শুধু ভালোবাসি
ভালোবাসা যায় এভাবেও ---
যা পাইনি রিয়া তা নিয়ে প্রথম প্রথম ভীষণ দুঃখ ছিল,কষ্ট ছিল। কিন্তু জানো এক সময় নিজেই উপলব্ধি করলাম আমি তো তোমায় ভালবাসতাম, তাহলে তোমায় নিজের করে পাইনি বলে আমার এত কষ্ট কেন হচ্ছে? প্রতিদিন তোমার খবর পাচ্ছি, ফেসবুকে তোমার ছবি দেখছি। যেহেতু তোমায় ভালোবাসি আমি তো তোমায় সুখী দেখতেই চেয়েছিলাম। সেটাই যদি হয় আমার এই কষ্ট পাওয়ার তো কোন মানেই হয় না। আর ঠিক তখনই তোমাকে নিজের করে না পাওয়ার কষ্টটা আস্তে আস্তে কমতে থাকলো আর তোমার প্রতি ভালোবাসাটা দিনকে দিন বাড়তে থাকলো।
হ্যাঁ তুমি জানতে চাইতেই পারো আমি কেন বিয়ে করিনি। আসলে আমার জীবনের প্রথম প্রেম ছিলে তুমি। তোমাকে নিয়ে যে স্বপ্নগুলো আমি দেখেছিলাম সেই স্বপ্ন আমি অন্য কাউকে নিয়ে পূরণ করতে গেলে প্রতি পদেপদে ঠোকর খেতাম; তোমাকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন অন্যকে দিয়ে কি পূরণ হত বলো? তাই ওই রাস্তায় আমি আর হাঁটিনি। আর ঠিক এইভাবেই তোমাকে ভালোবেসে আমি বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারবো। প্রকৃত ভালোবাসায় শরীর থাকে না থাকে ভালোবাসার জন্যই ভালোবাসা।
রিয়া আর সৌম্য একই পাড়ার দুটি কিশোর কিশোরী। ছেলেবেলা থেকেই দু'জন দু'জনের বন্ধু। রিয়া চ্যাটার্জী আর সৌম্য দাস। দু'জনের মিলনের পথে এটাই ছিল প্রতিবন্ধকতা। সৌম্যর বাড়িতে রাজি থাকলেও রিয়ার বাড়িতে এই অসবর্ণ বিয়েতে কিছুতেই রাজি হয়নি। রিয়া সৌম্যকে বলেছিল পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে। কিন্তু সেক্টর ফাইভে কর্মরত মোটা মাইনের চাকরি করা সৌম্য চায়নি রিয়াকে তার প্রিয়জনদের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে।
রিয়ার বিয়ে হয়ে যায় বয়সে দশ বছরের বড় স্কুল শিক্ষক সুনীলের সাথে। একটি সন্তান হওয়ার পর সুনীলের হঠাৎ স্ট্রোক হয়।বাম অঙ্গ পুরো অসার হয়ে যায়। তখন রিয়া প্রাইভেট পড়িয়ে ছেলেকে মানুষ করতে থাকে সাথে সুনীলের ব্যয়বহুল চিকিৎসা যা প্রায় অসম্ভব ছিল। পরিণতি বত্রিশ বছর বয়সেই রিয়া সুনীলকে হারায়।
ছেলে এখন বি.কম করছে। এখন মায়ের মত সেও প্রচুর টিউশনি করে। সৌম্য একের পর এক চাকরি ছেড়েছে ভালো অফার পেয়ে। এখন সৌম্য সুইজারল্যান্ড। বাবা গত হলেও মা এখনো জীবিত। এখনো রোজই ছেলের মাথার পোকা তুলে খান বিয়ে করার জন্য। সৌম্য যখন দেশে ফেরে তখন সে মাকে নিয়েই মাসখানেক কলকাতা তাদের পুরনো বাড়িতে কাটিয়ে যায়।
ফেসবুকে সৌম্য ,রিয়া বন্ধু থাকলেও কেউ কোনদিন কারো ব্যক্তিগত কথা কারো সাথেই শেয়ার করেনি। কিন্তু দু'জনেই দু'জনের খবর সব জানতো কমন বন্ধুদের মাধ্যমে।এবার দেশে ফেরার আগে সৌম্য জানিয়েই এসেছিলো রিয়ার সাথে দেখা করতে চায়। তাই বহু বছর বাদে পুরনো কফিশপে দু'জনের দেখা।
কথা হয় কম, নীরবতায় বেশি। নীরবতায় যেন তাদের মনের সব কথা বলে যাচ্ছে। রিয়ার দু'একটি প্রশ্নের উত্তরে সৌম্য যেটুকু বললো রিয়া তাই শুধু শুনে গেলো।
কথা শেষে বেরিয়ে যাওয়ার আগে দু'জনের বুক চিরে দুটি দীর্ঘনিশ্বাস বেরিয়ে এলো যা দু'জন এত কাছে থেকেও টের পেলো না নিজেরা ছাড়া!
No comments:
Post a Comment