Monday, June 10, 2019

অপূর্ণতা

অপূর্ণতা
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

   গতকাল রাত থেকেই দু'চোখের পাতা এক করতে পারেনি সুজাতা।বারবার শুধু অতীনের তাকে বলা শেষ কথাগুলো মনে পড়ছিলো।সারাটা জীবন ধরে শুধু কষ্টই পেয়ে গেলো মানুষটা।অথচ পরোপকারী,হাসিখুশি,বিনয়ী এই মানুষটাকে ভালোবাসেনা এমন পরিচিত মানুষ খুব কমই আছে।
   পাশাপশি বাড়িতে থাকার ফলে ছেলেবেলা থেকেই দু'জনের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিলো প্রগাঢ়।বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই বন্ধুত্ব ভালোবাসায় পরিণত হয়।কিন্তু দুইবাড়ির কেউই তা জানতো না।দুজনের চোখে চোখেই যেন সব বলা হয়ে যেত।বি.কম পাশ করে অনেক চেষ্টা করেও অতীন একটা চাকরী জোগাড় করতে পারেনি।
     এদিকে সুজাতার গ্রাজুয়েশন শেষ হবার পরই বাড়ির লোক তার বিয়ের সম্মন্ধ দেখতে শুরু করে।পাগলের মত সুযোগ খুঁজতে থাকে সুজাতা অতীনকে কথাটা জানাবার জন্য।অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে একদিন অতীন টিউশন থেকে ফিরবার পথে রাস্তাতেই তাকে সবকথা জানায়।অতীন তখনও বেকার।অথচ সুজাতার বিয়ে ঠিক হয়েছে একজন সরকারী চাকুরিজীবী ছেলের সাথে।বুকে পাথর বেঁধে এই বিয়েতে মত দিতে অনুরোধ করে অতীন সুজাতাকে।
  না,সুজাতা প্রথমে অতীনের কথা মানতে চায়নি। আর অতীন চায়নি সুজাতাকে সঙ্গী করে অনিশ্চয়তার পথে পা বাড়িয়ে তার জীবনটাকে নষ্ট করতে।অসহায়ের মত সে বিয়েতে মত দিতে বাধ্য হয়।বিয়ের দু'দিন আগে থাকতেই অতীন চলে যায় তার মামাবাড়ি ভুবনেশ্বর।
  বাপের বাড়িতে সুজাতা খুব কমই আসতো।ভয় ছিলো অতীনকে দেখলে যদি দুর্বলতা প্রকাশ পেয়ে যায়।বিয়ের তিন বছরের মাথায় অতীনের সাথে একবার তার দেখা হয়েছিলো।জানতে চেয়েছিলো,
--বিয়ে করছো না কেন?ছ'মাস তো হোল চাকরী পেয়েছো।
--জীবনের শুরুতেই যে জায়গাটা তোমায় দিয়েছি সেটা তো নূতন করে আর কাউকেই দিতে পারবোনা।
  কেটে গেছে কতগুলো বছর।দেখা হয়নি আর অতীনের সাথে সুজাতার।গতকাল বাড়ি থেকে ফোন করে জানালো অফিস থেকে ফেরার পথে বাসে উঠতে গিয়ে অতীন পড়ে যায়।অন্য একটা বাস এসে তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়।স্পট ডেথ।
   সারাটা জীবন ধরে নীরবে ভালোবেসে নিজের জীবন দিয়ে অতীন বুঝিয়ে গেলো সত্যিকারের ভালোবাসাও অনেক সময় পূর্ণতা পায়না। 

No comments:

Post a Comment