Monday, April 19, 2021

পিতৃ আদেশ

পিতৃ আদেশ
 

 অগোছালো ঘরটাকে পরিষ্কার করতে গিয়ে অর্পিতা হিমশিম খাচ্ছে।বিয়ের পনেরদিন পর আজ অঙ্কুশ অফিস গেলো।কিন্তু এই পনেরদিনে পনেরটা কথা হয়েছে কিনা তার সাথে অর্পিতা নিজেই জানেনা।কোন পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া।হঠাৎ করেই একটা অচেনা অজানা লোক তাকে বিয়ে করতে চাইলো আর সেও রাজি হয়ে গেলো।কিন্তু এই ছাড়া অর্পিতার আর কোন উপায়ও ছিলো না।নিজের সন্মান বাঁচানোর জন্য একটা নিশ্চিত আশ্রয় তার একান্ত জরুরী ছিল।অঙ্কুশের কাছ থেকে এতটা নিশ্চয়তা পেয়েও সে কিছুতেই তার কাছে ফ্রী হতে পারছে না।
  বাবা আর মেয়ের সংসার আজ দশ বছর ধরে।বাবা সাধারণ একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরী করলেও যা বেতন সেখান থেকে পান তাতে অর্পিতা তাদের সংসারটাকে খুব সুন্দর করেই চালিয়ে নিত।ছোট্ট একখানা ঘর আর এক চিলতে বারান্দা।ওখানেই রান্নাবান্না।ঘরের মধ্যে সামান্য একটু জায়গা যেখানে একজন ভালোভাবে বসে খেতে পারেনা।কিন্তু ওই সামান্য জায়গাতেই ছুটির দিনগুলোতে দুপুরে আর প্রতিদিন বাপবেটি কষ্ট করে হলেও রাতে একসাথে বসেই খান।সারাদিনের অফিসের নানান গল্প করতে করতে দুজনের খাওয়া শেষ হয়।অর্পিতা কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছিল বাবা কি যেন একটা কথা বারবার বলতে গিয়েও থেমে যাচ্ছিলেন।জিজ্ঞাসা করেও কোন সদুত্তর সে পায়নি।কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের জীবনে হল ছন্দপতন!
বেশ কয়েকদিন ধরেই অনিমেশবাবু একটু খাসির মাংস খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করছিলেন।কিন্তু ডাক্তারের নিষেধ মনে করে অর্পিতা বাবাকে নিরস্ত করে।সেদিন ছিল অনিমেশবাবুর জন্মদিন।অফিস যাওয়ার সময় অর্পিতা বাবাকে এসে প্রণাম করে " শুভ জন্মদিন" বলাতে আনিমেশবাবু মেয়ের মাথায় হাত রেখে হাসতে হাসতে বলেন,
--- আজকে আমার জন্মদিন নিশ্চয় আমার মা আমার জন্য একটুখানি খাসির মাংস আনবে।
--- বাবা,ডাক্তারবাবু তোমায় খাসির মাংস খেতে বারবার নিষেধ করেছেন।
--- জন্মদিনে খেলে কিছু হবে নারে!বহুবছর খাই না তো।
--- ঠিক আছে।নিয়ে আসবো।কিন্তু মাত্র দুপিস।
--- হ্যারে ঠিক আছে।তোর এই কড়া শাসনে থাকলে আমি অমর হয়েই থাকবো।
--- বাবা!
  অনিমেশবাবু হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলেন।
    অর্পিতা ঘর পরিষ্কার করতে করতে এগিয়ে গেলো অঙ্কুশের বইয়ের তাকের কাছে। প্রতিটা বইই গল্পের বই।বড় বড় লেখক লেখিকাদের সমগ্র রচনাবলী।একটা একটা করে বই নামিয়ে সেগুলি ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার করে একটা চেয়ারের উপর ঢিপ দিয়ে রাখছিলো।সব বইগুলি নামানোর শেষে হঠাৎ তার চোখে পড়ে একটা খাম। খামটা হাতে নিয়েই সে চমকে যায়।খামের উপরে অঙ্কুশের ঠিকানা থাকলেও হাতের লেখাটা যে তার খুবই চেনা।কি করে সম্ভব এটা? পরের চিঠি পড়া উচিত নয় একথা বাবার কাছ থেকেই তার শেখা।কিন্তু এ চিঠি তো তাকে পড়তেই হবে।জানতে হবে সবকিছু।
  বাবার জন্মদিনে অর্পিতা দুশ গ্রাম খাসির মাংস এনে তেল মসলা কম দিয়ে একদম পাতলা করে ঝোল করে।সামান্য পায়েসও করে।বাবা বাড়িতে আসার সঙ্গে সঙ্গেই সে পায়েসটা বাবাকে খাইয়ে দেয়।কারণ খাসির মাংসের সাথে পায়েস খেলে যদি বাবার এসিড হয়ে যায়।সেদিন অনিমেষবাবু খুব তৃপ্তি সহকারে অর্পিতার রান্না মাংসটা খান।রাত দশটার দিকে দুজনে খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়েন।বাবা রোজই সকাল ছটার মধ্যে উঠে যান।কিন্তু জন্মদিনের পরের দিন সকাল আটটাতেও বাবাকে উঠতে না দেখে সে ডাকতে এসে দেখে তার গা পুরো ঠান্ডা।ডাক্টার জানিয়ে গেলেন হার্ট এ্যাটাক।
 আত্মীয়স্বজন বলতে কোনকালেই কেউ ছিলনা আর্পিতাদের। দুএকজন পাড়া প্রতিবেশীর সাহায্যে বাবার কাজটা শেষ করে অর্পিতা।সমস্যা দেখা দেয় মারাত্মকভাবে ঘরভাড়া নিয়ে।জমানো যা কিছু ছিল আস্তে আস্তে শেষ হতে থাকে।এইভাবে মাস ছয়েক চলে।একদিন ঠিক সন্ধ্যার দিকে একজন দেখা করতে আসেন অনীমেশবাবুর সাথে। ছ'ফুটের  কাছে লম্বা,একমাথা চুল।দেখতে মন্দ নয়।
--- আচ্ছা এটা কি অনিমেশবাবুর বাড়ি?
--- হ্যাঁ।
--- আপনি নিশ্চয় উনার মেয়ে অর্পিতা?
 এবারও অর্পিতা ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়।
--- উনাকে একটু ডেকে দেবেন?
--- উনি নেই
--- নেই মানে?
--- আজ ছ'মাস হল উনি মারা গেছেন।
--- সেকি?অনেক দেরি করে ফেলেছি আসতে।
  সেই শুরু অঙ্কুশের এ বাড়িতে আসা যাওয়া।একদিন অঙ্কুশের সামনেই বাড়ির বকেয়া দু'মাসের ভাড়া চাইতে এসে অঙ্কুশকে দেখতে পেয়ে বাড়িওয়ালী আভাসে ইঙ্গিতে অর্পিতাকে জানিয়ে দেন এখানে তার থাকা সম্ভব নয়।কারণ একাকী একটা যুবতী মেয়ের কাছে একটি যুবক ছেলেকে তিনি কিছুতেই বরদাস্ত করবেন না।আর সেদিনই বাড়িওয়ালী চলে যাওয়ার পর অঙ্কুশ অর্পিতাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।দু'দিন সময় চেয়ে নেয় অর্পিতা।
  কালীঘাটে বাবার বাৎসরিক করে তারপরদিনই কালীঘাটে বিয়ে করে ওরা।নিশ্চিত আশ্রয়,খাওয়াপরার বন্দোবস্ত হলেও অঙ্কুশের সম্মন্ধে কিছুই জানেনা অর্পিতা।তাই সে কিছুতেই ফ্রী হতে পারে না তার কাছে।অঙ্কুশও তাকে কোন জোর করেনি এই পনেরদিনে।একটা ভালো প্রাইভেট ফার্মে চাকরী করা সৎ ছেলেটি কি কারণে অর্পিতাকে বিয়ে করলো এটাই ছিল অর্পিতার সব থেকে ভাবনার বিষয়।
  অর্পিতা আস্তে আস্তে খামটা খুলে চিঠিটা বের করে।প্রথমে সে চিঠিটার উপর খুব ধীরে ধীরে হাত বুলিয়ে বাবার হাতের ছোঁয়া পেতে চেষ্টা করে।তারপর শুরু করে চিঠিটা পড়তে।

প্রিয় অধীর,
 পত্রের প্রথমেই তোকে ভালোবাসা জানাই।আশাকরি ছেলে ও বউঠানকে নিয়ে ভালো আছিস।অনেকদিন তোর সাথে কোন যোগাযোগ নেই।তোর অফিসে খবর নিয়েছিলাম কিন্তু কেউই তোর বাসস্থানের কোন খবর দিতে পারলো না।তাই বাধ্য হয়ে তোর গ্রামের বাড়ির ঠিকানায় এই চিঠি ছাড়লাম।জানিনা চিঠিটা তোর হাতে পৌঁছাবে কিনা।
  আমার একটি বিবাহযোগ্যা মেয়ে আছে।কোনরকমে তাকে গ্র্যাজুয়েশনটা করিয়েছি।সংসারের যাবতীয় কাজ সে পারে।বয়স হয়েছে বন্ধু,যে কোন সময় চলে যেতে পারি।মেয়েটি তাহলে পথে বসবে।তাই বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে তোর কাছে আমার একান্ত অনুরোধ একবার তোর ছেলেটিকে নিয়ে আমার মেয়েটিকে দেখে যাস।আমার অর্পিতার ব্যবস্থা না করে গেলে আমি যে মরেও শান্তি পাবোনা।
             ইতি 
                তোর বন্ধু অনিমেশ।
  চিঠিটা শেষ করে নিজের চোখের জল মুছে আবার পূর্বস্থানে চিঠিটা রেখে দিলো অর্পিতা।সন্ধ্যায় অঙ্কুশ অফিস থেকে এসে তৈরি করা চা জলখাবার পেয়ে ভীষণ খুশি হয়।অর্পিতা এসে অঙ্কুশের পাশে সোফায় বসে।অঙ্কুশ একটু অবাক হয়।অর্পিতা বলে,
--- একটু কথা ছিল।
--- হ্যাঁ আমারও কিছু কথা ছিল।
--- তাহলে আগে আপনি বলুন আমি পরে বলছি।
 অঙ্কুশ শুরু করে - আসলে হঠাৎ করে এই বিয়েটা হওয়াতে তুমি হয়তো মন থেকে মেনে নিতে পারোনি।কিন্তু বিয়েটা হঠাৎ করে হলেও বিয়েটা কিন্তু তোমার বাবা ঠিক করে রেখেছিলেন।তোমার বাবা আমার বাবাকে একটা চিঠিতে এ কথা জানিয়েছিলেন।তারা দুজন বন্ধু ছিলেন।পরবর্তীতে কবে যে তাদের যোগাযোগ বিরছিন্ন হয় তা আমার জানা নেই।আমি তখন কলকাতাতে একাই থাকতাম।মা হঠাৎ করেই চলে যান।বাবা গ্রামের বাড়িতেই থাকতেন।তার অসুস্থ্যতার খবর পেয়ে আমি গ্রামে পৌঁছালে তিনি একটি চিঠি আমার হাতে দেন।চিঠিটা হাতে পাওয়ার পর দিন তিনেক পরে বাবা চলে যান।আমি ওই চিঠির কথা ভুলেই যাই।তারপর কেটে গেছে অনেকগুলি মাস।হঠাৎ চিঠিটার কথা মনে পড়ায় সেটিকে বের করে বাবার বলা শেষ কথাটি রাখতেই তোমাদের বাড়িতে যাওয়া আর তোমায় বিয়ে করা।চিঠিটার নিচুতে তোমাদের ভাড়াবাড়ির ঠিকানাটা দেওয়া ছিল।চিঠিটা এই বাড়িতেই আছে। কোথায় রেখেছি ঠিক মনে করতে পারছি না। হাতে পড়লে তোমায় দেবো।আমি কিন্তু এ ব্যাপারে কোন মিথ্যা বলছি না।
--- আমি কি বলেছি আপনি মিথ্যা বলছেন?
--- না তবুও তোমার তো মনে হতেই পারে হঠাৎ করে তোমায় বিয়ে করতে চাইলাম কেন?
--- হূ এটা ঠিক।এটাই আমার মনে হয়েছিল।
 অর্পিতা উঠে গিয়ে চিঠিটা এনে অঙ্কুশের হাতে দিয়ে বললো,
--- বইয়ের তাকে ছিল।
--- তাহলে তো তুমি সবই জেনেছো।যাক ভালোই হল।অন্তত আসামীর কাঠগড়া থেকে নামতে পারলাম।
--- পনেরদিন হয়ে গেছে আমাদের বিয়ে হয়েছে। এ ক'দিনে কথাটা বলার সময় পাননি?
--- আসলে তুমি তো আমার সাথে কোন কথায় বলো না।তাই সাহস পাইনি।আজ তুমি এসে আমার কাছে বসাতে কথা বলার সাহস পেলাম।হাসতে থাকে অঙ্কুশ।
  খেয়ে দেয়ে রাতে ঘুমাতে গিয়ে অঙ্কুশ দেখে সোফার উপর আজ আর কোন বালিশ নেই।দুটো বালিশই খাটে গুছিয়ে রাখা।

Wednesday, April 14, 2021

সুখের ঘরে আগুন (৩৪)

সুখের ঘরে আগুন (৩৪)

   রোজ রাতে কথা যেন আর ফুরাতেই চায়না দুজনের।দুজনেরই সকালে উঠতে দেরি হয় আর অফিস বেরোনোর সময় হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।নিলয় ভুবনেশ্বর থেকে নানান সাইট ঘেটে ঘেটে অচলার প্রাইভেটে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার একটা ব্যবস্থা করে।প্রাথমিক স্তরে সেখানে কিছু টাকা পয়সা জমা করতে হবে তারপর তারা বইপত্র,নোটস, সাজেশন সবকিছু দেবে।কিন্তু পরীক্ষার সময় কোন একটি সেন্টারে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে।নিলয় তার বাবার সাথে এ ব্যাপারে কথা বললে তিনি জানান,
--- কোথায় কি করতে হবে তুই আমাকে জানালে আমি সেখানে গিয়ে টাকা-পয়সার জমা দেওয়ার থেকে শুরু করে বইপত্র,নোটস,সাজেশন সবকিছুই নিয়ে আসবো।
 কিন্তু  নিলয় তার বাবাকে জানায় যে তোমাকে কোথাও যেতে হবে না সবকিছু অম্বিকা ওকে নিয়ে গিয়ে ব্যবস্থা করে দেবে।
কথাটা শুনে বাবা প্রথমে একটু থতমত খেয়ে যান।তিনি তার ছেলের কাছে জানতে চান,
--- কিন্তু অম্বিকা কিসের জন্য এসব করতে যাবে?
 বাবার কথাটা শুনে নিলয় মনে মনে ভাবে বাবাকে কথাগুলো এই মুহূর্তে বলা ঠিক হলো না;তবুও ম্যানেজ করে বলল,
--- প্রলয়ের বিয়ের সূত্র ধরে অম্বিকার সাথে তার একটি বন্ধুত্বের সম্পর্কের গড়ে উঠেছে।অচলার ব্যাপার নিয়ে অম্বিকা সাথে কথা বললে অম্বিকা নিজের থেকেই কাজগুলো করতে রাজি হয়েছে।
নরেশবাবু কথাগুলো বিশ্বাস না করলেও সেই মুহূর্তে তিনি কিছু ছেলেকে বললেন না,তবে কিছুটা হলেও তিনি নিলয় আর অম্বিকার ব্যাপার আচ করতে পারলেন।অম্বিকার হঠাৎ করেই বাড়িতে আসা,তার এক্সিডেন্টের কথা প্রলয়ের ফোন করে জানানো সবকিছু মিলিয়ে মিশিয়ে তিনি দুয়ে দুয়ে চার করলেন।তবে সেই মুহূর্তে তিনি কোন কথা তার গিন্নিকে জানালেন না। তিনি শুধুমাত্র অচলার ভর্তি এবং পড়াশোনার ব্যাপারে অম্বিকা যে তাকে সাহায্য করবে এ কথাটাই গিন্নিনে বলেন।কারণ অম্বিকা এসে যখন অচলাকে নিয়ে বেরোতে চাইবে তখন গিন্নির কাছে কৈফিয়তের মুখোমুখি হতে হবে।আর তা ছাড়া সেন্টারে যেতে গেলে ক্যান্ডিডেটকে সাথে নিয়ে যেতে হবে নিলয় তাকে জানিয়েছে।এবং প্রতিটা কাজই যে অম্বিকা করবে সেকথাও বাবাকে জানিয়ে রেখেছে।তাই গিন্নিকে এ ব্যাপারে কিছুটা না জানিয়ে রাখলে তিনি চেঁচামেচি শুরু করে দেবেন।এই ভয়েই তিনি সেই মুহূর্তেই কথাগুলো মলিনাদেবীকে কিছুটা বললেন। কিন্তু মলিনাদেবী কথাগুলো শুনে নরেশবাবুকে বলেন,
--- আমার কেন যেন মনে হচ্ছে নিলুর সাথে অম্বিকার একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।ও আমাদের কিছু না বললেও এই ব্যাপারে আমি সিওর।তবে সত্যিই যদি এরকম কিছু হয় আমার কিন্তু কোনো আপত্তি নেই।নিজের জীবনটাকে নিজের মত করে বুঝে নিক। আমাদের বয়স হয়েছে যেকোনো সময় আমরা যে কেউ চলে যাবো।তাই নিলু যদি এই মুহূর্তে কাউকে তার জীবনসঙ্গী করতে চায় আমাদের কোন বাধা দেওয়া উচিত নয়।তোমার এব্যাপারে কি মত? মলির মুখে কথাগুলো শুনে নরেশ বাবু বললেন,
-- একদম তুমি আমার মনের কথা বলেছ।এত বড় একটা ঘটনার পরে নিলু যদি সত্যিই অম্বিকাকে পছন্দ করে বিয়ে করে তাহলে তোমার মত আমিও খুশি হব।কিন্তু কথা হচ্ছে তার বাবা-মা সে কথা মেনে নেবেন কেন?নিলুর সাথে শালিনীর কোন সম্পর্ক গড়ে না উঠলেও তবুও তো বিয়ে হয়েছিল এটা তো অস্বীকার করা যায় না।আমরা আমাদের ছেলেকে বিশ্বাস করি তাই আমরা মেনে নিয়েছি নিলু আর তার  ডিভোর্সি স্ত্রীর সাথে কোন শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি।কিন্তু অন্য কেউ সেটা মানবে কেন?তবে এই ব্যাপারে আমার মনেহয় মলি নীলুর মতামত টাকেই আমাদের প্রাধান্য দেওয়া উচিত।আমরা কোন মতামত এই ব্যাপারে দেবো না। সে যদি অম্বিকাকে বিয়ে করতে চায় আমাদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে।
  এই ঘটনার দিন পনেরো পরে অম্বিকা একদিন রাতে ফোন করে নরেশবাবুকে জানায় তারপরের দিন সে তাদের বাড়িতে এসে অচলাকে সাথে নিয়ে সেই সেন্টারে টাকা জমা দিতে যাবে।এই মুহূর্তে সে টাকাটা জমা দিয়ে দেবে কারণ নিলয় থাকে এই কথাই জানিয়েছে।নিলয় ওখান থেকেই তার টাকা অন লাইনের মাধ্যমে তাকে সব দিয়ে দেবে।নরেশবাবু তার কথা শুনে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানান কারণ তিনি বুঝতে পারছেন নিলয় এবং অম্বিকা অনেকটাই কাছাকাছি এসে গেছে।সুতরাং এই ব্যাপারে তিনি যদি তার কোনো মতামত ব্যক্ত করতে যান তাহলে নিলয় সন্তুষ্ট হবে না।তাই বুদ্ধিমান পিতার মত সন্তান সুখ কামনা করে তিনি সবকিছু মেনে নেন। তিনি ভেবে দেখেছেন নিলয়এই ব্যাপার অম্বিকাকে জানাচ্ছে আর অম্বিকা সেটাই নরেশবাবুকে রিলে করছে।সুতরাং নরেশবাবুর আপত্তি করা মানে বোকামির পরিচয় দেওয়া।  আর তিনি কোন অবস্থাতেই সে কাজ করবেন না।নিলয়ও তাকে আম্বিকার বলা কথাগুলোই বলে।আগে থাকতে ছেলের কাছ থেকে শোনা কথাগুলোই তিনি আর একবার অম্বিকার কাছ থেকে চুপ করেই শোনেন।ফোনটা রেখে গিয়ে অচলা এবং মলিনাদেবীকে জানিয়ে দিলেন পরদিন অচলাকে সাথে নিয়ে অম্বিকা সেন্টারে যাবে টাকা জমা দেওয়ার জন্য।তারপর মাঝে মাঝেই বেশ কয়েকবার অচলাকে অম্বিকার সাথে বেরোতে হবে।তারপর আর না গেলেও চলবে।অম্বিকা নোটস, বইপত্র, সাজেশন একাই নিয়ে আসবে এবং বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে যাবে। প্রয়োজনে অম্বিকা অচলা পড়াশোনার দায়িত্ব নেবে অর্থাৎ শিক্ষিকার দায়িত্বও পালন করবে।সব কথাগুলোই অম্বিকা নরেশবাবুকে জানিয়েছে।কথাগুলো শোনার পর সেখান থেকে অচলা যখন উঠে চলে যায়।মলিনাদেবী স্বামীকে বলেন,
--- হ্যাঁগো আমার তো মনে হচ্ছে নিলুর সাথে অম্বিকার রোজই ফোনে কথা হয়।
নরেশবাবু স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,
---হ্যাঁ আমারও ঠিক সেটাই মনে হচ্ছে।একদিক থেকে ভালোই হলো গিন্নি নিলু তো একসময় এই মেয়েটিকে বিয়ে করতে চেয়েছিল।একটা কথা ছোটবেলায় মার কাছে শুনেছিলাম জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে বিধাতা যেখানে ঠিক করে রেখেছেন সেখানেই হবে।নিলুর জীবনে শালিনীর সাথে বিয়েটা ছিল একটা দুর্ঘটনা।আসলে ওর জীবনের গাঁটছড়া বাঁধা এই অম্বিকার সাথেই। কিন্তু সব কাজের একটা সঠিক সময় চায় তাই হয়তো এখন সেই সময়টা এসেছে।যা হোক - যা হচ্ছে ভালোর জন্যই হচ্ছে আর যা হবে ভালোই হবে।আমরা এই নিয়ে আর ভাববো না।কিন্তু ভাববো না বললেও ভাবতে হয়।মাথার মধ্যে একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে অম্বিকার পরিবার অর্থাৎ অমলবাবুরা এখন নিলুকে মেনে নেবেন তো?
--- কেন মানবেন না? আমার ছেলেটা কি ফেলনা?ভালো দেখতে,ভালো চাকরি করে।
--- নিজের সন্তানকে সবাই ভালো দেখে।
 নরেশবাবু হাসতে হাসতে বলেন।
 এদিকে দুজনে এতটাই গল্পে মজেছেন যে ঘড়ির কাটাকোথা থেকে দশটার ঘরে গিয়ে পৌঁছেছে তা বোধকরি দুজনের কেউই খেয়াল করেননি।অচলা টেবিলে খাবার গুছিয়ে যখন ডাকতে এলো দুজনের তখন হুস ফিরলো।মা,বাবাকে খাবার গুছিয়ে দিয়ে অচলাও নিয়ে বসলো।এটাই নিত্য দিনের রুটিং।খেতে খেতে অচলা বললো,
---আমার খুব ভয় করছে বাবা।
---কিসের ভয়?
----আসলে তোমরা তো জানো ওই লোকগুলো যদি রাস্তাঘাটে কোথাও আমাকে দেখে ফেলে তাহলে তো চিনে ফেলবে আবার আমাকে তারা তুলে নিয়ে যাবে।
নরেশ বাবু খেতে খেতে অচলার দিকে তাকিয়ে বললেন,
--- দূর বোকা!কলকাতা শহর কি ছোট জায়গা নাকি?যে তোকে রাস্তাঘাটে দেখে ফেলবে?এরকম কিছু হবে না।তুই এসব নিয়ে ভাবিস না।সব ঠিক হয়ে যাবে।তুই শুধু মন দিয়ে পড়াশোনা কর।একদিন তুই নিজের পায়ে দাঁড়াবি, ভালো চাকরি করবি, আমরা দেখে শুনে খুব ভালো একটা ছেলের সাথে তোর বিয়ে দেবো।নরেশবাবুর কথা শুনে অচলা চোখ বড় বড় করে নরেশবাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
-- রক্ষা করো,ওসব বিয়ে টিয়ে আমার দ্বারা হবে না।আমি  এই বয়সে এসে আমার বাবা-মাকে খুঁজে পেয়েছি। আমি তাদের ছেড়ে আমার জীবন থাকতে কোথাও যাবো না।আমি এখানেই থাকব।আর আমৃত্যু তাদের সেবা করবো।
 মলিনাদেবী সে দেখা যাবে এক্ষুনি তো তোর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না আর এসব ব্যাপারে আমরা কোন মতামত দেবো না তোর দাদা যা ভালো বুঝবে সেটাই করবে আর আমরা জানি তার মুখের উপর কিছু বলার সাহস তোর নেই।সুতরাং এসব চিন্তা এখন বাদ দে। কাল সকাল দশটার মধ্যেই রেডি হয়ে থাকবি অম্বিকা এখানে এসে তোকে নিয়ে বেরোবে। হ্যাঁরে ,তুই বাসে উঠতে পারিস তো?
 অচলা হাসতে হাসতে মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দেয়,
--- খুব পারি।

ক্রমশঃ

Tuesday, April 6, 2021

সুখের ঘরে আগুন (৩৩)

সুখের ঘরে আগুন (৩৩)

    এক এক করে দিনগুলি বেশ ভালই কেটে যাচ্ছে নিলয়ের। সকালে কোয়ার্টার থেকে বেরোনোর সময় ডিম সেদ্ধ, আলু সেদ্ধ ভাত খেয়ে বেরোনো, দুপুরে অফিস ক্যান্টিনে খেয়ে নেওয়া, আর সন্ধ্যায় ফেরার সময় রুটি তরকারি কিনে নিয়ে আসা।মাঝে মাঝে নিখিলেশ আসে ছুটির দিনে।আর অফিসে তো তার সাথে আড্ডা হচ্ছেই। সে বেচারাও তো একা।কোয়ার্টারে ফিরেই সেই রাতের ফোনের অপেক্ষা।নিখিলেশ দু একদিন মাঝে মধ্যে নিলয়ের কোয়ার্টারে থাকলেও এখনো কোনদিন নিলয় নিখিলেশের কোয়ার্টারে রাত কাটায়নি।ওখানে থাকলে তার অম্বিকার সাথে কথা বলতে অসুবিধা হবে মনে করে।আর তার কোয়ার্টারে ফোনটা আসলেই নিলয় নিয়ে সোজা অন্য ঘরে।
 সেদিন অম্বিকার সাথে কথা বলতে বলতে নিলয় হঠাৎ করেই বলে উঠলো,
--- যে কথাটা বারবার তোমায় বলতে চেয়েছি তখন কোন না কোন সমস্যা এসে হাজির হয়েছে।
--- সেই কথাটা আমিও শুনতে চাই না।সত্যিই কথাটা খুব অপয়া।যেদিনই কথাটা বলতে চেয়েছেন সেদিনইএকটা না একটা ঝামেলা হয়েছে।
--- ঠিক আছে।তাহলে একটা গল্প শোনো।তাতে আপত্তি নেই তো?
--- না,বলো আমি শুনছি।
 কলেজ জীবনে একটা ছেলে একটা মেয়েকে ভালোবেসেছিলো।কিন্তু ভালোবাসাটা ছিল এক তরফা।তাই প্রথম জীবনের ভালোবাসাটা ছেলেটার জীবনে স্থায়ী হয়নি।কেটে গেছে তারপর অনেকগুলি বছর।ছেলেটি তখন কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে সুচকুরে। পাড়ার কোন এক ফাংশনে পাড়ারই একটি মেয়েকে গান গাইতে দেখে মেয়েটিকে ভালো লেগে যায় ছেলেটির। সে তার বাবা-মাকে এসে কথাটা বলে এবং বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে মেয়েটির বাড়িতে তাদের পাঠায়।কিন্তু মেয়েটা সেই মুহূর্তে বিয়ে করতে রাজি ছিল না কারণ সে নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে বিয়ে করতে চায় না।তাই প্রসঙ্গ তোলার আগেই ছেলেটার জীবন থেকে এ স্বপ্নটাও ভেঙে যায়।সে তার ভাগ্যকে মেনে নেয়।কিন্তু বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান এবং ভালো চাকুরে।তার বাবা মা চান তাকে বিয়ে দিয়ে সংসারী করতে।কিন্তু ছেলেটির তখন মেয়েদের প্রতিই একটা বিতৃষ্ণা জমেছে।অথচ বাবা মা নাছোড়বান্দা।শেষমেষ ছেলেটিকে বিয়ে করতে রাজি হতেই হল।বাবা-মায়ের কথামতো তাদের পছন্দ করা একটি মেয়ের সাথে তার বিয়ে ঠিক হলে সে মেনে নেয়।ছেলেটি বাবা-মা বারবার ছেলেটিকে বলে বিয়ের আগে মেয়েটাকে একবার দেখার জন্য। কিন্তু ছেলেটি তার ভাগ্যের উপর সবকিছু ছেড়ে দিয়ে মেয়েটিকে দেখতে যেতে অস্বীকার করে।বিয়ের আগের দিন বাড়িতে অনেক আত্মীয়-স্বজন এর ভিড়ে রাতের দিকে তার হবু স্ত্রী তাকে ফোন করে জানায় যে সে অন্য একজনকে ভালোবাসে তাই ছেলেটি তার সাথে ঠিক হওয়া বিয়েটা যেন ভেঙ্গে দেয়।সেই মুহূর্তে ছেলেটির মাথা প্রচন্ডভাবে গরম হয়ে যায়।শিক্ষণ্ডের মত মেয়েটি ছেলেটাকে দাঁড় করাতে চায় বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়ার কারনে।কিন্তু ছেলেটি তার বিয়ে ভেঙ্গে দিতে অস্বীকার করে আর সেই মুহূর্ত তার অস্বীকার করা ছাড়া কোনো উপায়ও ছিল না। কারণ  পরদিনই ছিল তার বিয়ে।আর এই কারণে বাড়িতে প্রচুর আত্মীয়-স্বজনের সমাগম। বিয়ে হয়ে যায় মন্ত্র পড়ে সাত পাকে ঘুরে।বিয়ের আসরে মন্ত্রের মাধ্যমে দুজনে একসাথে অঙ্গীকার করে।সব কিছু নিয়ম মেনে তাদের বিয়ে হয়।বিয়ের পর থেকে ছেলেটি রাগে মেয়েটির সাথে কোন কথা বলে না; এমনকি মেয়েটিকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য নানান ছুতোয় সে তার ঘরে ঢোকাও বন্ধ করে দেয়,শুধুমাত্র রাতে শোয়ার জন্য মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়লে ঘরে ঢোকা এবং সোফায় শোয়া । ছ'মাসের মধ্যে ছেলেটি মেয়েটাকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়।
  নিলয় এ পর্যন্ত বলে চুপ করে যায়।অম্বিকা বুঝতে পারে গল্পের ছলে হলেও নিলয় তার জীবনের কথাই তাকে শোনালো। কিন্তু নিলয়কে তা বুঝতে না দিয়ে জিজ্ঞাসা করে তারপর?
 নিলয় এবার হেসে পড়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানের একটা কলি গেয়ে ওঠে, "তার আর পর নেই ---- " তবে জীবন এগিয়ে চলেছে।
 কিন্তু আমি তো জানি গল্প এখানেই শেষ হয়নি।এ গল্প এখন অন্য খাতে বইছে।আর লেখক এখানে বিধাতা পুরুষ।তিনি শেষমেষ কি লিখতে চলেছেন তা একমাত্র তিনিই জানেন। তবে এই গল্পের নায়ক যেটা করেছে তাকে আমি সমর্থন করি। কারণ ওই মুহূর্তে অর্থাৎ বিয়ের আগের দিন বিয়েটা ভেঙ্গে দিলে প্রচুর লোক জানাজানি হত। এতে পরিবারের  মানহানিটা বেশি হত।তাই তার কাজকে আমি সমর্থন করছি। কোন পুরুষই মেনে নিতে পারে না শুধু পুরুষ কেন? পুরুষ নারী কেউই বিয়ের আগের রাতে যদি কেউ শুনে তার হবু স্ত্রী বা স্বামী অন্য কাউকে ভালোবাসে তাহলে জীবনে কোনদিন ও তাদের মধ্যে সত্যি কারের ভালোবাসা গড়ে উঠবে না।আর  এই কারণে গল্পের নায়কের কাজটা  সম্পূর্ণ সমর্থন যোগ্য।
---তাহলে আমি এবার গল্পের নায়কের নামটা বলব কি?
--- না, কারণ সে নামটা আমি জানি
 --- মানে?
একই পাড়ায় থাকার সুবাদে সবকিছুই আমার জানা আর বাকিটা অন্য কারো মাধ্যমে জেনেছি।
--- তাহলে বলো,আমি কি কোন অন্যায় করেছি।
--- একদম না,আর সে কথা তো আমি আগেই বললাম।কিন্তু একটা কথা জানতে বড্ড ইচ্ছা করছে।
--- কি কথা ?
--- পাড়ার ফ্যানশনে পাড়ার যে মেয়েটির গান শুনে তুমি একদম তার প্রেমে।পড়ে গেছিলে সেই মেয়েটিকে আমি চিনি?
ফোনের অপর প্রান্তে তখন নিলয় রীতিমত হাসছে।তাকে চুপ করে থাকতে দেখে অম্বিকা আবারও বলে,
--- কি হল বললে না?আমি চিনি তাকে?
--- চেনো।কিন্তু আমি নামটা বললে তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা।
 অম্বিকার বুকের ভিতরটা হঠাৎ করেই ধড়াস করে উঠলো।সে মনেমনে ভাবলো নিলয় তাহলে পাড়ারই অন্য কোন মেয়েকে ভালোবাসে।আর সে কিনা নিলয়কে নিয়ে কত কিছুই না ভেবেছে।মনটা তার খারাপ হয়ে গেলো।একটা কষ্ট গলার কাছে যেন আটকে গেলো।তবুও প্রাণপণে গলার স্বর অপরিবর্তিত রেখে জানতে চাইলো ,
--- বলো তার নামটা?
--- তার নামটা আমি বলছি কিন্তু নামটা শুনলে তোমার বিশ্বাস হবে তো?
--- কেন বিশ্বাস হবে না?প্রথম দেখাতেই তুমি একটি মেয়ের প্রেমে পড়েছো,তাকে বিয়ে করবে বলে বাড়ির গুরুজনদের মেয়েটির বাড়িতে পাঠিয়েছো।এই কথাগুলো যদি আমি বিশ্বাস করতে পারি তাহলে তার নামটা বললে বিশ্বাস হবে না কেন?আর এতদিন ধরে তোমার সাথে আমার বন্ধুত্ব।আমরা আপনি থেকে তুমিতে এসেছি। তোমার কোন কথাটা আমি বিশ্বাস করিনি বলো তো?
--- অভিমানের সুর গলাতে।নামটা বলতে ভয় পাচ্ছিলাম।কিন্তু তোমার গলার আওয়াজ আমায় সাহস যোগালো।সত্যি বলতে কি কথাটা যদি সামনাসামনি বলতে পারতাম ভীষণ ভালো লাগতো।কিন্তু সে সুযোগটাই আমি কোনদিন পেলাম না।
 অম্বিকা চুপ করে কথা শুনছিল আর তার চোখের কোন বেয়ে নোনতা জল গড়িয়ে পড়ছিল।নিলয় বলে ওঠে,
--- হ্যালো অম্বিকা শুনতে পারছো?
 অম্বিকা চোখের জলটা মুছে নিয়ে বললো,
--- হু
 বেশি কথা সে বললো না কারণ নিলয় যদি আবারও বুঝে ফেলে তার গলার আওয়াজ শুনে যে সে কাঁদছে।
--- যার গান শুনে আমি সেদিনই যে মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম সে আর অন্য কেউ নয়,সে তুমি।
 কথাটা বলেই নিলয় ঢোক গিলে আবার বললো,
--- আমার কথাটা তোমার হয়তো ভালো নাও লাগতে পারে।কিন্তু প্লিজ আমার সম্মন্ধে কোন খারাপ ধারণা করোনা।আমি সত্যিই তোমায় ভালোবাসি।
 অম্বিকা যেন তার নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না।বুকের কাছের নাইটিটা তুলে চোখ দুটো ভালো করে মুছে নিয়ে হাসতে হাসতে বললো,
--- আজ অম্বিকা ছাড়া অন্য কোন মেয়ের নাম বললে আর কোনদিন কথা বলা তো দূরের কথা মুখও দেখতাম না।
 কবের থেকে অপেক্ষা করে আছি এই কথাটা শুনবো বলে--
--- তারমানে তুমিও আমাকে ---
--- ব্যাগ মশাই আমিও তোমায় ভালোবাসি।সেই নিশিতার বিয়ের দিন থেকে।
--- তাহলে তুমি কেন আমায় বলোনি?
--- লজ্জায়! হ্যাঁ ভয়ও ছিল কিছুটা।যদি আমার ভালোবাসাটা এক তরফা হয়।
--- আমরা দুজনেই খুব বোকা !দুজন দুজনকে ভালোবাসি অথচ কেউই মুখ ফুটে কথাটা বলে উঠতে পারছি না কেউ কে।
--- কবে আসবে বাড়িতে ?
--- খুব তাড়াতাড়ি।আসলে এই মুহুর্তেই তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছা করছে।তোমার করছে না?
--- দেখা হলে এর উত্তরটা দেবো মশাই।

ক্রমশঃ