Friday, September 2, 2022

অতীত শুধু ভাবনায় মানায়

জীবনে দেখা স্বপ্নগুলো কোনটাই পূরণ হল না নন্দিনীর। নিজেকে নিয়ে যখন ভাবতে বসে তখন বুকটা কেমন ফাঁকা হয়ে যায়। অথচ পড়াশুনায় বেশ ভালই ছিল সে,চেহারাও খারাপ ছিল না।কিন্তু ভাগ্য! সবকিছু থাকা স্বর্তেও ভাগ্যের বিরম্বরায় জীবন যুদ্ধে পর্যুদস্ত সে। কিশোরী বয়সে ভালোলাগার কথা সেই মানুষটাকেই কোনদিন মুখ ফুটে বলতে পারেনি। বাবার পছন্দ করা ছেলেকে পড়াশুনার মাঝপথে বিয়ে দেওয়ার ফলে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্নটুকুও ধুলিৎসাত হয়ে যায়।
 দুই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বেঁচে থাকার তীব্র লড়াইয়ে যখন নিজের মনকে শক্ত করে নিয়েছে ঠিক সেই সময়ে হঠাৎ করেই বিমলের চলে যাওয়া। লড়াইয়ের রাস্তাটা তখন আরো বন্ধুর হয়ে পড়ে। লড়াইটা তখন নন্দিনীর একার কাছে আরো কঠোর হয়ে ওঠে।মেয়ের শিক্ষা সম্পন্ন করার পর তার বিয়ে দিয়ে ছেলের উচ্চশিক্ষার আর্থিক দিক থেকে যখন জর্জরিত ঠিক তখনই ফেসবুকের সূত্র ধরে তার জীবনে নূতন করে ঝড় তোলে কিশোরীবেলার সেই ভালোলাগা। 
 পুরনো অনেক কথার ভিড়ে ফোনালাপেই মনের অনেক কাছে চলে আসে তারা। কোন চাহিদা ছাড়াই নন্দিনী বাঁচার একটা রাস্তা খুঁজে পায়। কিন্তু সে ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি যে কিশোরকে তার ভালো লেগেছিলো জীবনের শুরুতে, তার এখন আমূল পরিবর্তন! 
  নন্দিনী যে তার জীবনে শুধুমাত্র একটা সময় কাটানোর যন্ত্র সৌমেনের কথাবার্তায় সে কোনদিনও বুঝতে পারেনি।বেশ কয়েকমাস কেমন একটা নেশার মত পেয়ে বসেছিলো নন্দিনীর। সৌমেন যেহেতু নির্দিষ্ট সময় ধরে ফোন করতো তাই ওই সময়টা নন্দিনী সব কাজ শেষ করে ফোনের অপেক্ষাতেই থাকতো। সৌমেনের সাথে কথা বলতেই ভালো লাগতো নন্দিনীর। নন্দিনী জানতো সৌমেন বিবাহিত,স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সে খুব সুখী। সুতরাং নন্দিনীর অন্য কোন চাহিদা সৌমেনের কাজ থেকে ছিল না; শুধু মাঝে মধ্যে হাজার হাজার মাইল দূর থেকে একটু কথা বলা। এই কথা বলার মধ্যেই নন্দিনী ফিরে পেয়েছিল তার হারানো শৈশব।
 কিন্তু হঠাৎ করেই সৌমেন নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করে।সৌমেনের কথাবার্তায় নন্দিনী বহুবার বুঝতে পেরেছে সে যতটা সুখী হওয়ার ভান করে ততটা সুখী সে নয়, সেও বোধহয় এইভাবে হঠাৎ পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করে ভালো থাকে।কিন্তু বউকে যে মারাত্মক ভয় পায় আর হয়ত এই ভয় পাওয়ার কারণ থেকেই কোনকিছু ঘটায় সে নন্দিনীকে ফোন করা মোটামুটি বন্ধই করে দেয়। 
 হঠাৎ করে এই বয়সে এসে বিনা কারণে এত বড় একটা আঘাত নন্দিনী কিছুতেই নন্দিনী মেনে নিতে পারে না।তার আত্মসম্মানে প্রচণ্ড আঘাত লাগে। কারণ সৌমেনের কাছ থেকে তার কিছুই চাওয়ার ছিল না। সৌমেন সরাসরি যদি তাকে কারণটা জানিয়ে সরে যেত তাহলে নন্দিনীর এতটা খারাপ লাগতো না।কারণ সেও চায় না তার কারণে সৌমেনের সংসারে কোন ক্ষতি হয়। এক্ষেত্রে নন্দিনীর মনে হতে লাগলো "অপরাধী জানিল না কি তার অপরাধ বিচার হইয়া গেলো" -। 
 নিঃসঙ্গ জীবনে সৌমেন দমকা হাওয়ার মত বেশ কিছুদিন নন্দিনীর জীবনে ফ্রেস অক্সিজেন হয়ে এসেছিলো। নন্দিনী সৌমেনের না বলা সত্ত্বেও তার অসুবিধাগুলো বুঝতে পেরেই তাকে ব্লক করে দেয়। জীবন যুদ্ধে আরো একবার পরাজয় নন্দিনীর!
 তবে এই ঘটনা থেকে নন্দিনী একটা কথা বুঝতে পারে আর তা হল অতীত অতীতেই থাকা ভালো ,সুযোগ পেলেও তাকে কখনোই সামনে আনা উচিত নয়। তাতে কষ্ট বাড়ে বৈ কমে না।অতীত থাক মননে আর ভাবনায়। শুধুমাত্র অবসরে একান্তে তাকে ভাবলে অন্তত মানসিক কিছুটা তো তৃপ্তি আসবে। সুযোগ পেলেও অতীতকে গ্রহণ না করায় ভালো।

No comments:

Post a Comment