সহজে মানুষ চেনা যায় না( আলো আঁধার)
প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছিলাম সম্রাটকে। দাদার বিয়েতে প্রথম দেখা। লতায়পতায় সম্পর্কে বৌদির ভাই। দাদার বিয়ের পর নানান সূত্রে তার সাথে দেখা হত। আমি তখন সবে মাধ্যমিক দেবো।আর সম্রাট উচ্চমাধ্যমিক। আমার এই ভালো লাগাটা সম্রাট বুঝতে পেরেছিল কিনা আমি জানিনা। তবে সে একদিন ঠিক সুযোগ বুঝে তার মনের কথাটা আমায় জানিয়েছিল।
সম্রাটের মুখে ' ভালোবাসি ' কথাটা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেছিলাম।ও হঠাৎ করেই আমার হাত ধরে বলেছিল,
--- দিদির বিয়েতে প্রথম দেখে তোমায় খুব ভালো লেগেছিলো। সেই থেকে ভালোলাগাটা একটু একটু করে কখন যে ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। অনেকদিন ধরেই কথাটা তোমায় বলবো ভাবছি কিন্তু সেই সুযোগ আর আসেনি।
আমি তো তখন লজ্জা আর ভালোলাগা মিশিয়ে ঠকঠক করে কাঁপছি। কোন রকমে চোখ তুলে তার মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি দিয়ে হাত ছাড়িয়ে পালালাম। সেই শুরু।
সম্রাটকে যেমন দেখতে,পড়াশুনায়ও ঠিক তেমনই। সম্রাট যখন কথা বলে তখন ওর গলার আওয়াজ আমার কাছে এতটাই ভালোলাগে আমি মুগ্ধ হয়ে শুধু তাকিয়েই থাকি। সুন্দর গান করে, আবৃত্তি করে। যাকে বলে অলরাউন্ডার।
একটু একটু করে সম্রাট আর আমার ভালোবাসার পাঁপড়ি মেলতে শুরু করলো। আমিও নেহাৎ মন্দ ছিলাম না পড়াশুনায়। সম্রাট যখন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ভালো চাকরি পেয়ে গেলো আমিও কিছুদিনের মধ্যে একটা প্রাইভেট ফার্মে ঠিক চাকরি যুঠিয়ে নিলাম।
দুই বাড়ির মতেই বেশ ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেলো। স্বপ্নের মত দিনগুলি চলে যেতে লাগলো।
নিজের ভাগ্যের প্রতি মাঝে মাঝে নিজেরই হিংসা হত। বিয়ের ঠিক দুবছরের মাথায় সুইজারল্যান্ডে সম্রাটের বিশাল চাকরির অফার। আমি রাজি থাকলেও আমার বাড়ি কিংবা সম্রাটদের বাড়ির কেউ রাজি ছিলো না সম্রাটের এই চাকরি অ্যাকসেপ্ট করার। কিন্তু আমার ও সম্রাটের যেহেতু দু'জনেরই মত আছে তাই কারো অমতই ঢপে টিকলো না। সম্রাট সুইজারল্যান্ড চলে গেলো। ছ'মাস পড়ে এসে আমায় সাথে নিয়ে যাবে। প্রতিটা মুহূর্তে চোখ বুঝে সুইজারল্যান্ডের মাটিতে দু'জনের সুখী জীবনের স্বপ্ন সফল করে চলেছি। রোজই সম্রাটের সাথে ফোনে কখনো ভিডিও কল কখনো বা এমনিই কথা হয়।
ঠিক একবছরের মাথায় সম্রাট আমায় নিতে আসে।কিন্তু তার আগে অনেকবার ফোনে তার সাথে আমারo ঝামেলা হয়ে গেছে। এখন সে রোজ ফোন করে না, করলেও অল্প সময় কথা বলে। আগের সেই উৎফুল্লতা,আবেগ,অনুভূতি সব যেন কোথায় হারিয়ে গেছে।
সুইজারল্যান্ডে পৌঁছে মন দিয়ে নিজের সংসার গুছিয়ে নেওয়ার জন্য আমি যখন ব্যস্ত তখন প্রতি মুহূর্তে সম্রাটের ভিতর আমূল পরিবর্তন দেখতে পাই। মাঝে মধ্যেই নেশায় বুদ হয়ে ঘরে ফেরে। কোথায় তার গান,কবিতা? সবকিছু তার জীবন থেকে তো বটেই আমার জীবন থেকেই একটু একটু করে সম্রাট হারিয়ে যেতে থাকলো। নিত্য নতুন নারী সঙ্গ যে তার জীবনে আসছে তা তার গতিবিধি দেখেই বুঝতে পারতাম। অনেক বুঝিয়েছি ; মানাভিমান, ঝগড়াঝাঁটি করেও কোন ফল হয়নি। জীবনে হঠাৎ করে অতিরিক্ত অর্থ সম্রাটের জীবনটাই শেষ করে দিলো। ভালোবাসায় যে আলোর দিশা সম্রাটের ভিতর দেখতে পেয়েছিলাম তা হঠাৎ করেই অন্ধকারে ঢেকে দিলো।সম্রাটের কাছে টেকাই আমার দায় হয়ে পড়ল।শেষে বাড়ির সাথে যোগাযোগ করে একদিন সম্রাটকে না জানিয়েই পুনরায় কলকাতা ফিরে আসা।