Thursday, December 24, 2020

সুখের ঘরে আগুন (দশম পর্ব)

সুখের  ঘরে  আগুন  ( দশম  পর্ব )
  
     তিনজনে  ছাদে  কথা  শেষ  করে  যে  যার  ঘরে  ঢুকে  যায়  | নিলয়  তার  ঘরে  শুতে  গিয়ে  দেখে  শালিনী  তখনও জেগে  সোফায়  বসে | নিলয়  ঘরে  ঢুকে  দরজা  বন্ধ  করে  বাথরুমে  চলে  যায় |
 শালিনী একইভাবে সোফায় বসে থাকে | নিলয় ঘরে ঢুকে আজ খাটের দিকে এগিয়ে যায় | শালিনী তখন বলে ওঠে,
--- অদ্ভুত মানুষ তো আপনি?আমি বসে আছি আপনার সাথে কথা বলবো বলে আর আপনি কোন কথা বলার বা শোনার প্রয়োজনীয়তাই বোধ করছেন না --|
 দাঁতে দাঁত টিপে মাথাটা অতিকষ্টে ঠান্ডা রেখে নিলয় উত্তর দিলো ,
--- আপনি কি করে আশা করেন আপনার কথা আমি শুনবো বা আমি কিছু আপনাকে বলবো?আপনার সাথে ফোনে সেদিন কথার পরে আর তো কোন কথা আপনার সাথে আমার থাকতে পারে না | যাহোক আমার খুব ঘুম পেয়েছে ; আমি এখন ঘুমাবো | আপনি কি সোফাতেই শোবেন?তাহলে আমি খাটে শুয়ে পড়বো | শালিনী কোন উত্তর না দিয়ে সেভাবেই বসে থাকে | নিলয় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে খাটের উপরেই ঘুমিয়ে পরে | আর বাকি রাতটা শালিনী সোফায় বসেই কাটিয়ে দেয় | 
  আজ তাদের অষ্টমঙ্গলা |বাইরে আলো দেখা দিলেই শালিনী স্নান সেরে জামাকাপড় ছেড়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায় | শ্বাশুড়ি তাকে দেখতে পেয়েই বলেন ,
--- বৌমা, দশটা পঁয়ত্রিশের মধ্যেই বেরিয়ে পড়তে হবে তোমাদের | নীলুকে ডেকে দাও আর তুমি রেডি হয়ে নাও | আমি তোমাদের টিফিনটা রেডি করছি | তুমি নীলুর চা টা নিয়ে যাও |
 ঝড়ের গতিতে দুহাতে কাজ করতে করতে মলিনাদেবী কথাগুলো বলে গেলেন | মুখে কোন কথা না বলে শুধু সম্মতিসূচক  ঘাড় নাড়িয়ে নিলয়ের চা টা নিয়ে শালিনী ঘরে যেতে যেতে ভাবে " কি করে লোকটাকে ঘুম থেকে ডেকে সে চা দেবে?ঘরে ঢুকে দেখে নিলয় অঘোরে ঘুমাচ্ছে |কিন্তু ডাকবে কি করে ?বহু চিন্তা করে সে তার একটা কসমেটিকসের কৌটো নিচুতে ফেলে দিলো | আর তাতেই কাজ হল | নিলয় হুড়মুড় করে উঠে বসলো | তার সামনে শালিনী চায়ের কাপটা এগিয়ে দিলো | নিলয়ের তখন রাগে সর্বশরীর জ্বলছে | তাকে ঘুম থেকে ডাকার জন্যই যে এই ফন্দি এটা সে বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে | বলতে ইচ্ছা করছে " ন্যাকামো করে আবার চা নিয়ে আসা হয়েছে |" আবার পরক্ষণেই ভাবছে " কি আর করবে হয়তো মা ই হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন |" খাট থেকে নেমে চা টা হাতে করেই সে বেরিয়ে যায় | মা  তার নীলুকে দেখতে পেয়েই চেঁচিয়ে বলে  ওঠেন ,
--- তাড়াতাড়ি  বেরোতে হবে কিন্তু , আজ পেপারটা একটু কম পড়িস | স্নান করে নে আমি তোদের টিফিন ----|
 কথা শেষ হয়না | নিলয় বলে ওঠে ,
--- মা , কি বলছো টা কি তুমি?স্নান করে খেয়ে কোথায় যাবো?আমার,আমার তো এখনো সাতদিন অফিস ছুটি |
 মলিনাদেবী হাসতে হাসতে ছেলের কাছে এসে বলেন ,
--- ওরে পাগল তোর যে আজ অষ্টমঙ্গলা |
 তোকে তো আজ তোর শ্বশুরবাড়ি যেতে হবে | 
 স্বামীকে দরজা দিয়ে ডাইনিংয়ে ঢুকতে দেখে বলেন ,
--- তোমার ছেলের কথা শোনো | আজ কোথায় যাবে জানতে চাইছে ?
 চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসতে বসতে তিনিও উৎসুক হয়ে জানতে চাইলেন ,
--- সবে ছেলেটার বিয়ে হল এর মধ্যে ওকে কোথায় পাঠাতে চাইছো?বৌমা সাথে যাবে তো ?
 অবাক হয়ে স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, "ওহ বলিহারি কপাল বটে আমার! আজ যে ওদের অষ্টমঙ্গলা ; নীলু   আজ শ্বশুরবাড়ি যাবে |
 --- ও তাই বলো | আমার মনে ছিল কিন্তু সবে ঘুম থেকে উঠে আসলাম বলে মুখে আসেনি কথাটা |
 নিলয় বাবার কথা শুনে মিটি মিটি হাসছিলো | এবার সে গম্ভীর মুখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো ,
--- মা, শালিনী  একাই যাক আমার শরীরটা ভালো লাগছে না |
--- তা হয়না বাবা ; এখানে জোড়ে যাওয়ায় নিয়ম |
--- অনেক তো নিয়মকানুন  হল  মা , এবার এসব বাদ দাও |
--- ব্যাস শুধু এটাই,আর কিছু বলবো না|
  শালিনী একদম রেডি হয়ে চলে আসে | তাকে দেখে মলিনাদেবী ওই তো বৌমা রেডি হয়ে গেছে | যা নীলু তুইও রেডি  হয়ে  নে| কথা দিচ্ছি এর পরে আর কোন নিয়মের বেড়াজাল তোকে ডিঙোতে হবে না |
 একটা ক্যাব বুক করে শালিনীকে নিয়ে নিলয় শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো | ক্যাবের ভিতরে দুজনের মাঝে দূরত্ব  যেন তাদের মনের দূরত্বকেও হার মানিয়ে দেয় | ক্যাবের ভিতর উঠেই নিলয় তার মোবাইল বের করে বুক পকেট থেকে হেয়ার ফোনটা বের করে আড়চোখে শালিনীকে একটু দেখে নিয়েই গান শুনতে শুরু করে | শালিনী বেশ কয়েকবার নিলয়কে কিছু বলার চেষ্টা করে | কিন্তু নিলয় চোখ বন্ধ করেই গান শুনতে থাকে | এবার শালিনী খুব ভালোভাবেই বুঝে যায় নিলয় তার সাথে কথা বলবেনা বলেই ইচ্ছাকৃত কানে হেডফোন গুঁজে রয়েছে |

 ক্রমশঃ-

No comments:

Post a Comment