Saturday, July 6, 2019

দাম্পত্য এক রসময় মাঠ

#আমার_লেখনীতে
   দাম্পত্য এক রসময় মাঠ

--সকাল থেকে যে বলছি একটু বাজার যাও তা বসে বসেই শুনে যাচ্ছ?উঠার কোন নামই নেই --
  পেপারটা থেকে মুখ সরিয়ে অর্ণববাবু কটাক্ষ দৃষ্টিতে স্ত্রী মনোরমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
--তুমি আজ একটু ডাল , ভাত করে চালিয়ে দাও , আজ অফিসে একটু তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে।
---বাজার যেতে বললেই ওই এক কথা ডাল,ভাত করো নুতবা চালে ডালে চালিয়ে দাও।বলি রোজ রোজ ওই ডাল খেতে খেতে যে মুখে অরুচি ধরে গেছে।তুমি কি ভাবো গো তোমার একারই বয়স হয়েছে আমার হয়নি?
 অর্ণববাবু মুখে কুলুপ এঁটে স্নানে চলে গেলেন।রমাদেবী মুখে একটা টেপ রেকর্ডার চালিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে দুই গ্যস জ্বালিয়ে ভাত ও ডাল চাপিয়ে দিয়ে একটু আলুর দম করার জন্য আলু নিয়ে কাটতে বসলেন।তারও বয়স হয়েছে হাঁটুতে ব্যথা, ডাক্তার নীচুতে বসতে একদম নিষেধ করেছেন কিন্তু তিনি দাঁড়িয়ে পড়ে কিছুই কাটতে পারেননা।তাই কষ্ট হলেও তিনি নীচুতেই বসেন।কাজের মেয়ে সরলা সাতদিনে চারদিন আসে তো তিনদিন আসেনা।তবুও রেখেছেন ছেড়ে দিলে পাবেন কোথায়?সবথেকে বড় কথা সরলাকে ছাড়িয়ে দিলে মেয়ের কানে গেলে কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে ছাড়বে।
অর্ণববাবু স্নান করে ঘরে যেতে গিয়ে দেখেন রমাদেবী নীচুতে বসে আলু কাটছেন।
--তোমাকে ডাক্তার কতবার বলেছে তুমি নীচুতে বসবেনা এতে তোমার হাঁটুতে আরও বেশি কষ্ট হবে কেন কথা শোনানো বলো তো?
--থাক আর আদিখ্যেতা দেখাতে হবেনা,তুমি তো বলে খালাস ডাল, ভাত করো।অফিস যাওয়ার সময় শুধু ওই ডাল,ভাত কি খাওয়া যায়।তুমি পারোনা আমি বুঝি কিন্তু আমিও বা কি করি বলো তো?
অর্ণববাবু ও রমাদেবীর বিবাহিত জীবন আজ পঁয়ত্রিশ বছরের।একমাত্র মেয়ে অনুষ্কা বছর পাঁচেক আগে বিয়ে হয়েছে।মাস ছয়েক বাকি অর্ণববাবুর রিটায়ারমেণ্টের।মেয়ে মাঝে মাঝে দুবছরের নাতিকে নিয়ে আসে।কিন্তু জামাই ওই বছরে একদিন।জামাইষষ্ঠীতে।ব্যবসায়ী মানুষ ভীষন ব্যস্ত একদম সময় পায়না।
  সকালের আলুরদম আর দোকানের তৈরী হাতে গড়া রুটি যা প্রতিদিন অর্ণববাবু অফিস থেকে ফেরার পথে নিয়েই ফেরেন।খেতে খেতে দু'জনে গল্প করছিলেন।হঠাৎ অর্ণববাবু বললেন,
-- আর তো মাত্র ছ'মাস বাকি রিটায়ারমেণ্টের।টাকাপয়সা মোটামুটি ভালোই পাবো।চলো দু'জনে মিলে একটু তীর্থ করে আসি।
---তা কোথায় যাবে বলে ভেবেছো?
---কেদার বদ্রীনাথ।
রমাদেবী যেন আঁতকে উঠলেন..
---ওমা --ওখানে তো ঠান্ডা শুনেছি।তোমার তো আবার ঠান্ডার ধাত।একটুতেই ঠান্ডা লেগে যায়।তখন তো দু'মিনিট অন্তর তোমায় ফোঁসফোঁস (ইনহেলার , এটাকে রমাদেবী ফোঁসফোঁস বলেন তার কারণ এটা অর্ণববাবু যখন মুখে প্রেস করেন তখন ফোঁস করে একটা আওয়াজ হয়) নিতে হয়।সারারাত কাশতে থাকো।নিজেও ঘুমাতে পারো না আমাকেও ঘুমাতে দাওনা।
-- হ্যাঁ তাই তো আমি তোমাকে রাতে ঘুমাতে দিইনা! আর নিজে যখন হাঁটুর ব্যথায় , কোমর ব্যথায় সারারাত যন্ত্রণায় ছটফট করো তখন আমার ঘুমের ব্যাঘাত হয়না?কোনদিন শান্তিতে একটু ঘুমাতে পারি?
--রাত অনেক হোল।বলি এখানে বসে আমার সাথে ঝগড়া করেই কি রাত শেষ করবে নাকি?কাল তো আবার অফিস আছে।বাজার যেতে হবে বলে দিলাম কিন্তু ---
---হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে ।জীবনে কোনদিন একটু শান্তি পেলামনা।
---আমাকেও যেন কত শান্তিতে রেখেছো-
 এখন দয়া করে শুয়ে পরো।বেশি রাত জাগলে শরীর খারাপ করলে তো আমি ছাড়া  গতি নেই ---
অর্ণববাবু কথা না বাড়িয়ে গিয়ে শুয়ে পড়লেন।রমাদেবীও রাতের টুকটাক কাজ সেরে স্বামীর পাশে শুয়ে পড়েন।অনেক রাতে রমাদেবীর কাতরানোর আওয়াজে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়।মাথায় হাত বুলিয়ে জানতে চান
--কি গো হাঁটুতে যন্ত্রণা হচ্ছে?
উত্তর পেয়ে আস্তে আস্তে উঠে লাইট জ্বালিয়ে ব্যথার বামটা নিয়ে গিয়ে স্ত্রীর হাঁটুতে অনেকক্ষণ ধরে মালিশ করেন।কিছুক্ষণ পর ব্যথা একটু কমাতেই রমাদেবী ঘুমিয়ে পড়লে পা টিপে টিপে উঠে বামটা রেখে লাইট ওফ করে স্ত্রীর পাশে এসে শুয়ে একসময় নিজেও ঘুমিয়ে পড়েন।
   সকালে রমাদেবী ঘুম থেকে উঠে দেখেন আগেই তার স্বামী উঠে পড়ে চায়ের জল চাপিয়ে দিয়েছেন।স্ত্রীকে দেখতে পেয়ে হেসে পড়ে জানতে চান,
--কি গো কেমন আছো এখন?  ঘুমাচ্ছ দেখে আর ডাকিনি তোমায়।নিস্পাপ শিশুর মত অকাতরে ঘুমাচ্ছিলে।তুমি মুখ ধুয়ে নাও আমি চা করে আসছি।চা খেয়েই বাজার যাবো।
--আরে আমি তো উঠে গেছি।আমি চা করছি।তুমি বরং যাও পেপারটা বারান্দা থেকে তুলে চোখ বুলাতে লাগো।
--আচ্ছা তবে তাই যাই।
  চা করে রমাদেবী ড্রয়িংরুমে নিয়ে আসেন।
--বলি বাজারের ব্যাগটা দাও গো।আজ তো সত্যিই বাজার না গেলে হবেনা।রান্নাঘর থেকে বাজারের ব্যাগটা হাতে করে নিয়ে এসে আব্দারের সুরে স্বামীকে বললেন,
--চলো দুজনেই বাজার যাই।
--না না তোমাকে যেতে হবেনা।কাল রাতে অত কষ্ট পেয়েছো ব্যথায়।আজ আবার এতোটা পথ হেঁটে বাজার যাবে, এসে রান্না করে অফিসের ভাত দেবে , খুব কষ্ট হবে গো তোমার।
--না কষ্ট হবেনা।আর হলে তুমি আছো তো।বাম লাগিয়ে দিও।চলো দু' জনে কথা বলতে বলতে বাজারটা করে নিয়ে আসি।অর্ণববাবু আর আপত্তি করেননা।
---বেশ তবে তাই চলো।দুজনেই যাই।
  বেরিয়ে গেলেন দুজনে ঘরে তালা লাগিয়ে।বাজার শেষে বাজারের ভিতরেই দুজনের সাথে একপ্রস্ত জোর ঝামেলা হয়ে গেলো একবার।বাজারের ব্যাগ দু'জনেই টানবেন।কেউ ছাড়ার পাত্র নয়।পরস্পরের একই কথা, 'তোমার কষ্ট হবে আমাকে দাও---' একেই বলে বোধহয় দাম্পত্য----

No comments:

Post a Comment