ভালোবাসার রাজপ্রাসাদ
অভাবের সংসারেও ভাবভালোবাসা ছিলো -
আসলে চাহিদা আর মনের উপরেই নির্ভর করে মানুষের সুখ। অভাব কিংবা একটু কম ভালোবাসা থাকলেও বিশ্বাসের ভীতটা যদি মজবুত থাকে সেখানে সুখের কোন কমতি থাকে না। ভাবভালবাসা আছে মানেই পরস্পরকে সব সময় গদগদ হয়ে থাকতে হবে তা মোটেই নয়।
সোনালী ভালোবেসে বিয়ে করেছিল সোমেশকে। বড় লোকের মেয়ে না হলেও সোমেশদের থেকে তাদের অবস্থা ছিল ভালো। তাই স্বাভাবিক কারণেই সোনালীর মা,বাবার ছিল এ বিয়েতে আপত্তি। তিনবোনের মধ্যে সোনালী ছিল মেজ। বড়জনের অনেক আগেই বিয়ে হয়ে গেছিলো। সোনালী বাড়িতে নানান অশান্তি সহ্য করতে করতে গ্র্যাজুয়েশনটা কমপ্লিট করে। ইতিমধ্যে সাধারণভাবে সোমেশও গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসাবে একটা কোম্পানিতে জয়েন করে। সোনালী বাবা,মায়ের অমতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে সোমেশকে বিয়ে করে।
সোমেশ আর তার মা। ছোট্ট দুটো ঘর। কোনরকমে একটা রান্নার জায়গা। দেড়কাঠা জমির উপর ছোট্ট একতলা একটা বাড়ি হলেও সুন্দর সাজানোগুছানো এবং বাড়ির পিছনে অল্প একটু ফাঁকা জমি যেখানে সোমেশের মা লাউ,বেগুন,লঙ্কা ,সিম ইত্যাদি সবজি চাষ করেন।খুব ভালোবাসেন তিনি বাগান করতে। সোনালী সেই পরিবারে এসে প্রথম প্রথম মানিয়ে নিতে তার বেশ কষ্ট হয়েছে। কিন্তু সোমেশের প্রতি অদম্য ভালোবাসা তার মনে কখনো কোন কষ্টকে কষ্ট মনে হয়নি।
সোনালী অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই তার শ্বাশুড়ির মন জয় করে নেয়। খুব ভালোবাসেন মৃন্ময়ীদেবী সোনালীকে। নিজের মেয়ের মতোই তিনি তার ছেলের বউয়ের সাথে তুই করে নাম ধরে ডেকেই কথা বলতেন। সোনালীও তার শ্বাশুড়িমাকে নিজের মায়ের মতই তুমি করে কথা বলে।
সংসারে অভাব থাকলেও ভালোবাসার কমতি ছিল না মোটেই। কিন্তু বছর খানেক পরে হঠাৎ করেই সোমেশের চাকরিটা চলে গেলো। সংসারে তখন চরম অভাব। সকলে মিলে পরামর্শ করে সোনালী আর সোমেশ কিছু টিউশনি করতে শুরু করলো। কিন্তু এই সামান্য টাকায় তো আর সংসার চলে না। সোমেশ আর সোনালী দু'জনে মিলেই তখন যেমন-তেমন একটা কাজ খুঁজতে শুরু করলো। একটা কাপড়ের দোকানে সোনালী সেলসের একটা কাজও পেয়ে যায়। এইভাবে কিছুদিন চলার পর সোমেশ আবার অন্য একটি কোম্পানিতে সেই একই মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজ পেয়ে যায়। সংসারটা তখন আবার অনুখাতে চলতে শুরু করে। এই যে সংসারের অর্থের উঠাপড়া তাদের ভালোবাসার ক্ষেত্রে কোন প্রভাব পড়তে কেউই দেয়নি।যেদিন যেমন জুটেছে সেদিন সেই সামান্য খাবারই তিনজনে ভাগ করেই খেয়েছে ; সেখানে কারো কোন অভিযোগ ছিলো না। সংসারে ভালোবাসার বন্ধনটা যদি বিশ্বাসের ভীত দ্বারা তৈরি হয় কোন অভাব সেখানে বাসা বাঁধতে পারে না।
আস্তে আস্তে সোমেশের পদোন্নতি হয়েছে।সংসারের শ্রীবৃদ্ধির সাথে সাথে ছোট্ট এক লক্ষীর আগমন ঘটেছে। তাকে নিয়েই পরিবারের বাকি তিনজন হাসি,আনন্দেই দিন কাটিয়ে দেয়। কোন কারণে কোন অশান্তি সোনালী সোমেশের সংসারে প্রবেশ করতে পারে না ।
No comments:
Post a Comment