Thursday, September 21, 2023

ভালোবাসি বলেছি অনেকবার ( ২য় পর্ব)

ভালোবাসি বলেছি অনেকবার (২য় পর্ব)

  বাবার চিকিৎসা করাতে এসে যার সাথেই কথা হয় সে যেকোন একটি কাজ তার বড় প্রয়োজন সেটা বলতে ভোলে না। আর এভাবেই সে ডাক্তার স্বরূপ দাশগুপ্তের কাছেও কথাটা বলে।
  ডক্টর স্বরূপ বেশ কিছুক্ষণ সুবর্ণার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। ড্রয়ার খুলে একটা কার্ড বের করে তার হাতে দিয়ে জানতে চাইলেন 
-- কতদূর পড়াশুনা করেছো? যদিও যে কাজটার কথা আমি ভাবছি সেটার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন দরকার নেই। তোমার বাবার টিবি রোগের চিকিৎসা আজ লাস্ট ডোজ। তুমি আগামী রবিবার সকালের দিকে চলে এসো। তবে একটা কথা একটু জেনে নিই মা।অসুস্থ্য একজনকে দেখভাল করতে হবে। সপ্তাহে রবিবার ছুটি পাবে। রাতেও থাকতে হবে তার কাছে। মাইনে খারাপ পাবে না। রাজি থাকলে রবিবার চলে এসো।
-- আমি রাজি। সম্মান বাঁচিয়ে যে কোন একটা কাজ পেলেই আমার চলবে 
-- বাবাকে নিয়ে এখন আর কোন চিন্তা করতে হবে না। শুধু খাওয়াদাওয়া ভালো চলবে।
   বাবাকে নিয়ে বাড়িতে ফেরার পথে সব জানায় সে তার বাবাকে। তিনি একটি দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বলেন,
-- এত লেখাপড়া শিখে শেষ পর্যন্ত আয়ার কাজ 
-- ভাবছো কেন বাবা কলকাতা শহরে থাকতে পারলে ভালো কাজের সন্ধান ঠিক পেয়ে যাবো। এখন এই মুহূর্তে এই ছাড়া আর কোন উপায় নেই আমাদের।
-- আরও বেশি করে কিছু টিউশনি তো করতে পারতিস।
-- করছিলাম তো বাবা।কিন্তু ক'টা টাকা আসে তাতে? দেখি ওই কাজ করতে করতেই ভালো কোন কাজ খুঁজে নেবো আমি। তুমি চিন্তা কোরো না। দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে।

  দু'দিন পরে সুবর্ণা একটা বিগ সপারে নিজের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র নিয়ে স্বরূপবাবুর বাড়ি এসে হাজির হয়। ডাক্তার স্বরূপের বিশাল বাড়ি। গেটে সেন্ট্রি। গেট পেরিয়ে বাড়িতে ঢুকতে গেলে মিনিট দু'য়েক হাঁটতে হবে। দু'পাশে নানান জাতের দেশী,বিদেশি গোলাপ ফুটে আছে। একজন মালি সেখানে কাজ করছেন। সেন্ট্রিকে পরিচয় দিতেই তিনি গেট খুলে দিলেন। সুবর্ণা বুঝতে পারলো আগে থাকতেই তাকে জানিয়ে রাখা হয়েছিলো। আস্তে আস্তে সে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেলো। একজন পরিচালিকা এসে তাকে ডক্টর স্বরূপের কাছে নিয়ে গেলো। সুবর্ণাকে দেখেই তিনি বললেন,
-- বসো মা। যে কাজের জন্য তোমায় এখানে আসতে বলেছি সেই কাজে এর আগে অনেকেই এসেছেন। কিন্তু কারো কাজই সেরকম পছন্দ হয়নি আমার মিসেসের। তাই কটাদিন অন্তর অন্তর লোক পাল্টাতে হয় আমার। আমার মিসেস হাঁটাচলা করতে পারেন না খুব একটা। তাকে দেখাশুনা আর সেবাযত্ন করার জন্য তোমায় আসতে বলেছি। কারণ তুমি বলেছিলে যে কোন কাজ করতে তোমার আপত্তি নেই। তোমার একটাই কাজ সব সময় ওই ঘরে থেকে উনার সমস্ত কিছু করা। তার খাবারটাও ওই ঘরে যে কেউ পৌঁছে দিয়ে আসবে। কিন্তু উনাকে ভুলিয়ে খাইয়ে তোমাকে দিতে হবে। একসময় বিদিশা মানে আমার মিসেস গল্পের বই পড়তে ভালোবাসতেন। তুমি গল্পের বই পড়ে শোনাবে। স্নান করানো, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব সব তোমার। রবিবার আমি নিজের হাতেই এই দায়িত্ব পালন করি।তাই রবিবার তোমার ছুটি। তুমি রবিবার ভোরবেলা বাড়ি যাবে আর সোমবার ন'টার মধ্যে আবার চলে আসবে।
  সুবর্ণা এতক্ষণ চুপ করে কথা শুনছিল। এবার সে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-- চলুন উনার ঘরে যাই।
 স্বরূপবাবু সুবর্ণাকে সাথে নিয়ে স্ত্রীর ঘরের দিকে যেতে যেতে বললেন,
--- এক একজন আসে কয়েকদিনের মধ্যেই তাকে চলে যেতে হয়।কারণ আমার মিসেসের পছন্দ হয় না। দেখো চেষ্টা করে যদি তোমাকে তার পছন্দ হয়।
  ওরা ঘরের ভিতরে এসে ঢোকেন। স্বরূপবাবু তার স্ত্রীর মাথায় হাত দিয়ে ডাকেন,
-- দিশা দেখো এই মেয়েটি আজ থেকে তোমায় দেখাশুনা করবে। ওর নাম সুবর্ণা। তুমি কথা বলে দেখো ভালো মিষ্টি মেয়ে। আমার মনেহয় তোমার একে খুব ভালো লাগবে।
 দিশা সুবর্ণার মুখের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় তাকে খাটের উপর বসতে বললেন। কিন্তু সুবর্ণা একটা চেয়ার এনে খাটের পাশে রেখে তাতে বসতে বসতে বললো,
-- অনেকটা জার্নি করে এসেছি। আগে একটু গল্প করি পরে ফ্রেস হয়ে আপনার কাছে গিয়ে বসবো।
 সুবর্ণার কথাটা শুনে বিদিশাদেবীর খুব ভালো লাগলো। তিনি ওর কথায় সম্মতি জানিয়ে বলেন,
-- ঠিক আছে। তবে তাই হোক।
 স্বরূপবাবু তখন সেখান থেকে বেরিয়ে এসে ড্রয়িংরুমে খবরের কাগজ খুলে নিয়ে বসেন। একটু পরেই তার প্রফেসর ছেলে দেবেশ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে বাবার পাশে এসে বসে। বিলাসী চা দিয়ে যায়। এই বিলাসী বহু বছর ধরে স্বরূপবাবুর বাড়িতে আছে। এই বাড়ির প্রত্যেকটা বিষয়ে কথা বলা এবং মতামত দেওয়ার অধিকার সে নিজগুণে অর্জন করেছে। দেবেশ তাকে বহুদিন পর্যন্ত নিজের পিসি বলেই জানতো। বিলাসী চা এনে বাপ ব্যাটার সামনে রেখে বললো,
-- আজও একজন নতুন লোক এলো।কে জানে এ আবার ক'দিন টিকবে।
 কথাটা শুনে দেবেশ বলে ওঠে,
-- একে আবার কোথায় পেলে বাবা?
 স্বরূপবাবু তখন ছেলের কাছে পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিলেন। দেবেশ উদাস হয়ে বলে,
-- দেখো ক'দিন থাকে। মায়ের যে কেন এদের পছন্দ হয় না আমি বুঝতেই পারি না। মা তো শুয়েই থাকেন। হুইল চেয়ার করে শুধু ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় সাহায্যের প্রয়োজন। যারা আসে মায়ের সেবা যত্নের কোন ত্রুটি অন্তত আমি খুঁজে পাই না। তবুও কেউ টেকে না।
-- ব্যাপারটা আমার কাছেও বোধগম্য হয় না। 
-- এবার মায়ের ঘরে একটা সিসিটিভি লাগিয়ে দাও বাবা।
 কথাটা বলেই দেবেশ হো হো করে হেসে ওঠে। ওর বাবাও সেই হাসিতে যোগ দিয়ে বলেন,
-- হ্যাঁ এটাই এখন বাকি আছে -
--- এই ছাড়া আর কোন উপায় নেই বাবা। মায়ের এই মানুষগুলোকে পছন্দ না হওয়ার কারণটা তো আমাদেরও জানা দরকার বাবা।
--- না, এটা মোটেই ঠিক হবে না। দেখি আজ যে এসেছে সে কতদিন টেকে।

ক্রমশ -

    

Saturday, September 9, 2023

ভালোবাসি বলেছি অনেকবার ( প্রথম পর্ব)

 ( প্রথম পর্ব)

  ট্রেনটা আর একটু হলেই মিস করে যেতো সুবর্ণা। ছুটতে ছুটতে এসে ট্রেনটা ধরে সে।  বাংলায় এম. এ. করা সুবর্ণা মরিয়া হয়েও কোন চাকরি জোগাড় করতে পারেনি এই তিন বছরে। কিন্তু হাল ছেড়ে সে দেয়নি। লাগাতার চেষ্টা সে চালিয়ে যাচ্ছে। 
  বাবা বড় বাজারে নামকরা একটা কাপড়ের দোকানে সেলসের দায়িত্বে আছেন। কিন্তু কিছুদিন ধরে তার কাশিটা কিছুতেই কমছিলো না। প্রথমে সবাই ভেবেছিল প্রচন্ড গরমে সব সময় এসি চলার কারণে ঠান্ডা লেগে তার এই কাশি। খুসখুসে কাশি একবার শুরু হলে আর তা কিছুতেই থামতে চায় না। কাশতে কাশতে বুক,পেট ব্যথা হয়ে যায়। এইভাবে কিছুদিন চলার পর দোকানের মালিক জোর করে তাকে ডাক্তারের কাছে পাঠান। 
  গরীবের ঘরে রাজরোগ। তবে এ রোগের এখন চিকিৎসা প্রচুর বেরিয়ে গেছে। যারা প্রাইভেটে দেখান তাদের ব্যাপার আলাদা। কিন্তু সরকার থেকেও বিনা পয়সায় এখন চিকিৎসা করানো হচ্ছে। তবুও ছোঁয়াচে রোগ দোকানে তো আর রাখা যায় না। তাই বহুদিনের পুরনো বিশ্বস্ত কর্মচারীকে তার মাইনে ছাড়াও বেশ কিছু টাকা দিয়ে পুরো সুস্থ হয়ে পুনরায় কাজে রাখার আশ্বাস দিয়ে ছুটি দেন। 
  সুবর্ণা তখন এম এ কমপ্লিট করে চাকরির চেষ্টা করছে। ভাই তখনো স্কুলের গণ্ডি পেরোয়নি। বাবার অসুস্থতার খবরে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। সরকারি চিকিৎসা করা ছাড়া আর উপায় নেই। তাই বাবাকে নিয়ে ট্রেন জার্নি করেই কলকাতা এসে চিকিৎসা শুরু করে। 
 ট্রেনে  লোকাল কামরায় উঠে বসার জায়গা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। লোকের হাতে পায়ে ধরে প্রায় রোজই যেভাবেই হোক বাবার জন্য একটা বসার জায়গার ব্যবস্থা সে করে।
এমনই একদিনে তার সাথে পরিচয় হয় সুলতা সেনের। সুলতা তাকে জানায় সে কলকাতা একটা নামী কোম্পানিতে চাকরি করে। সুবর্ণা মনেমনে ভাবে সে এম এ করার পড়ে এত চেষ্টা করেও আজ পর্যন্ত কোন চাকরি জোগাড় করতে পারেনি। কিন্তু সাধারণভাবে গ্র্যাজুয়েশন করে সুলতা কী সুন্দর একটা চাকরি জোগাড় করে নিয়েছে। 
 প্রায় প্রতিদিনই সুলতার সাথে সুবর্ণার দেখা হয়। সুলতা বয়সে একটু ছোট হলেও সুবর্ণার সাথে বেশ ভালো একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর তাতেই দু'জনে দু'জনার মনের কথা,পারিবারিক কথা শেয়ার করতে থাকে।
 সুলতারা তিন ভাইবোন। মা নেই। বাবার ধরাবাধা কোন কাজ নেই। যখন যা পান তাই করেন। তাতে সামান্য যা রোজগার হয় সংসার চালিয়ে ভাইবোনদের মানুষ করা দূরহ হয়ে পড়ে। প্রথম অবস্থায় কয়েকটি ছাত্রছাত্রী জোগাড় করে টিউশন শুরু করেছিল। বেশি টাকা তাতে আসে না। গ্রামেগঞ্জে সকলে সময় মত টিউশন ফি-টাও দিতে পারে না। তখন উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছে সবে সুলতা। পারিবারিক অবস্থা এতটাই খারাপ মা একদিন তাকে ডেকে বললেন,
-- তোর বাবার আর ক্ষমতা নেই তোকে পড়ানোর। এবার কিছু একটা করার চেষ্টা কর
 রেজাল্ট তখনও বের হয়নি।মায়ের কথা শুনে ছলছল চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
--- এই শিক্ষাগত যোগ্যতায় কোনো চাকরি পাওয়া যায় না মা। নামকরা ডিগ্রিধারী ছেলেমেয়েরা চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর আমি?
-- তাহলে লোকের বাড়ি রান্না করার কাজ খুঁজে নে,সেটা পারবি তো?
 সুলতার মা শাড়ির আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন। আর সুলতা ঘরের মেঝেতে ধপ করে বসে পড়ে দু'হাতে চোখ ঢেকে কাঁদতে শুরু করে।
  একটা একটা করে দিন এগিয়ে যেতে থাকে রেজাল্ট বেরোনোর সময় হয়ে আসে আর সুলতার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করে। অনেক চিন্তাভাবনা করে শেষ পর্যন্ত সে পাড়ার একটি টেলারিংয়ের দোকানে গিয়ে একটা কাজ ঠিক করে। ব্লাউজে হুক লাগলো,হেম করা ইত্যাদি। যেদিন আনে দোকান থেকে যত কাটিং হোক না কেন সারারাত বসে সেলাই করতে হলেও করে পরদিনই সেগুলো দোকানে দিয়ে আসে। এক একটা ব্লাউজ কিংবা চুড়িদার পাঁচটাকা হিসাবে বেশ ভালোই রোজগার করতে থাকে। কিন্তু মাথার মধ্যে পড়ার ভূতটা থেকেই যায়। রেজাল্ট বের হয়। সুলতা ভালো নম্বর নিয়েই প্রথম বিভাগে পাশ করে। কিন্তু পড়াশুনার পাঠ তো তাকে এখানেই চুকিয়ে দিতে হবে। 
  সুলতা রেজাল্ট বেরোনোর পর থেকেই বেশ মন খারাপ নিয়েই সংসারের কাজ, টেলারিংয়ের কাজ চুপচাপ করে চলে। প্রয়োজন না হলে সে বাড়ির কারো সাথেই কোন কথা বলে না। বাবা,মা বুঝতে পারলেও না বোঝার ভান করে থাকেন। সে মনেমনে নানান ধরণের প্ল্যান করতে থাকে।অনেক ভেবেচিন্তে সে একটি উপায় বের করে।
 একদিন খুব ভোরে উঠে ট্রেন ধরে কলকাতা আসে। সে আগেই সবকিছু খোঁজখবর নিয়ে এসেছে। কলেজস্ট্রিট এসে সামনাসামনি বাকি সবকিছু জেনে নেয় কিভাবে প্রাইভেটে গ্র্যাজুয়েশন করা যায়।
  ওই ইনস্টিটিউশনে একদিন সকাল দশটা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত বসে থাকতে হয় তাকে নানান ফর্ম ফিলাপ করা আর সই সাবুদের জন্য। কত টাকা প্রয়োজন সে আগে থেকেই জেনে গেছিলো। তাই পাড়ার অঞ্জু কাকিমার কাছ থেকে সেই টাকাটা ধার হিসাবে নিয়ে এসেছে। এই অঞ্জু কাকিমার মেয়ে অনন্যা সুলতার বন্ধু। একই সাথে তারা পড়াশুনা করে। সেই হিসাবে কাকিমা সুলতাকে ভীষণ ভালোবাসেন। 
  সুলতার কাছে তার পারিবারিক সমস্ত ঘটনা শুনে এবং তার পড়ার প্রতি অদম্য আগ্রহ দেখে ওই ইনস্টিটিউশনের সেন্ট্রি তাকে এক পরামর্শ দেয় কারণ সুলতা তাকে জানিয়েছিল একটা কাজ জোগাড় করে দিতে কারণ যে কোন কাজ করতেই সে রাজি। সেন্ট্রি নরেশ সাথে করে তাকে নিয়ে যায় রিটায়ার্ড আই পি এস অফিসারের বাড়িতে যার আন্ডারে যুবক বয়সে সে কাজ করতো। বিপত্নীক অনিন্দ্য চ্যাটার্জী একাই থাকেন বাড়িতে ছেলে লন্ডন প্রবাসী। বাড়িতে তিন থেকে চারটে কাজের লোক। অর্থের অভাব নেই। এনজিও সংস্থা ছাড়াও তিনি প্রকৃত মেধাবী গরীব ছেলেমেয়েদের দায়িত্ব এভাবেই নিয়েছেন। তিনি এমনভাবে উইল করেছেন যে তার অবর্তমানে সমস্ত স্থাবর,অস্থাবর সম্পত্তি নানান এনজিও সংস্থায় চলে যাবে।
    নরেশের কাছে সুলতা সম্পর্কে সব শুনে তাকেও কাজে বহাল করলেন। সুলতার কাজ হচ্ছে সকলের কাজের তদারকি করা আর বাকি সময় পড়াশুনা করা। সকাল আটটা থেকে রাত আটটা। সুলতা তার মিষ্টি ব্যবহার দিয়ে অনিন্দ্য চ্যাটার্জীর মন জয় করে নেয় মাত্র কয়েকদিনেই। এই অনিন্দ্য চ্যাটার্জী পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ এবং গরীব, মেধাবী ছেলেমেয়ে দেখলেই তাদের সমাজে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার জন্য যেন এক অলিখিত চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন।
 সুলতা বাড়িতে জানায় সে একটি কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছে। ভোরবেলা ট্রেন ধরে শিয়ালদহ নেমে এন্টালি পর্যন্ত হেঁটে এসে অনিন্দ্যবাবুর বাড়িতে ঢুকেই তার নির্দেশে বই নিয়ে পড়তে বসা। এরূপ আরও দুয়েকজন তার আছে। অথচ খাওয়াপরা শেষে মাস গেলে মোটা অঙ্কের টাকা মাস মাইনে হিসাবে হাতে পাওয়া কারণ তাদের সংসার অচল! একেই বলে ভাগ্য!
  সুলতা সাধারণ ভাবেই গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে। অনিন্দ্যবাবুর সুপারিশে সত্যিই একটা চাকরীও তার জুঠে যায়। প্রত্যেক মাসে এক দু'বার করে সে তার জেঠুকে প্রণাম করে আসতে ভোলে না।
  সুবর্ণা সব শুনে একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
-- তুমি ভাগ্যের ফলে এমন একটা মানুষের সান্নিধ্যে আসতে পেরেছো। কিন্তু আমি যে কী করি সেটাই বুঝতে পারছি না। আচ্ছা কলকাতা শহরে তো অনেক বাড়িতে মানুষ রান্নার কাজ করে। আমাকে এরকম একটা বাড়ি দেখে দিতে পারবে? দুটো তিনটে বাড়িতে রান্না করতে পারলে কিছু টাকা অন্তত রোজগার করা যেত। তানাহলে তো না খেতে পেয়েই সব মারা যাবো। আর এখানে তো কেউ আমায় চিনবে না; জানবে না বাংলায় এম এ করে আমি বাড়ি বাড়ি রান্নার কাজ করছি।
  সুলতা এবং সুবর্ণা দুজনের জীবনে সংসারে বড় সন্তান হওয়ার কারণে সংসারের জোয়াল এসে তাদের কাঁধে পড়েছে। দু'জনেই সেটা হাসিমুখে না হলেও মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে।
  বাবার চিকিৎসা করাতে এসে যার সাথেই কথা হয় সে যেকোন একটি কাজ তার বড় প্রয়োজন সেটা বলতে ভোলে না। আর এভাবেই সে ডাক্তার স্বরূপ দাশগুপ্তের কাছেও কথাটা বলে।

ক্রমশ