মনের কথা মনেই থাক
প্রিয় রূপ
কোনদিন তোমায় চিঠি লিখিনি | কিংবা বলতে পারো লেখার কোন প্রয়োজন হয়নি | কারণ মুঠোফোনের দৌলতে সকাল থেকে রাত -- বহুবার কথা হত | সে কত কথা ---চোখ বন্ধ করলেই মনে হয় এই তো সেদিনের কথা | ফোনে তোমার নম্বরটা আজও ঠিক সেই একইভাবে সেভ করা রয়েছে | মাঝে মাঝে কন্ট্যাক্সে ঢুকে অকারণ ফোন করি তোমার নম্বরে | আমি জানি বলবে ' সুইচ অফ বা এই নম্বরের কোন অস্তিত্ব নেই --'| কিন্তু তবুও করি |
দুজনের কর্মস্থলের নিত্য যাতায়াতের সূত্র ধরে কখন যে আমরা নিজেদের কাছাকাছি এসে পড়েছিলাম তা বোধকরি দুজনের কেউই বুঝতে পারিনি | ভালোবাসা মানুষের এক অদ্ভুত অনুভূতি | সৎ মায়ের কটূক্তি আর মাতাল বাবার অত্যাচারে আমি যখন জর্জরিত ঠিক তখনই তোমার ভালোবাসা আমাকে নূতনভাবে বাঁচার দিশা এনে দিয়েছিলো | ভাবিনি তখন আমি একবারের জন্যও ভাবিনি আমার স্বপ্নের প্রাসাদ আমি রচনা করে চলেছি সমুদ্র পারে বসে |
প্রথম যেদিন ভিক্টোরিয়ায় বসে তুমি আমার ঠোঁট ছুঁয়েছিলে --- যা ভাবলে আজও আমি রোমাঞ্চিত হই --- বিশ্বাস করো আমি জানতামনা ভালোবাসার মানুষের স্পর্শ কারও জীবনে স্বর্গীয় সুখ এনে দেয় | জম্মের পর থেকে বাবা ,মা বা অন্য কারও ভালোবাসা আমি পাইনি | স্নেহ ভালোবাসা কি জিনিস আমি জানতাম না | সবথেকে কাছের মানুষের ভালোবাসার স্পর্শ পেয়ে আমি সত্যিই নিজের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম | তারপর যেদিন তুমি আমাকে তোমার চিরসঙ্গী করে তোমার কাছে নিয়ে গেলে সারাজীবনের মত সেদিন মনেমনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম কোনদিন কোন অবস্থাতেই তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা | আজ বুঝতে পারি সে প্রতিজ্ঞা হয়তো তোমার ছিলোনা | আমার নিজের হাতে গড়া সাজানো সোনার সংসার তিনবছরের মধ্যে ভেঙ্গেচুরে তছনছ হয়ে গেলো | আমার সুখের সংসার দেখে বিধাতা পুরুষ অলক্ষ্যে হেসেছিলেন হয়তো ---|
তোমাকে তিনি আমার কাছ থেকে কেড়ে নিলেন ---| সেদিন কেউ পাশে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত রেখে বলেনি , ' কেঁদোনা---'| তাই তো সে কান্না আমার আজও থামেনি |
তুমি চলে যাওয়ার পর আমি জানতে পারি আমাকে দেওয়া তোমার সেরা উপহারটার কথা | তোমার আমার সন্তান ছোট্ট রূপের কথা | হ্যাঁ--- আমাদের ছোট্ট ফুটফুটে একটা ছেলে হয়েছে | সে পুরো তোমার মত দেখতে | এই একাকী জীবনে অন্ধকারময় পৃথিবীতে ওই আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন | তুমি চলে যাওয়ার পর কোনদিনও আমার মা বা বাবা একবারের জন্যও আমার খবর নিতে আসেননি | যেখানে তুমি আমাকে সম্পূর্ণ তোমার নিজের করে এনে তুলেছিলে আমি সেখানেই আছি | যেটুকু সময় আমি বাড়িতে থাকি আমি যেন তোমার গায়ের গন্ধ টের পাই | আমার মনেহয় তুমি যেন সবসময় আমার পাশে পাশে রয়েছো | অফিস যাওয়ার সময় আমার ছোট্ট রূপকে আমি এক মহিলার কাছে দিয়ে যাই | ফেরার পথে নিয়ে আসি | একদিন মাত্র ওই মহিলা আমাদের বাড়িতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছেলেকে নিয়ে ছিল | সে নাকি বাড়িতে অন্য কারও অস্তিত্ব টের পেয়েছে | আমি চুপ করে থেকেছি কারণ সত্যিটা তো আমি জানি | তারপর থেকে ওর বাড়িতেই ছেলেকে দিয়ে অফিস যাই | তুমি ঠিক এইভাবেই আমাদেরকে জড়িয়ে রেখো , সমস্ত বিপদাপদ থেকে রক্ষা কোরো |
এ চিঠি কোনদিনও তোমার কাছে পৌছাবেনা | খুব যত্নে ভাঁজ করে তুলে রেখে দেবো আমার বিয়ের সেই টুকটুকে লাল বেনারসির ভিতর | রূপ , এ শুধু চিঠি নয় --- এ আমার মনের ব্যাকুলতা --- তোমাকে নাবলা সব কথা | কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারলে কষ্ট কিছুটা লাঘব হয় | কিন্তু আমার তো তুমি ছাড়া কেউ ছিলোনা আর এখনো নেই | তাই শব্দক্ষরে আমার না বলা কথারা ডাইরির ছেড়া পাতায় আজ স্থান পেলো |
যেখানেই থাকো খুব খুব ভালো থেকো | তোমার আশীর্বাদের হাতটা আমাদের মাথায় রেখো আর সমস্ত বিপদআপদ থেকে আমাদের রক্ষা কোরো |
ইতি তোমার
মানবী