Friday, May 1, 2020

প্রায়শ্চিত্ত


 প্রায়শ্চিত্ত  
          নন্দা  মুখাৰ্জী  রায়  চৌধুরী  



      হঠাৎ  করেই  সোহিনীর  সাথে  রজতের  মায়ের  দেখা  হয়ে  গেলো  প্রায়  বছর  পাঁচেক  বাদে | সোহিনী  তার  পাঁচ  বছরের  ছেলেকে  নিয়ে  শপিং  করতে  বেরিয়েছে | শোভনাদেবীই  প্রথম  সোহিনীকে  দেখতে  পান | গাড়ির  দরজা  খুলে  যখন  উঠতে  যাবে  ঠিক  সেই  মুহূর্তে  নিজের  নাম  ধরে  কেউ  ডাকছে  শুনে  ঘাড় ঘুরিয়ে  দেখে  একজন  বয়স্কা ভদ্রমহিলা  হাত  তুলে  তাকে  ডাকতে  ডাকতে  তার  দিকেই  এগিয়ে  আসছেন | প্রথম  অবস্থায়  সোহিনী  তাকে  চিনতে  পারেনি | তিনি  কাছে  এসেই  সোহিনীকে  জড়িয়ে  ধরে  বললেন ,
--- চিনতে  পারছোনা  আমায়  ?
--- না  ঠিক  ---
--- আমি  রজতের  মা | আসলে  তুমি  তো  আমায়  একদিনই  দেখেছো  , না  চেনারই  কথা |
--- আপনিও  তো  আমায়  একদিন  দেখেছেন |
 নিচু  হয়ে  প্রণাম  করতে  করতে  বলে ,
--- কেমন  আছেন  মাসিমা ? একা একা বেড়িয়েছেন ? নাকি  সাথে  কেউ  আছে ?
--- সাথে  কে  আর  থাকবে ? ড্রাইভারের  সাথে  বেড়িয়েছি  মাস -কাবাড়ি  সব  জিনিস  কিনতে  | 
   ওদের  কথার  মাঝে  গাড়িতে  বসে  থাকা  সোহিনীর  ছেলে  চিৎকার  করে  বলে  উঠলো ,
--- মা  বাড়ি  চলো  আমার  খেলনাগুলো  পুরনো হয়ে  যাচ্ছে  তো  --- বাড়ি  গিয়ে  খেলবো  তো  |
 শোভনাদেবী  গাড়ির  ভিতর  উঁকি  দিয়ে  বাচ্চাটিকে  দেখে  বেশ  ঘাবড়ে  গেলেন  | হঠাৎ  করেই  তিনি  ঘামতে  শুরু  করলেন  |
--- মাসিমা , আপনার  কি  শরীর  খারাপ  করছে ?
--- এটা তোমার  ছেলে --- ?
 আর  কোন  প্রশ্ন  করার  সুযোগ  না  দিয়ে  সোহিনী  বলে  উঠলো  
--- ছেলেটা  খুব  ব্যস্ত  হয়ে  পড়েছে  বাড়ি  ফেরার  জন্য  ---
--- কিন্তু  আমার  যে  অনেককিছু  বলার  আছে  তোমাকে  --- অনেককিছু  শোনারও  আছে |
--- আজ  না  মাসিমা | পরে  একদিন ---
 শোভনাদেবী  হঠাৎ  সোহিনীর  হাতদুটো  ধরে  প্রায়  কাঁদোকাঁদো  স্বরে  বললেন ,
-- একদিন  আমার  বাড়িতে আয়  মা  কথাদিচ্ছি  আমি  আর  তোর  অসম্মান  করবোনা  |
--- এভাবে  কেন  বলছেন ? আমি  সময়  পেলেই  যাবো | ব্যাগের  থেকে  একটা  কার্ড  বের  করে  এগিয়ে  দিয়ে  বললো  এখানে  আমার  ফোন  নম্বর  আছে | দরকার  মনে  করলে  ফোন  করবেন  | 
 বলেই  গাড়িতে  উঠে  স্টার্ট  দিলো | শোভনাদেবী  গাড়িটা  যতক্ষণ দেখা  যায়  সেদিকে  তাকিয়ে  থাকলেন  |
   বাড়িতে  ফিরেই  তিনি  আলমারি  খুলে  পুরনো একটা  পুরনো এলবাম  নিয়ে  বসেন | ভিতর  থেকে  তার  একমাত্র  ছেলে  রাজুর  পাঁচ  বছরের  জম্মদিনের  ছবিটা  নিয়ে  একদৃষ্টে  ছবিটার  দিকে  তাকিয়ে  থাকেন  | ভাবতে  থাকেন আজ    সোহিনীর  সাথে  যে  বাচ্চাটিকে  দেখলাম  সে  তো  পুরো  রাজুর  ছেলেবেলার  মত  দেখতে  | তাহলে  কি  ----?
  --- রাজু  ,  তোর  জন্য  একটা  মেয়ে  দেখেছি | খুব  সুন্দর  দেখতে  রে  | বাংলায়  এমএ  করেছে | আমার  ইচ্ছা  এবার  তোর  বিয়ে  দেবো |
--- মা , অফিস  বেরোনোর  সময়  এ  কি  শুরু  করলে ?
--- আরে তোকে  তো  আমি  পাই ই  না | এখন  বেরোবি  আর  ফিরবি  সেই  রাতে | ক্লান্ত  হয়ে  ফিরিস  | মুখটা  তোর  শুকিয়ে  যায় | এসব  নিয়ে  কি  তখন  কথা  বলা  যায়  এখনই   তো  একটু  কথা  বলতে  পারি  তোর  সাথে |
--- এসব  নিয়ে  ছুটির  দিনে  আলোচনা  করবো  এখন  আমি  বেরোচ্ছি  মা |
  অফিসের  গাড়ি  এসে  রোজ  রজতকে  নিয়ে  যায় | সে  একটা  মাল্টিন্যাশনাল  কোম্পানীতে উচ্চপদে  কর্মরত | কিছুদিন  ধরেই   বলবে  বলবে  করেও  সোহিনীর  কথা  মাকে বলা  হয়ে  ওঠেনি | এদিকে  সোহিনীও  খুব  চাপ  দিচ্ছে | সেদিন  ফোন  করে  যে  কথা  সে  জানালো  এক্ষুণি এক্ষুণি মাকে  সব  খুলে  বলা  দরকার | যে  আসছে  সেতো সোহিনী  আর  তার  ভালোবাসার  ফসল  | তাকে  কিছুতেই  সে  অস্বীকার  করতে  পারবেনা | 
  সোহিনী  খুব  সাদামাটা  মেয়ে | বাবা , মাকে ছোটবেলাতেই  হারিয়েছে  | নিঃসন্তান  মামা, মামী  তাকে  বুকে  আগলে  মানুষ  করেছেন | কলেজ  স্যোসালে দুবছরের  জুনিয়ার  সোহিনীকে  দেখে  প্রথম  দিনই  খুব  ভালো  লেগে  গেছিলো  রাজু  ওরফে  রজত  চক্রবর্তীর | তারপর  একটু  একটু  করে  কাছে  আসা |  মামা ,মামী  দুজনেই  ব্যাপারটা  জানতেন  | তারা  কোন  আপত্তি  করেননি | মাঝে  মধ্যেই  অফিস  ছুটির  পর  বা  ছুটিরদিনে  রজত  সোহিনীর  কাছে  গেছে  | কিন্তু  সেদিন  রজত  সোহিনীদের  বাড়িতে  গিয়ে  দেখে  তার  মামা  , মামী  বাড়িতে  নেই | টিপটিপ  বৃষ্টি  মাথায়  নিয়েই  সে  ওদের  বাড়ি  ঢুকেছিলো | একটু  পরে  শুরু  হল  মুষলধারে  বৃষ্টি | বাইরে  মেঘের  গর্জন  আর  বৃষ্টিধারার  আওয়াজ  অন্যদিকে  ঘরের  ভিতরের  নির্জনতা  ভালোবাসার  মানুষদুটিকে  কাছে  আনতে বিন্দুমাত্র  সময়  নেয়নি | কিছুক্ষণের জন্য  দুজনেই  ভেসে  গেছিলো  প্রেমের  জোয়ারে  যার  ফলস্বরূপ  সোহিনী  এখন  দুমাসের  সন্তানসম্ভবা | এই  ঘটনার  কিছুদিন  পর  সোহিনী  কাঁপা কাঁপা স্বরে  রজতকে  ফোন  করে  জানিয়েছিল  যে  সে  মা  হতে  চলেছে | রজত  সেদিনই  অফিস  ছুটির  পর  ছুটে গেছিলো  সোহিনীর  কাছে | সোহিনীকে  কথা  দিয়ে  এসেছিলো  একমাসের  মধ্যে  তাকে  বিয়ে  করে  সে  ঘরে  তুলবে  | এ  সন্তান  তাদের  ভালোবাসার  প্রথম  চিহ্ন  | তাকে  তো  পৃথিবীর  আলো দেখাতেই  হবে  |
  কিন্তু  ছেলে  কিছুতেই  তার  পছন্দ  করা  মেয়ে  বিয়ে  করতে  রাজি  হয়না  দেখে  তিনি  রাজুকে  চাপ  দিয়ে  জানতে  পারেন  সে  একজনকে  ভালোবাসে | প্রথমে  রেগে  গেলেও  পরে  শান্ত  হয়ে  তিনি  ব্যাপারটা  মেনে  নেওয়ার  ভান করে  সোহিনীর  বাড়ির  ঠিকানা  জেনে  নেন | পরদিন  ছেলে  অফিসে  বেরোলে  তিনিও  বেরিয়ে  পড়েন  সোহিনীদের  বাড়ির  উদ্দেশ্যে | সেখানে  পৌঁছে  তিনি  নিজের  পরিচয়  দেন  এবং  একাকী  সোহিনীর  সাথে  কথা  বলতে  চান | সোহিনীর  মামা  , মামী  এতে  অমত  করেননা  কারণ  কোন  খারাপ  চিন্তা  তাদের  মাথায়  আসেনি | সোহিনীর  সাথে  কথা  বলতে  তার  আধাঘন্টার  মত  সময়  লেগেছিলো | তারপর  তিনি  বিজয়িনীর  হাসি  হেসে  সে  বাড়ি  ত্যাগ  করেছিলেন |
  সোহিনী  ঘরে  ঢুকেই  সোফায়  নিজেকে  এলিয়ে  দিলো | মিথিলা  এসে  জানতে  চাইলো ,
--- দিদিমনি  চা  বা  কফি  কিছু  দেবো ?
--- একটু  পরে | তুই  যা  রাজাকে  জামাকাপড়  ছাড়িয়ে  দে |
--- ওতো এসেই  খেলনা  নিয়ে  বসে  পড়েছে | 
--- আচ্ছা  ঠিক  আছে | এখন  আমাকে  একটু  একা থাকতে  দে |
  চোখ  বুজে  সোফার  উপর  শুয়ে  সেদিনের  রজতের  মায়ের  কথাগুলো  মনে  পড়লে  আজও বুকের  ভিতর  ঝড়  বয়ে  যায় | রজতের  মা  এসেছেন  শুনে  তার  মনে  খুশির  বন্যা  বয়ে  গেছিলো | সে  ভেবেছিলো  রজত  তার  মাকে  সব  জানিয়ে  তার  মামার  কাছে  পাঠিয়েছে  বিয়ের  ফাইনাল  কথা  বলতে | আলাদা  একটা  ঘরে  দুজনে  যখন  মুখোমুখি  সোহিনী  তখন  নিচু  হয়ে  শোভনাদেবীকে  প্রণাম  করে | 
--- থাক থাক | আমার  হাতে  বেশি  সময়  নেই | গুটিকয়েক  কথা  তোমায়  বলতে  এলাম | আমার  রাজুকে  আমি  অনেক  কষ্ট  করে  মানুষ  করেছি | ওকে  নিয়ে  আমার  অনেক  স্বপ্ন | হঠাৎ  করে  তুমি  আমাদের  মধ্যে  ঢুকে  সে  স্বপ্নে  বাধা  হয়ে  দাঁড়াতে  পারোনা | আমি  দেখেশুনে  আমার  রাজুর  বিয়ে  দেবো | রাজুকে  যদি  সত্যিই  তুমি  ভালোবেসে  থাকো  তাহলে  তার  দিব্যি দিয়ে  তোমায়  আমি  বলছি  ওর  জীবন  থেকে  তুমি  সরে  যাও | তুমি  যদি  ওর  সামনাসামনি  আর  হও তাহলে  রাজুর  মরা  মুখ  দেখবে |
--- মাসিমা , আপনি  ওর  মা  হয়ে  একথা  মুখে  আনলেন  কি  করে ?
 কাঁদতে  থাকে  সোহিনী |
--- তোমার  এই  চোখের  জলে  আমায়  ভুলাতে পারবেনা | তোমাদের  মত  মেয়েদের  আমার  ভালোভাবেই  জানা  আছে | টাকাপয়সা  যদি  কিছু  চাও  তো  বলো  --- সবকিছু আমি  দিতে  রাজি  আছি |
 সোহিনী  পাথর  হয়ে  ভদ্রমহিলার  কথা  শুনছিলো | কোন  কথা  তার  মুখে  আর  আসছিলোনা | উনি  বকবক  করেই  চলেছিলেন  কিন্তু  সোহিনীর  কানে  সে  কথা  ঢুকলেও  মস্তিস্ক  পর্যন্ত  পৌঁছাচ্ছিলোনা | একসময়  তিনি  ঘর  থেকে  বেরিয়ে  যান | কি  ঘটে  গেলো  সোহিনী  কিছুই  বুঝতে  পারলোনা | শোভনাদেবী  চলে  যাওয়ার  পর  তার  মামা , মামী  তার  অন্ধকার  ঘরে  ঢুকে  দেখে  সে  জ্ঞান  হারিয়ে  খাটে পরে  আছে  |
 কিছুক্ষণ পর  তার  জ্ঞান  ফিরলে  সে  সবকথা  তার  মামা , মামীকে  জানায় | সে  এও বলে  রজতের  সন্তান  তার  গর্ভে | প্রথম  অবস্থায়  স্বামী , স্ত্রী  ঘাবড়ে  গেলেও  পরে  মাথায়  হাত  বুলিয়ে  তাদের  আদরের  সোনার  কাছে  জানতে  চান  সে  কি  চায় | সোহিনী  তাদের  জানায়  সে  এই  সন্তানকে  পৃথিবীর  আলো দেখাতে চায় | মামা  তাকে  আস্বস্ত্ব করেন  যেভাবেই  হোক  সাতদিনের  মধ্যে  তারা  এখান থেকে  চলে  যাবেন  আর  সেও  তার  সন্তানকে  পৃথিবীর  আলো দেখাবে |
  
 তারপর  জীবনের  নানান  ওঠাপড়া  পেরিয়ে  নিজের  যোগ্যতায়  সে  আজ  রেলের  একজন  উচ্চপদস্থ  কর্মচারী | তার  জীবনে  এই  ভাঙ্গাগড়ায়  মামা  আর  মামী  সবসময়  তার  পাশে  থেকেছেন | সবসময়  তারা  সোহিনীর  ইচ্ছাকেই  প্রাধান্য  দিয়েছেন | সোহিনী  তার  জীবনে  ঘটে  যাওয়া  কোন  কথাই তাদের  কাছে  লুকায়নি | অথচ  আজকে  ঠিক  এই  মুহূর্তটাই  তারা  দুজনেই  তার  কাছে  নেই  | চিকিৎসার  কারণে দুজনেই  ভেলোর গেছেন | ফোনে সবকথা  বলা  ঠিক  হবেনা  মনে  করে  সে | আসলেই  সবকিছু  জানাবে  আর  এও জানতে  চাইবে  রজতের  মায়ের  কথানুযায়ী  তাদের  বাড়িতে  যাওয়া  ঠিক  হবে  কিনা |
   ছবছর আগে  রজত  অফিস  থেকে  ফিরে  তার  মায়ের  কাছে  জানতে  চেয়েছিলো  তিনি  সোহিনীদের  বাড়িতে  গিয়েছিলেন  কিনা  | কিন্তু  শোভনাদেবী  ঘটনাটা  সম্পূর্ণভাবেই  তার  কাছে  চেপে  গেছিলেন | অফিসের  নানান  ঝামেলায়  দুদিন  তাদের  বাড়িতে  যাওয়ার  সুযোগও হয়নি | যতবারই  ফোন  করেছে  সুইচ  অফ  পেয়েছে | তৃতীয়দিন  অফিস  থেকে  একটু  তাড়াতাড়িই  বেরিয়ে  সেখানে  পৌঁছে  দেখে  বিশাল  বাড়ির  গেটে  বেশ  কয়েকটি  তালা  দেওয়া | কলকাতা  শহরের  একবাড়ির  খবর  অন্য বাড়ির  লোকেরা  রাখেনা | রজতও সোহিনীদের  এই  হঠাৎ  অন্তর্ধানের  কোন  খবর  পেলোনা  যখন  তখন  মাকেই  সে  দোষী  সাবস্ত  করলো | বাদানুবাদ  ঝগড়াঝাটির  পর  তিনি  একসময়  স্বীকার  করতে  বাধ্য  হলেন  ও  বাড়িতে  তিনি  গেছিলেন | শুধু  তাই  নয়  ছেলেকে  তিনি  একথাও  জানালেন  যা  তিনি  করেছেন  তা  তার  ভালোর  জন্যই | ফলস্বরূপ  রজত  তিনমাসের  মধ্যে  বদলি  হয়ে  মুম্বাই  চলে  যায় | কিন্তু  এই  তিনমাসে  সে  অনেক  চেষ্টা  করেও  সোহিনীর  কোন  খবর  জোগাড়  করতে  পারেনি | যাবার  আগে  সে  মাকে  বলে  যায় ,
--- তুমি  শুধু  আমার  আর  সোহিনীর  জীবনই নষ্ট  করোনি  সাথে  আর  একজনের  জীবনও নষ্ট  করেছো  যে  এখনো  পৃথিবীর  আলোও দেখে  পারেনি | আমি  জানিনা  আদতেও  সে  পৃথিবীতে  আসবে  কিনা |
 একথা  শুনে  শোভনাদেবী  পুরো  চুপসে  যান | কিন্তু  ক্ষমা  চাওয়া  বা  ভুল  শুধরে  নেওয়ার  কোন  পথই আজ  আর  খোলা  নেই | সেই  থেকে  যখনই তিনি  বাইরে  বেরোন  তার  চোখ  , কান  খোলা  রেখেই  সোহিনীকে  খুঁজে  বেড়ান | তার  রাজু  তার  প্রতি  দায়িত্ব  পালনে  কোন  কার্পণ্য  করেনা | মাস  পড়লেই  সে  টাকা  পাঠিয়ে  দেয় | একজন  সর্বক্ষণের  কাজের  লোক  আর  গাড়ির  ড্রাইভার  এই  তার  সংসার  | ছেলে  আর  কখনোই  মায়ের  কাছে  আসেনি |
  মনে  নানানরকম  সংশয়  নিয়ে  ব্যাগ  থেকে  সোহিনীর  দেওয়া  কার্ডটা  বের  করে  তার  নম্বরে  ফোন  করেন | সোহিনী  ফোনের  কাছে  না  থাকায়  তার  ছেলেই  ফোন  ধরে  '' হ্যালো " বলে |
--- তুমি  কে  বলছো  দাদুভাই  
--- আমি ?আমি  তো  রাজা | তুমি  কে  বলছো ?
--- আমি  তোমার  ঠা --- একটা  দিদা  বলছি |
--- আচ্ছা  দাদুভাই  তোমার  বাবার  নামটা  কি ?
--- আমার  বাবার  নাম  ----
 কথাটা  রাজা  শেষ  করতে  পারেনা  সোহিনী  ঢুকে  তার  হাত  থেকে  ফোনটা নিয়ে  বলে ,
--- কতদিন  না  বলেছি  ফোন  আসলে  আমায়  ডেকে  দেবে  নিজে  রিসিভ  করবেনা |
 শোভনাদেবী  জানতে  চাইলেন  তারা  কবে  তার  বাড়িতে  আসবে | উত্তরে  সোহিনী  তাকে  জানালো  মামা , মামী  বাইরে  আছেন  তারা  ফিরলে  যাবে |
 শোভনাদেবী  ভিতরে  ভিতরে  অস্থির  হয়ে  উঠতে  লাগলেন | আজ  তিনি  নিজের  কৃতকর্মের  জন্য  ভীষণভাবে  অনুতপ্ত | তাই  তিনি  এক  ফন্দি  আঁটলেন  |
--- হ্যাঁ রাজু  ? আমার আজ  কয়েকদিন  ধরে  বুকের  বাদিকটা   ব্যথা  হচ্ছে | পাশের  বাড়ির  তোর  মাসিমা  এই  নম্বরটা  দিলেন | কয়েকবার  ফোন  করলাম  কেউ  ধরলোনা | তুই  একটু  চেষ্টা  করে  দেখতো  বাবা  ডক্টরবাবুকে  পাস কিনা | নম্বরটা  লিখে  নে --

--- আমি  এক্ষুণি কল  করছি  | কিন্তু  খুব  অসুবিধা  হলে  ড্রাইভারকে  নিয়ে  তুমি  নিজেই  নার্সিংহোম  চলে  যেও  ---
 কিন্তু  পুরো  কথা  শোনার  আগেই  শোভনাদেবী  ফোন  কেটে  দিয়েছেন | যে  সমস্যা  তিনি  নিজেই  তৈরী  করেছিলেন  আজ  তার  সমাধান  করতে  তিনি  দৃঢ়  প্রতিজ্ঞবদ্ধ  |
  তারপর  রজত সোহিনীর  নম্বরে  ফোন  করে  ডক্টরের  খোঁজ  |
--- না  এটা কোন  ডক্টরের  নম্বর  নয় | আপনার  গলাটা  খুব  চেনা  লাগছে |
--- আমারও আপনি  কে  বলছেন  ?
 আর  ঠিক  তখনই সোহিনী  বুঝতে  পারে  এটা রজত | সঙ্গে  সঙ্গেই  ফোন  কেটে  দিয়ে  কান্নায়  ভেঙ্গে পরে | তারপর  রজতের  চার  থেকে  পাঁচবার  ফোন  | কিন্তু  সোহিনী  রিসিভ  করেনা | তখন  ম্যাসেজ  | সোহিনী  বাধ্য  হয়  রজতের  ফোন  ধরতে |
 দিন  তিনেকের  মধ্যে  রজত  ফিরে  আসে | আর  শোভনাদেবী  নিজে  পছন্দ  করে লাল  টুকটুকে  লালবেনারসি  কিনে  এনে  সোহিনীকে  পরিয়ে দুধ  আলতায়  পা  ডুবিয়ে দাদুভাই  সমেত   তার  ঘরের  লক্ষ্মীকে  বরণ করে  ছবছর পরে  তার  পাপের প্রায়শ্চিত্ত  করেন  |

No comments:

Post a Comment