শহুরে কন্যা
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
জিনিয়ার শ্বশুরবাড়ি বলতে গেলে গ্রামেই।বড় বড় শহরের কাছেপিঠের গ্রামগুলোকে আজকের দিনে ঠিক গ্রাম বলা যায়না।এখন সর্বত্রই পাকা রাস্তা,ইলেকট্রিক,পঞ্চায়েতের জল,ছোট বড় অজস্র দোকান।কিন্তু কয়েক বছর আগেও এটা জিনিয়ার কাছে অজপাড়াগাঁ ছিলো।সময়ের সাথে সাথে নানান ঝক্কি ঝামেলা,মান-অভিমান সবকিছু পিছনে ফেলে এই অজপাড়াগাঁ ই জিনিয়ার কাছে এখন খোদ কলকাতা শহর থেকেও বেশি প্রিয় হয়ে উঠেছে।
ধনী পরিবারের বাবা,মায়ের একমাত্র সন্তান জিনিয়া।আহামরি সুন্দরী না হলেও কেউ তাকে কুৎসিত বলবেনা।ভীষন আদুরে,একগুঁয়ে আর জেদী।যখন যা চেয়েছে তখনই তাই পাওয়াতে হয়তো তাকে একগুঁয়ে আর জেদীতে পরিণত করেছে।কোচিং সেন্টারে যাতায়াতের পথে পরিচয় অর্পণের সাথে।তখন জিনিয়া সবে দ্বাদশ শ্রেণীতে উঠেছে। অর্পণের চেহারা পুরো নায়কোচিত।তাকে দেখলে মনেহয় বিশাল বড়লোক ঘরের ধনীর দুলাল।অর্পণ তাকে জানায় সে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।জিনিয়া অর্পণের প্রেমে পড়ে যায়।শুরু হয় কোচিং ক্লাসের নাম করে অর্পণের বাইকে করে ঘোরাঘুরি।জিনিয়া অর্পণদের বাড়ি যেতে চায়।আজকাল করে অর্পণ বিষয়টা এড়িয়েই চলে।দিনের পর দিন স্কুল ও কোচিং ক্লাস কামাই করে অর্পণের সাথে ঘুরতে থাকার ফলস্বরূপ জিনিয়া দ্বাদশশ্রেণীর টেষ্ট পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনা।বাবা,মা বাড়িতে এই নিয়ে প্রচণ্ড অশান্তি শুরু করেন।অর্পণকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বারবার চাপ দিতে থাকায় অর্পণ একদিন বাধ্য হয়ে তাকে নিয়ে একটি ঝাঁ চকচকে তিনতলা বাড়ি দেখিয়ে বলে এটা তাদের বাড়ি।কিন্তু ভিতরে নিয়ে যেতে না পারার কারন হিসাবে জানায় বাড়িতে মা,বাবা বোন কেউ নেই।অন্য একদিন তাকে নিয়ে আসবে।সরল বিশ্বাসে জিনিয়া মেনে নেয়।
জিনিয়ার মায়ের সন্দেহ হয় মেয়ের আচার আচরণ আর বাড়িতে থাকলেই সর্বক্ষণ কানে ফোন গুঁজে ঘুরে বেড়ানো দেখে।তিনি বুঝতে পারেন মেয়ে কোন ভুলের মধ্যে পা দিয়েছে।একদিন তিনি জিনিয়াকে চেপে ধরেন।বহু বাক বিতন্ডা, ঝগড়াঝাটির পর জিনিয়া স্বীকার করে অর্পণ নামে একটি ছেলেকে সে ভালাবাসে।জিনিয়ার মা বুদ্ধিমতী মহিলা।মাথা ঠান্ডা রেখে অর্পণ সম্পর্কে তিনি মেয়ের কাছ থেকে সব খোঁজখবর নেন।তিনি মেয়েকে জানান,
--আমি কাল অর্পণদের বাড়িতে গিয়ে কথা বলবো।কিন্তু তোকেও কথা দিতে হবে আমি তার সম্পর্কে সবকিছু না জানা পর্যন্ত তুই বাড়ি থেকে বেরোবি না।কেন জানিনা আমার মনে হচ্ছে অর্পণ যা তোকে জানিয়েছে তা সত্যি নয়।তোর বাবা যেন এসব কোনকথা না জানেন।এসব জানতে পারলে তিনি খুব কষ্ট পাবেন।তুই আমাদের একটি মাত্র সন্তান।কোনদিন তোকে আমরা কোন কষ্ট দিইনি।যখনই যা চেয়েছিস তখনই তাই দিয়েছি।এখন তোর বয়স সতের।তোকেও পড়াশুনা করতে হবে আবার অর্পণকেও ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে একটা চাকরী জোগাড় করতে হবে।আবেগের বশে জীবনটাকে তো নষ্ট করা যায়না।আগে মানুষ হ তারপর নাহয় ওই ছেলের সাথেই তোকে বিয়ে দেবো।
চুপ করে জিনিয়া ওর মায়ের কথাগুলো শোনে।তারপর আস্তে আস্তে বলে,
--মা ও খুব ভালো ছেলে আমায় খুব ভালাবাসে।
--আমাকে একটু সময় দাও।আমি একটু খোঁজখবর আনি।
পরদিন স্বামীকে না জানিয়ে বিশেষ কাজ আছে বলে কলেজ জীবনের বন্ধু ইন্সপেক্টর রোহিত পালের সাথে মিসেস চৌধুরী দেখা করেন।সবকিছু তাকে খুলে বলেন মিসেস চৌধুরী।কিছুদিন ধরেই খবরের কাগজ খুললেই মেয়ে পাচার চক্রের খবর দেখা যাচ্ছে।পুলিশ প্রশাসনের কাল ঘাম ছুট যাচ্ছে তাদের হদিস পেতে।এখনও কোন ক্লু তারা পাননি।মেয়ের মুখ থেকে সব কথা যখন জানতে পারেন তখন একটা কথাতে তার খটকা লাগে,'বারবার বলা স্বর্তেও অর্পণ আমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়না।বাইরে থেকে বাড়িটা দেখায়'।
ইন্সপেক্টর রোহিত একজন কনস্টেবল সাথে দেন তার কলেজ জীবনের বন্ধু লীলার সাথে।রোহিত কথা দেন প্রাথমিকভাবে লীলা সব খবর আনুক বাকিটা তিনি দেখছেন।
মিসেস চৌধুরী কনস্টেবলকে বাইরে রেখে মেয়ের বলা অনুযায়ী তিনতলা বাড়ির মালিক দ্বৈপায়ন সেনের বাড়ি সটান উঠে যান।সেখানে গিয়ে জানতে পারেন অর্পণ নামে তাদের কোন সন্তান নেই।মিসেস চৌধুরী বুঝতে পারেন তিনি যা সন্ধেহ করেছিলেন সেটাই ঠিক আর এইটুকুই তার কাছে যথেষ্ঠ ছিলো। তিনি নেমে আসেন।ইতিমধ্যে কনস্টেবল দু একজনের কাছ থেকে অর্পণ নামে একটি ছেলের বাড়ির সন্ধান পান তবে সেটা বস্তিতে।কয়েক মাস হল মা ও বোনকে সাথে নিয়ে এখানে আছে।তবে ছেলেটির সাথে দেখা হয়না।ছেলেটি যাতে ওইদিনই থানায় দেখা করে সে কথা তার মা বোনকে কনস্টেবল জানিয়ে আসে।
মিসেস চৌধুরী থানা হয়ে বাড়িতে ফিরে মেয়েকে কোথাও দেখতে পাননা।দারোয়ানের কাছ থেকে জানতে পারেন একটি ছেলে বাড়ির বাইরে রাস্তার ওপারে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো দিদিমনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে তার বাইকে করে উঠে চলে যায়।কিংকর্তব্যবিমূঢ় মিসেস চৌধুরী বুঝতে পারেন তার মেয়ের জীবনে কি অশনিসঙ্কেত নেমে এসেছে।একমুহূর্ত সময় নষ্ট না করে স্বামীকে অফিসে ফোন করে থানায় আসতে বলেন।
জিনিয়া নিখোঁজ।ফোনের সুইচ ওফ।পুলিশ বিকেলের মধ্যে অর্পণের বাসস্থান বস্তি রেট করে।ততক্ষণে তার ঘরে তালা পড়ে গেছে।অনুসন্ধান করে তারা যেটুকু জানতে পারে মাস ছয়েক আগে অর্পণ তার বোন ও মাকে সঙ্গে করে বস্তিতে এসে ওঠে।ভাড়া নিয়ে কখনোই কোন গন্ডগোল করেনি।সারাদিন সে একটা বাইকে করে ঘুরে বেড়াত।অনেক রাতে ঘরে ফিরতো।মা,বোন ঘরেই থাকতো।কারও সাথে খুব একটা কথাবার্তা বলতোনা।বাইকটা খুব দামী ছিলো।জিজ্ঞেস করাতে বলেছিলো একটা ওষুধের কোম্পানীতে চাকরী করে সেখান থেকে লোন নিয়ে এটা কিনেছে।
শুরু হোল থানা,পুলিশ আর প্রতি মুহূর্তে ফোন।জিনিয়ার বাবা খুবই শান্ত স্বভাবের মানুষ।একটুতেই নার্ভাস হয়ে যান।এই ঘটনার পর তিনি আরও চুপচাপ হয়ে যান।মিসেস চৌধুরী একাই ছুটোছুটি করতে থাকেন।নানান সোর্স জোগাড় করে তিনি পুলিশের উপর মহল পর্যন্ত পৌঁছে যান।প্রশাসন নড়েচড়ে বসে।দশদিনের মাথায় মিসেস চৌধুরীর মোবাইলে একটি ফোন আসে, 'যদি মেয়েকে বাঁচিয়ে রাখতে চান থানা পুলিশ করবেননা'।মিসেস চৌধুরী তৎক্ষণাৎ থানায় যোগাযোগ করেন।ওই ফোনের সূত্র ধরে পুলিশ জানতে পারে দুর্গাপুরের 'অম্বোরীশ' হোটেল থেকে ফোন এসছে।সেখানকার পুলিশের সাহায্য নিয়ে সাদা পোশাকের কিছু মহিলা পুলিশ ওই হোটেলে গিয়ে ওঠেন।আর বাইরে থাকে সাদা পোশাকে অন্য পুলিশেরা।হোটেলে মালিককে পুরো বিষয়টা জানানো হয়।তিনি আশ্বাস দেন সর্বরকম সাহায্য তিনি পুলিশকে করবেন।
প্রতিটা রুমেই ভীষনভাবে কড়া নজরদারি রাখা হয়।কোন রুমে বাইরে থেকে তালা দেওয়া দেখলেই ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে হোটেল মালিকের সাহায্যে সে রুমে ঢুকে তল্লাশি চালানো হয়।দুদিন এভাবেই কাটে।তৃতীয়দিন সন্ধ্যাবেলায় একজন অসুস্থ্য একটি মেয়েকে নিয়ে তড়িঘড়ি হোটেল থেকে ডাক্তারখানার উদ্দেশে হোটেল ছেড়ে বেরোতে গেলে সাদা পোশাকের মহিলা পুলিশেরা এসে জানতে চান কি হয়েছে?লোকটি তাদের জানায় তিনি একাই সামলে নিতে পারবেন।ততক্ষণে সেখানে বাইরের সাদা পোশাকের পুলিশও হাজির।মেয়েটির মুখের সাথে তাদের পকেটে থাকা জিনিয়ার ছবির মিল পেয়ে লোকটিকে তারা অ্যারেস্ট করেন।জিনিয়া তখন ঠক ঠক করে কাঁপছে।পুলিশবাহিনী তাকে আশ্বস্ত করে যে তার কোন ভয় নেই।বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়ি তখনই স্টার্ট দেয়।ভিতরে চার,পাঁচজন বসা।পুলিশের তৎপরতায় তারাও ধরা পড়ে।
প্রশাসনের কর্মদক্ষতার কারনে তারা জিনিয়া সহ আরও যে তিনজন মেয়েকে একই ফাঁদে ফেলে অপহরণ করেছিলো তাদের কাউকেই ভিনরাজ্যে পাচার করতে পারেনি।দুটি হোটেল মিলিয়ে তারা এই চারটি মেয়েকে রেখেছিলো।তাদের বলে রেখেছিলো যদি তারা মুখ খোলে সঙ্গে সঙ্গেই তাদের মেরে ফেলবে।অল্পবয়সী মেয়েগুলো ভয় পেয়ে চুপসে গেছিলো।ধরা পড়ে পাচার চক্রের মূল পান্ডা যাকে অর্পণ তার মা বলে পরিচয় দিয়েছিলো।অর্পণের মত এরূপ অল্পবয়সী সুন্দর দেখতে গরীবঘরের ছেলেগুলোকে পয়সার লোভ দেখিয়ে এই কাজে লাগায় অসীমা দলুই।
জিনিয়াকে একরাত থানায় কাটাতে হয় যদিও মেয়ের বয়স কম বলে উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসারের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি এনে জিনিয়ার মা মেয়ের সাথে থানাতেই থাকেন।পরদিন অনেক হ্যাপা সামলে মেয়েকে নিয়ে মিসেস চৌধুরী বাড়িতে ফেরেন।
অপহরণের কুড়িদিনের মাথায় মেয়ে বাড়ি ফিরে আসে।শারীরিক ও মানষিক নানান নির্যাতনের পর জিনিয়া একেবারেই চুপচাপ হয়ে যায়।তার বাবা,মা এতটাই স্বাভাবিক যেন কিছুই হয়নি।জিনিয়ার বাবা বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র যেতে চাইলেও তার মা জিদ ধরে ওই বাড়ি বিক্রি করতে দেননি।তিনি বলেন,
---কয়েক বছর পর এসব আর কেউ মনেও রাখবে না।এতো কষ্ট করে এ বাড়ি করেছি আমি কিছুতেই তা বিক্রি করতে দেবোনা।ওর কপালে যা ছিলো সেটাই হয়েছে।বাঁচবো মাথা উঁচু করে।ভবিষ্যৎ এ আর কখনো ভুলের মধ্যে ও পা দেবেনা।আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু জিনিয়া প্রচণ্ড ভেঙ্গে পড়ে।সে একবার আত্মহত্যা করারও চেষ্টা করে।কিন্তু ওর মা সর্বদা ওর পাশে থেকে ওকে বুঝিয়ে স্বাভাবিক জীবনে আনতে সফল হন।পরের বছর উচ্চমধ্যমিক পরীক্ষাটা ও প্রাইভেটে দেয়।ভালোভাবেই পাশ করে। কলেজে ভর্তি হয়।গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে।
পরিবারিক এক বিয়ের অনুষ্ঠানে মা,বাবার সাথে জিনিয়া শিলিগুড়ি যায়।সেখানে তাকে দেখে এক ভদ্রমহিলা তার ব্যাঙ্কে চাকুরীরত ছেলের জন্য পছন্দ করেন।জিনিয়ার মা রাজি হন।কিন্তু বাবা বেঁকে বসেন।তিনি ছেলের বাড়িতে সবকিছু জানাতে বলেন। কিন্তু জিনিয়ার মা কিছুতেই স্বামীর কথায় রাজি হননা।
--এই যে তোমার ভাইপোর বিয়ে হল ওই মেয়েটির অতীত কি আছে তা কি আমরা কেউ জানি?অতীতে কি ঘটেছে সেটা জেনে তা ধুয়ে কি ওরা জল খাবে?
--কিন্তু তবুও এতোবড় ঘটনা লুকিয়ে বিয়ে দেওয়া ঠিক হবেনা।পরে যদি জানতে পারে তাহলে ওর সাজানো সংসারটা ভেঙ্গেচুরে তছনছ হয়ে যাবে।
--যদি কখনও এ সমস্যা আসে তখনকার কথা তখনই ভাবা যাবে।আমরা জিনিকে শিলিগুড়ি নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেবো।সারাজীবন সংসার নিয়ে তুমি মাথা ঘামাওনি আজও তোমায় বলছি তোমার এই ভালো মানুষের স্বভাবের দাম কেউ দেবেনা।আমাদের যা অর্থ সম্পত্তি তা ওই মেয়েই পাবে।টাকা আর সম্পত্তিতে সবকিছু চাপা পরে যাবে।সে এখানে বছরে হয়তো একবার আসবে।কোন অসুবিধা হবেনা দেখো।বিয়ের আগে অনেক মেয়ের জীবনেই অনেককিছু ঘটে থাকে।বিয়ের সময় সব কি তার বাপের বাড়ির লোকজন ছেলের বাড়িতে জানায়?একটা সত্যি ঘটনা লুকিয়ে গেলে যদি আমার মেয়ে সুখি হয় তাহলে মা হয়ে আমি সেটা করতেই পারি।সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আমার এই অন্যায় কাজকে ঈশ্বর ক্ষমা করে দেবেন। তুমি শুধু মুখটা বন্ধ রেখো।
জিনিয়ার বিয়ে হয়ে গেলো শিলিগুড়ি জেঠুর বাড়ি থেকে।কলকাতা শহরের মেয়ে বিয়ে হল বলতে গেলে একটু গ্রামেই।নামেই অবশ্য গ্রাম।শহরের মত সর্বসুবিধাযুক্ত।প্রচুর জমিজমা,পুকুর, দু দুখানা গাড়ি।প্রথম প্রথম অতো বড় বাড়ি আর সন্ধ্যা নামলেই বাড়ির আম,কাঁঠালের বাগানের দিকে তাকালে অন্ধকারে জিনিয়ার বুকটা ভয়ে কেঁপে উঠতো।এখন অবশ্য সেই ভয় আর ওর করেনা।দিনের বেলা চারিদিকের সবুজের সমারোহে তার মনপ্রাণ জুড়িয়ে যায়। পাকা সিমেন্ট করা বিশাল বড় উঠোনে জমজ দুই মেয়েকে নিয়ে বিকাল থেকে বসে থাকা ওদের বাবা না ফেরা পর্যন্ত।একটা সত্যি ঘটনাকে চেপে এই জীবন কাটাতে গিয়ে মাঝে মাঝেই জিনিয়া হাফিঁয়ে ওঠে।অন্ধকার ঘরে বসে কখনো সখনো চোখের জল ফেলে নিজের কষ্টকে লাঘব করতে চায়।আজকে তার সুখের জীবনে ওই অভিশপ্ত অতীত মাঝে মাঝেই সামনে এসে দাঁড়ায়।ভয় পায় সে।মনেমনে ভাবে তার স্বামীকে সে ঠকাচ্ছে।কিন্তু কিছুতেই পারেনা তার সেই কালো অতীতকে সামনে আনতে।হয়তো কোনদিনও পারবেওনা।
#সত্য_ঘটনার_উপর_আধারিত
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী
জিনিয়ার শ্বশুরবাড়ি বলতে গেলে গ্রামেই।বড় বড় শহরের কাছেপিঠের গ্রামগুলোকে আজকের দিনে ঠিক গ্রাম বলা যায়না।এখন সর্বত্রই পাকা রাস্তা,ইলেকট্রিক,পঞ্চায়েতের জল,ছোট বড় অজস্র দোকান।কিন্তু কয়েক বছর আগেও এটা জিনিয়ার কাছে অজপাড়াগাঁ ছিলো।সময়ের সাথে সাথে নানান ঝক্কি ঝামেলা,মান-অভিমান সবকিছু পিছনে ফেলে এই অজপাড়াগাঁ ই জিনিয়ার কাছে এখন খোদ কলকাতা শহর থেকেও বেশি প্রিয় হয়ে উঠেছে।
ধনী পরিবারের বাবা,মায়ের একমাত্র সন্তান জিনিয়া।আহামরি সুন্দরী না হলেও কেউ তাকে কুৎসিত বলবেনা।ভীষন আদুরে,একগুঁয়ে আর জেদী।যখন যা চেয়েছে তখনই তাই পাওয়াতে হয়তো তাকে একগুঁয়ে আর জেদীতে পরিণত করেছে।কোচিং সেন্টারে যাতায়াতের পথে পরিচয় অর্পণের সাথে।তখন জিনিয়া সবে দ্বাদশ শ্রেণীতে উঠেছে। অর্পণের চেহারা পুরো নায়কোচিত।তাকে দেখলে মনেহয় বিশাল বড়লোক ঘরের ধনীর দুলাল।অর্পণ তাকে জানায় সে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।জিনিয়া অর্পণের প্রেমে পড়ে যায়।শুরু হয় কোচিং ক্লাসের নাম করে অর্পণের বাইকে করে ঘোরাঘুরি।জিনিয়া অর্পণদের বাড়ি যেতে চায়।আজকাল করে অর্পণ বিষয়টা এড়িয়েই চলে।দিনের পর দিন স্কুল ও কোচিং ক্লাস কামাই করে অর্পণের সাথে ঘুরতে থাকার ফলস্বরূপ জিনিয়া দ্বাদশশ্রেণীর টেষ্ট পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনা।বাবা,মা বাড়িতে এই নিয়ে প্রচণ্ড অশান্তি শুরু করেন।অর্পণকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বারবার চাপ দিতে থাকায় অর্পণ একদিন বাধ্য হয়ে তাকে নিয়ে একটি ঝাঁ চকচকে তিনতলা বাড়ি দেখিয়ে বলে এটা তাদের বাড়ি।কিন্তু ভিতরে নিয়ে যেতে না পারার কারন হিসাবে জানায় বাড়িতে মা,বাবা বোন কেউ নেই।অন্য একদিন তাকে নিয়ে আসবে।সরল বিশ্বাসে জিনিয়া মেনে নেয়।
জিনিয়ার মায়ের সন্দেহ হয় মেয়ের আচার আচরণ আর বাড়িতে থাকলেই সর্বক্ষণ কানে ফোন গুঁজে ঘুরে বেড়ানো দেখে।তিনি বুঝতে পারেন মেয়ে কোন ভুলের মধ্যে পা দিয়েছে।একদিন তিনি জিনিয়াকে চেপে ধরেন।বহু বাক বিতন্ডা, ঝগড়াঝাটির পর জিনিয়া স্বীকার করে অর্পণ নামে একটি ছেলেকে সে ভালাবাসে।জিনিয়ার মা বুদ্ধিমতী মহিলা।মাথা ঠান্ডা রেখে অর্পণ সম্পর্কে তিনি মেয়ের কাছ থেকে সব খোঁজখবর নেন।তিনি মেয়েকে জানান,
--আমি কাল অর্পণদের বাড়িতে গিয়ে কথা বলবো।কিন্তু তোকেও কথা দিতে হবে আমি তার সম্পর্কে সবকিছু না জানা পর্যন্ত তুই বাড়ি থেকে বেরোবি না।কেন জানিনা আমার মনে হচ্ছে অর্পণ যা তোকে জানিয়েছে তা সত্যি নয়।তোর বাবা যেন এসব কোনকথা না জানেন।এসব জানতে পারলে তিনি খুব কষ্ট পাবেন।তুই আমাদের একটি মাত্র সন্তান।কোনদিন তোকে আমরা কোন কষ্ট দিইনি।যখনই যা চেয়েছিস তখনই তাই দিয়েছি।এখন তোর বয়স সতের।তোকেও পড়াশুনা করতে হবে আবার অর্পণকেও ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে একটা চাকরী জোগাড় করতে হবে।আবেগের বশে জীবনটাকে তো নষ্ট করা যায়না।আগে মানুষ হ তারপর নাহয় ওই ছেলের সাথেই তোকে বিয়ে দেবো।
চুপ করে জিনিয়া ওর মায়ের কথাগুলো শোনে।তারপর আস্তে আস্তে বলে,
--মা ও খুব ভালো ছেলে আমায় খুব ভালাবাসে।
--আমাকে একটু সময় দাও।আমি একটু খোঁজখবর আনি।
পরদিন স্বামীকে না জানিয়ে বিশেষ কাজ আছে বলে কলেজ জীবনের বন্ধু ইন্সপেক্টর রোহিত পালের সাথে মিসেস চৌধুরী দেখা করেন।সবকিছু তাকে খুলে বলেন মিসেস চৌধুরী।কিছুদিন ধরেই খবরের কাগজ খুললেই মেয়ে পাচার চক্রের খবর দেখা যাচ্ছে।পুলিশ প্রশাসনের কাল ঘাম ছুট যাচ্ছে তাদের হদিস পেতে।এখনও কোন ক্লু তারা পাননি।মেয়ের মুখ থেকে সব কথা যখন জানতে পারেন তখন একটা কথাতে তার খটকা লাগে,'বারবার বলা স্বর্তেও অর্পণ আমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়না।বাইরে থেকে বাড়িটা দেখায়'।
ইন্সপেক্টর রোহিত একজন কনস্টেবল সাথে দেন তার কলেজ জীবনের বন্ধু লীলার সাথে।রোহিত কথা দেন প্রাথমিকভাবে লীলা সব খবর আনুক বাকিটা তিনি দেখছেন।
মিসেস চৌধুরী কনস্টেবলকে বাইরে রেখে মেয়ের বলা অনুযায়ী তিনতলা বাড়ির মালিক দ্বৈপায়ন সেনের বাড়ি সটান উঠে যান।সেখানে গিয়ে জানতে পারেন অর্পণ নামে তাদের কোন সন্তান নেই।মিসেস চৌধুরী বুঝতে পারেন তিনি যা সন্ধেহ করেছিলেন সেটাই ঠিক আর এইটুকুই তার কাছে যথেষ্ঠ ছিলো। তিনি নেমে আসেন।ইতিমধ্যে কনস্টেবল দু একজনের কাছ থেকে অর্পণ নামে একটি ছেলের বাড়ির সন্ধান পান তবে সেটা বস্তিতে।কয়েক মাস হল মা ও বোনকে সাথে নিয়ে এখানে আছে।তবে ছেলেটির সাথে দেখা হয়না।ছেলেটি যাতে ওইদিনই থানায় দেখা করে সে কথা তার মা বোনকে কনস্টেবল জানিয়ে আসে।
মিসেস চৌধুরী থানা হয়ে বাড়িতে ফিরে মেয়েকে কোথাও দেখতে পাননা।দারোয়ানের কাছ থেকে জানতে পারেন একটি ছেলে বাড়ির বাইরে রাস্তার ওপারে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো দিদিমনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে তার বাইকে করে উঠে চলে যায়।কিংকর্তব্যবিমূঢ় মিসেস চৌধুরী বুঝতে পারেন তার মেয়ের জীবনে কি অশনিসঙ্কেত নেমে এসেছে।একমুহূর্ত সময় নষ্ট না করে স্বামীকে অফিসে ফোন করে থানায় আসতে বলেন।
জিনিয়া নিখোঁজ।ফোনের সুইচ ওফ।পুলিশ বিকেলের মধ্যে অর্পণের বাসস্থান বস্তি রেট করে।ততক্ষণে তার ঘরে তালা পড়ে গেছে।অনুসন্ধান করে তারা যেটুকু জানতে পারে মাস ছয়েক আগে অর্পণ তার বোন ও মাকে সঙ্গে করে বস্তিতে এসে ওঠে।ভাড়া নিয়ে কখনোই কোন গন্ডগোল করেনি।সারাদিন সে একটা বাইকে করে ঘুরে বেড়াত।অনেক রাতে ঘরে ফিরতো।মা,বোন ঘরেই থাকতো।কারও সাথে খুব একটা কথাবার্তা বলতোনা।বাইকটা খুব দামী ছিলো।জিজ্ঞেস করাতে বলেছিলো একটা ওষুধের কোম্পানীতে চাকরী করে সেখান থেকে লোন নিয়ে এটা কিনেছে।
শুরু হোল থানা,পুলিশ আর প্রতি মুহূর্তে ফোন।জিনিয়ার বাবা খুবই শান্ত স্বভাবের মানুষ।একটুতেই নার্ভাস হয়ে যান।এই ঘটনার পর তিনি আরও চুপচাপ হয়ে যান।মিসেস চৌধুরী একাই ছুটোছুটি করতে থাকেন।নানান সোর্স জোগাড় করে তিনি পুলিশের উপর মহল পর্যন্ত পৌঁছে যান।প্রশাসন নড়েচড়ে বসে।দশদিনের মাথায় মিসেস চৌধুরীর মোবাইলে একটি ফোন আসে, 'যদি মেয়েকে বাঁচিয়ে রাখতে চান থানা পুলিশ করবেননা'।মিসেস চৌধুরী তৎক্ষণাৎ থানায় যোগাযোগ করেন।ওই ফোনের সূত্র ধরে পুলিশ জানতে পারে দুর্গাপুরের 'অম্বোরীশ' হোটেল থেকে ফোন এসছে।সেখানকার পুলিশের সাহায্য নিয়ে সাদা পোশাকের কিছু মহিলা পুলিশ ওই হোটেলে গিয়ে ওঠেন।আর বাইরে থাকে সাদা পোশাকে অন্য পুলিশেরা।হোটেলে মালিককে পুরো বিষয়টা জানানো হয়।তিনি আশ্বাস দেন সর্বরকম সাহায্য তিনি পুলিশকে করবেন।
প্রতিটা রুমেই ভীষনভাবে কড়া নজরদারি রাখা হয়।কোন রুমে বাইরে থেকে তালা দেওয়া দেখলেই ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে হোটেল মালিকের সাহায্যে সে রুমে ঢুকে তল্লাশি চালানো হয়।দুদিন এভাবেই কাটে।তৃতীয়দিন সন্ধ্যাবেলায় একজন অসুস্থ্য একটি মেয়েকে নিয়ে তড়িঘড়ি হোটেল থেকে ডাক্তারখানার উদ্দেশে হোটেল ছেড়ে বেরোতে গেলে সাদা পোশাকের মহিলা পুলিশেরা এসে জানতে চান কি হয়েছে?লোকটি তাদের জানায় তিনি একাই সামলে নিতে পারবেন।ততক্ষণে সেখানে বাইরের সাদা পোশাকের পুলিশও হাজির।মেয়েটির মুখের সাথে তাদের পকেটে থাকা জিনিয়ার ছবির মিল পেয়ে লোকটিকে তারা অ্যারেস্ট করেন।জিনিয়া তখন ঠক ঠক করে কাঁপছে।পুলিশবাহিনী তাকে আশ্বস্ত করে যে তার কোন ভয় নেই।বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়ি তখনই স্টার্ট দেয়।ভিতরে চার,পাঁচজন বসা।পুলিশের তৎপরতায় তারাও ধরা পড়ে।
প্রশাসনের কর্মদক্ষতার কারনে তারা জিনিয়া সহ আরও যে তিনজন মেয়েকে একই ফাঁদে ফেলে অপহরণ করেছিলো তাদের কাউকেই ভিনরাজ্যে পাচার করতে পারেনি।দুটি হোটেল মিলিয়ে তারা এই চারটি মেয়েকে রেখেছিলো।তাদের বলে রেখেছিলো যদি তারা মুখ খোলে সঙ্গে সঙ্গেই তাদের মেরে ফেলবে।অল্পবয়সী মেয়েগুলো ভয় পেয়ে চুপসে গেছিলো।ধরা পড়ে পাচার চক্রের মূল পান্ডা যাকে অর্পণ তার মা বলে পরিচয় দিয়েছিলো।অর্পণের মত এরূপ অল্পবয়সী সুন্দর দেখতে গরীবঘরের ছেলেগুলোকে পয়সার লোভ দেখিয়ে এই কাজে লাগায় অসীমা দলুই।
জিনিয়াকে একরাত থানায় কাটাতে হয় যদিও মেয়ের বয়স কম বলে উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসারের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি এনে জিনিয়ার মা মেয়ের সাথে থানাতেই থাকেন।পরদিন অনেক হ্যাপা সামলে মেয়েকে নিয়ে মিসেস চৌধুরী বাড়িতে ফেরেন।
অপহরণের কুড়িদিনের মাথায় মেয়ে বাড়ি ফিরে আসে।শারীরিক ও মানষিক নানান নির্যাতনের পর জিনিয়া একেবারেই চুপচাপ হয়ে যায়।তার বাবা,মা এতটাই স্বাভাবিক যেন কিছুই হয়নি।জিনিয়ার বাবা বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র যেতে চাইলেও তার মা জিদ ধরে ওই বাড়ি বিক্রি করতে দেননি।তিনি বলেন,
---কয়েক বছর পর এসব আর কেউ মনেও রাখবে না।এতো কষ্ট করে এ বাড়ি করেছি আমি কিছুতেই তা বিক্রি করতে দেবোনা।ওর কপালে যা ছিলো সেটাই হয়েছে।বাঁচবো মাথা উঁচু করে।ভবিষ্যৎ এ আর কখনো ভুলের মধ্যে ও পা দেবেনা।আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু জিনিয়া প্রচণ্ড ভেঙ্গে পড়ে।সে একবার আত্মহত্যা করারও চেষ্টা করে।কিন্তু ওর মা সর্বদা ওর পাশে থেকে ওকে বুঝিয়ে স্বাভাবিক জীবনে আনতে সফল হন।পরের বছর উচ্চমধ্যমিক পরীক্ষাটা ও প্রাইভেটে দেয়।ভালোভাবেই পাশ করে। কলেজে ভর্তি হয়।গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে।
পরিবারিক এক বিয়ের অনুষ্ঠানে মা,বাবার সাথে জিনিয়া শিলিগুড়ি যায়।সেখানে তাকে দেখে এক ভদ্রমহিলা তার ব্যাঙ্কে চাকুরীরত ছেলের জন্য পছন্দ করেন।জিনিয়ার মা রাজি হন।কিন্তু বাবা বেঁকে বসেন।তিনি ছেলের বাড়িতে সবকিছু জানাতে বলেন। কিন্তু জিনিয়ার মা কিছুতেই স্বামীর কথায় রাজি হননা।
--এই যে তোমার ভাইপোর বিয়ে হল ওই মেয়েটির অতীত কি আছে তা কি আমরা কেউ জানি?অতীতে কি ঘটেছে সেটা জেনে তা ধুয়ে কি ওরা জল খাবে?
--কিন্তু তবুও এতোবড় ঘটনা লুকিয়ে বিয়ে দেওয়া ঠিক হবেনা।পরে যদি জানতে পারে তাহলে ওর সাজানো সংসারটা ভেঙ্গেচুরে তছনছ হয়ে যাবে।
--যদি কখনও এ সমস্যা আসে তখনকার কথা তখনই ভাবা যাবে।আমরা জিনিকে শিলিগুড়ি নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেবো।সারাজীবন সংসার নিয়ে তুমি মাথা ঘামাওনি আজও তোমায় বলছি তোমার এই ভালো মানুষের স্বভাবের দাম কেউ দেবেনা।আমাদের যা অর্থ সম্পত্তি তা ওই মেয়েই পাবে।টাকা আর সম্পত্তিতে সবকিছু চাপা পরে যাবে।সে এখানে বছরে হয়তো একবার আসবে।কোন অসুবিধা হবেনা দেখো।বিয়ের আগে অনেক মেয়ের জীবনেই অনেককিছু ঘটে থাকে।বিয়ের সময় সব কি তার বাপের বাড়ির লোকজন ছেলের বাড়িতে জানায়?একটা সত্যি ঘটনা লুকিয়ে গেলে যদি আমার মেয়ে সুখি হয় তাহলে মা হয়ে আমি সেটা করতেই পারি।সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আমার এই অন্যায় কাজকে ঈশ্বর ক্ষমা করে দেবেন। তুমি শুধু মুখটা বন্ধ রেখো।
জিনিয়ার বিয়ে হয়ে গেলো শিলিগুড়ি জেঠুর বাড়ি থেকে।কলকাতা শহরের মেয়ে বিয়ে হল বলতে গেলে একটু গ্রামেই।নামেই অবশ্য গ্রাম।শহরের মত সর্বসুবিধাযুক্ত।প্রচুর জমিজমা,পুকুর, দু দুখানা গাড়ি।প্রথম প্রথম অতো বড় বাড়ি আর সন্ধ্যা নামলেই বাড়ির আম,কাঁঠালের বাগানের দিকে তাকালে অন্ধকারে জিনিয়ার বুকটা ভয়ে কেঁপে উঠতো।এখন অবশ্য সেই ভয় আর ওর করেনা।দিনের বেলা চারিদিকের সবুজের সমারোহে তার মনপ্রাণ জুড়িয়ে যায়। পাকা সিমেন্ট করা বিশাল বড় উঠোনে জমজ দুই মেয়েকে নিয়ে বিকাল থেকে বসে থাকা ওদের বাবা না ফেরা পর্যন্ত।একটা সত্যি ঘটনাকে চেপে এই জীবন কাটাতে গিয়ে মাঝে মাঝেই জিনিয়া হাফিঁয়ে ওঠে।অন্ধকার ঘরে বসে কখনো সখনো চোখের জল ফেলে নিজের কষ্টকে লাঘব করতে চায়।আজকে তার সুখের জীবনে ওই অভিশপ্ত অতীত মাঝে মাঝেই সামনে এসে দাঁড়ায়।ভয় পায় সে।মনেমনে ভাবে তার স্বামীকে সে ঠকাচ্ছে।কিন্তু কিছুতেই পারেনা তার সেই কালো অতীতকে সামনে আনতে।হয়তো কোনদিনও পারবেওনা।
#সত্য_ঘটনার_উপর_আধারিত
No comments:
Post a Comment