Thursday, June 30, 2022

মানুষ চেনা দায় (পঞ্চম পর্ব)

 নিকিতা কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে অতনুর এই অদ্ভুত কাজকর্ম দেখে অকারনেই কেন যেন ক্ষেপে যায়!কিছুতেই সে মাথায় আনতে পারে না কেন এই মানুষটার এইসব কাজকর্ম বা তাকে সাহায্য করার পরেও সে মেনে নিতে পারছে না।বিনা কারণেই লোকটার প্রতি দিনকে দিন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সে। অকূল সমুদ্রে সাঁতার কেটেও এই প্রশ্নের কোন মীমাংসা সে করতে পারে না।প্রথম থেকেই নিকিতার এই অতনুকে দেখলেই শরীরে অদ্ভুত এক ইরিটেশন হয়।
  পুরনো কিছু ঘটনা -
   সুভাষ রায় বাবা,মায়ের কথামত ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পড়তেই কামিনীকে নিজের অমতে বিয়ে করতে বাধ্য হয়।গ্রামের ছেলে কলকাতা শহরে থেকে পড়াশুনা করছিলো।হঠাৎ বাবার ফোন পেয়ে গ্রামে গিয়ে শোনে বাবা তার বিয়ে ঠিক করেছেন।একমাত্র সন্তান।একটু বেশি বয়সে সুভাষ রায় তার মায়ের কোলে আসেন।কলকাতা সম্পর্কে নানান কথা শুনতে শুনতে স্বল্প শিক্ষিত সুভাষের বাবা ভয় পান তার ছেলে কোন মেয়ের পাল্লায় পড়লে তার লেখাপড়ায় ব্যাঘাত হবে।তাই স্বামী,স্ত্রী দু'জনে পরামর্শ করে গ্রামের মাধ্যমিক পাশ করা দেখতে শুনতে মন্দ নয় এমন একটি মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করে ছেলেকে ডেকে এনে বিয়ে দেন।
  ঘটনার আকস্মিকতায় সুভাষ প্রথমে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও বাবার সাথে তর্কে পেরে না উঠে শেষ পর্যন্ত বিয়ে করতে কামিনীকে বাধ্য হয় কারণ বাবার কথা অগ্রাহ্য করলে উচ্চাকাঙ্খী সুভাষের পড়াশুনাটাই হয়ত বন্ধ হয়ে যাবে।কারণ সে ভালো করেই জানে তার বাবা প্রচণ্ড জেদী।
তখন সুভাষের ইঞ্জিনিয়ািংয়ে তৃতীয় বর্ষ।
 প্রথম থেকেই সুভাষ কামিনীকে মন থেকে মেনে নিতে না পারলেও যুবক ছেলের শারীরিক সম্পর্কে কোন অনীহা দেখা যায় না।বিয়ের পর সুভাষ যে কটাদিন বাড়িতে ছিলেন প্রতিদিনই প্রায় দু থেকে তিনবার সে কামিনীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক লিপ্ত হয়।অথচ সে কামিনীকে একটুও ভালো বাসতে পারেনি এই কটাদিনে।বিয়ের সাতদিন পর সুভাষ যথারীতি কলকাতা চলে আসেন। 

ক্রমশ -

মানুষ চেনা দায় (চতুর্থ পর্ব)

মানুষ চেনা দায় (চতুর্থ পর্ব)
 নিকিতা কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে অতনুর এই অদ্ভুত কাজকর্ম দেখে অকারনেই কেন যেন ক্ষেপে যায়!কিছুতেই সে মাথায় আনতে পারে না কেন এই মানুষটার এইসব কাজকর্ম বা তাকে সাহায্য করার পরেও সে মেনে নিতে পারছে না।বিনা কারণেই লোকটার প্রতি দিনকে দিন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সে। অকূল সমুদ্রে সাঁতার কেটেও এই প্রশ্নের কোন মীমাংসা সে করতে পারে না।প্রথম থেকেই নিকিতার এই অতনুকে দেখলেই শরীরে অদ্ভুত এক ইরিটেশন হয়।
  পুরনো কিছু ঘটনা -
   সুভাষ রায় বাবা,মায়ের কথামত ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পড়তেই কামিনীকে নিজের অমতে বিয়ে করতে বাধ্য হয়।গ্রামের ছেলে কলকাতা শহরে থেকে পড়াশুনা করছিলো।হঠাৎ বাবার ফোন পেয়ে গ্রামে গিয়ে শোনে বাবা তার বিয়ে ঠিক করেছেন।একমাত্র সন্তান।একটু বেশি বয়সে সুভাষ রায় তার মায়ের কোলে আসেন।কলকাতা সম্পর্কে নানান কথা শুনতে শুনতে স্বল্প শিক্ষিত সুভাষের বাবা ভয় পান তার ছেলে কোন মেয়ের পাল্লায় পড়লে তার লেখাপড়ায় ব্যাঘাত হবে।তাই স্বামী,স্ত্রী দু'জনে পরামর্শ করে গ্রামের মাধ্যমিক পাশ করা দেখতে শুনতে মন্দ নয় এমন একটি মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করে ছেলেকে ডেকে এনে বিয়ে দেন।
  ঘটনার আকস্মিকতায় সুভাষ প্রথমে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও বাবার সাথে তর্কে পেরে না উঠে শেষ পর্যন্ত বিয়ে করতে কামিনীকে বাধ্য হয় কারণ বাবার কথা অগ্রাহ্য করলে উচ্চাকাঙ্খী সুভাষের পড়াশুনাটাই হয়ত বন্ধ হয়ে যাবে।কারণ সে ভালো করেই জানে তার বাবা প্রচণ্ড জেদী।
তখন সুভাষের ইঞ্জিনিয়ািংয়ে তৃতীয় বর্ষ।
 প্রথম থেকেই সুভাষ কামিনীকে মন থেকে মেনে নিতে না পারলেও যুবক ছেলের শারীরিক সম্পর্কে কোন অনীহা দেখা যায় না।বিয়ের পর সুভাষ যে কটাদিন বাড়িতে ছিলেন প্রতিদিনই প্রায় দু থেকে তিনবার সে কামিনীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক লিপ্ত হয়।অথচ সে কামিনীকে একটুও ভালো বাসতে পারেনি এই কটাদিনে।বিয়ের সাতদিন পর সুভাষ যথারীতি কলকাতা চলে আসেন। 

ক্রমশ -

Thursday, June 23, 2022

সমাজ কি ভাববে (m)

সমাজ কি ভাববে (m)

  ভুল একবারই হয়,বারবার করলে তা হয় অন্যায়।
   আজ সিঙ্গেল মাদার শ্রেয়সীর একমাত্র মেয়ে শ্রীপর্ণা মাধ্যমিকে প্রথম হওয়ায় তার ছোট্ট ফ্ল্যাটটিতে সাংবাদিকদের হুড়োহুড়ি লেগে গেছে।
  তিনদিনের শিশুটিকে গ্রহণ করার জন্য শ্রেয়সী অনেক কাকুটিমিনতি করেছিলো সেদিন উজানের কাছে।কিন্তু উজান শ্রেয়সীর কোন কথাই শোনেনি।তার একটাই কথা ছিল "আমাকে বিয়ে করতে হলে ওই বাচ্চাকে তুমি দত্তক নিতে পারবে না।অন্যের পাপের বোঝা আজীবন আমি টানতে পারবো না।"
  দশ বছর হল উজানের বিয়ে হয়েছে।এক অফিসে এখন না থাকলেও উজানের খবর সবই জানে শ্রেয়সী।কোন সন্তান তাদের নেই।অফিসের আর একজন সহকর্মীর সাথে উজানের বিয়ে হয়।অন্যদের মুখেই শুনেছে শ্রেয়সী,সন্তান না হওয়ার দোষটা উজানেরই।
 বিয়ের দশ বছর পর একটি কন্যা সন্তান দত্তক নেয় উজান ও তার স্ত্রী মানসী।
  মাধ্যমিক পরীক্ষার পর শ্রেয়সী মেয়েকে নিয়ে যখন শপিংমলে শপিং করছে তখন হঠাৎ করেই উজানের সাথে তার দেখা।সেও এসেছে তার মেয়ের জন্য কিছু কেনাকাটা করতে।আর তখনই শ্রেয়সীর মেয়ের আড়ালে উজান হাত জোড় করে শ্রেয়সীর কাছে ক্ষমা চায়।
    মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য ফর্ম ফিলাপ করতে গিয়ে শ্রেয়সী একটা জায়গা ফাঁকা রেখেছিল;আর সেটা হচ্ছে ফাদার্স নেম।
  হেড মিস্ট্রেস ফর্মটা আবার শ্রেয়সীর হাতে দিয়ে বললেন,
-- এখানে আপনার স্বামীর নামটা লিখুন।
-- নেই তো
-- নেই তো আপনাকে দেখেই বুঝতে পারছি।কিন্তু ফর্মে তো নামটা লাগবে।
--- যে নেই তার নাম কোথায় পাবো?
--- আপনার কথা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।আপনি আপনার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করতে এসেছেন।সন্তানের বাবার নামটা লিখতে বা বলতে আপনার এত অসুবিধা হচ্ছে কেন?
--- হয় আপনি বুঝতে পারছেন না নয় আমি আপনাকে বুঝাতে পারছি না।আমি বিয়ে করিনি।কিন্তু আমিই ওর মা।
 হেডমিস্ট্রেস চুপচাপ শ্রেয়সীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন।পাহাড় সমান প্রশ্ন তার মাথায় কিলবিল করছে।কিন্তু কোনো প্রশ্নই না করে শ্রেয়সীর মুখের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকলেন।
  কর্পোরেট দুনিয়ায় চাকুরীরত শ্রেয়সী ভালোবাসে তারই সহকর্মী উজানকে।দুই বাড়িতেই দু'জনকে মেনে নিয়েছে।বিয়ে ঠিকঠাক।পুরোদমে শপিং চলছে। হাতে গোনা মাত্র পনেরদিন বাকি।অফিস সেরে মাসতুত বোনের বাড়ি আইবুড়ো ভাত খেয়ে রাতে বেরোতে একটু দেরিই হয়ে গেছিলো।নিজেই ড্রাইভ করে ফিরছিলো।বাড়িতে মা একাই।বেশ কয়েকবার ফোনে মেয়েকে বলা হয়ে গেছে "সাবধানে আসিস"।ফিরছিলো বাইপাস ধরেই।
 বহুদূর থেকেই তার চোখ পড়ে রাস্তার একপাশে বেশ একটা জটলা।এত রাতে গাড়িটা থামাবে কিনা,কোন রকম বিপদ আসতে পারে কিনা বেশ কয়েকবার ভেবেও গাড়িটা একপাশে দাঁড় করিয়ে ভিড় ঠেলে এগিয়ে যায়।একজন দরিদ্র জীর্ণ বস্ত্র পরিহিতা ভদ্রমহিলা প্রসব যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছেন আর কিছু মানুষ তার এই যন্ত্রণায় দগ্ধ হওয়ার চিৎকার দাঁড়িয়ে দেখে চলেছে। অদূরে তার নজরে আসে প্লাস্টিকের ছাউনী দেওয়া একটা আস্তানা।সেখানে যারা দাঁড়িয়ে ছিলেন সকলেই পুরুষ সুতরাং তাদেরও ঠিক দোষও দেওয়া যায় না।এখন তো নানান সমস্যা।মানুষের উপকার করতে গেলেও প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে অনেক সময় দোষীও হয়ে যেতে হয়।
 দু'একজনের সহায়তায় ওই ভদ্রমহিলাকে নিয়ে শ্রেয়সী তখনই একটি সরকারি হাসপাতালে আসে।এর মধ্যে বারকয়েক মায়ের ফোন আসাতে কোনরকমে লাউস্পিকারে দিয়ে মাকে জানিয়ে দেয় ফিরতে রাত হবে।
 ভদ্রমহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করে বাড়ি ফিরতে রাত প্রায় দুটো।পরদিন অফিস যায় না।সকালে ফোন করে উজানকে সব জানায়।উজান চুপচাপ সব শোনে কিন্তু কোন কথার কোন উত্তর দেয় না।দুপুর বারোটা নাগাদ হাসপাতাল থেকে ফোন করে জানায় ভর্তিরত ওই ভদ্রমহিলা একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছেন।যেহেতু শ্রেয়সী তাকে ভর্তি করে নাম,ঠিকানা আর ফোন নম্বর দিয়ে এসেছিল তাই আজই তাকে দেখা করতে হবে।
 উজানকে ফোন করে সব জানায় সে।উজান আসে তো না ই উপরন্তু এই উটকো ঝামেলায় তাকে জড়াতে নিষেধ করে।মাকে রাতে ফিরেই সব জানিয়েছিল।মা তাকে খুব সমর্থন জানিয়েছিলেন এতবড় মানসিকতার পরিচয় দেওয়ার জন্য।উজানকে ফোন করার পর মাকে এখনকার বিষয়টি জানিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
 প্রথমেই সে আসে গতকাল যেখান থেকে তাকে তুলে নিয়ে হাসপাতাল ভর্তি করেছিলো সেখানে।কিন্তু প্লাস্টিক দিয়ে মোড়া ছাউনীর ভিতর ঢুকে কাউকেই সে দেখতে পেলো না।আশেপাশে কোন বাড়িঘরও তার চোখে পড়লো না।বড় বড় প্রায় আকাশ ছোঁয়া সব বিল্ডিং।এমন একজন নারীর খোঁজ তারা কেউ রাখবে না এটা নিশ্চিত।প্রচণ্ড চিন্তিত হয়ে পড়লো শ্রেয়সী।গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ভাবছে এখন সে কি করবে?হঠাৎ সেখান থেকে এক ভদ্রলোককে সাইকেল করে যেতে দেখে তাকে দাঁড় করিয়ে তার কাছ থেকেই জানতে পারে ভদ্রমহিলা মানসিক ভারসাম্যহীন।নিজেই কোথা থেকে ওই প্লাস্টিক জোগাড় করে রোদ বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচাতে ওই ব্যবস্থা করেছে।তাহলে প্রেগন্যান্ট?
 হায় ঈশ্বর!মানুষের কি রুচি!একজন মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকেউ হায়েনারা ছাড়েনি।
   কিন্তু সুস্থ্য,সুন্দর সমাজ একজন শিক্ষিত,সুন্দরী,মাস গেলে হাজার হাজার টাকা রোজগার করা মহিলাকে অনায়াসে একজন শিক্ষিত পুরুষের জীবন থেকে ছেটে ফেলতে পারে কারণ একটা জারজ সন্তানকে সে দত্তক নিলে "সমাজ কি ভাববে এই ভাবনায়।"


    

মানুষ চেনা বড় দায় (তৃতীয় পর্ব)

মানুষ চেনা বড় দায় (তৃতীয় পর্ব)

   নিকিতা বাস থেকে নেমে অদ্ভুতুড়ে লোকটা সম্পর্কে সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে অফিসে পৌঁছে দেখে অতনু তার টেবিলে কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করে চলেছে।"এ কিরে বাবা!লোকটা ম্যাজিক জানে নাকি?এত তাড়াতাড়ি কোথা থেকে অফিসে এসে ঢুকলো?
  সুন্দরী,স্মার্ট নিকিতা মনেমনে ভাবে এই মানুষটা সম্পর্কে সে যেন একটু বেশিই ভাবছে।যাক গে যাক -- আর পাঁচজন সাধারণ কর্মচারীর মত অতনু গায়েনও।তাকে নিয়ে এত ভাবার কোন মানে নেই।
  সেদিনের ঘটনার পড়ে ওই হলরুমে মিস্ত্রীদের কাজ চলছে।সব সময় ঠুকঠাক আওয়াজ লেগেই আছে।যে রুমে বসে অফিসের টেম্পোরারি কাজ চলছে সেই রুমে ছোট একটা বেসিন।আর সেই বেসিনে টিফিন খাওয়ার পর হাত,মুখ ধুতে রীতিমত একটা লাইন পড়ে যাচ্ছে।তাই টিফিন আওয়ারে নিকিতা খাবারটা খেয়ে ব্যাগের থেকে নিজের জলের বোতলটা বের করে নিয়ে বাইরেই হাত,মুখ ধুতে এসে অতনুর কান্ড দেখে তো সে থ। এ মানুষটা কি ধরনের ভেবেই সে পাচ্ছে না।বাইরে বেরিয়ে নিকিতা দেখে নিজের টিফিন বক্সটা তার বোগোলে ধরা আর হাতে একটা বড় প্লাস্টিকের ব্যাগ। যার ভিতর থেকে সে কেক বের করে অফিসে কাজ করতে আসা প্রত্যেক লেবারকে একটা করে কেক দিচ্ছে আর পাশে বড় একটা কেটলি থেকে কাগজের কাপে চা ঢেলে দিচ্ছে অফিসের বাইরে রাস্তার উপরে চায়ের স্টলের ছেলেটা।অথচ নিকিতা জানে লেবারদের এই টিফিনের টাকা তাদের যে কন্ট্রাক্টরের আন্ডারে তারা কাজ করছে তার।খামোখা লোকটা এই টাকা কেন এদের পিছনে খরচ করছে তা তার বোধগম্য হল না।

ক্রমশ --

Wednesday, June 22, 2022

সমাজ কি ভাববে

সমাজ কি ভাববে 

  ভুল একবারই হয়,বারবার করলে তা হয় অন্যায়।
   আজ সিঙ্গেল মাদার শ্রেয়সীর একমাত্র মেয়ে শ্রীপর্ণা মাধ্যমিকে প্রথম হওয়ায় তার ছোট্ট ফ্ল্যাটটিতে সাংবাদিকদের হুড়োহুড়ি লেগে গেছে।
  তিনদিনের শিশুটিকে গ্রহণ করার জন্য শ্রেয়সী অনেক কাকুটিমিনতি করেছিলো সেদিন উজানের কাছে।কিন্তু উজান শ্রেয়সীর কোন কথাই শোনেনি।তার একটাই কথা ছিল "আমাকে বিয়ে করতে হলে ওই বাচ্চাকে তুমি দত্তক নিতে পারবে না।অন্যের পাপের বোঝা আজীবন আমি টানতে পারবো না।"
  দশ বছর হল উজানের বিয়ে হয়েছে।এক অফিসে এখন না থাকলেও উজানের খবর সবই জানে শ্রেয়সী।কোন সন্তান তাদের নেই।অফিসের আর একজন সহকর্মীর সাথে উজানের বিয়ে হয়।অন্যদের মুখেই শুনেছে শ্রেয়সী,সন্তান না হওয়ার দোষটা উজানেরই।
 বিয়ের দশ বছর পর একটি কন্যা সন্তান দত্তক নেয় উজান ও তার স্ত্রী মানসী।
  মাধ্যমিক পরীক্ষার পর শ্রেয়সী মেয়েকে নিয়ে যখন শপিংমলে শপিং করছে তখন হঠাৎ করেই উজানের সাথে তার দেখা।সেও এসেছে তার মেয়ের জন্য কিছু কেনাকাটা করতে।আর তখনই শ্রেয়সীর মেয়ের আড়ালে উজান হাত জোড় করে শ্রেয়সীর কাছে ক্ষমা চায়।
    মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য ফর্ম ফিলাপ করতে গিয়ে শ্রেয়সী একটা জায়গা ফাঁকা রেখেছিল;আর সেটা হচ্ছে ফাদার্স নেম।
  হেড মিস্ট্রেস ফর্মটা আবার শ্রেয়সীর হাতে দিয়ে বললেন,
-- এখানে আপনার স্বামীর নামটা লিখুন।
-- নেই তো
-- নেই তো আপনাকে দেখেই বুঝতে পারছি।কিন্তু ফর্মে তো নামটা লাগবে।
--- যে নেই তার নাম কোথায় পাবো?
--- আপনার কথা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।আপনি আপনার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করতে এসেছেন।সন্তানের বাবার নামটা লিখতে বা বলতে আপনার এত অসুবিধা হচ্ছে কেন?
--- হয় আপনি বুঝতে পারছেন না নয় আমি আপনাকে বুঝাতে পারছি না।আমি বিয়ে করিনি।কিন্তু আমিই ওর মা।
 হেডমিস্ট্রেস চুপচাপ শ্রেয়সীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন।পাহাড় সমান প্রশ্ন তার মাথায় কিলবিল করছে।কিন্তু কোনো প্রশ্নই না করে শ্রেয়সীর মুখের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকলেন।
  কর্পোরেট দুনিয়ায় চাকুরীরত শ্রেয়সী ভালোবাসে তারই সহকর্মী উজানকে।দুই বাড়িতেই দু'জনকে মেনে নিয়েছে।বিয়ে ঠিকঠাক।পুরোদমে শপিং চলছে। হাতে গোনা মাত্র পনেরদিন বাকি।অফিস সেরে মাসতুত বোনের বাড়ি আইবুড়ো ভাত খেয়ে রাতে বেরোতে একটু দেরিই হয়ে গেছিলো।নিজেই ড্রাইভ করে ফিরছিলো।বাড়িতে মা একাই।বেশ কয়েকবার ফোনে মেয়েকে বলা হয়ে গেছে "সাবধানে আসিস"।ফিরছিলো বাইপাস ধরেই।
 বহুদূর থেকেই তার চোখ পড়ে রাস্তার একপাশে বেশ একটা জটলা।এত রাতে গাড়িটা থামাবে কিনা,কোন রকম বিপদ আসতে পারে কিনা বেশ কয়েকবার ভেবেও গাড়িটা একপাশে দাঁড় করিয়ে ভিড় ঠেলে এগিয়ে যায়।একজন দরিদ্র জীর্ণ বস্ত্র পরিহিতা ভদ্রমহিলা প্রসব যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছেন আর কিছু মানুষ তার এই যন্ত্রণায় দগ্ধ হওয়ার চিৎকার দাঁড়িয়ে দেখে চলেছে। অদূরে তার নজরে আসে প্লাস্টিকের ছাউনী দেওয়া একটা আস্তানা।সেখানে যারা দাঁড়িয়ে ছিলেন সকলেই পুরুষ সুতরাং তাদেরও ঠিক দোষও দেওয়া যায় না।এখন তো নানান সমস্যা।মানুষের উপকার করতে গেলেও প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে অনেক সময় দোষীও হয়ে যেতে হয়।
 দু'একজনের সহায়তায় ওই ভদ্রমহিলাকে নিয়ে শ্রেয়সী তখনই একটি সরকারি হাসপাতালে আসে।এর মধ্যে বারকয়েক মায়ের ফোন আসাতে কোনরকমে লাউস্পিকারে দিয়ে মাকে জানিয়ে দেয় ফিরতে রাত হবে।
 ভদ্রমহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করে বাড়ি ফিরতে রাত প্রায় দুটো।পরদিন অফিস যায় না।সকালে ফোন করে উজানকে সব জানায়।উজান চুপচাপ সব শোনে কিন্তু কোন কথার কোন উত্তর দেয় না।দুপুর বারোটা নাগাদ হাসপাতাল থেকে ফোন করে জানায় ভর্তিরত ওই ভদ্রমহিলা একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছেন।যেহেতু শ্রেয়সী তাকে ভর্তি করে নাম,ঠিকানা আর ফোন নম্বর দিয়ে এসেছিল তাই আজই তাকে দেখা করতে হবে।
 উজানকে ফোন করে সব জানায় সে।উজান আসে তো না ই উপরন্তু এই উটকো ঝামেলায় তাকে জড়াতে নিষেধ করে।মাকে রাতে ফিরেই সব জানিয়েছিল।মা তাকে খুব সমর্থন জানিয়েছিলেন এতবড় মানসিকতার পরিচয় দেওয়ার জন্য।উজানকে ফোন করার পর মাকে এখনকার বিষয়টি জানিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
 প্রথমেই সে আসে গতকাল যেখান থেকে তাকে তুলে নিয়ে হাসপাতাল ভর্তি করেছিলো সেখানে।কিন্তু প্লাস্টিক দিয়ে মোড়া ছাউনীর ভিতর ঢুকে কাউকেই সে দেখতে পেলো না।আশেপাশে কোন বাড়িঘরও তার চোখে পড়লো না।বড় বড় প্রায় আকাশ ছোঁয়া সব বিল্ডিং।এমন একজন নারীর খোঁজ তারা কেউ রাখবে না এটা নিশ্চিত।প্রচণ্ড চিন্তিত হয়ে পড়লো শ্রেয়সী।গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ভাবছে এখন সে কি করবে?হঠাৎ সেখান থেকে এক ভদ্রলোককে সাইকেল করে যেতে দেখে তাকে দাঁড় করিয়ে তার কাছ থেকেই জানতে পারে ভদ্রমহিলা মানসিক ভারসাম্যহীন।নিজেই কোথা থেকে ওই প্লাস্টিক জোগাড় করে রোদ বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচাতে ওই ব্যবস্থা করেছে।তাহলে প্রেগন্যান্ট?
 হায় ঈশ্বর!মানুষের কি রুচি!একজন মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকেউ হায়েনারা ছাড়েনি।
   কিন্তু সুস্থ্য,সুন্দর সমাজ একজন শিক্ষিত,সুন্দরী,মাস গেলে হাজার হাজার টাকা রোজগার করা মহিলাকে অনায়াসে একজন শিক্ষিত পুরুষের জীবন থেকে ছেটে ফেলতে পারে কারণ একটা জারজ সন্তানকে সে দত্তক নিলে "সমাজ কি ভাববে এই ভাবনায়।"


Tuesday, June 14, 2022

মানুষ চেনা দায় (দ্বিতীয় পর্ব)


 মানুষ চেনা দায় (দ্বিতীয় পর্ব)
 মাস দু'য়েক হল কিছু নূতন ছেলেমেয়ে অফিসে জয়েন করেছে।তাদের কাজগুলো নিকিতাকেই দেখতে হয়।এদের মধ্যে অতনু একটু অন্য ধরনের আর অন্যান্যদের থেকে তার বয়সটা একটু বেশিই মনেহয়।কথা কম বলে,চুপচাপ থাকতেই পছন্দ করে।খুব একটা কারো সাথে বিনা প্রয়োজনে কথাও বলে না।আপন মনেই কাজ করে চলে।দেখলেই বোঝা যায় সব সময় যেন ভাবের রাজ্যে বিচরণ করছে।
  গতকাল দুপুর তিনটে নাগাদ অফিসে যে যার চেয়ারে বসে কাজ করছিলো।অতনুর থেকে একটু দূরে রুফের একটা বিরাট সিমেন্টের অংশ ভেঙ্গে পড়ে।ঘটনা ঘটার জায়গা থেকে আশেপাশের সকলে প্রাণ বাঁচাতে এদিক ওদিক তখন ছুটছে।বেশ খানিকটা দূরেই ছিল নিকিতার টেবিল।এই হৈ হট্টগোলের মধ্যেও অতনু তার চেয়ারে বসে এক দৃষ্টিতে কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে কাজেই মগ্ন।অথচ স্টোন,বালি,সিমেন্ট তার টেবিলকেও রেহাই দেয়নি।রাগে গজগজ করতে করতে নিকিতা অতনুর টেবিলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
-- আচ্ছা আপনি কি কাজ ছাড়া কিছুই বোঝেন না?নাকি কানেই শুনতে পাননি এত বড় একটা সিমেন্টের চায় ভেঙ্গে পড়েছে!
 নিকিতার কথা শেষ হতে না হতেই অতনু চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় আর ঠিক তখনই রুফের আর একটা দিকের অংশ ভেঙ্গে পরে।অতনু হুমড়ি খেয়ে নিকিতার গায়ের উপর পড়ে।
 দুজনেই তাল সামলাতে না পেরে অন্য একটি টেবিলের কোণে ধাক্কা খেয়ে পুরো সিমেন্টের উপর।নিকিতা যত না ব্যথা পেয়েছে তার থেকে রাগ তার কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।সামনে যারা দাঁড়িয়ে ছিল তারা এসে দুজনকে ধরে তোলে।
 মাথা ঠিক রাখার মত অবস্থা তখন নিকিতার ছিল না।রেগেমেগে বেশ খানিকটা কথা অতনুকে তখন শুনিয়ে দেয়।পড়ে জানতে পারে অতনুর বাম হাতটা অনেকটা কেটে গেছে।
 বাসের সিটে বসে নিকিতা খেয়াল করে অতনুর বাম হাতটা একটা ব্যান্ডেজ বাঁধা।কিন্তু কি অদ্ভুত অফিসের স্টপেজ আসার আগেই চলন্ত বাস থেকে লাফ দিয়ে নেমে গেলো। নামবার সময় একটুর জন্যও নিকিতার দিকে তাকালো না যেন চেনেই না।নিকিতা মনেমনে ভাবলো "ভারী অদ্ভুত তো।"

ক্রমশ -
    

Monday, June 13, 2022

মানুষ চেনা দায় (প্রথম পর্ব)

মানুষ চেনা দায় (প্রথম পর্ব)

  গতকাল রাতে দক্ষিণী একটা মুভি দেখতে গিয়ে নিকিতার ঘুমাতে অনেকটা দেরি হয়ে গেছিলো।তাই আজ অ্যালার্ম বাজলেও তার ঘুম ভাঙ্গেনি।
 একটা নামী কোম্পানির কর্পোরেট অফিসে বেশ উচ্চ পদে আছে নিকিতা।একাই থাকে ফ্ল্যাটে।দুবছর হল এই এক কামরার ফ্ল্যাটটা কিনেছে সে ব্যাঙ্গালোর।অবশ্য তার বাবা দিয়েছেন অর্ধেক টাকা।মা,বাবা আর ভাই কলকাতা থাকে।বছর চারেক সে কলকাতায় কোন একটা নামী কোম্পানির হয়ে কাজ করেছে।উচ্চাকাঙ্খী নিকিতা চেষ্টা চালিয়ে গেছে বেটার কিছু পাওয়ার আশায়।এই চাকরিটা যখন ব্যাঙ্গালোর হয় তখন বাড়ির সকলের অমত ছিলো একা একা এত দুর কি করে থাকবে।তারপর অবশ্য সে সকলকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে।
 রোজ ন'টায় অফিস বেরোয় নিকিতা।কিন্তু আজ এত দেরিতে ঘুম ভাঙ্গলো সঠিক সময়ে অফিস পৌঁছাতে পারবে বলে তার মনেই হয় না।উঠেই তাড়াহুড়ো লাগিয়ে দিলো।তারমধ্যে দু, দু'বার আবার বাড়ির ফোন।রোজ অফিস যাওয়ার আগে ডিম,আলু সেদ্ধ দিয়ে ভাত খেয়ে যেতেই হয় মায়ের হুকুম।একবেলা অন্তত ভাত না খেলে নাকি মায়ের কথা অনুযায়ী শরীর দূর্বল হয়ে যাবে।কিন্তু আজ আর মাতৃ আদেশ পালন করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।তাড়াহুড়ো করে একটু জল গরম করে গুঁড়ো দুধ গুলে কনফ্লেক্স খেয়েই ছুটলো অফিসে।অনেকবার চেষ্টা করেছে একটা উবের বুক করতে।তিন তিনবার ক্যানসেল হল।শেষে অধৈর্য হয়ে বাসেই উঠে পড়লো।কিন্তু বাসটায় ভিড়ের চোটে পা দানিতেই পা দেওয়ার উপায় নেই।ভিতরে ঢোকা তো দুরস্ত!নিকিতার মনেহচ্ছে আজ অফিসে না গেলেই বোধহয় ভালো হত কারণ যে কোন মুহুর্তে পাদানি থেকে ও পড়ে যেতে পারে।হঠাৎ মনেহল কেউ যেন তার পিছন দিক থেকে একটা হাত দিয়ে তাকে ব্যারিকেড করে রেখেছে যাতে সে পড়ে না যায়।কিন্তু মাথা ঘুরিয়ে দেখার কোন সুযোগ নেই।কিছুদূর এইভাবে যাওয়ার পর বাসটা একটু যেন ফাঁকা হল মনেহল।নিকিতা বাসের ভিতরে ঢুকেই তার রক্ষাকারীকে খোঁজার চেষ্টা করতে লাগলো।বাসের এদিকওদিক খুঁজে হঠাৎ তার নজরে আসলো একটু দূরে ভীড়ে ঠাসা বাসে পরিচিত একটি মানুষের পিছনের দিকটি।কিন্তু ও কেন আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে? ওকে তো আমি কালকেও ----।

ক্রমশঃ 

Sunday, June 12, 2022

প্রাক্তন

প্রাক্তন 
   তোমার আমার পৃথিবী - হতেই পারতো এই সুন্দর পৃথিবীটা কিন্তু কেউ সাহস করে কারো কাছে এসে দাঁড়াতে সেদিন পারিনি।সত্যি কথা বলতে কি জানো দুজনেরই তখন বয়স ছিল অল্প।বুদ্ধি ছিল অপরিণত।
  মাত্র দুক্লাসের ব্যবধানে নন্দিতা ও সায়ন পড়ে।একই পাড়া হওয়ার সুবাদে দুজনের বন্ধুত্ব সেই ছেলেবেলা থেকে।বিকেলে পাড়ার মস্তবড় মাঠে ছেলেমেয়েরা একই সাথে খেলেধুলা করতো।সেই সময়ে সেই বয়সে এখনকার মত ছেলেমেয়েদের একসাথে মেলামেশায় অভিভাবকেরা খুব একটা খারাপ চোখে দেখতেন না কারণ তারা জানতেন তাদের বলে দেওয়া কথার অমর্যাদা ছেলেমেয়েরা করবে না।সব ক্ষেত্রেই যে সকল ছেলেমেয়েরা তারা তাদের বাবা,মায়ের কথা শুনতো তা কিন্তু নয়।তাদের মধ্যেও ভাব-ভালোবাসা গড়ে উঠতো।তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেশিদূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাহস কেউই দেখাতে পারতো না।
  আভাসে ইঙ্গিতে সায়ন বহুবার নন্দিতাকে বুঝাতে চেয়েছে যে সে তাকে ভালোবাসে।নন্দিতাও যে বোঝেনি তা মোটেই নয়।ভালো সেও সায়নকে বাসতো।কিন্তু খুব বোঝদার মেয়ে হওয়ার ফলে সে ভালোভাবেই জানতো তার রাশভারী বাবা কোনদিন এ সম্পর্ক মেনে নেবেন না।পরিণামে দুঃখই পেতে হবে তাকে।
 তবুও সায়ন দেশ ছাড়ার আগে নন্দিতার সাথে দেখা করার অনেক চেষ্টা করেও যখন সফল হয় না তখন তাদের কমন এক বন্ধুর মাধ্যমে নন্দিতার কাছে এক চিঠি পাঠায়।বাবার সম্মানের কথা ভেবে বুকে পাথর বেঁধে বন্ধুকে তার অক্ষমতার কথা জানিয়ে দিলেও সারাজীবন মনের কোন এক কোণে সে সায়নের জন্য একটা আলাদা জায়গা রেখেই দেয়।
 দুটি জীবনের বাঁক দুদিকে ঘুরে যায়।আলাদা আলাদা সংসারে যে যার মত করে জীবনের চারভাগের তিনভাগ কাটিয়ে দিলেও দুজনের মনেই রয়ে গেছে সেই ভালোবাসার দাগ।
তিন যুগেরও বেশি সময় কেটে গেছে জীবন থেকে তাদের।চোখের দৃষ্টি ঝাপসা,চুলেও পাক ধরেছে।এখন সকলেই অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সাহায্যেই সময় কাটায়।সেই সূত্র ধরেই সায়নের কাছে একটা রিকোয়েষ্ট আসে।পদবীটা আলাদা হলেও নামের প্রতি দুর্বলতা বশত সায়ন অনুরোধ গ্রহণ করেই নন্দিতার প্রোফাইলে ঢুকে দু,তিন বছর আগের পোষ্টকৃত একটি পুরনো ছবি দেখে নন্দিতাকে চিনতে পারে।ঠিক সেই মুহূর্তে নন্দিতাও অনলাইনে থাকার ফলে সায়ন ইনবক্সে তাকে কল করে।
 পুরনো দিনের কথা,এখনকার কথা চলতেই থাকে তারপর থেকে ঘণ্টার পর ঘন্টা রোজ নিয়ম করে দুবেলা।
 সব দায়িত্ব,কর্তব্য দুজনের জীবনে শেষ।সায়নের একমাত্র মেয়ের বিয়ের পর সে এখন লন্ডন প্রবাসী।দুই সন্তানের জননী সে।বাবার সাথে ভিডিও কলে সপ্তাহে তিন,চারদিন কথা হয়।আর নন্দিতার ছেলে কর্পোরেট দুনিয়ায় বিশাল মানুষ আজ।মাকে সময় দেওয়ার মত সময় তার হাতে আর নেই।তবে হ্যাঁ মা ফোন করলে "ভালো আছি"- কথাটা বলতে একটু দ্বিধাবোধ করে না।সে তার স্ত্রী আর ছেলে,মেয়ে নিয়েই সুখী।মায়ের জন্য আলাদা সময় তার নেই।
   সায়নের স্ত্রী দুরারোগ্য ক্যান্সারে আজ বছর দশেক হল সায়নকে ছেড়ে চলে গেছে।আর নন্দিতার স্বামী হার্ট অ্যাটাকে কিছুদিন হল নন্দিতাকে একা ফেলেই পাড়ি জমিয়েছেন অমৃতলোকে।
 চাওয়া-পাওয়ার উর্দ্ধেও মাঝে মাঝে কিছু থাকে আর এই থাকাটাই বোধহয় কখনো কখনো সেই অদৃশ্য হাতের ছোঁয়ায় শেষ বয়সে তার ইচ্ছাতেই দেখা কিংবা কথা হয়।
নন্দিতা সায়নকে অনুরোধ করে কানাডার বাড়ি বিক্রি করে সবকিছু মেয়েকে দিয়ে একবারে কলকাতা চলে আসতে।নিজেও ঠিক করে বাড়িঘর সবকিছু ছেলের নামে লিখে দিয়ে সেও অন্যত্র কোথাও চলে যাবে।ছেলে বহুদিন আগেই বাপের তৈরি বাড়ি ছেড়ে বিশাল ফ্ল্যাট নিয়ে অন্যত্র আছে তার পরিবার নিয়ে।
 যত সহজে তারা কথাগুলো ভেবেছিলো তত সহজে কিন্তু কাজটা হয়নি।তবে হ্যাঁ অনেক ঝড়-ঝাপটা পেরিয়ে তারা কাজটা শেষ পর্যন্ত করতে সক্ষম হয়েছে।
 পূর্ব কথা মত দেখা করে শেষ বয়সে দুজনেই আশ্রয় নেয় একটা বৃদ্ধাশ্রমে।ওই যে চাওয়া-পাওয়ার বাইরেও কিছু শ্বাশ্বত ইচ্ছা থাকে আর সেই ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে শেষ বয়সে এসে কিছুটা হলেও একটু সাহস দেখাতে হয় বৈকি!ছেলেমেয়েরা খোঁজ-খবর না নিলেও তারা তাদের অধিকার একবিন্দুও ছাড়তে রাজি হয় না।সেই ক্ষেত্রে শেষ বয়সে এসে একটু এডামেন্ট হয়েই নাহয় নিজের কথাই ভাবা যাক।

Saturday, June 11, 2022

প্রাক্তন (m)

প্রাক্তন (#ত্রিশদিনের_ত্রিশগল্প ১)
   তোমার আমার পৃথিবী - হতেই পারতো এই সুন্দর পৃথিবীটা কিন্তু কেউ সাহস করে কারো কাছে এসে দাঁড়াতে সেদিন পারিনি।সত্যি কথা বলতে কি জানো দুজনেরই তখন বয়স ছিল অল্প।বুদ্ধি ছিল অপরিণত।
  মাত্র দুক্লাসের ব্যবধানে নন্দিতা ও সায়ন পড়ে।একই পাড়া হওয়ার সুবাদে দুজনের বন্ধুত্ব সেই ছেলেবেলা থেকে।বিকেলে পাড়ার মস্তবড় মাঠে ছেলেমেয়েরা একই সাথে খেলেধুলা করতো।সেই সময়ে সেই বয়সে এখনকার মত ছেলেমেয়েদের একসাথে মেলামেশায় অভিভাবকেরা খুব একটা খারাপ চোখে দেখতেন না কারণ তারা জানতেন তাদের বলে দেওয়া কথার অমর্যাদা ছেলেমেয়েরা করবে না।সব ক্ষেত্রেই যে সকল ছেলেমেয়েরা তারা তাদের বাবা,মায়ের কথা শুনতো তা কিন্তু নয়।তাদের মধ্যেও ভাব-ভালোবাসা গড়ে উঠতো।তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেশিদূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাহস কেউই দেখাতে পারতো না।
  আভাসে ইঙ্গিতে সায়ন বহুবার নন্দিতাকে বুঝাতে চেয়েছে যে সে তাকে ভালোবাসে।নন্দিতাও যে বোঝেনি তা মোটেই নয়।ভালো সেও সায়নকে বাসতো।কিন্তু খুব বোঝদার মেয়ে হওয়ার ফলে সে ভালোভাবেই জানতো তার রাশভারী বাবা কোনদিন এ সম্পর্ক মেনে নেবেন না।পরিণামে দুঃখই পেতে হবে তাকে।
 তবুও সায়ন দেশ ছাড়ার আগে নন্দিতার সাথে দেখা করার অনেক চেষ্টা করেও যখন সফল হয় না তখন তাদের কমন এক বন্ধুর মাধ্যমে নন্দিতার কাছে এক চিঠি পাঠায়।বাবার সম্মানের কথা ভেবে বুকে পাথর বেঁধে বন্ধুকে তার অক্ষমতার কথা জানিয়ে দিলেও সারাজীবন মনের কোন এক কোণে সে সায়নের জন্য একটা আলাদা জায়গা রেখেই দেয়।
 দুটি জীবনের বাঁক দুদিকে ঘুরে যায়।আলাদা আলাদা সংসারে যে যার মত করে জীবনের চারভাগের তিনভাগ কাটিয়ে দিলেও দুজনের মনেই রয়ে গেছে সেই ভালোবাসার দাগ।
তিন যুগেরও বেশি সময় কেটে গেছে জীবন থেকে তাদের।চোখের দৃষ্টি ঝাপসা,চুলেও পাক ধরেছে।এখন সকলেই অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সাহায্যেই সময় কাটায়।সেই সূত্র ধরেই সায়নের কাছে একটা রিকোয়েষ্ট আসে।পদবীটা আলাদা হলেও নামের প্রতি দুর্বলতা বশত সায়ন অনুরোধ গ্রহণ করেই নন্দিতার প্রোফাইলে ঢুকে দু,তিন বছর আগের পোষ্টকৃত একটি পুরনো ছবি দেখে নন্দিতাকে চিনতে পারে।ঠিক সেই মুহূর্তে নন্দিতাও অনলাইনে থাকার ফলে সায়ন ইনবক্সে তাকে কল করে।
 পুরনো দিনের কথা,এখনকার কথা চলতেই থাকে তারপর থেকে ঘণ্টার পর ঘন্টা রোজ নিয়ম করে দুবেলা।
 সব দায়িত্ব,কর্তব্য দুজনের জীবনে শেষ।সায়নের একমাত্র মেয়ের বিয়ের পর সে এখন লন্ডন প্রবাসী।দুই সন্তানের জননী সে।বাবার সাথে ভিডিও কলে সপ্তাহে তিন,চারদিন কথা হয়।আর নন্দিতার ছেলে কর্পোরেট দুনিয়ায় বিশাল মানুষ আজ।মাকে সময় দেওয়ার মত সময় তার হাতে আর নেই।তবে হ্যাঁ মা ফোন করলে "ভালো আছি"- কথাটা বলতে একটু দ্বিধাবোধ করে না।সে তার স্ত্রী আর ছেলে,মেয়ে নিয়েই সুখী।মায়ের জন্য আলাদা সময় তার নেই।
   সায়নের স্ত্রী দুরারোগ্য ক্যান্সারে আজ বছর দশেক হল সায়নকে ছেড়ে চলে গেছে।আর নন্দিতার স্বামী হার্ট অ্যাটাকে কিছুদিন হল নন্দিতাকে একা ফেলেই পাড়ি জমিয়েছেন অমৃতলোকে।
 চাওয়া-পাওয়ার উর্দ্ধেও মাঝে মাঝে কিছু থাকে আর এই থাকাটাই বোধহয় কখনো কখনো সেই অদৃশ্য হাতের ছোঁয়ায় শেষ বয়সে তার ইচ্ছাতেই দেখা কিংবা কথা হয়।
নন্দিতা সায়নকে অনুরোধ করে কানাডার বাড়ি বিক্রি করে সবকিছু মেয়েকে দিয়ে একবারে কলকাতা চলে আসতে।নিজেও ঠিক করে বাড়িঘর সবকিছু ছেলের নামে লিখে দিয়ে সেও অন্যত্র কোথাও চলে যাবে।ছেলে বহুদিন আগেই বাপের তৈরি বাড়ি ছেড়ে বিশাল ফ্ল্যাট নিয়ে অন্যত্র আছে তার পরিবার নিয়ে।
 যত সহজে তারা কথাগুলো ভেবেছিলো তত সহজে কিন্তু কাজটা হয়নি।তবে হ্যাঁ অনেক ঝড়-ঝাপটা পেরিয়ে তারা কাজটা শেষ পর্যন্ত করতে সক্ষম হয়েছে।
 পূর্ব কথা মত দেখা করে শেষ বয়সে দুজনেই আশ্রয় নেয় একটা বৃদ্ধাশ্রমে।ওই যে চাওয়া-পাওয়ার বাইরেও কিছু শ্বাশ্বত ইচ্ছা থাকে আর সেই ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে শেষ বয়সে এসে কিছুটা হলেও একটু সাহস দেখাতে হয় বৈকি!ছেলেমেয়েরা খোঁজ-খবর না নিলেও তারা তাদের অধিকার একবিন্দুও ছাড়তে রাজি হয় না।সেই ক্ষেত্রে শেষ বয়সে এসে একটু এডামেন্ট হয়েই নাহয় নিজের কথাই ভাবা যাক।