Thursday, February 28, 2019

ভালোবাসি
     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

তোমার সাথে বেঁধেছিলাম
একটা সুখের ঘর,
ঘরটা শুধু রয়ে গেছে
তুমিই কাছে নাই।
মান-অভিমান অনেক ছিলো
ভালোবাসা আরও বেশি,
ধরেছিলাম সুখের পাখি
তুমিই শুধু দিলে ফাঁকি।
চাওয়া পাওয়ার মাঝে ছিলো
পাওয়ার ভাগটা বেশি,
বুঝতে তুমি পারোনি কি
তোমায় বড্ড ভালোবাসি।

#নন্দা  28-2-19

Sunday, February 24, 2019



কি করে সম্ভব

নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

     আজ খুব মনে পড়ছে সন্দীপের কথা।দু'যুগেরও বেশি হয়ে গেলো সন্দীপের সাথে কোন যোগাযোগ নেই।অথচ একই শহরেই দুজনের বাস।সন্দীপের খুঁটিনাটি সকল কথায় কৃতিকার জানা।হবেই না বা কেন!এতো বড় একজন শিল্পী সে।তার খবর জানার জন্য গোটা দেশ মুখিয়ে থাকে।এই গানের জন্যই সে অতো ভালো মাইনের চাকরীটা ছাড়তেও দ্বিধাবোধ করেনি।মন থেকে মেনে নিতে না পারলেও কৃতিকা সেদিন তার কাছে সেটা প্রকাশ করেনি।শুধু বলেছিলো,
---তুমি তোমার জীবনের স্বপ্ন পূরণ করো আমি অপেক্ষায় থাকবো।
    না শেষ পর্যন্ত কৃতিকার বাড়ির লোক তাকে অপেক্ষায় থাকতে দেয়নি।রাশভারী বাবা জানিয়ে দিয়েছিলেন বিয়েতে মত না দিলে সে যেন তার পথ দেখে নেয়।কৃতিকা ছুটে গেছিলো সন্দীপের কাছে।কিন্তু মেসে তার দেখা পায়নি।গিয়ে জানতে পেরেছিলো সন্দীপ গানের শো এর জন্য কিছুদিনের জন্য বাইরে গেছে।মোবাইলের এতো রমরমা তখন ছিলোনা।যোগাযোগ করাও আর সম্ভব হয়নি।বাধ্য মেয়ের মত মনের উপর একটা ভারী পাথর চাপিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলো।
                ত্রিশবছরের বিবাহিত জীবনে দু'সন্তানের মা কৃতিকা।স্বামী তার সদাশিব।কোনদিকে তার খেয়াল নেই, শুধু চাকরীটাই তার একমাত্র কাজ।মাসের শেষে মাইনেটা এনেও কৃতিকার হাতে তুলে দেয় বিধান।কৃতিকার জীবনে তবুও একটা দিক শূন্যই থেকে গেছে যা তাকে গুমরে গুমরে খায়।মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে,ছেলে ডাক্তারী পড়ছে।দু'বছর হোল বিধানও তাকে ছেড়ে চলে গেছে।অফুরন্ত সময় এখন ছেলে কলেজে বেরিয়ে যাওয়ার পর।না কৃতিকা বিধানকে কোনদিনও অবহেলা করেনি।তার সবটুকু দিয়েই তাকে ভালবেসেছিলো।নিজেই মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যায় সন্দীপকে সে আজও ভুলতে পারেনি এখনও তাকে সেই আগের মতই ভালোবাসে।অথচ বিধানকেও সে ভালোবাসতো।একটা মানুষের জীবনে কি করে এটা সম্ভব হয়?কিন্তু কৃতিকার জীবনে এটাই বাস্তব।
   দুপুরে শুয়ে শুয়ে সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ চোখটা একটু লেগে আসে।কলিংবেলের আওয়াজে ঘুমটা ভেঙ্গে যায়।দুপুরে সাধারণত কেউ বাড়িতে আসেনা।কে এলো ভাবতে ভাবতে দরজাটা খুলে কৃতিকা থ হয়ে যায়।
---সন্দীপ তুমি?
---চলে এলাম তোমায় একটু দেখতে।
---এতো বছর বাদে আমার কথা মনে পড়লো?
--- তুমি তো আমার মনেই রয়েছো, নূতন করে আবার কি মনে পড়বে?ভিতরে আসতে বলবেনা?
---হ্যাঁ এসো।তোমার একটুও পরিবর্তন হয়নি সন্দীপ।
--- বহুদিন ধরে ভাবি তোমায় একটু দেখতে আসবো।তা আর হয়না।আজ না আসলে আর দেখা হবেনা।তাই চলে এলাম।
  আচমকা কৃতিকা প্রশ্ন করে বসলো,
---তুমি বিয়ে করনি কেন সন্দীপ?
---তুমি জানো না?আমি তো জীবনে একজনকেই ভালবেসেছি।যে জায়গায় তাকে বসিয়েছিলাম সেই জায়গাটা দিতে পারিনি অন্য কাউকে।
---কিন্তু আমি তো----
 কাঁনায় ভেঙ্গে পরে কৃতিকা।
---তুমি একটা মেয়ে কৃতিকা।আমি যা পেরেছি সেটা তোমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব ছিলোনা।
---তুমি আমার বাড়ির ঠিকানা কি করে জানলে?
   এ কথার কোন উত্তর সন্দীপ দেয়না।
---তুমি বোসো আমি একটু চা করে নিয়ে আসি।
---আজ আর সময় নেই হাতে।আজ আমি আসি।একদম মন খারাপ করবেনা।সন্দীপ উঠে দাঁড়ালো।
---আর একটু বসো।
 সন্দীপ সে কথার উত্তর না দিয়ে চলে যেতে উদ্দোগী হোল।কৃতিকা আবারও তাকে অনুরোধ করলো আর একটু বসে যেতে।কিন্তু সন্দীপ বেরিয়ে গেলো।হঠাৎ করে যেন একটা ঝড় বয়ে গেলো।কৃতিকা কিছুই বুঝতে পারলোনা এতদিন পরে সন্দীপ কেনই বা এলো আর কেনোই বা এতো তাড়াতাড়ি চলে গেলো।
     কৃতিকার ছেলে কলেজ থেকে ফিরে খেতে খেতে একটু টিভি দেখে।আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।টিভি দেখতে দেখতে মা মা বলে  চিৎকার করে ডাকতে লাগলো।কৃতিকা দৌড়ে রান্নাঘর থেকে এসে বললো,
---কি হোল এতো চিৎকার করছিস কেন?
---খবরটা শোন মা।বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী সন্দীপ সেন আজ শো করে ফেরার পথে অ্যাক্সিডেন্ট করে দুপুরে মারা গেছেন।
   কৃতিকা ধপ করে সোফায় বসে পড়লো।একটা কথায় শুধু বললো,
---কি করে সম্ভব এটা?

------------------শেষে-------------------

Friday, February 22, 2019

আমার চাচা 

নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

       হঠাৎ করে আমাদের গ্রামের হারুনচাচার সাথে দেখা হয়ে যাবে ভাবিনি।ছেলেবেলার অনেক ঘটনা একসময়ের অনেক প্রিয় বা কাছের মানুষ বড় হওয়ার সাথে সাথে স্মৃতির পাতা থেকে গাছের শুকনো ঝরে যাওয়া পাতার মত হারিয়ে যায়।হারুনচাচার বাড়ি ছিলো আমাদের গ্রামেই।গরীব পরিবার হলেও যেটুকু জমি ছিলো দু'বেলা পেট ভরে খাওয়ার সংস্থান ছিলো।হারুনচাচার একটা খুব সুন্দর গুণ ছিলো।পুকুরে,নদীতে,খালে-বিলে খুব সুন্দর জাল ফেলতে পারতো।আর সেইসব মাছ বাড়ি বাড়ি বিক্রি করতো।প্রথমেই সে মাছ নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসতো।আমার বাবাকে দাদা আর মাকে বৌদি বলে ডাকতো।যদিও বাবা তার থেকে অনেকটাই বড় ছিলেন।তার মাছের প্রথম খদ্দের ছিলেন আমার বাবা।আমাদের পুকুরে জাল ফেলতে হলে হারুনচাচাকেই ডাকা হত।সে সব কয়েক যুগ আগের কথা।কিন্তু সেই চাচাকে কলকাতা শহরের এক বেসরকারী হাসপাতালে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখে একটু অবাকই হই।প্রথমে তাকে চিনতে পারিনি।রোগীর কি হয়েছে জানতে চাওয়ায় সে যখন ঘটনার বিবৃতি দিচ্ছে তখন তার মুখের দিকে তাকিয়ে কথা শুনতে শুনতেই তাকে চিনতে পারি।সেই মুহূর্তে তার সাথে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় না গিয়ে রোগীকে সুস্থ্য করে তোলাটাই আমার কাছে জরুরী মনে হয়।আঘাত বিশেষ গুরুতর ছিলোনা।  রিক্সা থেকে পড়ে গিয়ে সামান্য কেঁটে ছিড়ে গেছিলো।মাথায় দুটো সেলাই ও দিতে হয়েছে।পরদিনই তার মেয়েকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।হিসাবপত্র জানতে গিয়ে শোনে সব টাকা পেমেন্ট হয়ে গেছে।কাউন্টার থেকে তাকে ডক্টর দাসের সাথে তার চেম্বারে দেখা করতে বলা হয়।বৃদ্ধ হারুনচাচা আমার চেম্বারের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
---স্যার আমায় ডেকেছেন।
---ভিতরে আসুন।
চেয়ার দেখিয়ে বসতে বললাম।চাচা না বসেই আমায় হাত জোড় করে বললেন,
---আমার মেয়েটার আর কোন অসুবিধা হবেনা তো স্যার?
---না, না কোন অসুবিধা হবেনা।চাচা ও কি তোমার মেয়ে?
---কেন স্যার দেখলে মনে হয়না বুঝি?
---না,তা নয়।চাচা আমি কে জানো?
চাচা ফ্যালফ্যাল করে মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
---কেন আপনি ডাক্তার সাহেব।
---তুমি আমায় চিনতে পারোনি চাচা।আমি হলাম পিলজঙ্গ গ্রামের অধীর দাসের ছেলে বিনয়।
 চাচা একগাল হেসে বললেন,
---তুমি আমাদের বিনু?কত বড় মানুষ হয়েছো।শুনেছিলাম দাদা মানে তোমার বাবার কাছে কলকাতায় থেকে তুমি ডাক্তারী পড়ছো।সে তো অনেককাল আগের কথা।দাদা মারা যাওয়ার পর আর তোমাদের বাড়িতে যেতামনা।বৌদি মাছ খেতো না।মাছ নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াতাম।তারপর একদিন শুনলাম তুমি ডাক্তারী পাশ করে বৌদিকে নিজের কাছে নিয়ে এসেছো।খুব ভালো করেছো বাবা।তা বৌদি এখন কেমন আছেন?
---মা আছেন এই বয়সে যেটুকু ভালো থাকা যায় আর কি?তা তুমি এখন কি করো চাচা?
---টানা রিক্সা চালায় বাবা।বাপ বেটিতে চলে যায়।
---আর চাচী?
---বিয়েই তো করিনি বাপ, চাচী কোথা দিয়ে আসবে?
---কিন্তু তোমার মেয়ে?
---সে অনেক কথা বাপ।পরে দেখা হলে একদিন বলবো।
চাচার জীবনের ঘটনা জানার জন্য মনটা উসখুস করতে লাগলো।কিন্তু চাচার সাথে কথা বলতে বলতে অনেকটা সময় নষ্ট হয়েছে।রাউন্ডে যেতে হবে।চাচাকে আমার একটা কার্ড  দিলাম।বাইরে বেরিয়ে এসে একটা উবের ডেকে ভাড়াটা মিটিয়ে দিয়ে বললাম,
---চাচা অবশ্যই একদিন এসো মায়ের সাথে দেখা করতে।তোমার বৌমা আর নাতিকেও দেখে যাবে।
             এরপর কেটে গেছে বেশ কয়েকটা মাস।বাড়িতে মায়ের সাথে মাঝে মধ্যেই চাচার কথা আলোচনা হয়।ইচ্ছা করে চাচার জীবনের কথা জানতে।একদিন অফিস থেকে ফিরে দেখি চাচা ড্রয়িংরুমে বসা।আভিজাত্যের প্রাচুর্যে আমার বাড়ি মোড়া হলেও মা ঠিক চাচাকে সোফায় বসিয়ে তার যথাযোগ্য আতিথেয়তার ব্যবস্থা করেছেন।এবং আদেশ দিয়েছেন রাতে খেয়ে মেয়ের খাবার নিয়ে যাওয়ার জন্য।চাচা জড়োসড়ো হয়ে সোফার এককোণে বসে একমনে গল্প করে চলেছেন।ফ্রেস হয়ে এসে আমিও জাঁকিয়ে বসলাম গল্প করতে।মা উঠে গেলেন আমার স্ত্রীকে রান্নায় সাহায্য করতে।চাচার কাছে  সরাসরি জানতে চাইলাম তার জীবনের ঘটনা।আজ আমি সমাজের যে উঁচুস্থরে রয়েছি তাতে অনেকেরই মনে হতে পারে একজন সামান্য রিক্সাওয়ালার জীবনের কথা জানতে আমি এতোটা উদগ্রীব কেন?হারুনচাচা হয়তো তার জীবিকার প্রয়োজনে আজ একজন টানা রিক্সাওয়ালা।তার পরিচয় আমার কাছে সে আমার বাবাকে দাদা বলে ডাকতেন।  পরিবারিক যে কোন বিপদআপদে তাকে কাছে পাওয়া যেতো।সে আমার খুব কাছের মানুষ একজন।চাচা প্রথমে একটু আমতা আমতা করলেও পরে শুরু করলেন।
     আব্বা,আম্মুর মৃত্যুর পর গ্রামে থাকতে আর মন চায়তো না।ট্রেনে চেপে হঠাৎ একদিন কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।গ্রামে বাস করা মূর্খ মানুষ।কিছুই চিনিনা।হাওড়া স্টেশনে নেমে মানুষের ভিড় দেখে আমি তো দিশেহারা।কোথায় যাবো কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা।কিছু টাকাকড়ি নিয়েই বেরিয়েছিলাম।রাতে শোয়ার জন্য স্টেশনের একটা বেঞ্চিকে বেছে নিলাম।পকেটের টাকা আস্তে আস্তে খরচ হচেছ আর একটু একটু করে আমার বাড়ি ফেরার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।একদিন রাতে বেঞ্চে শুয়ে আছি হঠাৎ একজন আমার কানের কাছে 'কুলি কুলি' বলে ডাকতে লাগলো।ধড়মর করে উঠে বসলে ভদ্রলোক বললেন তার ব্যাগটা তার সাথে নিয়ে গেলে তিনি আমায় মোটা বকসিস দেবেন।ঘুমের মধ্যে কিছুই না বুঝে তার ভারী ব্যাগটা নিয়ে তার সাথে হাঁটতে শুরু করলাম।সেই শুরু গুলিগিরি করা।কিন্তু বেশিদিন এ কাজ করতে পারিনি।কুলিদের মধ্যেও হিংসা,রেষারেষি মাঝে মধ্যে আবার মারপিটও হত।এই সময় কিছু মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছিলো।এর মধ্যে একজন রিক্সাচালক ছিলো।সে বালিগঞ্জ এলাকার বস্তিতে থাকতো।তারই সহায়তায় নিজের জমানো পুঁজি আর কিছু বাকীতে আমি একটা হাতেটানা রিক্সা কিনি।ওই রিক্সাচালক রমেশের বস্তিতেই একটা ঘর ভাড়া নিই।একা মানুষ বেশ চলছিলো জীবন।একদিন বেশ রাতের দিকে আমি বালিগঞ্জ ফাঁড়ি পার হয়ে যখন রিক্সা নিয়ে বস্তিতে ফিরছি তখন দেখি চব্বিশ পঁচিশ বছরের একটি মেয়ের কোলে ছোট একটি বাচ্চা তারস্বরে চেঁচাচ্ছে আর কিছু যুবক ওই মেয়েটির হাত ধরে টানছে।রিক্সাটা রাস্তার পাশে রেখে ওদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বাঁধা দিলাম।বাচ্চা মেয়েটিকে মায়ের কোল থেকে নিয়ে একজায়গায় বসিয়ে ওদের সাথে লড়তে লাগলাম।তখন গায়ে বলও ছিলো বেশ।মেয়েটিও চেঁচাচ্ছে সঙ্গে আমিও।কিছুক্ষণের মধ্যে কিছু লোক ওখানে জড়ো হয়ে যাওয়ায় ওদের মধ্যে একজন হঠাৎ করে মেয়েটির বুকে ছুড়ি বসিয়ে একনিমেষে পালিয়ে গেলো।আমি দৌড়ে মেয়েটির কাছে গেলাম।রক্তে ভেসে যাচেছ রাস্তা।কোন রকমে আমায় বললো,"ভাই আমার বীথিকে দেখো"।সব শেষ হয়ে যাওয়ার পর পুলিশ এসে মরদেহ তুলে নিয়ে গেলো আর যাবার সময় আমায় নির্দেশ দিয়ে গেলো আমি যেন শিশুটিকে নিয়ে যাই।সংসার নেই আমার,একটা হিন্দু ঘরের বাচ্চা মেয়ে।সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বাচ্চাটিকে নিয়ে বস্তিতে ফিরলাম।রমেশকে সব জানলাম।সেই আমায় সাহস দিলো।আর সত্যি বলতে কি ওই সামান্য সময়েই বাচ্চাটির প্রতি আমার খুব মায়া পরে গেছিলো।সারাদিন রিক্সা টানি আর অনেক রাতে ফিরি।আমি যখন ঘরে থাকিনা তখন বীথি রমেশের বৌ এর কাছেই থাকে।আমায় দেখতে পেলে ঝাঁপিয়ে আমার কোলে আসে।আমি পিতৃত্বের স্বাদ পেলাম।
     আমার বীথি আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলো।আর তার আধো আধো কথায় আমি একাই হেসে মরতাম।জীবনটা অন্য খাতে বইতে শুরু করলো।ওকে স্কুলে ভর্তি করলাম।পড়াশুনায় খুব ভালো সে।নিজে সারাটাদিন টানা রিক্সা চালালেও ওকে কোনদিন আমি কোন কষ্ট পেতে দিইনি।কখনো কোন প্রাইভেট শিক্ষক ওকে দিতে পারিনি।সম্পূর্ণ নিজের পরিশ্রমে ও আজ বারোক্লাস পরীক্ষা দিলো।আরও পড়তে চায় ও।বলেছে প্রচুর খরচ এখনকার পড়ার।ওই যে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে গেলে যে পরীক্ষা দিতে হয় সেই পরীক্ষাও দিয়েছে।আমারও বয়স হয়েছে।আগের মত আর হেঁটে হেঁটে রিক্সা নিয়ে বেরোতে পারিনা। তাই খুঁজে খুঁজে তোমার ঠিকানাটা বের করে তোমার কাছে আসলাম একটা  কাজের সন্ধান দিতে পারো কিনা।
     এতক্ষণ বসে চাচার জীবনের কথা শুনছিলাম মন্ত্রমূগ্ধের মত।গ্রামের একজন অশিক্ষিত সামান্য গরীব মানুষ,শহরে এসে চালচুলোহীন অবস্থায় সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি শিশুর জন্য যে এতোটা করতে পারে তাকে পায়ে হাত দিয়ে আমার প্রণাম করতে ইচ্ছা করছিলো।মা খাবার খেতে ডাক দিলেন। চাচাকে মা আমার সাথে টেবিলেই খেতে দিলেন।আমাদের বাড়িতে কোনদিনও কোন জাত পাতের বিচার দেখিনি।আমাদের বাড়িতে পূজা-পার্বণের দিনে হিন্দু মুসলমান সকলেই দেখেছি এক সাথে কাজে হাত লাগাতো।আজও তার ব্যতিক্রম নেই।আমার স্ত্রী একটু আপত্তি করলেও মায়ের কাছে তা ধোপে টেকেনি।
      খাওয়াদাওয়ার পর মা একটা টিফিন বক্সে চাচার মেয়ের জন্য খাবার গুছিয়ে দিলেন।বারবার করে বলে দিলেন মেয়েকে নিয়ে একদিন আসার জন্য।চাচা যাওয়ার সময় আমি বললাম,"চাচা এতদিন ধরে আমার না দেখা বোনটির  জন্য তুমি যা করেছো তার কোন তুলনা নেই।তুমি তো দেবতা চাচা। যা করেছো তুমি তোমার সাধ্যের বাইরে গিয়ে করেছো।আর তোমাকে ভাবতে হবেনা।আমার ছোট্ট বোনটির বাকি পড়াশুনার দায়িত্বটা আমি নিলাম।ওকে নিয়ে তুমি একদিন আমার বাড়িতে চলে এসো।ওর সাথে আমি কথা বলবো ও কি পড়তে চায়।তুমি কিচ্ছু চিন্তা করনা।আর আমি দেখছি নার্সিংহোমে তোমার কোন কাজের ব্যবস্থা করতে পারি কিনা।"
      চাচা জল ভরা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,"আল্লাহতালা তোমার ভালো করুন।মেয়েটাকে নিয়ে বড্ড চিন্তায় ছিলাম।আজ আমার সব চিন্তার অবসান হোল।"
     চাচা বেরিয়ে গেলেন।মানুষের মধ্যেই যে দেবতার বাস সেটা জীবনে প্রথম উপলব্ধি করলাম।
   

Sunday, February 17, 2019


কেমন ভালোবাসা

     নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

            নিলয়ের সাথে প্রথম দেখাটা প্রথম বর্ষে পড়ার সময়।নিলয়ের ছিলো তৃতীয় বর্ষ।প্রথম থেকেই দুজনের মধ্যে একটা ভালোলাগা কাজ করতো।হয়তো পরষ্পর পরষ্পরকে ভালোও বাসতো।কিন্তু কেউ কোনদিনও তাদের দুর্বলতার কথা প্রকাশ করেনি।ঘটনাচক্রে উভয়ে এক আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরে।নিলয়ের দাদা ব্যাঙ্ককর্মী অপূর্বর সাথে রেখার দিদি সুলেখার বিয়ে হওয়াতে।সম্মন্ধ করেই বিয়ে।উভয়ের কেউই জানতোনা।বাড়ির অভিভাবকরা মিলে বিয়েটা ঠিক করেছিলেন।কলেজ জীবন শেষ হওয়ার পর উভয়ের দেখা সাক্ষাৎ টাও সেভাবে আর হতনা।তখন ফোনেরও এতো রমরমা ছিলোনা।অনেকদিন পর উভয়ের দেখা হয় পরষ্পরের দাদা ও দিদির বিয়ের ছাদনাতলায়।আবারও নূতন করে সম্পর্কের দানা বেঁধে ওঠে।নিলয় অনেক চেষ্টা করেও একটা চাকরী জোগাড় করতে পারেনা।হয়তো আত্মমর্যাদাসচেতন নিলয় এই কারনেই রেখাকে তার মনের কথাটা মুখ ফুটে কোনদিনও বলতে পারেনা।দিদির বিয়ের দিনে একটু ফাঁকা পেয়ে রেখা নিলয়ের কাছে জানতে চেয়েছিলো,
---তুমি কবে বিয়ে করবে নিলয়দা?
হো হো করে হাসতে হাসতে নিলয় বলেছিলো,
---বেকার ছেলের গলায় কেউ মালা দেয়না রেখা।
---কাউকে ভালোবাসো?
উদাস হয়ে নিলয় উত্তর দিয়েছিলো,
---আচ্ছা রেখা, তুমি বলো তো বেকার ছেলের ভালোবাসার কি কোন অধিকার থাকে?
রেখা কোন উত্তর দেওয়ার আগেই রেখাকে তার বান্ধবীরা টেনে নিয়ে যায়।বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে ওঠে নিলয়ের।গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে আজ টানা দু'বছর একটা চাকরীর জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।কিন্তু সামান্যতমও আশার আলো সে দেখতে পাচ্ছেনা।তাই রেখাকে তার মনের কথাটাও বলতে পারছেনা।কিন্তু এটাও সে বুঝতে পারছে রেখাকে তার বাড়ির লোক তার চাকরী পাওয়া অবধি বসিয়ে রাখবেনা।তাই মনের কথাটা খুলে বলার আগে পায়ের তলার মাটিটা শক্ত করা দরকার।
         পরিবারিক নানান অনুষ্ঠানে উভয়ের দেখা হয়।উভয়েই উদগ্রীব হয়ে থাকে একটু নিরিবিলি সান্নিধ্য পাওয়ার।অধিকাংশ সময় সেটা সম্ভবই হয়না।একদিন দিদির বাড়িতে বেড়াতে এসে দেখে দিদি ও নিলয় বসে গল্প করছে।রেখাকে হঠাৎ দেখে নিলয় এতটাই খুশি হয় যে সুলেখা মানে তার বৌদির চোখ এড়ায়না।চা করতে যাওয়ার অছিলায় সে তার আদরের বোন ও দেবরকে একটু কথা বলার সুযোগ করে দিয়ে যায়।দু'জনেই কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকার পর রেখায় শুরু করে,
---চাকরীর কোন ব্যবস্থা হোল নিলয়দা?
---আমার কপালে ভগবান এ জীবনে চাকরী লেখেননি।
---অমন করে বোলোনা।একদিন দেখবে তুমি ঠিক চাকরী পাবে।
---সেদিন হয়তো জীবন থেকে অনেককিছু হারিয়ে যাবে।
---দেখবে কিছুই হারাবেনা।যেমন আছে ঠিক তেমনই থাকবে।
---জানিনা রেখা নিজের ভাগ্যের উপর আমার কোন আস্থা নেই।
             দেখতে দেখতে আরও দু'বছর কেটে গেলো।সুলেখার ছোট্ট ফুটফুটে একটি মেয়ে হয়েছে।মেয়েটি নিলয়ের প্রাণ।না, নিলয় আজও বেকার!সামান্য কয়েকটি টিউশনি করে নিজের হাত খরচ টুকু জোগাড় করে।
         রেখা হন্তদন্ত হয়ে একদিন দিদির বাড়ি উপস্থিত।দিদি জানতে চাওয়ায় সে তাকে জানায় বাবা,মা তার বিয়ে ঠিক করছেন।
---ছেলে কি করে?
---সরকারি চাকরী।
---বাহ!এতো খুব ভালো কথা।
---কিন্তু দিদি-----
কথাটা শেষ হয়না।অপূর্ব এসে ঘরে ঢোকে।
---রেখা কখন এলে?কি শলাপরামর্শ চলছে দিদি আর বোনের?
---বাবা,মা রেখার বিয়ে ঠিক করছেন ছেলে সরকারি চাকরী করে।একমাত্র ছেলে,নিজেদের বাড়ি।
---বাহ!বাহ!এতো দারুন খবর!
রেখা এদিকে ওদিকে তাকিয়ে দেখে কোথাও নিলয়কে সে দেখতে পায়না।পুঁচকিটাকে কোলে নিয়ে দিদির পিছন পিছন রান্নাঘরের দিকে এগোতে এগোতে জানতে চায়,
---দিদি,নিলয়দা বাড়িতে নেই?
ওরা যে পরস্পরকে ভালোবাসে এটা সুলেখা অনেক আগেই টের পেয়েছে।কিন্তু নিলয় বেকার । সম্পর্কটাকে স্থায়ী করতে গেলে নিলয়ের একটা চাকরীর অবশ্যই দরকার।সবকিছু বুঝেও সুলেখা না বোঝার ভান করে থাকে বোনের ভবিষৎ ভেবে।রেখার কথার উত্তরে বলে সে,
--আজ দু'দিন ধরে নিলয়টা বাড়িতে নেই।ও চেন্নাই গেছে আমাদের এক আত্মীয়ের শরীর খুব খারাপ। তাকে নিয়ে ডক্টর দেখানোর জন্য।
---ও!
একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে রেখা বলে।
সুলেখা বোনকে বুঝাতে থাকে সম্মন্ধটা খুব ভালো,তুই খুব সুখি হবি।বাবারও বয়স হয়ে গেছে।তোর বিয়েটা দিয়ে যেতে পারলে তিনিও শান্তি পাবেন।তুই রাজি হয়ে যা।জীবনে অনেককিছু বাধ্য হয়ে মেনে নিতে হয় নিজের আর সকলের মঙ্গলের কথা ভেবে।বলতে পারিস মেয়েদের পুরো জীবনটাকেই স্যাক্রিফাইস করতে হয় অপরের মঙ্গলের জন্য।রাজি হয়ে যা বোন, মরিচিকার পিছনে ছুটিসনা।
          দু'মাস পরে যখন নিলয় আত্মীয়কে সুস্থ্য করে তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরলো তখন রেখা অন্যের ঘরণী।না,রেখা তার বাবা,মায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারেনি, জানাতে পারেনি তাদেরকে তার ভালোবাসার কথা,পারেনি বাবা,মা ও দিদির সম্মানহানি হয় এমন কোন কাজ করতে,পারেনি দু'টি পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের জটিলতা এনে দিদির সুখের রাস্তার কাঁটা হতে।এই এতগুলো না পারার মাঝে শুধু পেরেছে নিজের ভালোবাসার বলিদান দিতে।
    বিয়ের পর দু'বছরের মধ্যে নিলয়ের সাথে আর রেখার দেখা হয়নি।রেখা এক সন্তানের জননী।এই দু'বছরে বাপের বাড়িতে আসলেও কোনদিন দিদির বাড়িতে আসেনি।কারন সে চায়নি নিলয়ের মুখোমুখি হতে। দিদিও খুব একটা জোর করেনি কোনদিন।
        নিলয়ের বয়স এখন চৌত্রিশ বছর।বছর তিনেক আগে সে কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনে একটা ইন্টারভিউ দিয়েছিলো।সে নিজেও ভুলে গেছিলো সে কথা।এই বয়সে এসে হঠাৎ করে সে যে একটা সরকারি চাকরী পাবে এটা সে কোনদিনও স্বপ্নেও ভাবেনি।ভাবেনি তার বাড়ির লোকও।এই চাকরীর জন্যই সে তার ভালাবাসা হারিয়েছে।যতটা আনন্দিত হওয়ার কথা ছিলো চাকরী পেয়ে ঠিক ততটা আনন্দিত হতে সে পারেনি।এখন রেখার মেয়ের বয়স প্রায় তিন বছর।রেখার বিয়ের পর তার সাথে আর নিলয়ের দেখা হয়নি।
     কেটে গেছে আরও বেশ কয়েকটা বছর।রেখা আজ খুব সুখি।অবশ্য সেটা বাইরের লোকের কাছে।প্রথম ভালোবাসা তার অন্তরে আজও লুকানো।যখনই একা থাকে তখনই সে তার ভালোলাগা ভালোবাসার স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসে।না,আজও সে নিলয়কে ভুলতে পারেনি।দিদির কাছ থেকে জেনেছে নিলয় এই বয়সে এসে সরকারি চাকরী পেয়েছে।জীবনের প্রথম প্রেমটাকে সে মেরে ফেলতে পারেনি।তাই তো আজও একাকী থাকলে তার একাকীত্বকে সঙ্গ দেয় তার চোখের জল।
      আর নিলয়?না,বাড়ির লোক তাকে বিয়েতে রাজি করাতে পারেনি।মনের দিক থেকে দুমড়ে-মুচড়ে গেলেও কেউ তার মুখে কোনদিনও রেখার নাম পর্যন্ত শোনেনি।সবকিছুতেই সে উদাসীন।একমাত্র ভাইঝি দিশার সাথেই তার যত গল্প,হাসি, আনন্দ।অফিস বাড়ি আর লোকের বিপদ-আপদে ঝাঁপিয়ে পড়া আর হাতে কাজ না থাকলে পুরনো দিনের গান শোনা।হয়তো গানের মাঝেই সে খুঁজে পেতে চায় তার অব্যক্ত ভালোবাসাকে।
        কেটে গেছে আরও বেশ কয়েকটি বছর।রেখা বিয়ের পর কোনদিনও দিদির বাড়িতে আসেনি।হঠাৎ একদিন অপূর্ব দুপুর নাগাদ রেখার বাড়ি উপস্থিত।সেখানে পৌঁছেই রেখাকে তাগাদা দেয় খুব তাড়াতাড়ি তার সাথে বেরোনোর জন্য।অজানা আশঙ্কায় রেখার বুকটা কেঁপে ওঠে।
---অপুদা কার কি হয়েছে?
---অফিস থেকে ফেরার পথে নিলয়ের একটা বড় অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।হাসপাতালে ভর্তি।তোমার দিদি তোমায় নিতে পাঠিয়েছে।নিলয় তোমাকে একবার দেখতে চেয়েছে।
       ডুকরে কেঁদে ওঠে রেখা।অপূর্ব তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
---একদম দেরি করিসনা বোন।অবস্থা বিশেষ ভালো নয়।চল বেরিয়ে পড়ি।
     হাসপাতালে এসে রেখা দেখে দিদির বাড়ির সকলে সেখানে উপস্থিত।রেখাকে দেখতে পেয়ে তার দিদি তাকে নিয়ে উপরে নিলয়ের কাছে যায়।রেখা কেঁদেই চলেছে দেখে বলে,
---আমি জানি রে তোরা দু'জনকে দু'জন কতটা ভালোবাসিস।কিন্তু সব ভালোবাসা বিয়েতেই পূর্ণতা পায়না রে।এতদিন সে কখনোই তোর কথা কাউকে বলেনি।সারাজীবন বিয়ে না করে শুধু নীরবে তোকে ভালোবেসেই গেছে।এই প্রথম সে আমায় ডেকে বললো,"বৌদি একবার রেখাকে দেখতে চাই।যা বোন আমি বাইরে আছি তুই ওর সাথে গিয়ে কথা বল।"
   রেখার দু'চোখের জলের ধারা যেন কিছুতেই আজ আর বন্ধ হয়না।নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে নিলয়ের বেডের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে খুব আস্তে আস্তে ডাকলো,
---নিলয়দা,আমি এসেছি।চোখ খোলো নিলয়দা।
  অতি কষ্টে নিলয় চোখ খুলে তাকালো।
---খুব দেখতে ইচ্ছা করছিলো তোমায়।একটা কথা সেই কলেজ লাইফ থেকে তোমায় বলবো বলবো করেও বলতে পারিনি রেখা।
---তুমি এতো কথা বোলোনা।তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
---আজ আর বাঁধা দিওনা।আর সময় পাবোনা।
---তুমি ভালো হয়ে যাবে নিলয়দা।
---রেখা,কলেজে প্রথম দেখার দিন থেকেই তোমাকে আমার ভালো লাগতো।সেই ভালোলাগা কবে যে ভালোবাসায় পরিণত হয়েছিলো আমি নিজেও জানিনা।কিন্তু কোনদিনও বলতে পারিনি কারন আমার বেকারত্ব।আজও আমি তোমায় সেই আগের মতই ভালোবাসি।তোমায় অধিকার আমি অন্য কাউকেই দিতে পারিনি।এই কথাগুলি না বলে গেলে আমি যে মরেও শান্তি পাবোনা।
    রেখা কাঁদদে কাঁদদে বলে,
---সব জানি নিলয়দা।তুমি আমার অপারগতা ক্ষমা কোরো।
   কথাগুলো বলে নিলয় প্রচন্ড হাঁফাতে লাগে।চেষ্টা করে একটা হাত চাদরের বাইরে আনে।রেখা হাতটা ধরে।খুব ধীরে ধীরে পরম শান্তিতে নিলয় চোখ দুটি বন্ধ করে।সিস্টার কাছেই ছিলেন। রেখা তাকে ডেকে বেডের কাছে আনে।তিনি সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারকে কল করেন।নিলয় চলে যায় ভেন্টিলেশনে।ডক্টর জানতে চান,
---কে হন আপনি?
সত্যিই তো রেখা নিলয়ের কে হয়?একটু ঢোক গিলে রেখা বলে,
---বন্ধু।
---আমাদের আর কিছুই করার নেই।বাড়ির লোককে মেন্টালি প্রস্তুতি নিতে বলুন।আমরা অবশ্য পেসেণ্ট পার্টিকে আগেই জানিয়ে দিয়েছি।
      কাঁদদে কাঁদদে রেখা বেরিয়ে এলো।বাইরে দিদিকে দেখতে পেয়ে দিদিকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। সুলেখা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
---চুপ চুপ এভাবে কাঁদেনা।কেউ দেখে ফেলবে।নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।মেয়েদের যে পদে পদে বিপদ।এতদিন ধরে নীরবে যে মানুষটাকে ভালোবেসে গেছিস,কারও কাছে কোনদিনও প্রকাশ করিসনি কেউ,সেই মানুষটার চলে যাওয়ার দিনে তাকে সম্মানের সাথেই যেতে দে।চল নীচুতে চল।

                         শেষ

Friday, February 15, 2019

কষ্টে আছি
       নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

অবেলায় গেলি চলে
গেলি অনেক দূরে,
আমাদের উদাস করে
কেন গেলি ছেড়ে?

একই সাথে কাটানো সময়
আরও কত গীতি,
চলে গেলি না ফেরার দেশে
রেখে গেলি স্মৃতি।

ছেলেবেলার দিনগুলি সব
আজ বড্ড মনে পড়ছে,
কষ্টের ভার করতে লাঘব
শুধু চোখের জলই ঝরছে।

যেথায় এখন আছিস তুই
শান্তি আসুক তোর,
সব কষ্টের তোর হোল অবসান
আমাদের কষ্টের আর হবেনা ভোর।

মাঝে মাঝে স্বপ্নে আছিস
করবোনা আর ঝগড়া,
দেখবো শুধু দু'চোখ ভরে
বড্ড কষ্টে আছি আমরা।

#নন্দা     13-2-19

Monday, February 11, 2019

লাল গোলাপ
        নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

অনেকদিন পর পুরনো ডায়রীটা খুঁজে পেলাম,
স্মৃতির খাতায় ময়লা জমলেও অক্ষরগুলো স্পষ্ট ।
ফিরে গেলাম কিশোরীবেলায়
আমার প্রথম প্রেমের উষ্ণতা নিতে। 
আজও সে আছে ঠিক সেই আগের মতই।
শুধু হারিয়েছে তার জৌলুস হয়েছে ধূসর।
যার গায়ে হাত বুলালে আমি পাই-
প্রথম প্রেমের ছোঁয়া।
ফ্লাসব্যাকের মত ঘটনাগুলো সামনে আসে।
সে তার জৌলুস হারালেও-
রেখেছি তাকে খুব যত্নে সকলের অলক্ষ্যে। 
থাকবে সে আজীবন ডায়রীর ভাঁজে-
হয়তো আমার মৃত্যুর পর আরও কিছুকাল।

#নন্দা