Friday, July 30, 2021

সুখের ঘরে আগুন (৪২ ও শেষ পর্ব)

সুখের ঘরে আগুন (৪২ ও শেষ পর্ব)
   বৌভাতের দিন সন্ধ্যায় পার্লার থেকে লোক আসে। কনে সাজানোর পর তারা অম্বিকাকে বলে,
--- কই ম্যাম আর একজনের সাজার কথা আছে তাকে ডাকুন।
 অম্বিকা নিলয়কে ফোন করে।আর কে সাজবে তার কাছে জানতে চায়।নিলয় তাকে জানায় অচলা।তখন অচলা সামনেই ছিল।তাকে সাজতে বলা হলে সে তিড়িং করে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
--- অসম্ভব!দাদার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে।আমি কিছুতেই পার্লারের মানুষের কাছে সাজবো না।অম্বিকা তাকে বুঝিয়ে বলতে সে শেষমেষ রাজি হয়।
  অম্বিকাকে নিয়ে গিয়ে বসানো হল।অতিথিরা একে একে সকলেই আসতে শুরু করেছেন।অচলা সেজেগুজে যখন অম্বিকার সামনে এসে দাঁড়ালো অম্বিকা তাকে দেখে বললো,
--- কি সুন্দর লাগছে তোকে অচলা।তোর এই রূপটা আমাদের চোখে পড়তো না যদি না তোর দাদা জোর করে পার্লারের লোকের কাছে তোকে সাজাতো।সত্যিই তোকে আজ ডানাকাটা পরির মতো লাগছে।
অচলা লজ্জা পেয়ে অম্বিকাকে বললো,
--- কি যে বলো তুমি বৌদি?দাদার এসব পাগলামি!আমি ভাগ্য করে একটা দাদা পেয়েছি।তবে একটা কথা ঠিক,দাদা আজ আমাকে দেখে ভীষণ খুশি হয়ে যাবে।
---আরে শুধু দাদা নয় তোকে দেখে প্রত্যেকেই তোর রূপের প্রশংসা করবে আজ।আর একজন আছে অবশ্য যে তোর এই রূপ নয় তোর মনটাকেই তার ভাল লেগেছে।এটা অবশ্য আমার ধারণা সত্যি মিথ্যা জানি না।তার চোখের চাহনি আমায় জানিয়ে দিয়েছে তোকে মনে হয় সে ভালোবেসেই ফেলেছে।অচলা বুঝতে পারল তার বৌদি নিখিলেশের কথা  বলছে।সে  কথাটা পাত্তা না দিয়ে এড়িয়ে গেল।হাসতে হাসতে বলল,
---দাদা মনে হয় এখনও তোমাকে দেখে পারেনি।তোমাকে দেখলে আজকে দাদা নির্ঘাত ভিরমি খাবে।কি অপূর্ব লাগছে তোমায় বৌদি।
--- জানতে চাইলি নাতো আমি কার কথা বলছি।
অচলা সে কথার উত্তর না দিয়ে বললো,
--- ওই দেখো দাদা এদিকেই আসছে।শুধু তোমায় নয় গো বৌদি আমার দাদাকেও ভারী মিষ্টি লাগছে দেখতে।
 নিলয় এগিয়ে এসে অম্বিকার পাশে বসে বললো,
--- সব ঠিক আছে তো?
--- হ্যাঁ হ্যাঁ সব ঠিক আছে।কিন্তু তুমি তোমার বোনকে দেখেছো?
--- না,ওকে তো দেখতে পারছি না কোথাও ---
--- আসলে দেখতে পারছো ঠিকই কিন্তু চিনতে পারছো না --
--- বুঝলাম না তোমার কথা 
 অম্বিকা ইশারায় দেখিয়ে দিলো পাশে দাঁড়ানো অচলাকে।
 নিলয় তার দিকে তাঁকিয়ে বললো,
--- কি সুন্দর লাগছে তোকে।সত্যিই তোকে চেনা যাচ্ছে না।
--- কার বোন দেখতে হবে তো 
অম্বিকা কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে বললো,
--- শুধু কার বোন?কার ননদ নয় কেন? আমি বুঝি ফেলনা?
--- আজ তুমি শুধু দাদার।
 অচলা হাসতে হাসতে সেখান থেকে চলে গেলো।
 আর ঠিক সেই মুহূর্তে সেখানে হাজির হল নিখিলেশ।নিখিলেশ ধুতি,দামী পাঞ্জাবী পরে এসেছে দেখতে পেয়ে নিলয় হাসতে হাসতে বললো,
--- আরে বিয়েটা তো আমার। তা তুই জামাই সেজে আছিস কেন?
 অম্বিকা মজা করে বললো,
--- বারে,বন্ধুকে বিয়ে করতে দেখে নিজেরও একটু জামাই সাজতে ইচ্ছা করেছে।ট্রায়াল দিচ্ছে বুঝলে --- ।একটা মেয়ে দেখতে হবে এবার নিখিলদার জন্য।অবশ্য আমার হাতের কাছেই একটা মেয়ে আছে।বললে ঘটকালিটা করতেই পারি।
 নিখিলেশও উদাস হওয়ার ভঙ্গিতে বললো,
--- আর কতকাল একা একা হাত পুড়িয়ে খাবো?
একথা শুনেই নিলয় ধমকের সুরে বলে উঠলো,
--- তারমানে তুই একটা রাধুনিকে বিয়ে করবি?
--- ওহ্ নিলয় !আমার কথার তুই যা মানে করলি তারজন্য তোকে একটা সেলুট না দিয়ে পারছি না।
 ওদের হাসি,ঠাট্টার মাঝে হঠাৎ সেখানে অচলার আবির্ভাব হওয়াতে নিখিলেশ তার দিকে ক্যাবলার মত হা করে তাকিয়ে আছে দেখে অম্বিকা নিলয়কে একটা ধাক্কা দিয়ে কানে কানে বলে," কিছু আঁচ করতে পারছো?"
--- কিসের কি আঁচ বলো তো ?
--- তোমার বন্ধুটি তোমার বোনের প্রেমে পড়েছে 
--- বলো কি ?
--- আস্তে আস্তে --- ।সবাই শুনতে পাবে।তবে অচলা বেশ খেলাচ্ছে তোমার বন্ধুটিকে।
 নিখিলেশ অচলার দিকে ঐভাবে তাকিয়ে থাকায় অচলা বেশ অস্বস্তিতে পরে।সে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
--- দাদা তোমার অফিস কলিগরা এসেছেন।সবাই তোমায় ডাকছেন।নিলয় তরিঘড়ি উঠে চলে যাওয়ার সময় নিখিলেশের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো," এভাবে হ্যাংলার মত কোন মেয়েদের দিকে তাকাতে নেই।আমি আছি তো সব সমস্যার সমাধান করে দেবো।"
নিখিলেশ খুবই অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।সে তাড়াতাড়ি ওখান থেকে সরে পড়লো।
 নিমন্ত্রিত অতিথিরা একে একে সবাই যে যার বাড়ির পথে পা বাড়ালো। হাতে গোনা কয়েকজন নিকট আত্মীয়রা নিলয় আর অম্বিকাকে নিয়ে তাদের ফুলশয্যার ঘরে ঢুকলো।এরই মাঝে বেশ কয়েকবার নিখিলেশের সাথে অচলার চোখাচোখি হয়েছে।প্রতিবারই অচলা চোখ নামিয়ে নিয়ে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।কিন্তু তার বুকের ভিতর যে অদ্ভুত এক ধুকপুকানির আওয়াজ সে ছাড়া এত লোকের মাঝেও আর কেউই জানতে পারেনি।প্রতি মুহূর্তে নিজেকে এই বলে শান্তনা দিয়েছে যে সে এ বাড়িতে আশ্রিতা।তারা তাকে এতটাই আপন করে নিয়েছে পুরনো স্মৃতিগুলি আজ তার কাছে দুঃস্বপ্ন বলে মনে হয়।এমন কোন কাজ সে এ জীবনে করতে পারবে না যাতে এ বাড়ির কোন সম্মানহানি হয়।
 তখন অনেক রাত।এক এক করে যে কজন বিয়ে বাড়ীতে ছিলো সকলেই যে যেখানে পারে শুয়ে পড়েছে।অচলা একটু আগে কোলাহল পুর্ণ বাড়িতে অধিক রাতের নির্জনতায় বাড়িটাকে খুব শান্ত এবং স্নিগ্ধ মনে হওয়ায় আর নিজের চোখের পাতা বুঝতে না পারায় তার ঘর লাগোয়া বারান্দায় এসে দাঁড়ায়।সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে অনেক দূরে একটি বড় গাছের পাতার ফাঁক থেকে চাঁদ উঁকি দিচ্ছে।মানুষ তার জীবনে ফেলে আসা সুখের অতীত নিয়ে দুঃখ করে।অচলা মনেমনে ভাবে আমার জীবনে দুঃখ পাওয়ার মত সুখের কোন অতীত নেই।সারাটাদিন পরিশ্রমের পরেও কোনদিন সে পেট পুড়ে দুবেলা খেতেও পারেনি।আর সেখানে আজ আছে সে রাজার হালে।কোনদিন সে কল্পনাও করেনি এমন একটা জীবন তার জন্য অপেক্ষা করে আছে।হয়ত নিজের অজান্তেই এমন কোন ভালো কাজ সে নিশ্চয় করেছিলো যার জন্য নিলয়দার মত একজন মানুষের দেখা সে পেয়েছিলো।বাড়ির প্রতিটা মানুষ তার কাছে ভগবান।
  বেশ কয়েক বছর পরের ঘটনা ----
  খুব ভোরেই অচলা আর নিখিলেশ তাদের দুবছরের ছেলেকে নিয়ে শোকস্তব্ধ বাড়িতে ঢুকেই অচলা বাবার পায়ের কাছে আছড়ে পরে কাঁদতে শুরু করে।অনেক চেষ্টা করেও কেউ তাকে সেখান থেকে তুলতে পারে না। মলিনাদেবী তখন সকলকে বলেন,"ছেড়ে দাও ওকে।লোকটা যে ওর কাছে দেবতার মত ছিলেন।দেবতার পায়ের উপর থেকে তার ভক্তকে তুলতে নেই।জন্ম না দিলেও যে বাবা হওয়া যায় তোর বাবা সেটা প্রমাণ করে দিয়েছেন।আর অচলাও তার ভক্তি,সেবা,ভালোবাসা দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে সন্তানের কাছে তার বাবার স্থান কতটা উপরে।শববাহী গাড়ি উপস্থিত।নিলয় অচলার মাথার উপরে হাত রেখে বললো,
--- এবার ওঠ অচলা।বাবাকে যে নিয়ে যেতে হবে।
 কোন সাড়া না পেয়ে তার হাত ধরে তুলতে গিয়ে দেখে সে অজ্ঞান হয়ে নরেশবাবুর পায়ের কাছে পড়ে আছে।শালা,ভগ্নিপতি দুজন ধরে তাকে ঘরে খাটের উপর শুইয়ে দিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করতে থাকে।তার জ্ঞান ফিরে আসলে সবাই মিলে নরেশবাবুকে নিয়ে রওনা দেয়।অচলার কোলে তার ছেলেটিকে বসিয়ে দিলে সে পুনরায় তাকে বুকের সাথে চেপে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে।অম্বিকা এসে তাকে শান্তনা দিতে শুরু করলে অচলা বলে,
--- বাবা তো আমার কাছে ভগবান ছিলেন।ভগবান আমায় ছেড়ে চলে গেলেন।আমার সংসারে কোন অমঙ্গল নেমে আসবে নাতো বৌদি?
--- এই তুই স্কুলের দিদিমনি?তুই এত বোকা আমি জানতাম নাতো?আমাদের সকলের আশীর্বাদ রয়েছে তোর উপর।নিখিলদার মত একজন জীবনসাথী পেয়েছিস।তোর কোল জুড়ে গোপাল ঠাকুর স্বয়ং এসেছেন।তোর সংসারে অমঙ্গল কেন নেমে আসবে?এই বুদ্ধি নিয়ে তুই ছাত্র পড়াস?
অম্বিকা অচলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে পুনরায় বলে,
--- এবার নিজেকে সামলে নে।ছেলেটার খাবারের ব্যবস্থা কর।ওর খিদে পেয়ে গেছে।শ্মশান থেকে কিছুক্ষনের মধ্যেই সব ফিরে আসবে।আমি মায়ের কাছে যাচ্ছি।আমার মেয়েটারও কিছু খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।ভালোমন্দ,শোক-তাপ সবকিছু নিয়েই জীবন এগিয়ে চলে।সময় তার নিজস্ব নিয়মেই চলে।তাই জীবন থেমে যায় না;থমকে যায় ঠিকই কিন্তু কখনোই থেমে যায় না।সুখের ঘরে মাঝে মাঝে দুঃখের কালো ছায়া এসে ঢেকে দেয় আবার প্রকৃতির নিয়মেই আস্তে আস্তে একটু একটু করে সেই কালো ছায়াও একসময় সরে যায়।
  নিলয়,অম্বিকা,তাদের মেয়ে,অচলা,নিখিলেশ,তাদের ছেলে আর মলিনাদেবী --- আস্তে আস্তে এ বিশাল শুন্যতা কাটিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেন।

                                            শেষ
 

Tuesday, July 13, 2021

সুখের ঘরে আগুন (৪১)

সুখের ঘরে আগুন (৪১  পর্ব)

   অম্বিকার গায়ে হলুদের তত্ব নিয়ে যখন রিতেশ, প্রমিতা,তার ছোট্ট ছেলে,নিখিলেশ বেরোচ্ছে তখন সেখানে অচলাকে দেখতে না পেয়ে নিলয় চিৎকার করে অচলাকে বলল,
--- তুইতো আজ ছমাস ধরে লাফাচ্ছিস গায়ে হলুদের তত্ত্ব নিয়ে যাবি বলে, তা এখন বেরোচ্ছিস না কেন?
 অচলা যাবেই ঠিক করেছিলো কিন্তু নিখিলেশ যাচ্ছে দেখে সে যাওয়ার জন্য আর রেডি হয়নি।কিন্তু সেটা তার দাদাকে বুঝতে না দিয়ে মুখে হাসি এনে বললো,
--- যাবোই তো ভেবেছিলাম দাদা।কিন্তু আমি এখন বেরিয়ে গেলে মা একা হাতে সবকিছু সামলাতে পারবেন না।তাই আর যাচ্ছি না।
--- এখন কোন কাজ নেই।যা ভিতরে গিয়ে রেডি হয়ে আয়।
 মলিনাদেবী কাছেই ছিলেন।তিনিও বললেন,
--- এখন তো আমার কোন কাজ নেই।সবই তো লোকে করবে।আমাকে একেবারে ঠুঁটো জগন্নাথ করে রেখে দেবে এই মেয়েটা।এর ভালোবাসার অত্যাচারে আমি আমার হাত,পা নাড়াতেও ভুলে যাবো কটাদিন পর।
--- না মা,আমি যাবো না।
 নিলয় চেঁচিয়ে বললো,
--- না তোকে যেতেই হবে।তুই না গেলে ও বাড়িতে তত্বটাই যাবে না।
--- এটা কিন্তু তোমার অত্যাচার দাদা।
 সে যাই হোক।তোকে যেতেই হবে।
 অচলা অনিচ্ছা সত্বেও রেডি হয়ে এলো।প্রমিতার ছেলেটাকে কোলে নিয়ে ওদের পিছুপিছু এগিয়ে গেলো।নিখিলেশ অচলা কপালে আঘাত পাওয়ার পর থেকেই বুঝতে পারছিল অচলা তাকে এড়িয়ে চলতে চাইছে।বেশ কয়েকবার সে অচলার দিকে আড় চোখে তাকাতে গিয়ে তার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেছে।দুজনেই যে যার মত চোখ নামিয়ে নিয়েছে।
 সামান্যই পথ।মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ওদের গাড়ি এসে অম্বিকাদের বাড়ির সামনে পৌঁছাল।অমলবাবু গেটের কাছেই অপেক্ষা করছিলেন।যথাযথ আপ্যায়ন সহকারে ওদের নিয়ে বসানো হল।অচলা ঘরে ঢুকেই প্রমিতার ছেলেকে তার মায়ের কোলে দিয়ে সোজা চলে গেলো অম্বিকার কাছে।তার কাছে বসতে বসতে বললো,
--- আর তোমায় তো দিদি বলা যাবে না।এবার থেকে তোমায় বৌদি বলতে হবে।কি দারুন লাগছে তোমায় দেখতে গো।
 তার কাছে বসে থাকা সকলের কোন বাঁচিয়ে আস্তে আস্তে অম্বিকা বললো,
--- তোর দাদা কি করছে রে!
 অচলা মুখটা অম্বিকার কানের কাছে নিয়ে হাসতে হাসতে বললো,
--- তুমি এখন যা করছো ---
--- মানে?
--- ওই তো তুমি দাদার কথা ভাবছো আর দাদা তোমার কথা ভাবছে।
 কথাটা বলেই হাসতে লাগলো।
 এরই মাঝে একজন প্রতিবেশী জানতে চাইলেন,
--- হ্যাঁরে অম্বিকা,মেয়েটি কে রে ?
--- আমার একমাত্র ননদ।
--- কিন্তু আমরা যে শুনেছিলাম নিলয় তার বাবা,মায়ের একমাত্র সন্তান।
ওদের কথার মাঝে প্রমিতা এসে ঘরে ঢোকে।আলোচনা কানে যেতেই সে বলে,
--- ও দাদার মাসতুত বোন।আমরা দুজনেই মাসতুত বোন।
 অচলা আর অম্বিকা দুজনেই তার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।
  বাড়িতে ফেরার সময় অচলা প্রমিতাকে বলে,
--- মানুষের কত কৌতুহল দেখেছো দিদি।ভাগ্যিস তুমি এসে পড়েছিলে তা না হলে কি যে তাদের উত্তর দেবো বুঝতেই পারছিলাম না।
--- এগুলো অতি সাধারণ ব্যাপার রে।এসব নিয়ে মাথা ঘামাস না।পরীক্ষা কেমন হল বল।
--- মোটামুটি হয়েছে গো দিদি।আশাকরি ফাষ্ট ডিভিশন পেয়ে যাবো।
--- তাহলে তো বেশ দামী একটা স্মার্ট ফোন তোর বাঁধা।
--- নাগো দিদি আমি নিষেধ করে দিয়েছি দাদাকে।এখন বিয়েতে এত খরচ হচ্ছে আবার দামী ফোন?
--- আরে দাদাকে তুই চিনিস না।একবার যখন বলেছে তখন সে কিনেই ছাড়বে।
--- একটা কাজ করে দেবে দিদি?
--- হ্যাঁ বলেই দেখ না।
--- আমি না স্কুলে গিয়ে পড়তে চাই না। প্রাইভেটেই পড়াশুনাটা চালিয়ে যেতে চাই।আসলে এখন বয়সটা তো বেড়ে গেছে।লজ্জা করবে।আর তাছাড়া আমি স্কুলে চলে গেলে মায়ের পক্ষে সংসারের কাজ একা সামলানো খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে।তাই তুমি যদি দাদাকে একটু বুঝিয়ে বলতে ভালো হত।
--- ঠিক আছে।বিয়েটা মিটুক তারপর এক সময় বুঝিয়ে বলবো।তাড়াতাড়ি চল।আবার তো খেয়েদেয়ে,বিশ্রাম নিয়ে সাজুগুজু করে বেরোতে হবে।
  নিলয়কে নিয়ে রিতেশ আর কিছু বন্ধুবান্ধব আগেই বেরিয়ে গেলো।সন্ধ্যা লগ্নে বিয়ে।যেহেতু প্রায় একই পাড়ার মধ্যে বলতে গেলে বরযাত্রীরা সব হেঁটেই যাবে ঠিক করেছিল।একে একে সবাই বেরোতে লাগলো।অচলা সকলে বাড়ি ফিরে রাতে শোবে সেই ব্যবস্থা করতেই তখনো ব্যস্ত।তার মা তাকে তাড়া দিতে লাগলেন।সকলের শেষে যখন নিখিলেশ বেরোতে যাবে তাকে দেখতে পেয়ে মলিনাদেবী বললেন,
--- বাবা মিনিট পাঁচেক দাঁড়িয়ে যাও।পাগলীটা এখনো রেডি হয়নি।ওকে নিয়েই বেরোও। কথাটা অচলার কানে যেতেই সে বলে উঠলো,
--- না না আমি একাই চলে যেতে পারবো।এই এক্ষুনি বেরিয়ে যাবো মা।আপনি চলে যান।
--- বড্ড অবাধ্য হয়ে যাচ্ছিস অচলা।আমি যেটা বললাম সেটাই হবে।একা একা তোকে এখন আমি যেতে দেবো না।তুই রেডি হয়ে নিখিলের সাথেই যাবি।
  অচলা মায়ের রাগান্বিত আওয়াজ শুনে আর কোন কথা না বলে রেডি হয়ে নিখিলেশের সাথেই রওনা দিলো জড়োসড়ো হয়ে।
পাশাপাশি দুজনে হাঁটছে।কিন্তু কারো মুখে কোন কথা নেই।বেশ খানিকটা হাঁটার পর নিখিলেশই বলে,
--- সরি অচলা সেদিন আমার জন্যই তুমি ব্যথা পেয়েছিলে।
--- সেতো কবেই ব্যথা সেরে গেছে।তারজন্য এখন সরি বলছেন কেন?আর আমি তো খুব গরীব ঘরের মেয়ে।আমাদের ওসবে কিছুই যায় আসে না।
--- এক সময় গরীব ছিলে।কিন্তু এখন তো আর গরীব নও।
--- পুরনো কথা ভুলে গিয়ে নূতন অবস্থানকে নিয়ে মেতে থাকলে মানুষ অহংকারী হয়ে যায়।তাই আমি সব সময় পুরনোকে মনে করেই চলি।আমি কখনোই ভুলতে পারবো না আমি কি ছিলাম।
--- আমার সম্পর্কে তোমার কি ধারনা?
--- আপনি দাদার বন্ধু ।তার একজন প্রকৃত শুভাকাঙ্ক্ষী।
--- আর কিছু ?
--- না।আমি এ টুকুই আপনার সম্পর্কে জানি।আমি আদার ব্যাপারী,জাহাজের খবরের আমার কি দরকার?
 এড়িয়ে যায় অচলা কথাটা।তারা ততক্ষনে অম্বিকাদের বাড়ির দোরগোড়ায় এসে গেছিলো।তাই আলোচনা ওখানেই বন্ধ হয়ে যায়।
  অম্বিকার বাড়িতেই বিয়ে হচ্ছে।এরজন্য আলাদা করে কোন ঘরভাড়া অমলবাবু নেননি। গিন্নী অবশ্য অনেক চেঁচামেচি করেছেন।কিন্তু তিনি গো ধরে বসে আছেন তার মেয়েকে তিনি বাড়ি থেকেই বিয়ে দেবেন।বিশাল বড় ছাদ তার।আর তিনি পেয়েছেন তার বাড়ির পাশে একটা ফাঁকা জমি।মালিকের অনুমতি নিয়েই ওখানে বিশাল প্যান্ডেল করে খাওয়ানোর আয়োজন করা হয়েছে।আত্মীয়স্বজন ছাড়াও তার জীবনের সবথেকে এই বড় কাজটাটে তিনি পাড়ার লোকজনকে ভীষণভাবে পাশে পেয়েছেন।বরযাত্রী আর অতিথি আপ্যায়নে তিনি ও তার স্ত্রী ছাড়াও সকলেই যেন একে অপরের হয়ে উঠেছেন।অমলবাবু প্রতিটা বাড়িতে নিমন্ত্রণ করতে গিয়ে সকলকেই বলে এসেছিলেন "শুধু নিমন্ত্রিত অতিথি হয়ে নয় কাছের মানুষ হয়ে আমার মেয়ের বিয়েতে আমার পাশে থাকবেন।আমার তো ওই একটি মাত্র মেয়ে।এটাই আমার প্রথম ও শেষ কাজ।আমার এই কাজে কোন ত্রুটি বিচ্যুতি যদি কিছু দেখেন নিজেরাই সেগুলো সমাধান করবেন।আমার কাছে জানতে চাওয়ার কোন দরকার সেই মুহূর্তে নেই।সিদ্ধান্ত আপনারা যা নেবেন আমি হাসি মুখে মেনে নেবো।"সুতরাং বিয়ে বাড়িতে কোথাও কোন সমস্যার সৃষ্টি হলেই সেখানে উপস্থিত হওয়া অভিজ্ঞ এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে বিন্দুমাত্র দেরি করেননি।সকলেই মন খুলে বিয়েবাড়িতে আনন্দ করেছেন।বিয়েবাড়িতে খাবারদাবার এবং রান্নার প্রশংসাও করেছেন সকলে।নরেশবাবু তো ভীষণ খুশি অমলবাবুর এই বিশাল আয়োজন আর আপ্যায়ন পেয়ে।তিনি তার বন্ধুকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে তো বলেই ফেললেন, "শেষমেষ ছেলেমেয়ে দুটিকে এক করে দিয়ে আমরাও কিন্তু অনেক কাছাকাছি চলে এলাম।"
  শুভ দৃষ্টির সময় ছাদনা তলায় তিল ধারণের জায়গা নেই।সকলে মিলে অম্বিকাকে এতটাই উপরে তুললো বর বড় না বউ বড় দেখার জন্য অম্বিকা ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।অচলা দেখতে পেয়ে জোরে বলে উঠলো,
--- বৌদি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে তোমরা বৌদিকে নিচুতে নামাও।
 নিলয় তাকিয়ে দেখে সত্যিই তাই। সেও সকলকে অনুরোধ করে অম্বিকাকে নামিয়ে নিতে।নিলয়ের কথা শুনে বন্ধুরা যারা সেখানে ছিল সকলেই তার পিছনে লেগে হাসিঠাট্টা করতে থাকে তখন।
 কেউ বলে,"এখনই এত দরদ!"আবার কেউ বলে, " এখন না এ দরদ অনেক আগে থাকতেই।--।" হাসাহাসি চলতেই থাকে।

ক্রমশঃ 
    

Thursday, July 1, 2021

বিশ্বাসে ভালোবাসা

বিশ্বাসে ভালোবাসা
   
"ভালোবাসা ভালোবাসে শুধুই তাকে, ভালোবাসায় ভালোবেসে বেঁধে যে রাখে"--- বুঝলে পাগল, আমাকে এড়িয়ে যাওয়া এত সহজ নয়।আমি তোমায় ভালোবাসি আর যতদিন বাঁচবো ততদিন ভালোবাসবো।সে তুমি আমার সাথে সংসার করো বা না করো। সেই প্রথম।দিন থেকে তোমায় আমি ভালোবাসি।অবশ্য তখন আমি বুঝতাম না এটাকেই ভালোবাসা বলে।কিন্তু তোমার সাথে কথা বলতে, তোমার সাথে সময় কাটাতে আমার খুব ভালো লাগতো।সেই ভালোলাগা থেকে বেরিয়ে কবে যে তোমায় ভালবাসতে শুরু করলাম সে তো আমি নিজেই জানিনা। তুমি যতই আমায় বলোনা কেন তুমি আমার বাবা-মায়ের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারবে না কারণ তাদের সাহায্যে;তোমার ভাষায় অবশ্য তাদের দয়ায় তুমি আজ এই জায়গায় পৌঁছেছো সেই কারণে।কিন্তু তারজন্য আমার ভালোবাসা তো মিথ্যে হয়ে যেতে পারে না।
  শেখর চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে থাকে। আর অলিভিয়া অনর্গল বকবক করে নানানভাবে তার ভালোবাসা ব্যক্ত করতে থাকে।আজ এখানে আমি কেন এসেছি জানো?তুমি তো আমাকে কিছু না জানিয়ে এখানে চলে এলে।আমাকে মা পাঠিয়েছেন।যেই আমি দুদিনের জন্য একটু মামাবাড়িতে গেছি আর তুমি চলে আসার জন্য সেই সুযোগটাই নিলে।কেন বুঝতে চাওনা আমার থেকে দূরে চলে গেলেই আমার ভালোবাসা তোমায় আরও বেশি করে জড়িয়ে ধরবে। এ বাঁধন থেকে কোনদিনও তুমি বেরোতে পারবে না।
--- মাসিমা কেন তোমায় আমার কাছে পাঠিয়েছেন?
--- ওই যে যতবার তোমায় ফোন করা হচ্ছে তুমি ফোন ধরছো না।যেহেতু ফোনটা আমার মোবাইল থেকে আসছে তুমি ভাবছো আমিই ফোন করছি।কিন্তু না,ওটা মা আমাকে দিয়ে তোমার খবর নিতে ফোন করাচ্ছিলেন।কাল সারাদিন কোন ফোন করনি তাই মা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তোমার খবরের জন্য।অগত্যা আমাকেই পাঠালেন।আমার তো শাপে বর হল।
--- আমি তোমায় ভালোবাসি না অলি।
--- আমি বিশ্বাস করি না।
--- আমাকে তুমি বেইমান হতে বলছো?
--- এটাই হচ্ছে আসল কথা।ভালো তুমি আমায় বাসো কিন্তু যেহেতু আজ আমার বাবা মায়ের জন্য তুমি এই জায়গায় পৌঁছেছো তাই কথাটা স্বীকার করতে সাহস পাচ্ছ না।
   কয়েক বছর আগের কথা।
 দেবাশীষ চৌধুরী তার বাড়িতে কিছু কাজ করার জন্য এক হাজার ইট এনেছিলেন।ভ্যান ইটগুলি রাস্তাতেই নামিয়ে দিয়ে চলে গেছিলো।বিকালে বাড়িতে ফিরে তিনি লোক খুঁজতে বেরোন ইটগুলিকে বাড়ির ভিতরে আনার জন্য।কিন্তু ওই সময় কোন লোক না পেয়ে তিনি যখন চলে আসছিলেন তখন আঠারো উনিশ বছরের একটি ছেলে তার দিকে এগিয়ে এসে বলে,
--- কাকু,আপনি নাকি লেবার খুঁজছেন।কি কাজ করতে হবে আপনার?
দেবাশীষবাবু ছেলেটির দিকে তাঁকিয়ে দেখেন ছেলেটি ফর্সা,বেশ লম্বা।চোখ দুটি খুব মায়াভরা।পোশাক আশাকও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ।তিনি জানতে চান,
--- কাজটা কে করবে?আমার কিছু ইট রাস্তা থেকে বাড়ির ভিতরে নিতে হবে।
--- কাজ আমি করবো।
--- তুমি?তুমি কি পারবে? এ কাজ তুমি পারবে না বাবা।
--- পারতে তো আমাকে হবেই কাকু।আমাকে সেমিস্টারের টাকা জমা দিতে হবে কলেজে।কালই লাষ্ট ডেট।
--- তুমি কলেজে পড়?
--- হ্যাঁ।এটা থার্ড সেমিস্টার।সব টাকা যোগাড় করতে পারিনি।কলেজ থেকে আমাকে তিনদিন বেশি সময় দিয়েছে।এই তিনদিনে কিছু কাজ করতে পারলে টাকাটা জোগাড় হয়ে যাবে।
--- বাড়িতে কে কে আছেন তোমার?
--- এখন কেউ নেই।মা ছিলেন। ছমাস হল মারা গেছেন।বাবা তো আগেই অন্য একজনকে বিয়ে করে অন্যত্র সংসার পেতেছেন।অনেক কষ্ট করে মা আমায় লেখাপড়া শিখাছিলেন।মায়ের স্বপ্ন আমাকে পূরণ করতেই হবে।কয়েকটা টিউশনি করি তাতে দুবেলা খাওয়াটা হয়ে যায়।বাড়িটা নিজের।মা তার একটা একটা গয়না বিক্রি করে আমায় নিজের পায়ে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিলেন।কিন্তু মাঝখান থেকে করোনা মায়ের জীবনটা কেড়ে নিলো।
 দেবাশীষবাবু অবাক হয়ে ছেলেটির কথা শুনছিলেন।সেদিন ছেলেটি রাত একটা অবধি ওই ইট টেনে বাড়ির ভিতরে রেখেছে।সাথে অবশ্য দেবাশীষবাবুও ছিলেন সমানভাবে। তিনিও ইট টেনেছেন সেই রাত একটা পর্যন্ত।পড়ে অবশ্য তাকে পেইন কিলার খেতে হয়েছিল।আর শেখরকে তার স্ত্রী মিতাদেবী রাত্রে খাইয়ে ছেড়েছিলেন।যাওয়ার সময় দেবাশীষবাবু শেখরের কাছে জানতে চেয়েছিলেন,
--- কত টাকা তুমি জোগাড় করেছো?আর কত জোগাড় করতে হবে তোমাকে?
--- আমার এখনো চার হাজার বাকি।
 দেবাশীষবাবু জোর করেই তাকে ওই  টাকাটা দিয়ে দিয়েছিলেন।শেখর অবশ্য কিছুতেই টাকাটা নিতে চায়নি।সেই শুরু শেখরের জীবন গড়ার জন্য তার পাশে দাঁড়ানো।
  দেবাশীষবাবু ও মিতা দেবী সন্তান স্নেহে শেখরকে বুকে টেনে নেন।আর তাদের মেয়ে একটু একটু করে শেখরের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ে।শেখর যখন সেটা বুঝতে পারে তখন থেকেই অলিভিয়াকে এড়িয়ে যেতে থাকে।কারণ সে উপকারীর সাথে বেইমানী করতে পারবে না কিছুতেই।তাদের মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যত।তার মত হতদরিদ্র একটি ছেলের সাথে এগিয়ে চলা কিছুতেই সম্ভব নয়।
 দেবাশীষবাবুর অনুরোধে সে কিছুদিন ওই বাড়িতেই ছিল।কিন্তু অলিভিয়া নানান অজুহাতে তার ঘরে যখন তখন ঢুকে পড়তো।তাদের বাড়ি শেখরের কিছুই বলার ছিল না।তাই অলিভিয়া যখন দুদিনের জন্য তার মামাবাড়িতে যায় সেই সুযোগ পেয়ে শেখর তার নিজের বাড়িতে চলে আসে। শেখর, অলিভিয়া যখন ঘরে বসে কথা বলছে তখন অলিভিয়ার ফোনটা বেজে ওঠে।অলিভিয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে বাবা ফোন করেছেন। বাবার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে সে ফোনটা শেখরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
---বাবা কথা বলবেন তোমার সাথে।শেখর কিছুক্ষণ দেবাশীষ বাবুর সাথে কথা বলে ফোনটা অলিভিয়ার হতে দিয়ে দেয়।
  দেবাশিসবাবু কথামতো পরদিন সকাল এগারোটা নাগাদ শেখর তাদের বাড়িতে আসে।দুপুরবেলা খাওয়া-দাওয়া করে যখন দেবাশীষবাবু আর মিতাদেবীর সাথে সে কথা বলছিল তখন মিতাদেবী দেবাশীষবাবুকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
--- এত কথা না বলে আসল কথাটা ওকে জানাও কি জন্য আজ ওকে আসতে বলেছ।
---  হ্যাঁ বলছি। শেখর বাবা আমাদের একটা মনের সুপ্ত বাসনা তোমার পূরণ করতে হবে।
--- এভাবে বলবেন না কাকু।আপনারা আমায় আদেশ করুন।যা বলবেন তাই করবো।
--- না না এখনি নয়।তবে চাকরি পাবার পর।
--- হ্যাঁ বলুন কি করতে হবে?
--- আমার মেয়েটাকে তোমার বিয়ে করতে হবে।অবশ্য তোমার আপত্তি থাকলে আমরা জোর করবো না।একমাত্র মেয়ে আমাদের।ও মুখ ফুটে যদি কিছু চায় তাহলে না বলি কি করে?আর তা ছাড়া আমাদের দুজনেরই তোমায় জামাই হিসাবে পেলে ভালো লাগবে।আশাকরি কিছুদিনের মধ্যে কিছু একটা রোজগারের ব্যবস্থা তোমার হয়ে যাবে।মেয়েটা তোমায় বড্ড ভালোবাসে।
--- আমি দরিদ্র।তবে নির্লোভ।যে ভালোবাসা আমি আপনাদের কাছ থেকে পেয়েছি সে ঋণ আমি কোনদিন শোধ করতে পারবো না।আগে চাকরি পাই তারপর এসব নিয়ে ভাবা যাবে।
 সেদিনও রাতে খেয়েই শেখরকে আসতে হয়েছিল।অনেক রাতে সেদিন বাড়ি ফেরার সময় অন্ধকারে অলিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শেখর খুব চাপা স্বরে তাকে বলে,
--- কাল থেকে চাকরির চেষ্টাটা দ্বিগুণ করতে হবে।কারণ যত তাড়াতাড়ি চাকরি পাবো অলি তত তাড়াতাড়ি আমার হবে।এতদিন মনের কথাটা বলতে সাহস পাইনি।আজ বলে গেলাম।আর কি যেন কাল বলছিলে? 
ভালোবাসা ভালোবাসে শুধুই তাকে, ভালোবাসায় ভালোবেসে বেঁধে যে রাখে" --- একদম ঠিক বলেছিলে।