Tuesday, October 18, 2022

সহজে মানুষ চেনা যায় না



  সহজে মানুষ চেনা যায় না( আলো আঁধার)

  প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছিলাম সম্রাটকে। দাদার বিয়েতে প্রথম দেখা। লতায়পতায় সম্পর্কে বৌদির ভাই। দাদার বিয়ের পর নানান সূত্রে তার সাথে দেখা হত। আমি তখন সবে মাধ্যমিক দেবো।আর সম্রাট উচ্চমাধ্যমিক। আমার এই ভালো লাগাটা সম্রাট বুঝতে পেরেছিল কিনা আমি জানিনা। তবে সে একদিন ঠিক সুযোগ বুঝে তার মনের কথাটা আমায় জানিয়েছিল।
 সম্রাটের মুখে ' ভালোবাসি ' কথাটা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেছিলাম।ও হঠাৎ করেই আমার হাত ধরে বলেছিল,
--- দিদির বিয়েতে প্রথম দেখে তোমায় খুব ভালো লেগেছিলো। সেই থেকে ভালোলাগাটা  একটু একটু করে কখন যে ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। অনেকদিন ধরেই কথাটা তোমায় বলবো ভাবছি কিন্তু সেই সুযোগ আর আসেনি। 
 আমি তো তখন লজ্জা আর ভালোলাগা মিশিয়ে ঠকঠক করে কাঁপছি। কোন রকমে চোখ তুলে তার মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি দিয়ে হাত ছাড়িয়ে পালালাম। সেই শুরু।
 সম্রাটকে যেমন দেখতে,পড়াশুনায়ও ঠিক তেমনই। সম্রাট যখন কথা বলে তখন ওর গলার আওয়াজ আমার কাছে এতটাই ভালোলাগে আমি মুগ্ধ হয়ে শুধু তাকিয়েই থাকি। সুন্দর গান করে, আবৃত্তি করে। যাকে বলে অলরাউন্ডার। 
  একটু একটু করে সম্রাট আর আমার ভালোবাসার পাঁপড়ি মেলতে শুরু করলো। আমিও নেহাৎ মন্দ ছিলাম না পড়াশুনায়। সম্রাট যখন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ভালো চাকরি পেয়ে গেলো আমিও কিছুদিনের মধ্যে একটা প্রাইভেট ফার্মে ঠিক চাকরি যুঠিয়ে নিলাম।
 দুই বাড়ির মতেই বেশ ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেলো। স্বপ্নের মত দিনগুলি চলে যেতে লাগলো। 
 নিজের ভাগ্যের প্রতি মাঝে মাঝে নিজেরই হিংসা হত। বিয়ের ঠিক দুবছরের মাথায় সুইজারল্যান্ডে সম্রাটের বিশাল চাকরির অফার। আমি রাজি থাকলেও আমার বাড়ি কিংবা সম্রাটদের বাড়ির কেউ রাজি ছিলো না সম্রাটের এই চাকরি অ্যাকসেপ্ট করার। কিন্তু আমার ও সম্রাটের যেহেতু দু'জনেরই মত আছে তাই কারো অমতই ঢপে টিকলো না। সম্রাট সুইজারল্যান্ড চলে গেলো। ছ'মাস পড়ে এসে আমায় সাথে নিয়ে যাবে। প্রতিটা মুহূর্তে চোখ বুঝে সুইজারল্যান্ডের মাটিতে দু'জনের সুখী জীবনের স্বপ্ন সফল করে চলেছি। রোজই সম্রাটের সাথে ফোনে কখনো ভিডিও কল কখনো বা এমনিই কথা হয়।
  ঠিক একবছরের মাথায় সম্রাট আমায় নিতে আসে।কিন্তু তার আগে অনেকবার ফোনে তার সাথে আমারo ঝামেলা হয়ে গেছে। এখন সে রোজ ফোন করে না, করলেও অল্প সময় কথা বলে। আগের সেই উৎফুল্লতা,আবেগ,অনুভূতি সব যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। 
  সুইজারল্যান্ডে পৌঁছে মন দিয়ে নিজের সংসার গুছিয়ে নেওয়ার জন্য আমি যখন ব্যস্ত তখন প্রতি মুহূর্তে সম্রাটের ভিতর আমূল পরিবর্তন দেখতে পাই। মাঝে মধ্যেই নেশায় বুদ হয়ে ঘরে ফেরে। কোথায় তার গান,কবিতা? সবকিছু তার জীবন থেকে তো বটেই আমার জীবন থেকেই একটু একটু করে সম্রাট হারিয়ে যেতে থাকলো। নিত্য নতুন নারী সঙ্গ যে তার জীবনে আসছে তা তার গতিবিধি দেখেই বুঝতে পারতাম। অনেক বুঝিয়েছি ; মানাভিমান, ঝগড়াঝাঁটি করেও কোন ফল হয়নি। জীবনে হঠাৎ করে অতিরিক্ত অর্থ সম্রাটের জীবনটাই শেষ করে দিলো। ভালোবাসায় যে আলোর দিশা সম্রাটের ভিতর দেখতে পেয়েছিলাম তা হঠাৎ করেই অন্ধকারে ঢেকে দিলো।সম্রাটের কাছে টেকাই আমার দায় হয়ে পড়ল।শেষে বাড়ির সাথে যোগাযোগ করে একদিন সম্রাটকে না জানিয়েই পুনরায় কলকাতা ফিরে আসা।

    

Saturday, October 15, 2022

ভাগ্যরেখা



 ভাগ্যরেখা      (সুখ - দুঃখ)

  জীবনটা শুরু হয়েছিল একভাবে। তখন ভেবেছিলাম নিজের জীবন নিজেই গড়ে নিতে পারবো। পড়াশুনায় ভালো ছিলাম, বাবার আর্থিক ক্ষমতা ছিল। লোকে আমাকে সুন্দরী, বুদ্ধিমতীই বলতো। কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় আর এক।সবই ঠিকঠাক চলছিল। মাধ্যমিকে বেশ কয়েকটি লেটার নিয়ে পাশ করলাম। বাবার আমাকে নিয়ে খুব গর্ব ছিল।শুধু বাবা কেন পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও আমাকে নিয়ে গর্বের শেষ ছিল না। নিজের ইচ্ছা এবং বাবার দেখানো স্বপ্ন নিয়ে ভবিষ্যতে একজন ডাক্তার হিসেবে নিজেকে কল্পনা করতাম। জীবন ছিল সুখী,সচ্ছল,উচ্ছল।
  কিন্তু এ সুখ আমার কপালে বিধাতা লিখেছিলেন সাময়িক। ভাগ্য লেখার দোয়াত-কলম যে ছিল তার হাতে। শুরুতে তিনি আমাকে সবকিছু দিয়েও আচমকা সবকিছুই কেড়ে নিলেন। উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ার আগেই হঠাৎ আসা ঝড়ে সব তছনছ করে দিলো। একদিন রাতে ঘুমের মধ্যেই চলে গেলেন বাবা। জীবনের মোড় ঘুরে গেলো অন্যখাতে। উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন গেলো ভেঙ্গে। একান্নবর্তী পরিবারের মধ্যে দেখা দিলো ফাটোল। বাবা পরিবারের মেজ ছেলে হলেও যেহেতু ভালো চাকরি করতেন কাকা,জ্যাঠার থেকে তিনি বেশি সংসার খরচটা দিতেন। অন্যান্যরা সংসারের পিছনে খুব একটা অর্থ খরচ করতেন না। ভাইদের মধ্যে মিল ছিল ভীষণ।
   কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেলো সবই ছিলো বালির বাঁধ।বলতে গেলে যেহেতু বাবার টাকায় সংসারটা চলতো তাই সকলেই বাবার কথা শুনে চলতেন। উপর উপর সকলেরই একটা মিষ্টির প্রলেপ দেওয়া ছিল।
  বাবার সমস্ত কাজকর্ম মিটে যাওয়ার পর হঠাৎ করেই একদিন সকলের হাঁড়ি আলাদা হয়ে গেলো। আমি, মা আর ভাই। কী করে কী হবে ভেবে ভেবে দিনরাত মা আর আমি প্রায় পাগল হওয়ার পথে। পেটে বিদ্যা কম তাই টিউশনি করেও বিশেষ কোন লাভ হয় না।তবুও নিজের পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ছোট ছোট কয়েকটা বাচ্চা পড়াতে শুরু করলাম। একটা একটা করে মায়ের গয়না বিক্রি হতে লাগলো। 
  চরম দরিদ্রতার ভিতর উচ্চমাধ্যমিকে খুব ভালো ফল করলাম। কিন্তু জয়েন্টে বসার মত আর্থিক সামর্থ না থাকায় অঙ্কে অনার্স নিয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। তখন মায়ের গয়নাও শেষ।ভাই তখনো মাধ্যমিক দেয়নি। পড়াশুনা আমার বন্ধ হওয়ার পথে তখন। সবকিছু শুনে পাড়ার ক্লাব আর স্কুলের কয়েকজন শিক্ষকের সহয়তায় আমি কলেজে ভর্তি হলাম অঙ্কে অনার্স নিয়ে।
  আমি যখন দ্বিতীয় বর্ষ তখন মা চলে গেলেন আমাকে আর ভাইকে ছেড়ে। ভাই তখন সবে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে। পাড়ার কিছু সহৃদয় ব্যক্তি,কয়েকটি ক্লাব আর স্কুল কলেজের শিক্ষকদের সহয়তায় আমি বেশ ভালোভাবেই পাশ করে গেলাম। জীবনের প্রতি পদেপদে ঠোক্কর খেতে খেতে যখন এই জায়গায় এসে দাঁড়ালাম তার ঠিক তিন মাসের মাথায় ওই কলেজেই আমি পার্টটাইম জব পেয়ে গেলাম স্যার আর ম্যামদের সহায়তায়। 
  বছর দুয়েক বাদে আমার চাকরিটা পার্মানেন্ট হয়।ভাই এখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। জীবনে সব আশা পূরণ না হলেও একটা জায়গায় এসে আজ দাঁড়াতে পেরেছি। কিন্তু যে দুটো মানুষ বেঁচে থাকলে সব থেকে খুশি হতেন তারাই আজ আমার জীবনে নেই। মাঝে মাঝে ভীষণ মন খারাপ হলেও ভাইকে নিয়ে সব কষ্ট ভুলে ভালো থাকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে আমাকে যেতেই হবে।
 

Friday, October 14, 2022

শুধু ভালোবাসি

শুধু ভালোবাসি

ভালোবাসা যায় এভাবেও --- 
 যা পাইনি রিয়া তা নিয়ে প্রথম প্রথম ভীষণ দুঃখ ছিল,কষ্ট ছিল। কিন্তু জানো এক সময় নিজেই উপলব্ধি করলাম আমি তো তোমায় ভালবাসতাম, তাহলে তোমায় নিজের করে পাইনি বলে আমার এত কষ্ট কেন হচ্ছে? প্রতিদিন তোমার খবর পাচ্ছি, ফেসবুকে তোমার ছবি দেখছি। যেহেতু তোমায় ভালোবাসি আমি তো তোমায় সুখী দেখতেই চেয়েছিলাম। সেটাই যদি হয় আমার এই কষ্ট পাওয়ার তো কোন মানেই হয় না। আর ঠিক তখনই তোমাকে নিজের করে না পাওয়ার কষ্টটা আস্তে আস্তে কমতে থাকলো আর তোমার প্রতি ভালোবাসাটা দিনকে দিন বাড়তে থাকলো।
 হ্যাঁ তুমি জানতে চাইতেই পারো আমি কেন বিয়ে করিনি। আসলে আমার জীবনের প্রথম প্রেম ছিলে তুমি। তোমাকে নিয়ে যে স্বপ্নগুলো আমি দেখেছিলাম সেই স্বপ্ন আমি অন্য কাউকে নিয়ে পূরণ করতে গেলে প্রতি পদেপদে ঠোকর খেতাম; তোমাকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন অন্যকে দিয়ে কি পূরণ হত বলো? তাই ওই রাস্তায় আমি আর হাঁটিনি। আর ঠিক এইভাবেই তোমাকে ভালোবেসে আমি বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারবো। প্রকৃত ভালোবাসায় শরীর থাকে না থাকে ভালোবাসার জন্যই ভালোবাসা।
 রিয়া আর সৌম্য একই পাড়ার দুটি কিশোর কিশোরী। ছেলেবেলা থেকেই দু'জন দু'জনের বন্ধু। রিয়া চ্যাটার্জী আর সৌম্য দাস। দু'জনের মিলনের পথে এটাই ছিল প্রতিবন্ধকতা। সৌম্যর বাড়িতে রাজি থাকলেও রিয়ার বাড়িতে এই অসবর্ণ বিয়েতে কিছুতেই রাজি হয়নি। রিয়া সৌম্যকে বলেছিল পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে। কিন্তু সেক্টর ফাইভে কর্মরত মোটা মাইনের চাকরি করা সৌম্য চায়নি রিয়াকে তার প্রিয়জনদের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে। 
 রিয়ার বিয়ে হয়ে যায় বয়সে দশ বছরের বড় স্কুল শিক্ষক সুনীলের সাথে। একটি সন্তান হওয়ার পর সুনীলের হঠাৎ স্ট্রোক হয়।বাম অঙ্গ পুরো অসার হয়ে যায়। তখন রিয়া প্রাইভেট পড়িয়ে ছেলেকে মানুষ করতে থাকে সাথে সুনীলের ব্যয়বহুল চিকিৎসা যা প্রায় অসম্ভব ছিল। পরিণতি বত্রিশ বছর বয়সেই রিয়া সুনীলকে হারায়।
 ছেলে এখন বি.কম করছে। এখন মায়ের মত সেও প্রচুর টিউশনি করে। সৌম্য একের পর এক চাকরি ছেড়েছে ভালো অফার পেয়ে। এখন সৌম্য সুইজারল্যান্ড। বাবা গত হলেও মা এখনো জীবিত। এখনো রোজই ছেলের মাথার পোকা তুলে খান বিয়ে করার জন্য। সৌম্য যখন দেশে ফেরে তখন সে মাকে নিয়েই মাসখানেক কলকাতা তাদের পুরনো বাড়িতে কাটিয়ে যায়।
  ফেসবুকে সৌম্য ,রিয়া বন্ধু থাকলেও কেউ কোনদিন কারো ব্যক্তিগত কথা কারো সাথেই শেয়ার করেনি। কিন্তু দু'জনেই দু'জনের খবর সব জানতো কমন বন্ধুদের মাধ্যমে।এবার দেশে ফেরার আগে সৌম্য জানিয়েই এসেছিলো রিয়ার সাথে দেখা করতে চায়। তাই বহু বছর বাদে পুরনো কফিশপে দু'জনের দেখা।
 কথা হয় কম, নীরবতায় বেশি। নীরবতায় যেন তাদের মনের সব কথা বলে যাচ্ছে। রিয়ার দু'একটি প্রশ্নের উত্তরে সৌম্য যেটুকু বললো রিয়া তাই শুধু শুনে গেলো।
  কথা শেষে বেরিয়ে যাওয়ার আগে দু'জনের বুক চিরে দুটি দীর্ঘনিশ্বাস বেরিয়ে এলো যা দু'জন এত কাছে থেকেও টের পেলো না নিজেরা ছাড়া!



 
 

লক্ষী বৌমা

  লক্ষ্মী বৌমা 

অবশেষে এলো সেই দিন --
  একার হাতে সবকিছু।সুতরাং আমাকে সেই কাক ডাকা ভোরেই প্রতিদিন উঠতে হয়।শ্বাশুড়ী মা বাতের রোগী।সারাটা রাত তিনি যন্ত্রণায় কষ্ট পান।ভোরের দিকে তাই ঘুমিয়ে পড়েন।সংসারের কোন কাজই তিনি করতে পারেন না। স্বামীর অফিসের তাড়া থাকে।তিনি আটটায় উঠে কোন রকমে স্নান,খাওয়া সেরে অফিসের উদ্দেশ্যে ছুটতে থাকেন।যেতে আসতেই তার চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় চলে যায়। তারপর বাবাইয়ের টিফিন করা, সাড়ে ন'টায় তার বাস আসে তার আগেই তাকে রেডি করে ঠিক সময়ে তাকে নিয়ে ছুটতে হয় বড় রাস্তার মোড়ে। বাসে তুলে দিয়েই দৌড়াতে দৌড়াতে ঘরে ফিরেই সংসারের বাকি কাজে হাত লাগানো।ততক্ষণে শ্বাশুড়ী মা ঘুম থেকে উঠে পড়েন।তার চা,জল খাবার দিয়ে যদি সময় পাওয়া যায় তাহলে বসে টিফিনটা করি নতুবা মুখে খাবার পুড়ে চিবাতে চিবাতে এদিক ওদিক ছুটে কাজ করা।কোনদিন বসে চা টাও খেতে পারিনি।গরম চা প্লেটে ঢেলে তাড়াতাড়ি শেষ করেছি বিয়ের পর থেকে জীবনের এই বেলা পর্যন্ত। তিনটে বাজতেই ছেলেকে আনতে আবার সেই বড় রাস্তায় মোড়ে।
 কাজের লোক কোনদিনও রাখতে পারিনি আর্থিক কারণে।খুব ভালো গান গাইতাম একসময়। পড়াশুনায় ছিলাম মধ্যম মানের।ভেবেছিলাম চাকরির বাজারের যা অবস্থা গান নিয়েই জীবনটাকে গড়ে নেবো।কিন্তু কপাল এমন মন্দ গ্র্যাজুয়েশনের আগেই স্ট্রোক করে বাবা চলে গেলেন চিরতরে।দাদা তখন চাকরি করছে ঠিকই কিন্তু মা আর দাদা দু'জনে মিলে আমার গ্র্যাজুয়েশনের রেজাল্ট বেরোনোর আগেই আমার বিয়ে ঠিক করে ফেললেন।আমার কোন আপত্তিতে কোনোই কান দিলেন না।
  বিয়ের সাথে সাথেই আমার জীবনে দেখা স্বপ্নগুলো একটা একটা করে ফুলের পাপড়ি ঝরে যাওয়ার মত জীবন থেকে হারিয়ে যেতে থাকলো।
  বাড়িতে নূতন বউ হয়ে ঢুকেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমার শ্বাশুড়ী তার ছেলের বিয়ে দিয়ে ঘরে বউ আনেননি এনেছেন একটি কাজের লোক।যে সারা দিনরাত কাজের বিনিময়ে খেতে পরতে পারবে আর রাত হলে তার ছেলের শারীরিক খুদা মেটাবে।আমার ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ভালোলাগা, মন্দলাগা কোনকিছুর দাম দেওয়ার মত এদের যেমন কোন মনোভাব নেই ঠিক তেমনই কোন সামর্থ্য কিংবা কোন সুযোগও নেই। তাই সবকিছুই ভাগ্যের দোহাই দিয়ে মুখ বুজে মেনে নিয়েছিলাম।
 দু'বছরের মাথায় বাবাই আসে আমার কোল জুড়িয়ে।হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে রান্না করে রেখে তবে হাসপাতাল যেতে হয়েছিল।বিয়ের পরদিন থেকেই দেখেছি শ্বাশুড়ী মায়ের বাতের যন্ত্রণায় আহা,উহু করে হাঁটাচলা করতে।সেই অস্তমঙ্গলায় একবার বাপের বাড়িতে গেছিলাম সেই শেষ।আর গেছি মায়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে।চারদিনের মাথায় ঘরে বসে সামান্য কাজ করেছি কিন্তু মায়ের কাজে সেদিনও বাপেরবাড়ি আমার যাওয়া হয়নি কারণ শ্বাশুড়ী মা তখন এতটাই অসুস্থ্য আমার পক্ষে কয়েক ঘণ্টার জন্যও কোথাও বেরোনো সম্ভব নয়।
  কাকে নালিশ জানাবো ? নালিশ জানানোর যেমন কেউ নেই ঠিক তেমনই জানিয়েও তো কোন লাভ নেই কারণ সবকিছুই তো আমি চোখের সামনে দেখতে পারছি।
  ছেলে বড় হল।ব্যাংকে ভালো চাকরিও পেলো।তখন একটা কাজের লোক জোর করে সে রাখলো মায়ের কষ্ট দেখে।শ্বাশুড়ী মা তখন শুধু শুয়েই থাকেন আর যন্ত্রণায় পুরো বাড়ি মাথায় করেন চিৎকার করতে করতে।ওষুধ,মালিশ কিছুই বাদ নেই কিন্তু তবুও তিনি কোনদিনও বাতের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাননি।
  ছেলের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে শুরু করা হল।মেয়ে পছন্দ করে আসার পর ছেলে বললো,
--- বিয়ের আগে একবার ওকে আমাদের বাড়িতে আনা যায় না মা?
--- এ আবার কেমন কথা? বিয়ের আগে কিভাবে বিয়ের কনেকে তার উঠবি স্বামীর বাড়িতে আসার কথা বলবো? তোর দরকার হলে তুই আলাদা করে কথা বল অন্য কোথাও।
 ছেলের বিয়ে হল।কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার বৌমা অস্তমঙ্গলা সেরে এসে পুরো রান্নাঘরের দায়িত্ব নিলো।আমাকে কিছুই করতে দেয় না। আমি কিছু করতে গেলেই বলে,
-- মা রান্নাঘরের দায়িত্ব এতদিন আপনি সামলেছেন।এবার থেকে এ দায়িত্ব শুধু আমার।আপনি শুধু ঠাকুমাকে দেখুন।আমিও দেখবো তাকে যখন আপনি পারবেন না।কিন্তু রান্নাঘরে আপনাকে আর আমি কোনদিন ঢুকতে দেবো না।
  স্বামী আমার সব দেখেশুনে বললেন,
--- আমার মনেহয় কি জানো তোমার বুবাই বিয়ের আগেই তার সাথে দেখা করে এ কথা আদায় করে নিয়েছে।যাক কপাল করে ছেলের বউ পেয়েছ বটে!
 তারপর সত্যিই একদিন বুবাইয়ের কাছ থেকে জেনে নিলাম ওই কারণেই সে বিয়ের আগে রমাকে এ বাড়িতে একবার এনে নিজের চোখে সবকিছু দেখাতে চেয়েছিল। কিন্তু সে সুযোগ না হওয়ায় ফোনে কন্টাক্ট করে তার সাথে দেখা করে তার একটাই কথা ছিল ,
--- আমার মা সারাটা জীবন পরিশ্রম করেছেন ।অসুস্থ্য শরীরেও রান্না করেছেন।তুমি কি পারবে আমার মাকে রান্নাঘর থেকে মুক্তি দিতে? কয়েক মাসের মধ্যেই আমি রান্নার লোক রেখে দেবো।মাত্র ছ'টা মাস আমি সময় চাচ্ছি।
  এখন রান্নার মাসি,কাজের মাসি সবই আছে আমার ছেলের দৌলতে।শ্বাশুড়ী মা বুবাইয়ের বিয়ের তিনমাসের মধ্যে মারা যান।আজ আমার কোন কাজ আর সংসারে নেই।এই বয়সে এসে আবার হারমোনিয়াম নিয়ে বসেছি বৌমার পীড়াপীড়িতে।বৌমা আমার সত্যিই লক্ষী।