Sunday, February 24, 2019



কি করে সম্ভব

নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

     আজ খুব মনে পড়ছে সন্দীপের কথা।দু'যুগেরও বেশি হয়ে গেলো সন্দীপের সাথে কোন যোগাযোগ নেই।অথচ একই শহরেই দুজনের বাস।সন্দীপের খুঁটিনাটি সকল কথায় কৃতিকার জানা।হবেই না বা কেন!এতো বড় একজন শিল্পী সে।তার খবর জানার জন্য গোটা দেশ মুখিয়ে থাকে।এই গানের জন্যই সে অতো ভালো মাইনের চাকরীটা ছাড়তেও দ্বিধাবোধ করেনি।মন থেকে মেনে নিতে না পারলেও কৃতিকা সেদিন তার কাছে সেটা প্রকাশ করেনি।শুধু বলেছিলো,
---তুমি তোমার জীবনের স্বপ্ন পূরণ করো আমি অপেক্ষায় থাকবো।
    না শেষ পর্যন্ত কৃতিকার বাড়ির লোক তাকে অপেক্ষায় থাকতে দেয়নি।রাশভারী বাবা জানিয়ে দিয়েছিলেন বিয়েতে মত না দিলে সে যেন তার পথ দেখে নেয়।কৃতিকা ছুটে গেছিলো সন্দীপের কাছে।কিন্তু মেসে তার দেখা পায়নি।গিয়ে জানতে পেরেছিলো সন্দীপ গানের শো এর জন্য কিছুদিনের জন্য বাইরে গেছে।মোবাইলের এতো রমরমা তখন ছিলোনা।যোগাযোগ করাও আর সম্ভব হয়নি।বাধ্য মেয়ের মত মনের উপর একটা ভারী পাথর চাপিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলো।
                ত্রিশবছরের বিবাহিত জীবনে দু'সন্তানের মা কৃতিকা।স্বামী তার সদাশিব।কোনদিকে তার খেয়াল নেই, শুধু চাকরীটাই তার একমাত্র কাজ।মাসের শেষে মাইনেটা এনেও কৃতিকার হাতে তুলে দেয় বিধান।কৃতিকার জীবনে তবুও একটা দিক শূন্যই থেকে গেছে যা তাকে গুমরে গুমরে খায়।মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে,ছেলে ডাক্তারী পড়ছে।দু'বছর হোল বিধানও তাকে ছেড়ে চলে গেছে।অফুরন্ত সময় এখন ছেলে কলেজে বেরিয়ে যাওয়ার পর।না কৃতিকা বিধানকে কোনদিনও অবহেলা করেনি।তার সবটুকু দিয়েই তাকে ভালবেসেছিলো।নিজেই মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যায় সন্দীপকে সে আজও ভুলতে পারেনি এখনও তাকে সেই আগের মতই ভালোবাসে।অথচ বিধানকেও সে ভালোবাসতো।একটা মানুষের জীবনে কি করে এটা সম্ভব হয়?কিন্তু কৃতিকার জীবনে এটাই বাস্তব।
   দুপুরে শুয়ে শুয়ে সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ চোখটা একটু লেগে আসে।কলিংবেলের আওয়াজে ঘুমটা ভেঙ্গে যায়।দুপুরে সাধারণত কেউ বাড়িতে আসেনা।কে এলো ভাবতে ভাবতে দরজাটা খুলে কৃতিকা থ হয়ে যায়।
---সন্দীপ তুমি?
---চলে এলাম তোমায় একটু দেখতে।
---এতো বছর বাদে আমার কথা মনে পড়লো?
--- তুমি তো আমার মনেই রয়েছো, নূতন করে আবার কি মনে পড়বে?ভিতরে আসতে বলবেনা?
---হ্যাঁ এসো।তোমার একটুও পরিবর্তন হয়নি সন্দীপ।
--- বহুদিন ধরে ভাবি তোমায় একটু দেখতে আসবো।তা আর হয়না।আজ না আসলে আর দেখা হবেনা।তাই চলে এলাম।
  আচমকা কৃতিকা প্রশ্ন করে বসলো,
---তুমি বিয়ে করনি কেন সন্দীপ?
---তুমি জানো না?আমি তো জীবনে একজনকেই ভালবেসেছি।যে জায়গায় তাকে বসিয়েছিলাম সেই জায়গাটা দিতে পারিনি অন্য কাউকে।
---কিন্তু আমি তো----
 কাঁনায় ভেঙ্গে পরে কৃতিকা।
---তুমি একটা মেয়ে কৃতিকা।আমি যা পেরেছি সেটা তোমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব ছিলোনা।
---তুমি আমার বাড়ির ঠিকানা কি করে জানলে?
   এ কথার কোন উত্তর সন্দীপ দেয়না।
---তুমি বোসো আমি একটু চা করে নিয়ে আসি।
---আজ আর সময় নেই হাতে।আজ আমি আসি।একদম মন খারাপ করবেনা।সন্দীপ উঠে দাঁড়ালো।
---আর একটু বসো।
 সন্দীপ সে কথার উত্তর না দিয়ে চলে যেতে উদ্দোগী হোল।কৃতিকা আবারও তাকে অনুরোধ করলো আর একটু বসে যেতে।কিন্তু সন্দীপ বেরিয়ে গেলো।হঠাৎ করে যেন একটা ঝড় বয়ে গেলো।কৃতিকা কিছুই বুঝতে পারলোনা এতদিন পরে সন্দীপ কেনই বা এলো আর কেনোই বা এতো তাড়াতাড়ি চলে গেলো।
     কৃতিকার ছেলে কলেজ থেকে ফিরে খেতে খেতে একটু টিভি দেখে।আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।টিভি দেখতে দেখতে মা মা বলে  চিৎকার করে ডাকতে লাগলো।কৃতিকা দৌড়ে রান্নাঘর থেকে এসে বললো,
---কি হোল এতো চিৎকার করছিস কেন?
---খবরটা শোন মা।বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী সন্দীপ সেন আজ শো করে ফেরার পথে অ্যাক্সিডেন্ট করে দুপুরে মারা গেছেন।
   কৃতিকা ধপ করে সোফায় বসে পড়লো।একটা কথায় শুধু বললো,
---কি করে সম্ভব এটা?

------------------শেষে-------------------

No comments:

Post a Comment