু এই ছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিলো কি?সন্তান হয়ে বাবার মৃত্যুর কারন হবো এটা আমি ভাবতেও পারিনা।
      তোকে ফিরিয়ে দিয়ে বাবা, মায়ের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করে কলকাতা পারি দিলাম।ভেবেছিলাম মানিয়ে নিয়ে সুখি হওয়ার চেষ্টা করবো।তোকে ভুলতে পারবোনা জানতাম।তাই বুকের এক কোণায় তোকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু যখনই আমি একা থাকতাম তুই ঘুম থেকে জেগে উঠে আমায় জ্বালাতন ......।
আমিও চোখ বন্ধ করে তোর সাথেই সময় কাটাতাম।
      যে মানুষটার হাত ধরে নূতন জীবনে প্রবেশ করেছিলাম সে আমাকে কোনদিনও ভালোইবাসেনি।কিন্তু তবুও আমি দুই সন্তানের মা।আমি ছিলাম শুধুমাত্র লোকটির রাতের শয্যাসঙ্গীনী।কোনদিন এ নিয়ে অশান্তি তার সাথে আমি করিনি কারন মন থেকে আমিও তাকে কোনদিনও.........কিন্তু কি করবো বল?তোকে যে আমি আজও ভুলতে পারিনি।ত্রিশটা বছর অভিনয় করে ঘোরের মধ্যেই যেন কেটে গেলো।বিশ্বাস করবি কিনা জানিনা , আমি কিন্তু কোনদিনও আমার দায়িত্ব-কর্তব্য থেকে বিন্দুমাত্র সরিনি বা বলতে পারিস আমার বিবেক আমাকে সরতে দেয়নি।মন থেকে ভালবাসতে পারিনি ঠিকই কিন্তু অবহেলাও কোনদিন তাকে করিনি।একটা যন্ত্রের মত পুরো জীবনটা কাটিয়ে দিলাম।সে যেদিন আমায় ছেড়ে চিরদিনের মত চলে গেলো সেদিন হাউ হাউ করে কেঁদেছিলাম।কিন্তু কেন বলতে পারিস?আমি জানি মানুষটিকে কোনদিন ভালবাসতে পারিনি .....সেদিনের কান্না তো সে কথা বলেনা....হয়তো মনের কোথাও তার জন্য তিল তিল করে অজান্তেই একটা জায়গা তৈরি হয়ে গেছিলো।বলতে পারিস নীল,একটা মানুষ একই সাথে দু'জনকে ভালবাসতে পারে?
           কি পেলাম আর কি পেলামনা জীবনে তার হিসাব আজ আর করিনা।হিসাবের খাতা আমার শূণ্য।যা পেয়েছিলাম আর যা পাইনি দুটোতেই ছিলো আমার আক্ষেপ!তাই হিসাবটা মিলাতে পারিনা।
        আজ আমি সম্পূর্ণ একা।ছেলেমেয়ে উভয়ই বিদেশে।খুব ইচ্ছা করে তোকে একবার দেখতে......ইচ্ছা করে একবার তোকে ছুঁতে.....একবার তোকে জ......।কিন্তু আমি জানি তা আমি আর পারবো না কেননা আমাদের মাঝে থাকবে ওই লোকটি ....আমার স্বামী.... যেমন তার আর আমার মাঝে সর্বদা তুই থাকতিস ....।
                                       ইতি 
                                           তোর আমি