Sunday, November 27, 2022

শান্তি খুঁজে নিতে হয়

শান্তি খুঁজে নিতে হয়

 সংসারের জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ করেও কারো মন রাখতে পারেনি কোনদিন সুষমা।অথচ মিষ্টি স্বভাবের এ মেয়েটির এরকম হওয়ার কথা ছিল না। মেধাবী সুষমা বিটেক করেই চাকরি জুটিয়ে নিয়েছিল। বিয়েতে তার মত ছিল না মোটেই।বাবা,মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ার ফলে ওর মনের মধ্যে একটা ধারণা বদ্ধমূল ছিল ও যদি শ্বশুরবাড়ি চলে যায় তাদের কে দেখবে? তাই বিয়ে করার মানসিকতা তার কোনদিন ছিল না। কিন্তু বাবা,মা কী আর সে কথা শোনেন? মেয়ে সন্তান তাকে তো বিয়ে দিতেই হবে। চাকরি পাওয়ার ছয়মাস থেকেই শুরু হয় মায়ের ঘ্যানঘ্যানানি। অফিস,বাড়ি আর মাকে বিশ্রাম দেওয়ার জন্য বাকি সময়টুকু সংসারের কাজ।
  ভীষণ মিশুকে, হাসিখুশি, সংসারী মেয়েটাকে আত্মীয়স্বজন পাড়াপ্রতিবেশী সকলেই খুব ভালোবাসে।পরিবারের চাপে শেষ পর্যন্ত তাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতেই হল।সুফল একজন উচ্চপদস্ত ব্যাংক কর্মচারি। সংসারে পা দিয়েই সুষমা বুঝে গেলো স্বামী,শ্বশুর,শ্বাশুড়ী, দেওর আর ডিভোর্সী ননদ সকলের কথা শুনেই তাকে চলতে হবে তা না হলে অশান্তি অবশ্যম্ভাবী।স্বামী, দেওর, ননদ ,শ্বশুর সকলেই চাকরি করেন।সংসারে তারা কুটোটি নাড়েন না। শ্বাশুড়ী একার হাতেই সংসার সামলান। সকলেই অফিস থেকে ফিরে টায়ার্ড থাকেন। তাই কেউই তাকে সংসারের কাজে সহায়তা করে না।
  বিয়েতে মাসখানেক ছুটি নিয়েছিল সুষমা। তাই বৌভাতের পর সমস্ত আত্মীয়স্বজন চলে যাওয়ার পর শ্বাশুড়ির সাথে রান্নাঘরে থেকে বুদ্ধিমতী সুষমা বুঝে যায় পরিবারের কার কখন কোনটা দরকার। যার যা কিছুই সে তার হাতের কাছে পৌঁছে দিক না কেন কেউই কখনোই সাধারণ একটা ধন্যবাদও ছুঁড়ে দেয়নি কোনদিন। বরং একটা কাজ সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে অন্য আর একটা কাজের অর্ডার দিয়ে দেয়।সবকিছুই সে হাসিমুখে পালন করতে থাকে। জোর করে শ্বাশুড়ীকে রান্নাঘর থেকে ছুটি দেয়।মনেমনে ভাবে ছুটি ফুরালে তো তাকেই আবার রান্নাঘরে ঢুকতে হবে।তাই এ কটাদিন যাতে তিনি একটু বিশ্রাম পান সেই চেষ্টায় সে করে।
 কিন্তু কাল হল তার শ্বাশুড়ীকে বিশ্রাম দেওয়ার চেষ্টাটা করা। ছুটি ফুরিয়ে গেলে অফিসে যাওয়ার আগের দিন থেকেই শুরু হল চাপা গুঞ্জন।সংসারের এত কাজ কে করবে? ভাবখানা তাদের এমনই যেন এই সংসারে এ যাবৎকাল সুষমা ই সব কাজ করে এসেছে। ভোরবেলা উঠে যতদূর পারে রান্না করে সকলের অফিসের টিফিন গুছিয়ে নিজেরটা নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ননদ বলে উঠলো,
-- বৌদি, আজ কিন্তু আমি রাতে ভাত খাবো না ,আমার জন্য রুটি কোরো।
 সুষমা সে কথার কোন জবাব দিলো না দেখে শ্বশুর বললেন,
--- তুমি শুনতে পাওনি রমা কী বললো?
--- হ্যাঁ বাবা শুনেছি কিন্তু এখন তো অফিস যাচ্ছি আগে বাড়ি ফিরি তারপর এসব ভাববো।
 উত্তর শ্বশুরের পছন্দ হল না সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা গেলো।
 অফিস থেকে বাড়িতে ফিরেই সেদিন থেকে শুরু হল রান্নাঘরে ঢোকা। তারপর রাতের সমস্ত কাজ সেরে যখন সে ঘুমাতে যায় তখন স্বামীর আদর মনেহয় অত্যাচার।প্রথম প্রথম মুখ বুজে স্বামীর সোহাগ মেনে নিলেও পড়ে তাদের দূরত্ব বাড়তে লাগে।অবশেষে মায়ের চেষ্টায় সর্বক্ষণের একজন মহিলাকে বাড়িতে কাজের জন্য রাখে। প্রথম প্রথম সকলের আপত্তি থাকলেও পড়ে এটাতে তারা সুবিধায় পেয়ে যায়।আর মাইনেটা তো সুষমা দেয়। একমাত্র এই মহিলাই সুষমার কষ্টটা বোঝে।সুষমা কিছু করতে গেলেই হাত থেকে কাজ ছিনিয়ে নেয়। তবুও সুষমা সকালে অফিস যাওয়ার আগে আর অফিস থেকে ফিরেও ওই মহিলার হাতে হাতে কাজ করতে থাকে।রাতের খাবারটাও সেই দেয়।অথচ বাড়িতে যে চাকুরীরত ননদ রয়েছে সে এক গ্লাস জল ভরেও খায় না। সেটা কারোই চোখে লাগে না।কিন্তু অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত শরীরে সে একটু শুয়ে থাকলেও সকলের মুখ ভার হয়ে যায়। তবে সুফল এখন অনেকটাই বোঝে সুষমাকে। কাজের মহিলাটি রাখার ফলে সুষমাও রাতে তার আদরে সাড়া দেয়।তাই তার মেজাজটাও থাকে ফুরফুরে। আর শ্বাশুড়ী মা ? তিনি তো একবার আরামের স্বাদ পেয়েছেন তাই ভুলেও রান্নাঘরে তিনি ঢোকেন না। তবে ভুল ধরতেও তিনি ছাড়েন না। কিন্তু সুষমা কখনোই কারো কথার উত্তর কোনদিন করে না। বুদ্ধিমতী সুষমা একটা কথা বেশ ভালোভাবেই জানে সকলকে নিয়ে চলতে গেলে সকলের সব কথার উত্তর দিলে নিজেরই মানসিক শান্তি নষ্ট হবে।কতটুকু সময়ই বা সে বাড়িতে থাকে? নিজেকে ভালো রাখতে গেলে ছোটখাটো ঝামেলা এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।


No comments:

Post a Comment