Monday, November 7, 2022

আইবল

আইবল 

  লুকিয়ে দেখতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলাম --- ব্যাস আর যায় কোথায়? বরবেশি কুন্তল তখন চোখ বড় বড় করে আমাদের একের অন্যের গায়ের উপর পড়া দেখতেই ব্যস্ত। আর সুমিত্রা ফুলশয্যার খাটে বসে আমাদের দেখে হেসেই অস্থির।
 ঘটনাটা খুলেই বলি। কলেজ লাইফ থেকেই আমাদের পাঁচজনের একটা দল ছিল। আমি মানে ছন্দা, কুন্তল, সুমিত্রা, শ্রাবন আর দেবেশ। আমার সাথে প্রেম পর্ব শেষ করে, না শেষ করে নয়; প্রেম চলতে চলতেই  বিয়ের কাজটি সম্পন্ন করে ফেলে শ্রাবন।দেবেশের বিয়ে হয় সম্মন্ধ করে। কুন্তল আর সুমিত্রার বিয়েটাই সকলের শেষে!আগে ছিলাম বন্ধু পাঁচজন এখন ছ'জন। দেবেশের বউ রিয়া একটু চুপচাপ হলেও দলের মধ্যে থাকলে তার নীরবতা ভাঙার জন্য সবাই প্রস্তুত।
  দেবেশের ফুলশয্যার রাতে আলমারির পিছন থেকে কুন্তলকে বের করা হয়েছিল। তারজন্য আলমারিটাকে একটু সামনে টেনে আনা হয়। লাইট অফ করে যখন দেবেশ খাটের উপর গিয়ে বসে ঠিক সেই মুহূর্তে দেবেশের ফোন বেজে ওঠে। খুব বিরক্ত হয়ে দেবেশ তার জামাইবাবুর ফোনটা রিসিভ করে জানতে পারে বন্ধুদের মধ্যে কুন্তলকে দেখা যাচ্ছে না। সে যেন ঘরের ভিতর ভালোভাবে দেখে তারপর লাইট অফ করে। ফোনে কথা শুনেই এক লাফে উঠে গিয়ে দেবেশ ঘরের লাইট জ্বালিয়ে চিরুনি তল্লাশী শুরু করে। জামার কলার ধরে কুন্তলকে আলমারির পিছন থেকে টেনে বের করে আনে।
 আজ প্রতিশোধ নেওয়ার পালা।সবাই যখন বৌভাতের অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত দেবেশ তখন আমাকে আর শ্রাবনকে নিয়ে এসে এক ফাঁকে কুন্তলের ঘরের দরজার আইবল খুলে রেখে যায়। দেবেশের মিসেস তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরে যায় কারণ সে প্রেগন্যান্ট। 
  সব কাজকর্ম শেষের পড়ে সবাই মিলে কুন্তলকে ঘরে ঢুকিয়ে টাটা, বাইবাই, কাল সকালে দেখা হবে , বেশি রাত জাগিস না - ইত্যাদি নানান কথা বলে যে যার মত পিছন ফিরে চলে যায়। 
 কুন্তল ,সুমিত্রা দুজনেই ভাবে এত তাড়াতাড়ি ওদের চলে যাওয়ার নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে। ওরাও দু'জনে বসে বসে অনেকক্ষণ গল্প করতে থাকে। ঘরে যত রকম ফার্নিচার আছে সেগুলোর পিছন, তলা সব দেখেশুনেও কাউকেই তারা খুঁজে পায় না। শেষে কুন্তল আইবল দিয়ে বাইরে দেখতে গিয়ে দুটো বড় বড় চোখ দেখে ঝটপট দরজা খুলে ফেলায় দেবেশ, শ্রাবন আর আমি পরপর তিনজন পুরো কুন্তলের দরজার কাছে একের উপর আর একজন করে তিনজনেই ভূপতিত।
 হাহা ,হিহি কিন্তু কেউ সেখান থেকে ওঠে না। তখন সুমিত্রা খাট ছেড়ে নেমে এসে আমার দিকে একটা হাত বাড়িয়ে বলে
-- আরে তোরা তো আমাদের বলতে পারতিস আমরা একটা বড় হলরুম বাইরে কোথাও ভাড়া নিয়ে একঘরেই থাকতাম সবাই। 
 কোমর কাত করতে করতে দেবেশ আর শ্রাবন উঠে দাঁড়িয়ে একসাথেই বলে উঠলো,
--- ঘাট হয়েছে।আমাদের।এই আমরা চললুম।
-- এই তার আগে আমার আইবলটা লাগিয়ে দিয়ে যা।
  দেবেশ আর শ্রাবন তখন আইবল লাগাতে লাগলো।


No comments:

Post a Comment