দায়িত্ববোধ
গাড়িটা বাম্পারে প্রচন্ডভাবে ধাক্কা খায় | গাড়ির ভিতরে থাকা বাকি দুটি মানুষ 'বাবারে মারে'- বলে চিৎকার করে ওঠে | পারিজাতের বেল্টটা বাঁধা ছিল তাই রক্ষে | গাড়িটা দাঁড়িয়ে পরে | পারিজাত লক্ষ্য করে সামনে বেশ বড় একটা জটলা | স্ত্রী ও ছেলেকে অপেক্ষা করতে বলে সে ওই জটলার দিকে এগিয়ে যায় | ভিড় ঠেলে জটলার মূল লক্ষ্যে পৌঁছায় | পারিজাত লক্ষ্য করে বহুদিনের চুলদাঁড়ি না কাটা একজন বয়স্ক লোক অচেতন হয়ে শুয়ে আছেন | এতো যে লোকের ভিড় সেখানে কেউ কিন্তু এগিয়ে এসে দেখছেনা লোকটির কি হয়েছে ? সবাই সেখানে দর্শক হয়েই দাঁড়িয়ে আছে | পারিজাত এগিয়ে গিয়ে নিচু হয়ে বসে লোকটির নাড়ি পরীক্ষা করে ভিড়ের উদ্দেশে বলে ," আমার সাথে গাড়ি আছে আপনারা যদি একটু সাহায্য করেন আমি উনাকে আমার নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে পারতাম |" সাহায্যের নাম শুনে অনেকেই তৎক্ষণাৎ সেই স্থান ত্যাগ করেন | দুটি অল্পবয়সী ছেলে এগিয়ে আসে | পারিজাত তাদের সহায়তায় বৃদ্ধ লোকটিকে নিয়ে গাড়ির কাছে এসে স্ত্রী ও পুত্রকে গাড়ির সামনে নিয়ে ওই ছেলে দুটিকে সাথে নিয়েই নিজের নার্সিংহোমে আসে |
ডক্টর পারিজাত চক্রবর্তী | বয়স প্রায় আঠাশ , সুন্দর সুঠাম চেহারার একজন সুপুরুষ | স্বাধীনচেতা, পরোপকারী একজন সুন্দর মনের অধিকারী | অনেক রোগীর পরিবারের কাছে তিনি ডক্টররূপী একজন ভগবান | এই নার্সিংহোমে তারাই আসে যাদের সরকারী হাসপাতালে বেড পেতে কাকা, দাদা, মামা বা কোন নেতাগোত্রীয় কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়না , যারা নার্সিংহোমগুলিতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করতে পারেনা অথচ বাড়িতে থেকেও যাদের চিকিৎসা করা সম্ভব হয়না এমন সব মানুষেরা | মাসের অধিকাংশ দিন যার কাটে বিভিন্ন গ্রামে দাতব্য চিকিৎসালয়ে | ডাক্তারীবিদ্যা দিয়ে খুব একটা আয় তার হয়না কারণ তার কাছে যারা আসেন তাদের অনেকেই দুবেলা পেট ভরে হয়তো খেতেই পারেননা | তিনি শুধু তাদের রোগ নিরাময় করেন তা কিন্তু নয় | অধিকাংশকেই ওষুধ দিয়ে টাকা দিয়ে সাহায্যও করেন | বিশাল শিল্পপতির একমাত্র সন্তান হওয়ার সুবাদে অর্থের সমস্যা তার নেই | তার স্বপ্নই ছিল ডাক্তারী পাশ করে তিনি তার পুরো জীবনটাই দেশের দরিদ্র মানুষের সেবা করে যাবেন | আর তার বাবা মায়ের তাতে সায় ও ছিল |
শিল্পপতি অঞ্জন চক্রবর্তীর সব ছিল শুধুমাত্র একটি সন্তান ছাড়া | আর এই সন্তানের জন্যই তার স্ত্রী মানসিক অবসাদে আস্তে আস্তে নিজেকে নিজের মধ্যে গুটিয়ে নিতে থাকেন | অনেক চিকিৎসা করা হয় | সকল ডাক্তারের একই মত একটি বাচ্চা দত্তক নিন | কিন্তু ' একগাছের ছাল আর এক গাছে লাগবেনা' মনে করে তিনি ব্যাপারটিকে মোটেই আমল দেননা | দিনে দিনে স্ত্রী অপর্ণার অবস্থার অবনতি দেখে শেষমেশ একপ্রকার বাধ্য হয়েই পাঁচ বছরের একটি ছেলেকে দত্তক নেন | আর এই পর থেকেই অপর্ণাদেবী আস্তে আস্তে সুস্থ্য হয়ে উঠতে থাকেন | বাচ্চাটিকে কোন সেন্টার থেকে নয় তিনি এক অজপাড়াগাঁয়ের একটি দরিদ্র পরিবার থেকে বাচ্চাটিকে কিছু অর্থের বিনিময়ে তার বাবা মায়ের সম্মতিতে নিয়ে আসেন | পরে তিনি ওকে আইনত দত্তক নেন | তবে এখানেও একটি গল্প আছে | নূতন কারখানা গড়ার উদ্দেশ্যে তিনি কলকাতা থেকে বেশ খানিকটা দূরে একটি গ্রামে যান | সাথে তিনি তার স্ত্রীকে নিয়েই যান | সেখানে পৌঁছে তিনি একটি ইটভাটায় যান | ওই ইটভাটার মালিকের সাথে তার আগে থাকতেই পরিচয় ছিল | অঞ্জনবাবুকে তার নূতন কারখানার জমির খোঁজ তিনিই দিয়েছিলেন | সেখানে পৌঁছে তিনি দেখেন একজন শ্রমিক ওখানে ইট তৈরিতে ব্যস্ত আর তার পাঁচ বছরের শিশুটি একটি স্লেট আর চক নিয়ে আঁকিবুকি কাটছে স্লেটের ওপর | কৌহলবশত তিনি সেখানে এগিয়ে যান | এবং ছেলেটির বাবার কাছে জানতে পারেন বাচ্চাটির লেখাপড়ার দিকে খুব ঝোক | কিন্তু ছ ছটি ছেলেমেয়েকে দুবেলা পেট ভরে খেতেই দিতে পারেননা লেখাপড়া কোথা থেকে শিখাবেন ?ব্যাপসায়ী অঞ্জন চক্রবর্তী তার স্ত্রীকে ডেকে নিয়ে বললেন .
--- এই বাচ্চাটিকে তুমি তোমার নিজের ছেলে ভাবতে পারবে ?
স্ত্রী তার মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে নিচু হয়ে জলকাদা মাখা বাচ্চাটিকে বুকের সাথে চেপে ধরলেন | অপরিচিত একজন মহিলার বুকের মাঝে গিয়ে সে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে | বাচ্চাটির বাবাও হতভম্ব হয়ে হাতের কাজ ফেলে এগিয়ে আসে | অঞ্জনবাবু বলেন তখন ,
--- তোমাকে আমি অনেক টাকা দেবো | তোমার এই বাচ্চাটিকে আমায় দেবে ? আমি ওকে নিজের সন্তানের মত মানুষ করবো |
লোকটি তখন হেসে বলে ,
--- না বাবু ওর মা রাজি হবেনা |
অঞ্জনবাবু তখন লোকটিকে অনেক বুঝান | কিন্তু কিছুতেই সে রাজি হয়না | তখন তিনি ইঁটভাটার মালিককে তার স্ত্রীর কথা সব জানান | এটাও বলেন এককালীন কিছু টাকা ছাড়া প্রতিমাসে বেশ কয়েক হাজার করে তাকে টাকা দেওয়া হবে তাতে অন্য বাচ্চাগুলিকে নিয়ে সে দুবেলা পেট ভরে খেতেও পারবে | বাচ্চাটার মধ্যে ব্যবসায়ী অঞ্জন চক্রবর্তী কি দেখেছিলেন তিনিই জানেন ; তাই তিনি উঠেপড়ে লেগে গেছিলেন এই বাচ্ছাটিকেই দত্তক নেবেন বলে | অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ইঁটভাটার মালিকের সহায়তায় তার বাবা মাকে বুঝিয়ে তিনি সেদিন ওকে নিয়েই আসেন | ধুলোকাদা মাখা বাচ্চাটিকে বলেন ,"তোমাকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছি |" স্কুলে যাওয়ার আনন্দে সেই মুহূর্তে সে চুপ করেই থাকে | আর অঞ্জনবাবু সেই থেকে ওই পরিবারটির জন্য একটা মাসোহারারও ব্যবস্থা করে দেন | নাম রাখেন তার পারিজাত | পারিজাতকে পেয়ে কিছুদিনের মধ্যেই অপর্ণাদেবী সুস্থ্য হয়ে যান | প্রথম প্রথম পারিজাত কান্নাকাটি করলেও পরে ঠিক হয়ে যায় | পারিজাতের জন্মদাতা পিতাকে একটি শর্ত দেওয়া হয়েছিল সে কোনদিনও তার সাথে দেখা করতে যেতে পারবেনা | এককালীন অনেক টাকা পেয়ে সে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল |
পারিজাত ছোট থেকেই ছিল খুব বাধ্য স্বভাবের | পড়াশুনায় তুখোড় | ডাক্তারীতে সে চান্স পাওয়ার পর সে তার বাবাকে শর্ত দিয়েছিলো ডাক্তারী পাশ করবার পর সে গ্রামে গ্রামে ঘুরে গরীব মানুষের চিকিৎসা করবে তারজন্য কখনোই কিন্তু তাকে কিছু বলা যাবেনা | এই শর্তে যদি তারা রাজি থাকেন তবেই সে ডাক্তারী পড়বে |
পারিজাতের বয়স যখন চৌদ্দ কি পনের তখন তার পালিতা মা যাকে সে নিজের মা বলেই জানে তিনি খুব অসুস্থ্য হয়ে পড়েন | তাকে নার্সিংহোম ভর্তি করা হয় | অঞ্জনবাবু তখন ব্যবসার কাজে দেশের বাইরে | মাকে নিয়ে সে নার্সিংহোমে ভর্তি করার পর ডাক্তার জানান চিকিৎসার সুবিধার জন্য অপর্ণাদেবীর পুরনো কাগজপত্র হলে সুবিধা হবে | তৎক্ষণাৎ পারিজাত বাড়িতে আসে মায়ের চিকিৎসার সংক্রান্ত কাগজপত্র নিতে | আলমারী খুলে নানান ফাইল খুলতে খুলতে সে একটি ফাইল পায় যেখানে সে কিছু কাগজপত্র নাড়াচাড়া করে জানতে পারে অঞ্জন চক্রবর্তীর দত্তক পুত্র সে | এটা দেখে কিছুটা সময় সে চুপ করে বসে থাকে | কিন্তু পরমুহূর্তেই তার মায়ের মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠে | আজও তার মা তাকে পাশে নিয়েই ঘুমান | বাবা একটি আলাদা ঘরে থাকেন | বাবার কখনো শরীর খারাপ হলে মা সেদিন বাবার কাছে রাতে থাকলেও কতবার যে উঠে আসেন তাকে দেখতে তার কোন ইয়ত্তা নেই | অধিক রাত অবধি পড়াশুনা করলে যতক্ষণনা সে শুতে আসে মা বিছানায় জেগেই থাকেন | শরীর খারাপ হলে এক মুহূর্তের জন্যও তাকে ছেড়ে কোথাও যাননা | নানান কথা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে | সে দ্রুত মায়ের কাছে নার্সিংহোম পৌঁছে যায় | কিন্তু সে যে জানতে পেরেছে সবকিছু পুরো ব্যাপারটাই সে লুকিয়ে যায় তার বাবা মায়ের কাছ থেকে | বিষয়টা লুকিয়ে গেলেও মাথার মধ্যে সেটা থেকেই যায় | কিন্তু অঞ্জনবাবু ও অপর্ণাদেবীর তার প্রতি ভালোবাসা , কর্তব্য পরায়ণতা, তাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখা -- কোন কিছুতেই কোন খামতি দেখতে সে পায়না | তাই সেও এ ব্যাপারটা নিয়ে তার মা বাবাকের কোনদিন ঘাটায়না |
ডাক্তারী পাশ করার একবছরের মধ্যেই অপর্ণাদেবী ছেলের বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লাগলেন | মেয়ে পছন্দও করে ফেললেন তারা | কথাবার্তা যখন একদম পাকা পারিজাত তার মাকে জানালো সে মেয়েটির সাথে একদিন একা দেখা করতে চায় | মা তাতে সায় দিলেন | পারিজাত তার হবু স্ত্রীর সাথে দেখা করে সরাসরি জানায় সে শিল্পপতি অঞ্জন চক্রবর্তীর পালিত পুত্র | এটা কাগজে কলমে | তাদের ব্যবহারে তার কোনদিনও এটা মনেহয়নি যে সে তাদের সন্তান নয় | যদি মেয়েটির আপত্তি থাকে তাহলে বিয়েটা যেন ভেঙ্গে দেওয়া হয় | আর যদি আপত্তি না থাকে তাহলে বিয়ের পরে একথা যেমন তার বাবা ,মাকে কোনদিন কিছু বলা যাবেনা আবার এ নিয়ে পারিজাতের সাথেও কোনদিন ঝামেলা করা যাবেনা |
বিয়ের দেড় বছরের মাথায় পারিজাতের একটি পুত্র সন্তান হয় | অপর্ণাদেবীর দুচোখের দুই মণি | এক চোখে পারিজাত আর এক চোখে পারিজাতের পুত্র প্রতীক | পুত্রবধূটিকেও তিনি খুবই ভালোবাসেন |
বয়স্ক ভদ্রলোকটিকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে এসে তাকে সুস্থ্য করে তার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাড়ির ঠিকানা জানতে চায় | পারিজাত বৃদ্ধ লোকটির বলা ঠিকানা মত তাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে হাজির হয় | ভাঙ্গাচোরা একটি মাটির ঘর | বৃদ্ধ মানুষটি সেখানে একাই থাকেন | কিন্তু ওই ভাঙ্গা বাড়িটায় পৌঁছে পারিজাত একটু থমকে যায় | ঘরবাড়ি , বাড়ির ভিতর বাইরে সবকিছুই যেন তার আগে কোথাও দেখা মনেহয় | মাঝে মাঝে সে উদাস হয়ে যেতে থাকে | মনেপড়ে যায় মায়ের আলমারির ফাইলটার ভিতরের কাগজটার কথা | সে গল্প জোরে বৃদ্ধ মানুষটির সাথে | সাত ছেলেমেয়ের বাবা আজ সম্পূর্ণ একা | স্ত্রী গত হয়েছেন কয়েকবছর আগে | পাঁচ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন | তার জন্য শহরের এক নামকরা ব্যবসায়ী তাকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন | একটি মাত্র ছেলে সেই ব্যবসায়ীর সহায়তায় একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করে কলকাতায় | সে কলকাতায় তার বৌ বাচ্চা নিয়ে ঘর ভাড়া করে থাকে | তিনি তার কাছেই গেছিলেন কিন্তু ছেলে আশ্রয় না দেওয়াতে আবার গ্রামে ফিরে আসার পথে রাস্তাতেই মাথা ঘুরে পরে যান | পারিজাত জানতে চায় ,
--- সেই সহৃদয় ব্যবসায়ীর নামটা কি ?
--- ওই তো কি যেন নামটা --- ও মনে পড়েছে অঞ্জন --- অঞ্জন চক্রবর্তী |
পারিজাতের বুকটা ধড়াস করে ওঠে ; সে বলে ,
--- তার সাথে আপনার কি করে পরিচয় হল ?
--- সে অনেক কথা ডাক্তারবাবু | উনার প্রচুর অর্থ কিন্তু কোন সন্তান ছিলোনা | আর সেই কারণে উনার স্ত্রী অনেকটা পাগলের মত হয়ে গেছিলেন | উনি একটা বিশেষ কাজে এই গ্রামে এসে আমার বড় ছেলেটিকে দেখে তাকে নিয়ে যেতে চান নিজের সন্তানের মত করে মানুষ করবেন বলে | গরীবের সংসার হলেও অর্থের বিনিময়ে নিজের ছেলেকে দিতে রাজি হয়নি | কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই অনেক টাকার লোভও সামলাতে পারিনি | প্রতি মাসে তিনি যে টাকা দিতেন তা দিয়ে ছেলেমেয়েগুলোকে ফ্যানভাত, নুনভাত খাইয়ে বড় করেছি | ছেলেটিকে স্কুলের গন্ডি পার করিয়েছি | এখানকার ইঁটভাটার মালিকের সাথে তার খুব জানাশোনা | তার সাহায্যেই ছেলেটি একটি চাকরীও পেয়েছে | তাকে কথা দিয়েছিলাম নিজের ছেলের পরিচয় নিয়ে কোনদিন তার সামনে দাঁড়াবোনা | আমি সে কথা আজও রেখে চলেছি | উনি নিয়মিত আজও টাকা পাঠান আমায় | কিন্তু গত দুমাস ধরে আমি টাকা পাইনি | পোষ্ট অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমার ছোটছেলে সেই টাকা আসলেই সই করে নিয়ে যায় ওই অফিসেই আর একজন কর্মচারীর সহায়তায় | তাকেও কিছু দেয় | এইসব শুনেই ছেলের কাছে গেছিলাম | বৌ আর ছেলে মিলে আমায় তাড়িয়ে দিয়েছে |
পারিজাতের বুঝতে একটুও অসুবিধা হয়না এই বৃদ্ধ লোকটিই তার জন্মদাতা | সে নিচু হয়ে তার জন্মদাতাকে প্রণাম করে নিজ পরিচয় দেয় | বৃদ্ধ মানুষটি হা করে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন | আর মনেমনে ভাবেন , " সেদিন তিনি যা করেছিলেন ঠিকই করেছিলেন | তার পক্ষে তো কিছুতেই ছেলেকে এতো বড় মানুষ করা সম্ভব ছিলোনা | খুশিতে তার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে | পারিজাত তাকে কথা দেয় কয়েকদিনের মধ্যেই সে এসে তাকে নিয়ে যাবে যেখানে বয়স্ক লোকেরা থাকেন | ইচ্ছা করেই সে বৃদ্ধাশ্রম কথাটা উচ্চারণ করেন কারণ তিনি হয়তো বুঝতেও পারবেননা কথাটা | আরও বেশ কিছুক্ষণ বসে সে তার অন্যান্য ভাইবোনের গল্প শুনে বাবার হাতে কিছু টাকা দিয়ে সন্ধ্যার আগেই কলকাতা নিজ বাড়িতে ফিরে আসে |
সমস্ত রাস্তা সে নানান কথা ভাবতে ভাবতে আসে | সে তার জন্মদাতা পিতা আর পালক পিতামাতার কোন দোষই খুঁজে পায়না | যে যার জায়গায় দাঁড়িয়ে সঠিক কাজই করেছেন | অঞ্জন চক্রবর্তী আর অপর্ণাদেবী না থাকলে সে আজ এই সুন্দর জীবনটা পেতোনা আর অন্যদিকে তার জন্মদাতা জন্মদাত্রী এই সুযোগটা না নিলে তার এতগুলি ভাইবোনকে হয়তো খাইয়েপড়িয়ে বাঁচিয়ে রাখাও সম্ভব হতনা | তাই হয়তো মানুষ বলে ,' ঈশ্বর যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন |'
No comments:
Post a Comment