Thursday, March 21, 2024

অজানা আশঙ্কা ( সহজ পাঠ)

অজানা আশঙ্কা

   বিয়ের ঠিক বছর দশেক আগে দার্জিলিং ট্যুরে আর্যের জীবনে এক সকালে একটি অঘটন ঘটে যায়। যে হোটেলে আর্য তার বন্ধুদের সাথে উঠেছিল সেই হোটেলে রোজ সকালে একটি পাহাড়িয়া মেয়ে এসে সমস্ত রুমে ঢুকে টেবিলে ফুল সাজিয়ে দিয়ে যেত। তিন বন্ধু এক হোটেলে উঠলেও যে যার মত সিঙ্গেল রুম নিয়েই থাকতো। মেয়েটি পাহাড়িয়া হলেও খুব সুন্দর দেখতে ছিলো। বনফুল খোঁপায় গুঁজে যখন সে অন্যান্য রুমের কাজ শেষ করে আর্যের রুমে ঢুকতো আর্য মুগ্ধ হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতো। 
   মেয়েটি জানতো না আর্যরা কবে ফিরে যাবে। সপ্তম দিনের মাথায় সকালে ফুল নিয়ে এসে পরপর তিনটে ঘরে তালা দেওয়া দেখে ছুটে রিসেপশনে গিয়ে জানতে পারে গতকাল সন্ধ্যায় তারা কলকাতায় ফিরে গেছে। খুব অবাক হয় তবাসু বাঙ্গালীবাবুর এহেন আচরণে।
  কোনকিছুতেই জীবন থেমে থাকার নয়। জীবন সময়ের সাথে তাল মেলাতে না পারলেও ঠিক তার নিয়ম মেনেই এগিয়ে চলে। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আর্যর জীবন থেকে যেমন তবাসুর নামটা মুছে গেছে ঠিক তেমনই তবাসুর জীবন থেকেও বাঙ্গালীবাবুর কথা হারিয়ে গেছে। শুধু ন'বছরের সন্তান বিক্রমের মুখের দিকে তাকালেই সেদিনের ঘটনাগুলো তার ভীষণভাবে মনে পড়ে যায়। একটু উদাস হয়ে যায়, অজান্তেই চোখের থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সে ক্ষণিকের জন্য। জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে বিক্রমকে মানুষ করার তাগিদে কোমরে ওড়না জড়িয়ে আবার নেমে পড়ে কঠোর পরিশ্রমে।
 আর্য বিয়ে করেছে বছর সাতেক হল। এরমধ্যে সে তিন তিনবার দার্জিলিং ঘুরে গেছে। কিন্তু হোটেল মানবীতে সে ওঠেনি। দার্জিলিং আসলেই এক অজানা আশঙ্কায় তার বুকের ভিতর তোলপাড় করে ওঠে। এই সাত বছরে বহু চিকিৎসা করার পরেও তাদের কোন সন্তান হয় না। তার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা সন্তান ধারণের পক্ষে সহায়ক নয়।
 চতুর্থবার দার্জিলিং এসে মনের সাথে যুদ্ধ করে সে হোটেল মানবীতেই ওঠে। সারাটা রাত উৎকণ্ঠায় কাটে ভোরের আশায়। খুব ভোরে দরজার বেলের আওয়াজে দরজা খুলে সে তবাসুকে দেখতে পায়। ভূত দেখার মত চমকে ওঠে তবাসূ। কিন্তু কোন কথা না বলে তার কাজ সেরে সে বেরিয়ে যায়। আর্য আস্তে করে দরজা ভেজিয়ে লুকিয়ে ওর পিছন নিয়ে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেখে পুরো তারই ছেলেবেলার মত দেখতে ন'বছরের একটি ছেলে স্কুল ড্রেস পরে উঠোনে বসে। লুকিয়ে দেখতে পায় মায়ের হাত ধরে সে পাহাড়িয়া রাস্তা ধরে হেঁটে স্কুলের পথে।
  ফিরে আসে আর্য হোটেলে। সন্ধ্যায় স্ত্রীকে সাথে না নিয়েই তবাসুর বাড়ি পৌঁছে যায়। অন্ধকারাচ্ছন্ন বাড়িতে মোবাইলের আলোতে আবিস্কার করে দরজায় তালা লাগানো। কিছুটা এগিয়ে একটি বাড়িতে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে বিক্রম স্কুল থেকে ফেরার পরেই এই ভাড়াবাড়ি ছেড়ে জিনিসপত্র নিয়ে হঠাৎ করেই তবাসু এই অঞ্চল ত্যাগ করেছে।

 শেষ

No comments:

Post a Comment