Tuesday, April 9, 2019

অধরা
নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী

ভুল করে যদি ভুলে যাই
করে দিস ক্ষমা,
স্মৃতিগুলি যদি না পড়ে মনে
স্বপ্নে দিস দেখা।
বেঁচে থাকা মানে-অনেক আঘাত
কষ্টে জীবন কাটানো,
প্রতিনিয়ত সংসারে যুদ্ধ
সুখের খোঁজে বেড়ানো!
সুখ আর সুখের পাখি
খুঁজে ফিরি সদা
সুখ তো দেয়না ধরা,
আজীবন শুধু খুঁজে যাবো তাকে
জানি, তোর মত  সেও অধরা।

Saturday, April 6, 2019

মাতৃহৃদয়
   নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী


    নুন আনতে পান্তা ফুরায় সংসারে অসীমা আজ কিছুদিন হোল লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ করছে যাতে অন্তত দু'বেলা পেট পুরে খেতে পারে।স্বামী তার সামান্য রোজগারে।একটা মুদিখানার দোকানে দু'বেলা কাজ করে পাঁচ সাতশ টাকা মাইনে পায় । তা দিয়ে দু'বছরের ছেলেকে নিয়ে অতি কষ্টেও সংসার চালাতে আর না পেরে তপনকে রাজি করিয়ে লোকের বাড়ি কাজ শুরু করে।তপনকে রাজি করাতে অসীমার কালঘাম ছুটে গেছে।
   তখন তপনের বয়স এই সতেরো কি আঠারো।অভাব নিত্য সঙ্গী সংসারে।বাবাকে হারিয়েছে সেই ছেলেবেলায়।বাবা মারা যান বিনা চিকিৎসায় টিবি তে।বহুদিন আগে তখন টিবির চিকিৎসা এতো সহজ ছিলোনা।এই রোগকে তখন সকলেই বলতো রাজরোগ।বাবা ছোটখাটো একটা কারখানায় কাজ করতেন।বাবার মৃত্যুর পর তপনের দিদি লোকের বাড়ি কাজ করে সংসারের হাল কিছুটা ফিরিয়ে ছিলো।কিন্তু সেই দিদিই একদিন সন্ধ্যায় কাজ করে ফেরার পথে কিছু অমানুষের দ্বারা লাঞ্ছিতা হয়।বাড়িতে সে ফিরে আসে ঠিকই লোকের বাড়ির কাজগুলো তার চলে যায়।রাস্তা-ঘাটে সমস্ত জায়গায় অপমানিত হতে হতে শেষ পর্যন্ত একদিন নিজেকেই সে শেষ করে দেয়।তাই এতদিন দিনের পর দিন না খেয়ে থাকলেও অসীমাকে সে লোকের বাড়ি কাজ করতে যেতে দেয়নি।কিন্তু দু'বছরের ছেলেটা খিদেতে কাঁদতে কাঁদতে যখন মায়ের শুকনো স্তন টানতে টানতে খিদে পেটেই ঘুমিয়ে পরে তখন তার পিতৃহৃদয় কষ্টে মোচড় দিয়ে ওঠে।তাই সে এবার অসীমার জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়।
     ছেলেটিকে নিয়েই সে সব বাড়িতে কাজে যায়।রাহুল তার খুব শান্ত ছেলে।মেঝেতে বসিয়ে রেখে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া সস্তা দামের এক খেলনা তার হাতে ধরিয়ে দেয়।যতক্ষণ মা কাজ করে সে ওই খেলনা নিয়ে আপনমনে খেলা করে চলে। অনেকদিন সে খেয়াল করেছে তার বৌদিমনি ছেলেটির কাছে গিয়ে তার সাথে বকবক করে চলেছে।বৌদিমনির একমাত্র ছেলে বাইরে হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করে বলে শুনেছে।এ বাড়িতে কাজ নেওয়ার পর তাকে সে কোনদিন দেখেনি।আজ সন্ধ্যায় কাজ করে ছেলেকে নিতে গিয়ে দেখে তার বৌদিমনি কিছু জামাকাপড় আর কয়েকটি খেলনা নিয়ে ছেলের কাছে বসে।অসীমাকে দেখতে পেয়ে রমা তাকে বললেন,
---আজ চৈত্রসেলে গেছিলাম।তুই ছেলেটিকে বড্ড নোংরা জামা পড়িয়ে রাখিস।খুব লক্ষ্মী ছেলে তোর।ওর জন্য আজ এই জামা প্যান্টগুলো সেল থেকে কিনে আনলাম।আর এই খেলনাগুলো আমার ছেলের।কি হবে এগুলো তুলে রেখে।তাই তোর ছেলের জন্য বের করে দিলাম। আর হ্যাঁ শোন,ওকে ছেঁড়া,ময়লা জামা প্যান্ট আর পরাবিনা।আমি আবারও ওকে জামা প্যান্ট কিনে দেবো।তোর বর যে দোকানে কাজ করে সেটা তো দুপুরের দিকে বন্ধ থাকে। দেখি তোর দাদাকে বলে কোন জামা-কাপড়ের দোকানে এই চৈত্রমাসটা কাজ পাওয়া যায় কিনা। তাহলে বাড়তি কিছু রোজগার হবে।
অসীমা হা করে তার বৌদিমনির মুখের দিকে জল ভরা চোখে তাকিয়ে আছে দেখে রমা পূণরায় বললেন,
---ছেলেটার ঘুম পেয়েছে।যা ডিপফ্রিজ থেকে একটা দুধের প্যাকেট নিয়ে বাড়িতে গিয়ে ওকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দে।
   অসীমা আঁচলে চোখ মুছে একহাতে দুধের প্যাকেট,জামা-প্যান্টের ব্যাগ আর কোলে ছেলেকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো।