Friday, May 31, 2024

ভালোবাসি বলেছি অনেকবার (১০ম পর্ব)

সুবর্ণা হুইল চেয়ার নিয়ে কিছুটা এগোনোর সাথে সাথে দেবেশ দ্রুত হেঁটে গিয়ে সুবর্ণার কাছ থেকে চেয়ারটা নিতে যায়। সুবর্ণা সঙ্গে সঙ্গেই হাতল দু'টি ছেড়ে দেয় কারণ বিদিশা পিছন দিকে মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে পড়েন।এই ঘটনা বিদিশার মনে একটু খটকা লাগে। কারণ আজ পর্যন্ত যত আয়া তার জন্য এবাড়ি এসেছে যতদূর তার মনে পড়ছে কারো সাথে দেবেশ কোনদিনও কথা বলেনি। কিন্তু আজ দেবেশ সুবর্ণার কাছে এসে যে বললো "আমাকে দাও" - কথাটা বিদিশার মনে কিছুটা হলেও কৌতূহলের সৃষ্টি করে। তবে এটাও তিনি ভাবেন কোনদিনও কোন মেয়ে রান্নাঘরে খাওয়ার সময় ছাড়া যেমন ঢোকেনি ঠিক তেমনই তাকে কেউ কোনদিনও জোর করে খাওয়ার টেবিলে নিয়ে আসেনি। দেবেশের হয়ত এটা ভালো লেগেছে। তাই সে আজ সুবর্ণার কাছ থেকে হুইল চেয়ারটা নিয়ে নিজে তার ঘরে এসেছে। কিন্তু ঘরে ঢুকে মাকে তুলতে গিয়ে একবারে সম্ভব না হলে সুবর্ণা এগিয়ে এসে বলে,
-- আমি পায়ের দিকটা ধরছি তু --
বলেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
-- আপনি মায়ের বগলের তলা দিয়ে ধরুন।
 দেবেশ সুবর্ণার কথামত মাকে সেইভাবে তুলে ধরে। সুবর্ণা পা দু'টো ধরে দেবেশের সাথে খাটে বসিয়ে দেয় বিদিশাকে। দেবেশ সুবর্ণার মুখের দিকে তাকালে বিদিশা সেটাও খেয়াল করেন। দেবেশ বেরিয়ে গেলে সুবর্ণা বিদিশাকে বলে,
-- মা, আমি একটু রান্নাঘরে গিয়ে পিসিকে সাহায্য করি?
-- হ্যাঁ যা। বাপ,ছেলে বেরিয়ে গেলে আমায় এসে স্নান করিয়ে দিস। এতদিন ধরে শুয়ে থেকে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসটাই চলে গেছিলো। ওরা আমাকে বারবার বলতো হুইল চেয়ারে করে ঘরের ভিতরেই ঘুরতে। কিন্তু স্নান করতে গিয়েই কোমরে ব্যথা শুরু হয় তাই সাহসই পায়নি এতদিন।কিন্তু তুই এসে যেন আমার সাহস বারিয়ে দিয়েছিস মা। ঈশ্বর তোর মঙ্গল করুন। আজ মনটাও খুব ফুরফুরে লাগছে। যা তুই বিলাসীর কাছে। আমাকে পেপারটা দিয়ে যাস।
 "হ্যাঁ" বলে সুবর্ণা রান্নাঘরে যেতে গিয়ে পথের মাঝখানে দেবেশকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে না দেখার ভান করে এগিয়ে যেতে গেলে দেবেশ তাকে বলে,
-- থ্যাংকস।মা আজ অনেকদিন পর নিজের ঘর থেকে বেরোলেন। বাবা,আমি দু'জনেই খুব খুশি। বাবা তোমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
 সুবর্ণা দেবেশের দিকে তাকিয়ে বলে,
-- এসব কথা আমার না শুনলেও চলবে। আমার কাজ আছে। 
 সুবর্ণা চলে গেলে দেবেশ একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে মনেমনে বললো ,'একসময় আমি এটাই চেয়েছিলাম। তোমায় নিজের করে বাড়িতে নিয়ে আসবো আর এভাবেই তুমি সকলের মন জয় করবে। সবকিছু যেন কেমন ওলটপালট হয়ে গেলো।"
   এইভাবে পাঁচ পাঁচটা দিন কেটে গেলো সুবর্ণার এ বাড়িতে। রবিবার তার বাড়িতে যাওয়ার কথা। রাতেই স্বরূপ তাকে এই সাতদিনের জন্য একটা মোটা অংকের টাকা খামে করে হাতে দিয়ে দিয়ে বললেন,
-- প্রত্যেক সপ্তাহে বাড়ি যাওয়ার সময় তুমি এই টাকাটা পাবে। আমি প্রতি সপ্তাহেই তোমায় তোমার টাকা দিয়ে দেবো। আজ পর্যন্ত যত মেয়ে এসেছে তোমার মাকে দেখাশুনার জন্য তাদের সাথে তোমার কোন তুলনায় হয় না। মাত্র কটাদিনেই তুমি তোমার মায়ের মনের বল অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছো। ডাক্তারী শাস্ত্র অনুযায়ী এই রোগের সবচেয়ে ভালো ওষুধ হচ্ছে মনের বল যা তোমার মা হারিয়ে ফেলেছিলেন। কোথাও তেমন কোন সমস্যা ওর শরীরে নেই। আমি নিজে একজন ডাক্তার হয়ে বলছি তুমিই পারবে আমার স্ত্রীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলতে। 
-- আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।
 কথা শেষ করে সুবর্ণা আবার বিদিশার ঘরে ফিরে আসে। 
-- কিরে খামটা খুলে দেখেছিস?
-- না, বাড়ি গিয়ে মায়ের হাতে দেবো মা তখন দেখবেন
-- দূর বোকা মেয়ে! দেখে আমায় বলতো কত আছে ওর ভিতর? তোর চলবে কিনা ওই টাকাই?
-- তুমি এসব নিয়ে ভেবো না। যা আছে থাক।
-- আসলে কী জানিস মা ? তোর চালচলন, ব্যবহার আমাকে পরিস্কার বুঝিয়ে দিয়েছে তুই ভালোঘরের লেখাপড়া জানা একটি মেয়ে। নিজের সংসারকে বাঁচাতে চাকরি না পেয়ে তুই এই কাজে এসেছিস। এটা সত্যি তুই চলে গেলে আমার খুব কষ্ট হবে কিন্তু তবুও তোকে বলছি কাগজপত্রগুলো নিয়ে আছিস দেখি বাপ,ছেলেকে বলে তোর ভালো কিছু একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারি কিনা। 
-- আমার তো একাজ করতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না। তোমার যদি আমাকে পছন্দ নাহয় তাহলে অন্য কথা।
-- ও তুই বুঝে গেছিস তোকে আমি কতটা ভালোবেসে ফেলেছি। তাই আমার সাথে ইয়ার্কি হচ্ছে?
সুবর্ণা হাসতে হাসতে বলে,
-- চলো, অনেক রাত হল এবার খেতে যাই
-- আজও আমায় টেবিলে খেতে যেতে হবে?
-- তাতো যেতেই হবে। কারণ তুমি পারো। আজ আমি একাই তোমায় চেয়ারে বসাবো
-- আরে না, তুই ওদের কাউকে ডাক
 ওদের কথার মাঝখানে বিলাসী খাবার নিয়ে আসে। দেখতে পেয়ে সুবর্ণা বলে,
-- পিসি, মা টেবিলেই খাবেন সকলের সাথে কথা বলতে বলতে। তুমি খাবারটা টেবিলে রেখে এসে আমায় একটু হেল্প করো মাকে চেয়ারে বসাতে।
 বিলাসী খাবার নিয়ে চলে যেতেই সেখানে এসে হাজির হল দেবেশ।
 সুবর্ণা আর দেবেশ দু'জনে মিলে বিদিশাকে চেয়ারে বসিয়ে দেবেশ নিজেই চেয়ার নিয়ে ডাইনিং রুমের দিকে এগিয়ে যায়। এরমধ্যে বেশ কয়েকবার দু'জনের চোখাচোখি হয়। কিন্তু কেউই কোন কথা বলে না। দু'জনের বুকেই কাঁপুনি কিন্তু কারো কাছেই কারো প্রকাশ তার নেই। 
আজ যেন বিদিশা আরও বেশি সতর্ক এই দু'টি তরুণ,তরুণীর আচারাচরণের দিকে। সুবর্ণা আসার পর থেকেই দেবেশকে যেন মায়ের ঘরে একটু বেশিবার এবং একটু বেশি সময় বিদিশা পাচ্ছেন। তাই তিনি সব সময় নিজের চোখ, কানকে বেশি সতর্ক রেখেছেন। কিন্তু এরা পরস্পরের সম্পর্কে নিজেরা যেন নিজেদের মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছে। সুবর্ণাকে বিদিশার বেশ ভালো লেগেছে। আর ছেলের সুবর্ণার সামনে বেশি আনাগোনার ফলে বিদিশার মনেও একটা আশার আলো জ্বলতে শুরু করেছে। এবার হয়ত তার দেবু বিয়ের ব্যাপারে নিজের মত পাল্টাবে। 
খাবার টেবিলে সুবর্ণা খাবার সার্ভ করছিল। স্বরূপ এবং বিদিশার পাতে বেগুন ভাজা দিলেও দেবেশের থালায় সেটা ছিল না। কারণ দেবেশের বেগুন ভাজায় এলার্জি আছে। বিদিশা সেটাও খেয়াল করেন। কিন্তু কোন অবস্থাতেই এই কয়দিনে সুবর্ণার সেটা জানার কথা নয়  কারণ সে আসার পর আজই প্রথম বেগুন ভাজা হয়েছে। এই টুকরো টুকরো ঘটনাগুলি বিদিশাকে ভাবাচ্ছে এরা দু'জন আগে থাকতেই দু'জনকে চেনে। কিন্তু যতক্ষণ না পর্যন্ত সিওর হচ্ছেন ততক্ষন পর্যন্ত কিছু বলতেও পারছেন না। তবে এই ঘটনাগুলো তিনি খুবই উপভোগ করছেন।
 রুটি,তরকারি খেতে গিয়ে দেবেশের ভিসুম লাগে। সুবর্ণা তড়িঘড়ি জলের গ্লাস এগিয়ে দেয় তার দিকে। জল খেয়ে ধাতস্ত হয়ে দেবেশ সুবর্ণার দিকে তাকিয়ে বলে, "থ্যাংকস"। সেটাও বিদিশার নজর এড়ায় না। তিনি সুবর্ণার দিকে তাকিয়ে বলেন,
-- তুইও বসে পড় আমাদের সাথে।
 বিদিশার কথা শুনে বাপ,ছেলে অবাক হয়ে তার দিকে তাকান। কারণ আজ পর্যন্ত যারা তার দেখভালের জন্য এ বাড়িতে এসেছে তাদের কেউই কোনদিনও টেবিলে তাদের সাথে বসে খাওয়ার অনুমতি পায়নি। এমনকি বিলাসীর জন্যও রান্নাঘরে টেবিল বরাদ্দ। বিদিশার কথা শুনে সুবর্ণা বলে,
-- তোমরা খেয়ে নাও আমি পিসির সাথে রান্নাঘরে বসে খাবো।
-- কেন আমাদের সাথে খেতে তোর আপত্তি কোথায়?
 আপত্তিটা যে কোনখানে তা সুবর্ণা কী করে বলবে বিদিশাকে? এরই মধ্যে কতবার যে দেবেশ তার দিকে তাকিয়েছে আর তার এই তাকানোর ফলে সুবর্ণার বুকের ভিতর যে বিদ্যুত খেলে গেছে তার আচ সে ছাড়া আর কেউই জানে না।
 খাওয়া শেষে দেবেশ মাকে নিয়ে গিয়ে খাটের উপর বসিয়ে দিয়ে আসে। কিন্তু কোন এক ফাঁকে সে সুবর্ণার হাতের মধ্যে একটা কাগজের টুকরো গুঁজে দেয়।

ক্রমশ

ভালোবাসি বলেছি অনেকবার (২০তম পর্ব)

ভালোবাসি বলেছি অনেকবার ( ২০ তম পর্ব)

  সকাল দশটা নাগাদ রজতের ঘুম ভাঙে। সে ঘুমাতে লাগলে এর আগে তার মা,বাবা বহুবার এঘরে এসেছেন। ছেলে অঘোরে ঘুমাচ্ছে দেখে কোন সাড়াশব্দ নেই তাতেও মা,বাবার আতঙ্ক কমে না। চশমার ডাটি ধরে বুকের কাছে ঝুঁকে পড়ে দেখেন ঠিকমত নিশ্বাস-প্রশ্বাস চলছে কিনা। মা, বাবার সব সময়ই তার সন্তানকে নিয়ে এক দুশ্চিন্তা থেকেই যায়।
সেই জন্মের থেকে মৃত্যু পর্যন্ত।
  রজত ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে। সে ভাবতে চেষ্টা করে গত দু'দিন তার সাথে কী কী ঘটেছে আর সে যদি একটু সাহসী না হত তাহলে কী ঘটতে পারতো। ট্রেনে করে নিত্য যাতায়াতের সূত্র ধরে অনেক মুখের সাথেই একটা পরিচিতি গড়ে উঠেছে। মুখোমুখি হয়ে গেলে জাস্ট একটু হেসে পড়া। কিন্তু সেদিন কী যে হল। ওই মেয়েটাকে তো সে বহুবার দেখেছে, মামুলি কথাও কখনো সখনো হয়েছে। কিন্তু তার ভিতর কী এমন হল যে গত পরশু মেয়েটির কথামত তার পিছন পিছন গাড়ি থেকে এক অচেনা স্টেশনে নেমে পুণরায় অন্য একটা ট্রেনে উঠে পড়লো। মেয়েটি এক সময় তাকে বলেছিল,
-- আমার ফোনটাই চার্জ নেই যদি আপনি ফোনটা দিতেন আমি একটা কল করতাম।
 পকেট থেকে ফোন বের করে রজত মেয়েটির হাতে দেয়। খুব ঘুম পাচ্ছিল রজতের। যখন ওর ঘুম ভাঙে তখন সে নিজেকে আবিষ্কার করে একটা অন্ধকার ঘরের মধ্যে শুয়ে আছে। মশা ছেঁকে ধরেছে। উঠার ক্ষমতা নেই। প্রচণ্ড খিদে পেয়েছিল। একসময় ঘরের ভিতরে কিছু লোকজন ঢোকে তাদের সকলের মুখেই কাপড় বাঁধা। শুধু চোখদু'টি তাদের দেখা যাচ্ছে। সামনে তিনটে রুটি আর আলুর তরকারি দিয়ে কেউ একজন তাকে বলেছিল,
-- খাবারটা খেয়ে নিন। আর একদম পালানোর চেষ্টা করবেন না। আমাদের লোকজন বাইরে সবসময় পাহারায় আছে।
 কাউকেই সে চিনতে পারছিল না কিন্তু প্রচণ্ড খিদে পাওয়াতে সে রুটি আর তরকারি পুরোটা খেয়ে নেয়। তারপর আবার কোন সময় যেন ঘুমিয়ে পড়ে।
 তার চিন্তায় ছেদ পড়ে মা যখন এসে তার ঘরে ঢোকেন।
-- ঘুম ভাঙলো তোর রাজু? 
-- হ্যাঁ মা কিন্তু খুব খিদে পেয়েছে। তাতো পাবেই রে। তুই দাঁত ব্রাশ করে নে আমি তোর জন্য চা করে নিয়ে আসি।
 রজতের গলার আওয়াজ পেয়ে রজতের বাবা এই ঘরের দিকেই আসছিলেন। রজতের মা বেরিয়ে যেতে গেলে রজত মাকে ডেকে বলে,
-- মা সুলতা আসেনি কাল?
 রজতের মা কথাটা শুনতে পান না। তিনি বেরিয়ে যান ঘর থেকে। কিন্তু উত্তরটা দেন রজতের বাবা,
-- আসেনি মানে? মেয়েটা নাওয়া-খাওয়া ভুলে এ দু'টোদিন পাগলের মত ছুটাছুটি করেছে। একদিকে অফিস আর অন্যদিকে তোর জন্য দৌড়াদৌড়ি। গতকাল অফিস করে থানা হয়ে যখন বাড়িতে ফিরেছে তখন রাস্তায় তোর ফেরার খবর শুনেই মাকে নিয়ে অত রাতে ছুটে এসেছে। অনেক রাতে এখান থেকে ফিরেছে। তোর মা তো বললেন তোকে নাকি ঘুমের মধ্যে দুধ,রুটি মাখা খাইয়েও দিয়েছে। সকালে তো সময় পায় না ও ঠিক আফিস থেকে ফিরেই চলে আসবে। কিন্তু তুই আমাকে এখন বল তো কী করে কী হল?
-- বলবো বাবা সব বলবো। আগে আমি নিজে একটু ধাতস্ত হয়ে নিই। প্রচণ্ড খিদে পেটে। স্নানটা করে আসি। খেয়েদেয়ে তারপর সব বলছি তোমাদের। 
রজতের বাবা আর জোর করলেন না। তিনি ছেলের দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে তার কথার সমর্থন জানালেন।
 রজত পেষ্ট ব্রাশ নিয়ে ড্রয়িং কাম ডাইনিংয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত মাজতে মাজতে পুনরায় ভাবতে থাকে ওই মেয়েটার নামও সে জানে না। মুখ চেনা একই বগিতে সেদিন পাশাপাশি সিটে বসা। সে পকেট থেকে ফোনটা বের করে মেয়েটাকে দেয়। মেয়েটা কথা বলে তাকে ফোনটা ফেরত দেয়। পকেটেও রাখে সে। কিন্তু তারপর কী যে হল প্রচণ্ড ঘুম পেতে লাগলো। পকেটে সেদিন মাইনের সব টাকা। একবার হাত দিয়ে প্যান্টের ভিতরের পকেটে একটু চাপ দিয়ে দেখে নিলো। তারপর যা কিছু ঘটেছে তার আবছা আবছা মনে আছে। মেয়েটা তাকে হাত ধরে ট্রেন থেকে নামালো। তারপর ওভার ব্রিজ করে অন্য একটা ট্রেনে উঠলো। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল। ট্রেনে বসে পড়েই পূনরায় ঘুমিয়ে পড়ে সে। কিন্তু যখন ঘুম ভাঙে তখন দেখে একটা অন্ধকার ঘরে শুয়ে আছে সে। এর আগে ওই মেয়েটা তাকে বোতলে জলও খেতে দেয়। জলটাই কোন টেস্ট ছিল না। কেমন যেন লাগছিল খেতে। কিন্তু ওই মেয়েটি তাকে জোর করে বোতলের পুরো জলটা খাওয়ায়।

ক্রমশ 
 

Thursday, May 2, 2024

ভালোবাসি বলেছি অনেকবার (১৯তম)

 ভালোবাসি বলেছি অনেকবার (১৯ তম পর্ব)

  সেদিন বাড়ি ফিরতে সুলতা আর তার মায়ের অনেকটাই দেরি হয়ে গেলো। পরদিন অফিস যেতেই হবে। অফিস থেকে ফিরে আবার রজতকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে যে রজতের সাথে দেখা করে যাবে সেটাও সম্ভব নয়। হয়ত সে অত সকালে উঠবেই না। অফিস তো তাকে যেতেই হবে। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যেন সুলতার চোখদু'টো ঘুমে জড়িয়ে এলো। ঘুম ভাঙলো সকালে মায়ের ডাকে। মা যে ইচ্ছাকৃতই একটু দেরি করে তাকে ঘুম থেকে ডেকেছেন যাতে তার ঘুমটা পুষিয়ে যায় এটা সুলতা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে বেরিয়ে পড়ে। ৮-২০ লোকালটা না পেলে অফিসে দেরি হয়ে যায়। তাই যেভাবেই হোক সময় মত স্টেশনে পৌঁছাতেই হবে।
  অনেকদিন পর আজ হঠাৎ করেই তার সুবর্ণার সাথে দেখা হয়ে যায়। সুলতা তার সাময়িক সমস্যার কথা মন খুলে সুবর্ণাকে বললেও সুবর্ণা কিন্তু তার সম্পর্কে কোন কথাই জানায় না। চুপচাপ সুলতার কথা শুনে যায়। পাশের সহযাত্রীর চার,পাঁচ বছরের বাচ্চার দুষ্টুমির দিকেই তার নজর বেশি। সুবর্ণা নিজের সমস্যায় এতই জর্জরিত অন্য কারো সমস্যা শুনলে কিংবা দেখলেও কিছুটা আনমনা হয়েই পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। কারণ তার মাথায় কোনকিছুই ঢুকছে না। একদিকে দেবেশের ভালোবাসার পাগলামি অন্যদিকে তার নিজের পরিবারের দু'মুঠো অন্নের সংস্থান তাকে উদ্ভ্রান্ত করে দিচ্ছে। দেবেশকে কিছুতেই সে পাশ কাটাতে পারছে না। অথচ ওই কাজটা ছেড়েও চলে আসতে পারছে না। ইচ্ছাকৃত যে তাকে মাইনেটা বেশি দেওয়া হচ্ছে তা সে বেশ ভালই বুঝতে পারছে। আজ সে তার সমস্ত সার্টিফিকেটগুলো নিয়েই যাচ্ছে কারণ দেবেশ তাকে মাথার দিব্যি দিয়েছে। বিদিশা অনেকটাই মনের জোর পেয়েছেন সুবর্ণার কারণেই। যদি কোন চাকরির জোগাড় দেবেশ করতেও পারে তখন ওখান থেকে চলে আসলেও তার অসুবিধা হবে। এইসব হিজিবিজি চিন্তায় মনটা সব সময়ই অন্যমনস্ক থাকে। তাই সুলতার সবকথা তার কান অবধি পৌঁছায়ও না।
 আসলে নিম্নবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় সন্তান হয়ে জন্মানোটাই অনেক সময় কারো কারো জীবনে অভিশাপ হয়ে যায়। একমাত্র স্বার্থপর হলেই তারা জীবনটাকে গুছিয়ে নিতে পারে। আর যারা সেটা পারে না তাদের সারাজীবন বাপেরবাড়ির জোয়াল টানতেই জীবন শেষ হয়ে যায়। সুলতা আর সুবর্ণার পারিবারিক সমস্যা এক। দু'জনেই নানান জটিলতার মধ্য দিয়ে একইভাবে এগিয়ে চলেছে। 
 শিয়ালদহ এসে যে যার গন্তব্যে এগিয়ে যায়। দু'জনকেই বাস রাস্তায় এসে বাস ধরতে হয় কিন্তু নম্বর আলাদা।
 সুলতা অফিসে পৌঁছে ম্যানেজারের ঘরে ঢোকে সই করতে। সেখানে গিয়ে দেখে পুরনো এক বয়স্ক কর্মচারী বসে আছেন। সুলতা তাকে আগে থাকতেই চিনতো। সুলতাকে দেখে তিনি জানতে চাইলেন,
-- কেমন আছো মা? চিনতে পারছো তো আমাকে?
-- হ্যাঁ হ্যাঁ মেসোমশাই চিনতে পারছি। ওই চলে যাচ্ছে আর কী? তা কী মনে করে এতদিন পরে?
-- মা,আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। ম্যানেজারের সঙ্গে চাকরি জীবনের আগে থেকেই পরিচিতি। তাই আসলাম উনাকে গরীবের বাড়িতে পদধূলি দেওয়ার নিমন্ত্রণ জানাতে। তা তোমার সাথে যখন দেখা হয়ে গেলো মা তুমিও যেও। দাঁড়াও আমি তোমাকে একটা কার্ড দিই।
-- না না মেসোমশাই। কার্ড দিতে হবে না। আমি যদি যেতে পারি ম্যানেজারবাবুর সাথেই যাবো। আসলে কি জানেন? নানান সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।
 কথাটা কানে যেতেই ম্যানেজারবাবু বললেন,
-- ভুলে যাই বয়সের ভারে সব। তা কোন খবর পেলে তোমার সেই পরিচিতের?
-- হ্যাঁ গতকাল নিজেই বাড়ি ফিরেছেন। তবে কথা বলার মত অবস্থায় নেই। থরথর করে কাঁপছে। মনেহচ্ছে এ দু'টোদিন ঘুম খাওয়া কোনটাই হয়নি। অনেক রাত পর্যন্ত ওখানেই ছিলাম। কিন্তু কোন কথা এখনো জানতে পারিনি। তবে মনেহচ্ছে এমন কিছু ওর সাথে ঘটেছে যার জেরে ও খুব ভয়ে আছে। বাড়িতে পৌঁছে ভাবছি নিয়ে একটু ডাক্তারের কাছে যাবো।
-- সেই ভালো হবে। 
 দু'জনকে বলে সুলতা ম্যানেজারের রুম থেকে বেরিয়ে যায়। সারাদিন অফিসে হাড়ভাঙা খাটুনি করতে করতে এক মুহূর্তের জন্যও সে রজতের কথা মাথা থেকে নামাতে পারেনি। কারা এবং কেন ওকে কিডন্যাপ করেছিলো এটা কিছুতেই মাথায় আসছে না তার। মুক্তিপণের জন্য কোন ফোন আসেনি। তারমানে তারা এটাও জানতো টাকা চাইলে দেওয়ার মত ক্ষমতা তাদের নেই। যেহেতু পে-ডেট ছিল তাই মাইনের টাকা এবং মোবাইল নিয়ে তো ওকে ছেড়ে দিতেই পারত। তা না করে ওকে তুলে নিয়ে গেলো কেন? কী এমন রহস্য এর ভিতর লুকিয়ে আছে?

ক্রমশ