Wednesday, August 31, 2022

কারো গলগ্রহ হবো না

 কারো গলগ্রহ হবো না 
খিদের মুখে ভাত, ডালই অমৃত।
  সারাটাদিন পথে পথে ঘুরে কোন কাজের সন্ধান না পেয়ে চলতি পথে একটা ছোট পার্কে ঢুকে চুপচাপ বসে নিজের দুর্ভাগ্যের কথা ভাবছিলাম।সারাটা দিন পেটে জল ছাড়া কিছুই পড়েনি।
খিদে আর ক্লান্তিতে চোখটাও লেগে এসেছিলো।হঠাৎ একটা চিৎকারে কিছুটা সজাগ হয়ে তাকিয়ে দেখি চার,পাঁচটা ছেলে একটা তরুণীর উপর যেন হামলে পড়েছে।রাত তখন খুব একটা বেশি নয়।তবে জায়গাটা একটু নির্জন।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত তখন দশটা।কলকাতা শহরে রাত দশটা মানে কিছুই নয়।বুঝতে পারলাম মেয়েটির সম্মান এবং জীবন দুইই বিপন্ন।বাড়িতে হয়ত তার বাবা,মা এবং অন্যান্যরা তারজন্য ভাবছে।তার ফেরার অপেক্ষা করছে।স্বল্প সময়ের মধ্যে এও ভাবলাম আমার জন্য ভাবার তো কেউ নেই।আমি মেয়েটিকে বাঁচাতে গেলে হয়ত ওরা আমায় মেরেই ফেলবে।অভুক্ত অবস্থায় শরীরে নেই বিন্দুমাত্র জোর।তাছাড়া সংখ্যায় ওরা অনেকজন।কিন্তু হঠাৎ করেই শারীরিক বলের কাছে যেন আমার মানসিক বলটা কয়েকশ গুন বেড়ে গেলো।ছুটে এগিয়ে গেলাম ওদের কাছে 
  জন্মের পর থেকেই অভাব,দুঃখ আর কষ্টের মধ্য দিয়ে আমার জীবন শুরু।মা আমার নাম রেখেছিলেন সৌমেন।আদর করে আমায় সমু বলে ডাকতেন।জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখেছি আমায় নিয়ে মা মামাবাড়িতে শুধুমাত্র মাথার উপর একটু ছাদের আশায় ঘরের কাজ আর রান্নাবান্নার বিনিময়ে থাকেন সারাদিনে বিন্দুমাত্র সময় পান না।সন্ধ্যায় সব কাজকর্ম আর রান্না সেরে সাতটার মধ্যে বেরিয়ে গিয়ে দুটো বাড়িতে রান্না করে রাত দশটার মধ্যে ফিরে আবার সকলকে খেতে দেওয়া, বাসন মেজে রাখা।এই দুটো বাড়িতে রান্না করেই মা আমায় মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়িয়েছেন।তারপর আর পড়ার সুযোগ আমার হয়ে ওঠেনি।
  বহুবার মাকে জিজ্ঞাসা করেও বাবার কথা জানতে পারিনি।তবে একটু বড় হতেই মামীর মাকে বিঁধিয়ে কথা বলার ধরণ দেখে বুঝতে পারতাম মা ও, আজ আমার সামনে যে মেয়েটি বিপদের মধ্যে পড়ে নরপশুদের হাত থেকে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আমার জন্মটাও ঠিক একইভাবে।আমাকে মা মেরে ফেলতে পারেননি বা হয়ত নিজেও মরার সাহস দেখাতে পারেননি আমাকে পৃথিবীর আলো দেখানোর জন্য যেদিন থেকে একথা বুঝতে পেরেছি সেদিন থেকেই মাকে আমার জন্মদাতার কথা বলে আর লজ্জায় ফেলতে চাইনি।হতে পারি আমি জারজ কিন্তু জন্ম তো আমায় মা একা দেয়নি। যে বা যারা একটা নারীর সম্মান নষ্ট করে শুধু আমার জন্মদাত্রীর গায়ে নয় আমার গায়েও কালি লেপ্টে দিয়েছে তার খবরে আমার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই।
  সামান্য ক'টা টাকা রোজগার করার জন্য ফুটপাথের হোটেলগুলোতে বাসন মাজা থেকে শুরু করে কি না করেছি।কিন্তু মা কখনোই চাইতেন না আমি এইসব কাজ করি।কিন্তু সেই মুহূর্তে কোন উপায়ও ছিল না।মায়ের নিউমোনিয়া হল।ডাক্তার জলের কাজ একদম করতে নিষেধ করলেন।রান্নার বাড়ি দু'টো ছেড়ে দিতে হল।ওই শরীরে মা আমার গুছিয়ে দেওয়া সবকিছু নিয়ে দাঁড়িয়ে রান্না করতে গিয়ে একদিন মাথা ঘুরে পড়ে যান।তারপর হাসপাতাল থেকে আর বাড়ি আসেননি।মুখ বন্ধ করে মায়ের কাজের পূর্ব পর্যন্ত মামীর সকল গঞ্জনা সহ্য করে কালীঘাটে নমনম করে মায়ের কাজ করে আর ওবাড়ির মুখো হইনি।
  লোকগুলো মেয়েটির জামা ছিঁড়ে ফেলেছে ততক্ষনে; মুখটা তারই ওড়না দিয়ে বাঁধা। ওদের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আগে এদিক-ওদিক তাকিয়ে একটা মোটা লাঠি পেয়ে গেছিলাম ভাগ্যক্রমে।লাঠিটা নিয়ে এলোপাথাড়ি মারতে লাগলাম ওদের।ওরা তখন মেয়েটাকে ছেড়ে দিয়ে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।অসুরের মত তখন যেন আমার গায়ে শক্তি।মেয়েটি ওই অবস্থায় পার্কের থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে চিৎকার চেঁচামেচি করে লোক জড়ো করলো।
 নিজের গায়ের জীর্ণ জামাটা খুলে ওর হাতে দিয়ে বললাম,
-- পরে নাও। চলো তোমায় বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি।
 শরীরের নানান জায়গায় আমার কেটে গেছে তখন, ব্যথায় টনটন করছে।হঠাৎ করেই খিদেটা তখন আবার চাগার দিয়ে উঠলো।ওই অবস্থায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মেয়েটির সাথে ওর বাড়িতে গেলাম।
 বাড়ির সকলে ঘটনার আদ্যপান্ত বিবরণ শুনে এবং সকাল থেকে আমি না খাওয়া জেনে আমাকে ভাত ও ডাল দিয়ে খেতে দিলেন।কারণ মেয়েটির বাড়ির অবস্থাও খুব একটা ভালো নয় তা তাদের বাড়ি,ঘর দেখেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম।খিদের মুখে ওই ডাল, ভাতই ছিল আমার কাছে অমৃত।সেদিন রাতটা ওখানেই কাটিয়ে পরদিন কেউ ওঠার আগেই সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ি এই আশায় -একটা তো মাত্র পেট ও ঠিক চলে যাবে কিন্তু কারো বাড়িতে অন্য কারো গলগ্রহ হয়ে কিছুতেই থাকবো না।


Monday, August 29, 2022

সেই বকুলফুল গাছটা

 কয়েকদিন আগেই সজলের সাথে মনিকার বিশাল ঝামেলা হয়ে গেছে। সজলের বক্তব্য মনিকা যে প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে সেখানে ছুটির কোন সময় জ্ঞান নেই।তাই বারবার সজল চাপ দিতে থাকে ওই চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে অন্য কোন চাকরি নেওয়ার জন্য।কিন্তু তিন বছর হয়ে গেছে এই চাকরি তাই মনিকাও এই চাকরি ছাড়তে নারাজ।
  বেশ কয়েক বছর আগে হঠাৎ বৃষ্টির সম্মুখীন হয়ে মাথা বাঁচাতে অপরিচিত দু'টি কিশোর কিশোরী বৃষ্টির থেকে মাথা বাঁচাতে রাস্তার উপরে একটি বকুল ফুল গাছের তলায় আশ্রয় নিয়েছিল।বৃষ্টির সাথে বাতাস ছিল প্রচুর।গাছ থেকে বকুলফুল পড়ে ঢিপ হচ্ছিল গাছের তলায়।মনিকা ওড়নার এক কোণে ভিজতে ভিজতেই বকুলফুল কুড়িয়ে জমা করছে দেখে সজলও অপরিচিত মেয়েটিকে ওই কাজে সাহায্য করে।ফুল কুড়াতে কুড়াতেই দু'জনের কথা
-- আপনি বকুলফুল খুব ভালোবাসেন?
-- খুব।জানেন একমাত্র এই ফুল যত শুকিয়ে যাক না কেন এর গন্ধ কিন্তু থেকেই যাবে।
--- তাই নাকি? আমি কিন্তু জানতাম না এটা।
  তারপর বেশ কয়েকমাস পড়ে দু'জনের পরিচয় যখন বেশ গাঢ় হয় তখন একদিন সজল তার মনিকে বলে,
-- বকুল ফুলের গন্ধটা জানো ঠিক ভালোবাসার মত। দিন যত গড়াবে ভালোবাসাও ঠিক ততই গাঢ় হবে।
  ওদের দেখা হওয়ার কথা থাকলেও দু'জনের মিট করার জায়গাটা হচ্ছে বুকুল গাছতলা।তারপর সেখান থেকে যেখানে যাওয়ার যাবে। দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকে দু'জন দু'জনকে চেনে।তারপর কলেজ,হায়ার এডুকেশন চাকরি।সজল বেসরকারি হলেও সুচাকুরে।আর মনিকা একটা সাধারণ প্রাইভেট কোম্পানিতে।কিন্তু মনিকা চাকরি পাওয়ার দু'বছর বাদে সজলের চাকরি।
 দুই বাড়ির সকলেই জানে ওদের সম্পর্কটা। বিয়ের সব ঠিকও ছিল।কিন্তু হঠাৎ করে সজলের মায়ের মৃত্যুর কারণে বিয়ের তারিখ কিছুটা পাল্টে দিতে হল। মায়ের মৃত্যুর একবছর পার না হলে বিয়ে সম্ভব নয়। সজল রোজই অফিস থেকে ফিরে বাস স্ট্যান্ডে মনিকার জন্য অপেক্ষা করে কারণ বাস থেকে নেমে যে রাস্তাটা ধরে মনিকা বাড়িতে যায় সেটা খুব নির্জন।আর এখানেই সজলের ভয়।একটা নির্দিষ্ট সময় হলে তাও হয়।কোন কোন দিন সজল ছ'টা থেকে রাত ন'টা দশটা অবধি দাঁড়িয়ে থাকে। মাঝে মধ্যে সজল খুব জোর দিতে থাকে মনিকাকে এই চাকরিটা ছেড়ে দিতে।চাকরি করা নিয়ে তার কোন আপত্তি নেই কিন্তু মনিকার অফিসের ছুটির কোন নির্দিষ্ট সময় নেই , যদি কখনো অঘটন ঘটে যায় সেই ভয়ে।
 একদিন রাত দশটা বেজে যায় মনিকার দেখা নেই।ফোনেও পাচ্ছে না।বারবার ফোন করে যাচ্ছে। 'নট রিচেবল' - ছাড়া আর কিছুই শব্দ শুনতে সে পাচ্ছে না। প্রথমে রাগ,অভিমান পরে টেনশনে পাগলের মত প্রতিটা বাস আসলেই উঁকি ঝুঁকি। মনিকার বাড়িতে একমাত্র বয়স্ক মা। তিনি মেয়ের টেনশনে বেশ কয়েকবার ফোন করেছেন সজলকে। কারণ তিনিও মনিকাকে ফোনে পাচ্ছেন না।
 রাত তখন দশটা।মনিকা একটা উবের করে নামছে দেখে সজল ছুটে যায়। এতক্ষণ যার জন্য এত টেনশন হচ্ছিল তাকে সুস্থ্য,স্বাভাবিক দেখতে পেয়েই সব টেনশন গিয়ে মাথায় রাগ হয়ে জমা হল।মনিকা নেমেই সজলকে বলতে গেলো তার দেরি হওয়ার কারণ কিন্তু কে শুনবে কার কথা --
-- জানো সজল আজ না
-- আমি কোন কথা জানতে  চাইছি না। বহুদিন ধরে বলছি তুমি অন্য কোথাও চাকরির চেষ্টা করো কিছুতেই তুমি আমার কথা গ্রাহ্য করছো না।
  সজল মনিকার কোন কথা শুনার প্রয়োজনই বোধ করলো না উপরন্তু মনিকার বাড়িতে যেতে যেতেই রাস্তার উপরেই চিৎকার করে রাগ দেখাতে শুরু করলো। মনিকা তাকে বারবার অনুরোধ করলো রাস্তার উপরে চিৎকার না করতে।কিন্তু কে শোনে কার কথা!
সজল এতটাই রেগে ছিল তার মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেলো,
-- আমার সাথে সারাজীবন থাকতে হলে এই চাকরি তোমায় ছাড়তে হবে।আমার তো চাকরিতে কোন আপত্তি নেই।তুমি অন্য কোথাও চাকরি খোঁজো।
 সজলের এই চিৎকার চেঁচামেচিতে মনিকার মাথা এমনিতেই গরম ছিল তারপর এই শর্ত দেওয়ায় মনিকাও রেগে বলে বসলো,
--- আমাকেও ভেবে দেখতে হবে ভবিষ্যতে তোমার সাথে আমি থাকবো কিনা।চাকরির বয়স বেড়েছে।সামনে আমার প্রমোশন হবে।এখানে আমার একটা উন্নত ভবিষ্যত আছে। আমি কিছুতেই এই চাকরি ছাড়বো না।
-- তাহলে আমার সাথে সম্পর্ক ছাড়তে হবে।
--- আমি তো তোমায় ধরে রাখিনি। আমার ভালোবাসার প্রতি যদি তোমার বিশ্বাস না থাকে তাহলে সেই সম্পর্ক আজ না হলেও কাল ভেঙ্গে যাবেই। তাই আরও জড়িয়ে যাওয়ার আগেই উভয়কেই বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হবে।আর জেনে রাখো তোমার কথাই আমি চাকরি কিছুতেই ছাড়বো না।
  কেটে গেছে চার বছর।দু'জনের ইগো ঝেড়ে কেউই আর কোনদিন কারো সামনে গিয়ে দাঁড়ায়নি। প্রথম দেখার স্মৃতিটা মনে রেখে দু'জনেই সেই বকুল গাছটার কাছ থেকে যাওয়ার সময় কিছুক্ষণ থমকে যায়।সিনেমার ফ্ল্যাশব্যাকের মত তাদের সামনে ভেসে ওঠে দু'টি কিশোর কিশোরীর গাছতলায় ফুল কুড়ানোর দৃশ্য।বুকের ভিতর হঠাৎ ওঠা ঝড় সামলে নিয়ে আবার রোজ নামচায় লেগে পড়ে। একই শহর অনেক সময় একই রাস্তা কেউ আগে কেউ পড়ে হাঁটছে কিন্তু ইগো ঝেড়ে কেউ কারো সামনে আর যায়নি।

২৯-৮-২২ 

Wednesday, August 10, 2022

হরিহর আত্মা

  হরিহর আত্মা (m)

  ছেলেবেলা থেকেই দীপিকা আর অঞ্জনা খুব ভালো বন্ধু।সেই প্রথম স্কুলে ভর্তি হওয়া থেকে গ্র্যাজুয়েশন একই স্কুল এবং একই কলেজ। যার ফলে রক্তের সম্পর্ক ছাড়াই এই দুটি পরিবারের লোকজনও আত্মিক বন্ধনে খুব কাছের মানুষ হয়ে উঠেছে।কোন পরিবারের লোকজনকে বাদ দিয়ে অন্য পরিবারে ছোট থেকে বড় কোন অনুষ্ঠানই হয় না।পড়াশুনায় দু'জনেই মাঝারি মানের।দু'বাড়ির লোকেরাই মজার ছলে বলে,"যে বাড়িতে দু'টি ছেলে আছে আমরা সেই বাড়িতেই আমাদের মেয়েদের বিয়ে দেবো।"
  দীপিকার মাসতুত বোনের বিয়েতে দু'পরিবারেরই সকলের নিমন্ত্রণ।সেখানেই দীপিকাকে দেখে একটি পরিবার তাদের ছেলের জন্য পছন্দ করে।কথাবার্তা এগোতে লাগে।এখন বলতে গেলে প্রায় চব্বিশ ঘন্টায় দু'বন্ধু একসাথে সময় কাটায়।আনন্দের মাঝে মাঝে দু'জন দু'জনকে ছেড়ে থাকতে হবে মনে হলেই উভয়ের মনের ভিতরে বিষাদের কালো মেঘে চোখের কোল বেয়ে জল ঝরতে শুরু করে
  দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে এলো।বিদায়ের মুহূর্তে দীপিকা আর অঞ্জনার একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্না দেখে পাড়া-প্রতিবেশীরাও চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি।সে এক হৃদয় বিদারক পরিস্থিতি।
  বৌভাতের দিন অবশ্য দু'জনে অনেকটাই সামলে গেছে।তবুও ফেরবার সময় দু'জনের চোখেই জল।
  দীপিকার বিয়ের ঠিক বছর দু'য়েকের মাথায় অঞ্জনার বিয়ে ঠিক হয়। সম্মন্ধটা অবশ্য দীপিকাই করে।দীপিকার স্বামীর অফিস কলিগ দেবাংশুকে দেখেই দীপিকার মাথায় এটা ঘুরপাক খেতে থাকে।অনেক বলেকয়ে স্বামী সুমিতকে দিয়ে দেবাংশুকে কথাটা বলায়।দেবাংশু বন্ধু সুমিতকে বলে,
-- দেখ যদি প্রেম করতাম তাহলে বাবা,মাকে আমিই জানাতাম।কিন্তু যেহেতু এটা প্রেম নয় তাই এ সম্মন্ধটা তোকে বা তোর বউকেই বাবা,মাকে জানাতে হবে। হ্যাঁ একটা কথা আমি বলতে পারি অঞ্জনাকে আমি বহুবার দেখেছি নানান অনুষ্ঠানে তোদের বাড়িতে।মন্দ নয় দেখতে।আর সেক্ষেত্রে আমার মত জানতে চাইলে আমি হ্যাঁ ই বলবো।
 সুমিত অফিস থেকে ফিরে সব কথা দীপিকাকে জানায়।দীপিকা ফোনে অঞ্জনার বাবা,মায়ের সাথে কথা বলে ছেলের সব বিবরণ দেয়।তারা এই ব্যাপারে সব দায়িত্ব দীপিকাকেই সমর্পণ করেন।
  সুমিত ও দীপিকা দেবাংশুদের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা,মাকে অঞ্জনার ছবি দেখিয়ে পছন্দ করিয়ে মেয়ে দেখার জন্য কথা আদায় করে বাড়িতে ফেরে।
  মেয়ে দেখে পছন্দ হওয়ার পর একসময় বিয়ের তারিখও ফাইনাল হয়ে বিয়ে হয়ে যায়।
 এদিকে দীপিকার বিয়ে হয়েছে চার বছর কিন্তু মাতৃত্বের স্বাদ সে আজও পায়নি।নানান পরীক্ষা নিরীক্ষায় ধরা পড়ে সে কোনদিনও মা হতে পারবে না।খুব ভেঙ্গে পরে।সুমিত তাকে অনেক বোঝায় আজকের দিনে মা হওয়া কোন ব্যাপারই না।প্রয়োজনে তারা একটি সন্তান দত্তক নিয়ে নেবে।কিন্তু দিনরাত কেঁদে কেঁদে প্রায় পাগলের মত অবস্থা হয়ে দাঁড়ায়।আর ঠিক এই মুহুর্তেই বিয়ের দু'বছরের মাথায় অঞ্জনা প্রেগন্যান্ট হয়।এত বড় একটা খুশির খবর সে আর দেবাংশু ছাড়া কাউকেই দিতে পারে না দীপিকার কথা ভেবে।এমনকি তার শ্বশুর শ্বাশুড়িকেউ জানাতে পারে না যদি দীপিকার কানে চলে যায়।
  আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে ধরা পড়ে অঞ্জনা যমজ বাচ্চা জন্ম দিতে চলেছে।সঙ্গে সঙ্গে তার মাথায় খেলে একটা সন্তান তো সে দীপিকাকে দত্তক দিতে পারে।কিন্তু কিছুতেই দেবাংশুকে রাজি করাতে পারে না।শ্বশুর শ্বাশুড়ি তখনও কিছুই জানেন না।দিনরাত স্বামীর সাথে মত বিরোধ মনোমালিন্য চলতে থাকে।ঠিকভাবে অঞ্জনা খাওয়া দাওয়া করে না,ওষুধ দিতে গেলে খাবে না বলে জানিয়ে দেয়।শেষ পর্যন্ত দেবাংশু মেনে নিতে বাধ্য হয়।আর তখনই বাড়িতে সকলকে জানানো হয়।
  দীপিকাকে এই সুখবরটা তার বাড়ি গিয়েই দেবে ঠিক করে।স্বামীকে নিয়ে দীপিকার বাড়ি যায় সে।সবকিছু খুলে বলে তাকে।দীপিকা দুই হাতে অঞ্জনাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে," আমাদের মত আমাদের সন্তানেরাও একই স্কুল,একই কলেজে পড়বে। আমরা দু'জনেই একসাথে মা হবো।"
  কিন্তু তারা ঠিক করে তারা চারজন ছাড়া পৃথিবীর আর কেউ কোনদিন এ কথা জানবে না।তাই তখন থেকেই দীপিকা প্রেগন্যান্ট বলে চাউর করা হয়। একেই বলে মনেহয় হরিহর আত্মা।