Monday, September 20, 2021

একটু জলের আশায়

একটু জলের আশায়

 " এই বাড়িতে যতবারই এসেছি ততবারই গা ছমছম করা একটা অস্বস্তি বোধ করেছি --- "।কথাটা বলে দেবিকা নিজে বসে থাকা চেয়ারটা টেনে নিয়ে অমিতের আরো কাছে এগিয়ে গেলো।এটা দেখতে পেয়ে অমিত হেসে দিয়ে বললো,
--- এই দিনের বেলাতেও তোমার হাবভাব দেখে মনেহচ্ছে তোমার এখনো গা ছমছম করছে।
--- হ্যাঁ করছে তো। এ বাড়িতে ঢুকলেই আমার মনেহয় কেউ যেন আমার সাথে সাথেই আছে।দিদিমা যখন আমার নামে বাড়িটা উইল করলেন আমি বলেছিলাম তুমি বাড়িটা বিক্রি করে টাকাটা ফিক্সড করে দাও।আমি যখন দেশে ফিরবো তখন কিছুতেই ওই বাড়িতে আমি থাকবো না।আসলে দিদিমার তো আমি ছাড়া আর কেউ ছিলোনা।বাবা,মায়ের অ্যাক্সিডেন্টের পর আমার দাদু আমায় দার্জিলিং পাঠিয়ে দিলেন।ওখানকার পড়াশুনার পাট চুকিয়ে যখন ফিরে এলাম কলকাতায় তখন আবার উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠিয়ে দিলেন ব্রিটেন।মা একমাত্র মেয়ে ছিলেন দিদিমার।দাদুকে ছেলেবেলায় দেখেছি তবে মনে নেই।মায়ের সাথে যখন দিদিমার কাছে আসতাম তখন ছিলাম খুব ছোট।আর মা সাথে সাথেই থাকতেন।তাই তখনকার ফিলিংসটা আমার ঠিক মনে নেই।একটু বড় হওয়ার পরে যতবার দিদিমার সাথে দেখা করতে এসেছি ততবারই এই অদ্ভুত ফিলিংসটা আমার হয়েছে।
--- যদিও আমি এসব বিশ্বাস করিনা কিন্তু তুমি যখন বলছো অবিশ্বাসও করছি না।আসলে ছোটবেলা থেকেই এই ভূত-প্রেত ব্যাপারটা আমার বিশ্বাস হয় না।তবুও যখন বলছো বিষয়টা নিয়ে আমি আমার এক দূরসম্পর্কের ঠাকুমার সাথে আলোচনা করবো।আমাদের গ্রামের বাড়ির কাছেই ওনার বাড়ি।তোমায় নিয়েই একদিন যাবো ওখানে।শুনেছি উনি নাকি আত্মার অস্তিত্ব টের পান এবং আত্মার সাথে কথাও বলেন।
 অমিত ব্যানার্জী।দেবিকার প্রেমিক।দুজনে একসাথেই ব্রিটেন থেকে ফিরেছে।আগামী মাসেই বিয়ে।বিদেশেই আলাপ।দেবিকার দাদু আজও বেঁচে।তিনি এ বিয়েতে সানন্দে মত দিয়েছেন।কারণ অমিত তার নাতনীর জন্য উপযুক্ত পাত্র।
 দেবিকা পুরো বাড়িটা অমিতকে ঘুরিয়ে দেখায়।কলকাতা শহরে এত বড় বাড়ি সচরচর দেখা যায় না।বাড়িটা ঘুরে দেখতে দেখতে অমিত বলে ওঠে,
--- তোমার এই গা ছমছমে ব্যাপারটা না থাকলে আমরা এই বাড়িতেই আমাদের নূতন জীবন শুরু করতে পারতাম একটু ঘষামাজা করে।
--- বাড়িটা তো আমারও খুব প্রিয়।যদি তাই হয় তো খুব ভালো হয়।কিন্তু তার আগে চলো তোমার ওই ঠাকুমার কাছে একবার যাই।দেখি এই ব্যাপারটার কোন সুরাহা করা যায় কিনা। জানো অমিত বড় হয়ে যতবার এখানে এসেছি প্রতিবারই আমি দিদিমাকে এ কথাটা বলতাম।কিন্তু দিদিমা কোন উত্তর না দিয়ে শুধু চোখ ভরা জল নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতেন।দেখে মনেহত তিনি যেন এ রহস্যের মূল কারণটা জানতেন।শেষবার অন্যমনস্ক হয়ে বলেছিলেন, 'মায়া'।তারপর বহুবার জানতে চাওয়ার পরও কোন উত্তর দেননি।চোখ বন্ধ করে শুধু শুয়েই ছিলেন আর চোখ থেকে সমানে জল পড়ে গেছে।উনাকে দেখাশুনা করার জন্য যে দুজন মহিলা ছিলেন তারা দিদিমার ঘরে না থাকলে মাঝে মধ্যে তাদের মনে হয়েছে যে দিদিমা কারো সাথে কথা বলছেন।এসে জানতে চাইলে কখনোই স্বীকার করতেন না।বলতেন নাকি 'তোরা ভুল 'শুনেছিস''।
  অমিত দেবিকাকে সাথে নিয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে তার সেই ঠাকুমাকে নিয়ে আসে।বাড়িতে পা দিয়েই বৃদ্ধা বলে ওঠেন,"কেন পড়ে আছো তুমি এখানে?"অমিত আর দেবিকা দুজনেই কিছু বলতে যায় --- কিন্তু তিনি হাতের ইশারায় তাদের চুপ করতে বলেন।তিনি কি উত্তর পান সেই অশরীরীর কাছ থেকে তা তারা জানতে পারে না ঠিকই কিন্তু বৃদ্ধা তখন বলেন," ঠিক আছে তোমার কথামত কাজ হবে।কিন্তু তোমায় কথা দিতে হবে এই বাড়ি তোমার পরিত্যাগ করতে হবে।"
  অমিত,দেবিকা তার ঠিক পরদিন জোগাড়-যন্ত্র করে বৃদ্ধার কথামত বাবা,মায়ের শ্রাদ্ধের আয়োজন করে।কাজ শেষে বাগানের এক বড় আমগাছের একটা মোটা ডাল হঠাৎ করেই ভেঙ্গে পড়ে।বৃদ্ধা হেসে পড়ে বলেন, " যাক আত্মা এবার মুক্তি পেলো।এতকাল ধরে মেয়ের হাতের একটু জল পাওয়ার জন্য এই বাড়িটা জুড়েই সে ছিলো।তোমার দিদিমা সে কথা জানতেন।কিন্তু তিনি তোমায় এ কাজের কথা কোনদিন বলেননি তার কারণ তিনি চাননি তার মেয়ে তাকে ছেড়ে চলে যাক।আর এই কারণেই এ বাড়ি ছেড়ে তোমার দিদিমা কোথাও যেতেন না। হ্যাঁ তোমার বাবার আত্মা মুক্তি পেয়ে গেছিলো কিন্তু তোমার মায়ের আত্মা এই বাড়িটা ঘিরেই ছিলো।শুধু তোমার হাতের একটু জল পাওয়ার আশায়।

#আজকের_ব্লগিং_সূত্র

No comments:

Post a Comment